বাচ্চার ঘনঘন প্রস্রাব ডায়াবেটিস নয় তো
ডাঃসুব্রত দে
2019-01-25 16:12:38

বছর সাতেকের তাতান কলকাতার এক নামী স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র।পড়াশোনায় ভালো হওয়ার সুবাদে স্কুলে তার নাম-ডাক আছে।কিন্তু বেশকিছু দিন যাবৎ তাতানের নামে কমপ্লেন আসায় তার মা স্কুলে গিয়ে জানতে পারেন ছেলের নতুন দুষ্টামি শুরু হয়েছে।সে নাকি শুধু জল খায় আর ঘন ঘন টয়লেটে যায়।ফলে ক্লাসের পড়ায় মনোনিবেশ করতে পারছেনা।প্রথমে তার এই পরিবর্তন কে নিছক দুষ্টামি ভাবলেও পরে পেডিয়াট্রিশিয়ানের কাছে গেলে তিনি জানান বোধ হয় ওর ডায়াবেটিস হয়েছে।বর্তমানে এ রকম ঘটনা হামেশাই দেখা যাচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হল বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত ধরনের হয়? বাচ্চাদের মধ্যে যে ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায় তা হল—
- টাইপ-১ডায়াবেটি : যা সাধারণত শরীরে ইনসুলিনের অভাবে হয়ে থাকে।এক্ষেত্রে প্যাংক্রিয়াস থেকে উপযুক্ত পরিমাণে ইনসুলিন নিঃসরণ হয়না।ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।যা কে চিকিৎসার পরিভাষায় জুভেনাইল অথবা ইনসুলিন ডিপেনডেন্ট ডায়াবেটিস বলা হয়।
- টাইপ -২ডায়াবেটিস : দেহে প্যাংক্রিয়াসের মধ্যে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন হলেও সঠিক ভাবে তা কাজ না করলে টাইপ -২ ডায়াবেটিস বলে।একে চিকিৎসার পরিভাষায় ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বলা হয়।
- ম্যাচিওরিটি অনসেট ডায়াবেটিস অফ ইয়াং: এটা মূলত তিন পুরুষ ডায়াবেটিস।এই ধরনের ডায়াবেটিস মূলত ছোটদের বেশি দেখা যায়।
- সেকেন্ডারি ডায়াবেটিস : প্যাংক্রিয়া-টাইটিস, ডিসট্রাকশন অব প্যাংক্রিয়াস, সিস্টিক ফাইব্রোসিস এবং ফাইব্রোক্যালসিফিক ডিজিজ থেকে সেকেন্ডারি ডায়াবেটিস হতে পারে।
উপসর্গ:
- ক্লান্তি ভাব।
- ওয়েট লস বা ওজন কমে যাওয়া।
- অতিরিক্ত জলতেষ্টা।
- ঘন ঘন প্রস্রাব।
- অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্টি অস্বচ্ছ।
- কাটা বা ঘা দেরিতে শুকোনো।
চিকিৎসা
টাইপ-১ ডায়াবেটিস যেহেতু ইনসুলিনের অভাবে হয়ে থাকে, তাই মূলত ইনসুলিন দিয়েই এর চিকিৎসা করা হয়।নিডল, পেনস এবং পাম্পসের মাধ্যমে মূলত ইনসুলিন দেওয়া হয়ে থাকে।যদি সঠিক ও উপযুক্ত পরিমাণে ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয় তা হলে ফল খুব ভালো হয়।এক্ষেত্রে রোগীকে সারাজীবন ইনসুলিন নিয়ে যেতে হবে।
টাইপ-২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা মূলত হয় লাইফ স্টাইল মডিফিকেশন বা জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে।যেমন—নিয়মিত ৩০ মিনিট ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি, সবুজ শাক সবজি খাদ্য তালিকায় রাখা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, এছাড়াও ওরাল গ্লাইসেমিক ওষুধ দেওয়া।প্রয়োজনে ইনসুলিন দিতে হবে।এক্ষেত্রে যদি ভালো ভাবে চিকিৎসা করা যায় তা হলে অনেক সময় রোগীকে আর ওষুধ খেতে হয়না।
সতর্কতা
- মায়ের জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস হলে পরবর্তীকালে বাচ্চার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
- বংশে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে খুবই অল্প বয়স থেকে স্ক্রিনিং করানো আবশ্যক।
- লো কার্বোহাইড্রেট ও লো ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।নিয়মিতশরীর চর্চা অভ্যাস করাতে হবে।
- ওষুধ নিয়ম মেনে খাওয়াতে হবে।
- কোনও প্রকার অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে ডাক্তার বাবুর সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন