পরিবারে কারো ডায়াবেটিস থাকলে অন্যদের সুরক্ষার উপায়
ডাঃনীলাঞ্জন সেন গুপ্ত (বিশিষ্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট)
2019-01-25 16:16:30

‘মধুবাতাঋতায়তে, মধুক্ষরন্তিসিন্ধবঃমাধ্বর্নিসন্তৌষধি, মধুবৎপার্থিবংরজঃ’ অর্থাৎবাতাস যেন মধু ময় হয়, সিন্ধু বা সাগরে প্রবাহিত হোক মধুর স্রোত, ওষুধ যেন রোগীর ক্ষেত্রে মধুর মতো কাজ করে, পৃথিবীর ধূলিকণাও যেন মধুময় হয়, সকেলে তাই প্রার্থনা করে কিন্তু চিকিৎসক হিসেবে আমি কখনোই চাইবোনা যে দেহে বা রক্তরসে যেন বেশি করে মধু বা শর্করা ক্ষরিত হয়।কারণ তার ফলে রক্তে সুগার বৃদ্ধি পাবে এবং মারাত্মক সব উপসর্গ দেখা দেবে যাকে বলে ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগ।
নামটার মধ্যে কাব্য রস যত খানি রোগটাও তত খানি মারাত্মক। ডায়াবেটিস রোগীর প্রস্রাব হয় ঘন মধুর মতো গাঢ় এবং মিষ্টি যার কারণে রোগীর প্রস্রাবে পিঁপড়ে বসে, তাই এই নামকরণ মধুমেহ।
ডায়াবেটিস চার প্রকার—টাইপওয়ান, টাইপটু, গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য।এর মধ্যে সবচেয়ে কমন যে ডায়াবেটিস সেটা হল টাইপ টু ডায়াবেটিস। এই ডায়াবেটিস সারা বিশ্বে একটা মস্ত বড় স্বাস্থ্য-সমস্যা, বিশেষ করে ভারত বর্ষের মতো উন্নয়নশীল দেশে।
এই টাইপ টু ডায়াবেটিস ঠিক কী কারণে হয় আমরা তা সুনির্দিষ্ট ভাবে জানিনা কিন্তু এর দুটো গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল বংশগতি বা জেনেটিক্স এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা।
এটা যেহেতু জিন বাহিত রোগ তাই এই কারণে একই পরিবারের লোকেদের বা একই গোষ্ঠীর লোকেদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।পরিবারে কারো একজনের যদি টাইপ টু ডায়াবেটিস হয় তা হলে সেই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে বেড়ে যায়।যেমন পরিসংখ্যানগত ভাবে পিতা-মাতার মধ্যে একজন ডায়াবেটিস যদি থাকে, তাদের সন্তানের টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৩০-৬০শতাংশ।অনুরূপ ভাবে যদি বাবা-মা টাইপ টু ডায়াবেটিসে ভোগেন তাহলে সন্তানদের মধ্যে টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা ৬০ থেকে ৯০শতাংশ।সুতরাং বুঝতেই পারা যাচ্ছে পরিবারে কারো একজনের ডায়াবেটিস থাকলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে।পরিবারের অন্যান্য সদস্য অর্থাৎ ভাই, বোন, ছেলে মেয়ে তারা সেই ক্রটি যুক্ত জিন গুলো বহন করতে পারে, সে কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।কিংবা ব্লাড রিলেশন যদি নাও থাকে, যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে, যদি স্ত্রীর ডায়াবেটিস হয় তাহলে স্বামীরও ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।কারণ সেখানে জেনেটিক ফ্যাক্টরটা যদি কাজ করে।কারণ একটা পরিবারের কায়িম শ্রম এক ধরনের হয়।যাদের পরিবারে হাই সুগারের ইতিহাস আছে তাদের সব সময় ডায়েট কনট্রোল করতে বলা হয়।মোট কথা যদি পরিবারে কোনও এক জন সদস্যদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তাহলে অন্যান্য সদস্যদের ডায়াবেটিস যাতে না হয় সেজন্য সচেতনতার সাথে সাথে কিছু কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।যেমন প্রথম হচ্ছে একটি সুস্থ জীবন চর্চা বা হেলদি লাইফ স্টাইল।আমরা চিকিৎসকরা একজন ডায়াবেটিস রোগীদের যে রকম খাদ্যাভ্যাস বলে থাকি সেরকম কায়িক শ্রম বা এক্সারসাইজের কথাও বলে থাকি।যার ডায়াবেটিস হয়নি তার ক্ষেত্রেও সেই রকম খাদ্যাভ্যাস, কায়িমশ্রম প্রত্যেক দিন করা বাঞ্ছনীয়।
একটি ভুল ধারণা আছে যে ডায়বেটিস রোগীদের একটা রেস্ট্রিকটেড বা শৃঙ্খলাব্দ ডায়েট প্রেসক্রাইব করা হয়।তা কিন্তু নয়।আমরা একজন ডায়াবেটিস রোগীকে সাধারণ ভাবে যে খাদ্য তালিকা দিই সেটা একটা সুষম খাদ্য তালিকা।সেই সুষম খাদ্য তালিকার মধ্যে শর্করা বাদে কমপ্লেক্স কার্বোজাইড্রেটের প্রাধান্য, তণতু যুক্ত খাবার বা ফাইবার প্রাধান্য, কম ফ্যাট অর্থাৎচর্বি যুক্ত খাবার কম থাকা, সোডিয়াম অর্থাৎলবণ বা নুন কম থাকা, প্রচুর পরিমাণ ফল খাওয়া, শাক সবজি খাওয়া এবং সিম্পল সুগার অর্থাৎ চিনি কম খাওয়া এগুলো যে আমরা অ্যাডভাইস করি তা একজন ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে যতটা উপকারি তেমন একজন ডায়াবেটিক রোগীর আত্মীয়ের বা পরিবারস্থ সদস্য যার এখনও ডায়াবেটিস হয়নি, তার পক্ষেও একই রকম উপকারি।
এবার আসা যাক এক্সারসাইজের কথায়।ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে এক্সারসাইজ অর্থাৎ কায়িক শ্রম অত্যন্ত জরুরি।একজন সুস্থ মানুষের কোনও অসুবিধা না থাকলে দিনে ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন