এবারের ঈদ-উল আযহায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সতর্কতা

বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে উদ্বেগ জনক পরিস্থিতির মাঝেই মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল আযহা দরজায় কড়া নাড়ছে। মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আর্থিক ভাবে সামর্থ্যবান, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ঈদ-উল আযহায় পশু কোরবানি ওয়াজিব করা হয়েছে। পশু কোরবানির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহ্‌ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কোরবানির মহিমাকে ধারণ করে।

করোনা প্রতিরোধে  ঈদের সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ

ঈদ-উল আযহার সালাতের জামাতে অংশগ্রহন করতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে যেতে হবে। করোনা সংক্রমন রোধে ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানোর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু ঈদের সালাতের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো নিষেধ তাই মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার না করে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে যেতে হবে। মসজিদের ওজুখানা ব্যবহার না করে প্রত্যেক মুসল্লিগনকে নিজ নিজ বাসস্থান থেকে ওযু করে মসজিদে যেতে হবে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। সালাত শেষে মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিনের দরবারে করোনা মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশেষ দোয়া করতে হবে।

করোনা মহামারীকালীন কোরবানির মাংস ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

এবারের ঈদে করোনা সংক্রমণ সহ রোগ-জীবাণুর বিস্তার রোধ ও পরিবেশ দূষণ এড়াতে গবাদিপশু কোরবানি, মাংস রান্না এবং সংরক্ষণে নিতে হবে বিশেষ স্বাস্থ্য সতর্কতা। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাস্তাঘাট, বাসা বাড়ির চারপাশ পশু কোরবানির পর পশুর রক্ত ও বর্জ্য পদার্থ অপসারণে সচেষ্ট হতে হবে। কোরবানি শেষে বর্জ্য সমূহ ব্যাগে ভরে মুখ বন্ধ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন অথবা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে রাখতে হবে অথবা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। মাংস ভালোভাবে সিদ্ধ করে রান্না করতে হবে এবং প্যাকেটে মুখ বন্ধ অবস্থায় রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে হবে। ভুল পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষনেরর ফলে টিনিয়া সোলিয়াম নামক পরজীবির সংক্রমণ ঘটে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে।

পশু কোরবানির ক্ষেত্রে করোনা মহামারীতে করণীয়

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এবারের ঈদে পশু কোরবানির কাজ নিরাপদে সম্পন্ন করতে নিম্নে বর্ণিত বেশ কিছু বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি রোধে কোরবানির পশুর হাটের স্বাস্থ্যবিধি

পশুর হাটে অবশ্যই তিন স্তরের সার্জিক্যাল মাস্ক পরে প্রবেশ করতে হবে। করোনার উপসর্গ যেমন জ্বর, সর্দি-কাশি, শরীর ব্যথা নিয়ে পশুর হাটে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সেইসাথে কমপক্ষে তিন ফুট সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কোরবানির পশু কিনে হাট ত্যাগ করতে হবে। শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের পশুর হাটে প্রবেশ করা এবং একজন বিক্রেতার কাছে অতিরিক্ত ক্রেতা সমাগম করা এরিয়ে চলতে হবে। অসুস্থ প্রাণি হাটে বেচাকেনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়িয়ে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির হাটে গিয়ে পশু ক্রয়, জবাই, প্রক্রিয়াকরণ অত্যন্ত কষ্টকর বিষয়। তাই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ঘরে বসে পছন্দমতো কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য সরকারি, বেসরকারি, জাতীয় এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়েও চালু হচ্ছে অনলাইন পশুর হাট। এক্ষেত্রে ক্রেতাগণ অনলাইনেও তাদের পছন্দ মাফিক কোরবানির পশু অর্ডার করতে পারেন।

করোনা সংক্রমণরোধে গণপরিবহণে ঈদ যাত্রায় সতর্কতা

ঈদের সময় গণপরিবহন চালু থাকলেও নিজ দায়িত্বে চলাচল সীমিত রেখে এবং সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদযাত্রায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। গণপরিবহন ব্যবহারের সময় মাস্ক ব্যবহার, নিজেদের ঝুঁকিমুক্ত রাখার পাশাপাশি অন্যদের সংক্রমণের আশঙ্কা হ্রাস করবে।

আতংকিত না হয়ে ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সতর্কতাই হতে পারে রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম মাধ্যম। তাই নিজের ও পরিবারে সকলের প্রতি যত্নশীল হতে এবং পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে সকলে মিলে সহায়তা করি। আসুন, আমরা এবারের ঈদে মহান আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমাদের সকলকে সর্বদা তার শোকরানা আদায় করার তৌফিক দিন ও কবুল করুন এবং সেইসাথে ঈদ-উল আযহার ত্যাগের মহিমার মাধ্যমে বিশ্বকে করোনা মহামারীসহ সকল বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন, আমিন।

তথ্যসূত্রঃ বিবিসি নিউজ বাংলা, দৈনিক ইত্তেফাক, প্রথমআলো

2020-07-31 09:57:25

Back to Blogs