পেট ব্যথা: অবহেলা করলেই বিপদ
প্রফেসর কৃষ্ণজ্যোতি গোস্বামী
2019-04-15 13:30:22

কোনো কোনো সময় পেটব্যথার সঠিক কারণ সহজে সনাক্ত করা যায় না। তাই বলে হতে গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। একে গুরুত্ব না দিলে একসময় সমস্যাটি হঠাৎ মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায় এবং দ্রুত চিকিৎসা জরুরি হয়ে পড়ে। পেটের ব্যথার বিভিন্ন সম্ভাব্য কারণ এবং কখন দ্রুত জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন সে বিষয়েই আজকের আলোচনা।
অ্যাকিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিসে সাধারণত নাভির পারপাশে চাপা ব্যথা এবং বমি বমি ভাব হয়। ছয় থেকে আট ঘন্টার মধ্যে ব্যথা পেটের নীচের দিকে ডান পাশে চলে আসে, এর সাথে হালকা জ্বরসহ শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয়।
আবার অ্যাকিউট কোলাইটিসে পিত্তপাথর বা গলাস্টোন সৃষ্টি হওয়ার ফলে পিত্তথলিতে প্রদাহ হয় এবং পেটের ওপরের দিকে ডান পাশে ব্যথা করে। যা পিঠের ডান পাশের ওপরের অংশে এবং কাঁধে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া বমি বমি ভাব, বমি, কাঁপুনিসহ হালকা জ্বর এবং জনডিস দেখা দেয়।
হঠাৎ প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয় অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসে। সাধারণত পেটের ওপরের অংশে অনুভূত হয়, যা দ্রুত তীব্রতর হতে থাকে েএবং পিঠে ও বাম কাঁধে ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যথা এক নাগাড় হতে থাকে কোনোভাবেই কমে না। মাঝে মাঝে হাঁটু ভাঁজ করে সামনে ঝুঁকে বসে থাকলে কিছুটা আরাম হয়। বমি বা বমি বমি ভাব এবং পেট ফাঁপা, পেট শক্ত হওয়ার সাথে সাথে পায়ুপথে বায়ু বের করার অসামর্থ ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। বাড়াবাড়ি হলে দ্রুত হৃদস্পন্দন হয় ও রক্তচাপ কমে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হতে পারে। দীর্ঘদিন মদ্যপান কিংবা পিত্তথলিতে পাথরের কারণে সাধারণত অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস হয়ে থাকে।
পারফোরেটেড ডিওডেনাল আলসার ব্যথা হঠাৎ তীব্র ও মারাত্মক হয় এবং প্রথমদিকে পেটের ওপরের অংশে থাকে। পরে পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়ে। নড়াচড়া করলে ব্যথা বেড়ে যায়, সাথে হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্টও বাড়তে থাকে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জ্বর আসে এবং রক্তচাপ কমতে থাকে।
অ্যাকিউট স্মল ইনটেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশনের অর্থ হল ক্ষুদ্রান্ত্রের গতিপথ বন্ধ হয়ে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করা। তলপেটে মোচড়ানো ব্যথা হয় এবং এর সাথে পেটও ফুলে যায়। এছাড়া পিত্তবমি, ছটফটানি ও অস্থিরতা, জ্বর, দ্রুত হৃদস্পন্দন এবং অন্ত্রের গুড়গুড় শব্দ ইত্যাদি লক্ষণ থাকে।
অ্যাকিউট গ্যাস্ট্রো এন্টেরাইটিসের লক্ষণ হল তলপেটের চারদিকে মোচড়ানো ব্যথা, সাথে ডায়রিয়া, মাঝে মাঝে মলের সাথে রক্ত ও মিউকাস বের হওয়া, বমি হতে পারে কিংবা নাও হতে পারে এবং জ্বর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগুলো এমনি ভালো হয়ে যায়, তবে অ্যান্টিবায়োটিক বা তরল জাতীয় খাবার খেলেও উপকার পাওয়া যায়। একই সময়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্য বা বন্ধুরাও এই ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে এন্ডোমেটিওসিস, ওভারিয়ান সিস্ট, রাপটার টিউবাল প্রেগন্যান্সি এবং মূত্রতন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যা যেমন কিডনির পাথর ইত্যাদি উপেক্ষা করা উচিত নয়। পেটের বা এর সন্নিহিত অঙ্গের কোনোটির সমস্যা বা অন্য কোনো রোগের কারণেও পেট ব্যথা হতে পারে, যেমন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (হার্ট), নিউমোনিয়া (ফুসফুস), মেরুদন্ডের হাড়ের স্থানচ্যূতি, স্পাইনাল কর্ডে টিউমার (স্নায়ুতন্ত্র), বিপাক জনিত রোগ (কিডনি ফেলিওর, ডায়াবেটিস ইত্যাদি), বিষক্রিয়া (সীসার আধিক্য) সংক্রমণ (হারপিস জোস্টার) এবং মাংসপেশি থেঁতলানো বা রক্ত জমে ফুলে যাওয়া ও হেমাটোমা হওয়া। যদি ব্যথার কারণ খুব সাধারণ হয় তবুও পেটে ব্যথা হলে অবহেলা করবেন না। মারাত্মক কোনো সমস্যায় পড়ার আগেই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। কেননা অনেক সময় আপনার জরুরি ভিত্তিতে অপারেশনেরও দরকার হতে পারে।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন