ব্রষ্কাইটিস থেকে রেহাই পেতে প্রথমেই বন্ধ করতে হবে ধূমপান
ডাঃ সামসুল আলম লস্কর
2019-05-21 12:28:00

ব্রষ্কাইটিস এক ধরনের ভাইরাসঘটিত রোগ। যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষত বেড়ে ওঠা বাচ্চা এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হন। কারণ এই বয়সে মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দুর্বল হয়। ধূমপায়ী, হৃদরোগী ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত মানুষজন বেশি আক্রান্ত হন ব্রষ্কাইটিস রোগে।
ব্রষ্কাইটিস কাকে বলে
ব্রষ্কাইটিস হল শ্বাসনালীর মধ্যে একপ্রকার প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন। যে প্রদাহ নাক থেকে শুরু করে শ্বাসনালী হয়ে ফুসফুস পর্যন্ত প্রসারিত হয়।
ব্রষ্কাইটিস সাধারণত দু’ধরনের ---অ্যাকিউট ব্রষ্কাইটিস এবং ক্রনিক ব্রষ্কাইটিস।
অ্যাকিউট ব্রষ্কাইটিস
শ্বাসযন্ত্রের কম সময়ের জন্য প্রদাহ হলে তাকে অ্যাকিউট ব্রষ্কাইটিস বলে। এটি ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত নয়। এই রোগ থেকে সেরে ওঠার পর শরীরে কোনো ক্ষত থেকে যায় না।
অ্যাকিউট ব্রষ্কাইটিসের লক্ষণসমূহ: রোগের শুরুতে থাকে ঠান্ডার লক্ষণ, যেমন—নাক দিয়ে, কাঁচা জল পড়া, হাঁচি ও শুকনো কাশি। তারপর বুকে কফ বসা ও কষ্টদায়ক কাশি, সেই সাথে হলদে ও সবুজ কফ এবং থুতু। থাকে ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় জ্বর। কাশির সাথে বুক ঘড়ঘড় ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
ক্রনিক ব্রষ্কাইটিস
শ্বাসযন্ত্রের মধ্যে দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রদাহ থাকলে তাকে ক্রনিক ব্রষ্কাইটিস বলে। ক্রনিক ব্রষ্কাইটিসের কারণ হল শ্বাসনালীর মধ্যে উত্তেজক পদার্থের প্রবেশ, যেমন সিগারেট-বিড়ির ধোঁয়া ইত্যাদি।
কখন ডাক্তারবাবুর পরামর্শ প্রয়োজন
যদি জ্বর, মাথাবাথা বা গলা-বুকে শোঁ-শোঁ, চি-চা শব্দ বেশি হয়। যদি দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হয় বা পূর্ণ শ্বাসগ্রহণের ক্ষমতা কমে যায় বা বুকে কষ্ট অনুভূত হয়। কাশির সাথে রক্ত বা কফের রঙ কালচে বা ধূসর থাকলে, আচ্ছন্ন ভাব দেখা দিলে, কাশি তিন-চার সপ্তাহ স্থায়ী হলে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এছাড়া যদি বারবার অ্যাকিউট ব্রষ্কাইটিসে আক্রান্ত হতে দেখা যায় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।
অ্যাকিউট ব্রষ্কাইটিসে সাবধানতা
- পুরোপুরি বিশ্রাম।
- প্রচুর পরিমাণে জলপান করা দরকার। দিনে প্রায় চার থেকে ছয় লিটার জলপান করতে হবে। জল খেলে শরীরের শুষ্কতা কম থাকে, বুকে কফ জমতে না দিয়ে তাকে তরল করে বের করে দিতে সাহায্য করে।
- ফুটন্ত জলের বাষ্প নাক-মুখ দিয়ে দিনে দু’বার টানলে উপকার মেলে।
- রাতে চিত হয়ে না শুয়ে এক পাশ ফিরে শোওয়া দরকার। তাতে বুক পরিষ্কার থাকে এবং সহজে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যায়।
- ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে ধূমপান বন্ধ করা জরুরি।
- কাশির সাথে গলা ব্যথা থাকলে গরম জলে লেবু ও মধু মিশিয়ে খেলে গলা ব্যথা ও কাশি দুটিরই কষ্ট কমে যায়।
ফুসফুসের প্রদাহ আগাম ব্যবস্থা
যাতায়াতের সময় বাসে, ট্রেনে, অফিস-আদালতে, স্কুল-কলেজে যারা যাতায়াত করেন, তাদের অন্যের হাঁচি কাশির সময় নিজেদের দূরে রাখতে হবে। অথবা নাক রুমাল দিয়ে ঢেকে নিন। আবার নিজে যখন ভুগছেন, তখন হাঁচি-কাশির সময় রুমাল অথবা টিসু পেপার ব্যবহার করুন। হাঁচি-কাশির পর সম্ভব হলে হাত ধুয়ে ফেলুন ।
ধূমপান শ্বাসনালীর ভিতরের পাতলা স্তর নষ্ট করে ফেলে। ফলে শ্বাসনালী ও ফুসফুস প্রদাহপ্রবণ হয়ে পড়ে। তাই ধূমপান বন্ধ করলে বুকের প্রদাহ বা রোগ প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়।
ধূমপায়ীরা ধূমপান বন্ধ করলে শরীর ও লাইফস্টাইলে একটা বড় রকম ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে যা তাকে দীর্ঘসময় সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন