সুগার রোগীদের কমন রোগ ফ্রোজেন শোল্ডার
রাজীব দাস (ফিজিওথেরাপিস্ট)
2019-01-25 17:10:49

অসহ্য কাঁধে ব্যথা এবং তার সঙ্গে হাত সামনের দিকে তুলতে, পিছনের দিকে নিতে অসুবিধে। মাথা আঁচড়াতে, জামা-কাপড় পরতে না পারা। এমনকী পাশ ফিরে শুতেও না পারা ইত্যাদি উপসর্গই হচ্ছে ফ্রোজেন শোল্ডারের লক্ষণ।
ফ্রোজের শোল্ডার একটা হাত বা কখনো কখনো দু’টো হাতেও হতে পারে। তবে এটা এমনই এক রোগ যার ফলে মানুষ তার দৈনন্দিন সাধরণ কাজগুলো করতেও অসুবিধার মধ্যে পড়ে। পুরুষ কিংবা মহিলা, আঠেরো বছর বয়সি হোক বা একাশি বছর, যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
ফ্রোজের শোল্ডার হওয়ার অনেক কারণ থাকে। তবে দীর্ঘদিন ব্লাডসুগারে আক্রান্ত রোগীদের এই রোগটা খুব কমন। এছাড়াও সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস, রোটেটার কাফ মাংসপেশিতে চোট, শোল্ডার ডিসলোকেশন, হিউমেরাস হাড়ে চোট বা সাবক্যাপুলারিস হিউমেরাল লিগামেন্টে চোট, বাইসেপস মাসলে আঘাত থেকে বা কোনো মাসল দুর্বল হয়ে পড়লে শোল্ডারের স্বাভাবিক নড়াচড়া বন্ধ হয়েও ফ্রোজেন শোল্ডার হয়ে থাকে। এই সময় হাত দিয়ে দৈনন্দিন কাজ করতে গেলে অসহ্য ব্যথা হয়। যেমন চুল আঁচড়ানো, জামা-কাপড় পরা এমনকী হয়। তাছাড়া হাত দিয়ে কোনো জিনিস তুলতে গেলেও ব্যথার জন্য তোলা সম্ভব হয় না। ফ্রোজেন শোল্ডার হলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। যেমন ব্যথা হাতে ভারী জিনিস না তোলা বা ব্যথার দিকে পাশ ফিরে না শোয়া। ব্যথা হাতে বাসের বা অন্য কোনো গাড়ির হ্যান্ডেল না ধরা।
ফ্রোজেন শোল্ডারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিয়মিত এবং সঠিক ব্যায়ামই হল এর একমাত্র ওষুধ। ব্যথা অল্প থাকলে শুকনো গরম সেঁক দিতে বলা হয়। তার সঙ্গে চাই সঠিক ব্যায়াম। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় শোল্ডার আঘাত পাওয়ার ফলে শোল্ডার ফ্রোজেন হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে গরম সেঁকের জায়গায় বরফ দিয়ে সেঁক দিলেও আরাম হয়। তবে বরফ বা গরম কোনোটাই দশ মিনিটের বেশি দেওয়া উচিত না। কিন্তু সেটা দিনে তিনবার, চারবার দেওয়া যেতে পারে। ব্যথার পরিমাণ বেশি হলে বা হাতের মুভমেন্টের খুব বেশি অসুবিধে হলে ব্যথার ওষুথ, মাসল রিলাক্সেশনের ওষুধ খাওয়ার সাথে সাথে ফিজিওথেরাপি ট্রিটমেন্ট যেমন আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, সর্টওয়েভ ডায়াথার্মি, টেন্স, আই.এফ.টি ইত্যাদি ধরনের মেশিন ব্যবহার করে ব্যথার তীব্রতা কমানো হয়। পাশাপাশি এইসব মেশিন দিয়ে চোট পাওয়া জায়গাকে ভেতর থেকে সারিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গেই সঠিক কিছু ব্যায়াম নিয়মিত করলে পুরোপুরি রোগমুক্তি ঘটে। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী কারো কারো ক্ষেত্রে একুশ দিন থেকে একমাস অবধি সময় লেগে যায় সুস্থ হয়ে উঠতে।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন