ফর্সা হওয়ার ক্রিম মেখে ভয়ানক বিপত্তি
প্রফেসর কৃষ্ণজ্যোতি গোস্বামী
2019-01-28 11:22:12

ফর্সা হওয়ার জন্য আমাদের সাধ্যসাধনা, বিশেষ করে মেয়েদের—সবারই জানা। এই ফর্সা হওয়ার ক্রিমগুলো কি আদৌ কাজের? সত্যিই কি ফর্সা হওয়া যায়?
এই ক্রিমগুলোর কোনওটা মাল্টি ভিটামিন বা অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ, কোনওটা আবার ছেলেদের জন্য, কোনওটা আবার আয়ুর্বেদিক। আবার প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর প্রত্যেকেই বলে তাদেরটাই শ্রেষ্ঠ। বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো খুব সতর্ক। নিজেদের করা পরীক্ষার ফল নিজেদের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করে।
কেউ কালো না ফর্সা হবে সেটা মূলত নির্ভর করে আমাদের ত্বকে মেলানোসাইট কোষগুলো কতটা মেলানিন তৈরি করছে, তার ওপর। মেলানিন হল বাদামী-কালো রঙের একটা পদার্থ। ত্বকে মেলানোসাইট কোষগুলো কতটা মেলানিন তৈরি করবে, সেটা নির্ভর করে দু’টো জিনিসের ওপর। প্রথমত, বংশগত কারণ। সেটা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, দেহের অংশবিশেষের ধর্ম। তৃতীয়ত, পরিবেশ-মূলত রোদ বা সূর্যের আলো। তাই দেহের ঢাকা অংশগুলো খোলা অংশের চাইতে সাধারণভাবে ফর্সা হয়।
ফর্সা হওয়ার ক্রিমগুলো সাধারণত সানস্ক্রিণ লোশন হিসেবে কাজ করে। রোদের নানা অংশে আছে, সব অংশ সমান কালো করে না। সূর্যের আলোর আলট্রাভায়োলেট অংশ (ইউ.ভি.এ এবং ইউ.ভি.বি) আমাদের চোখে অদৃশ্য, কিন্তু এরাই আমাদের কালো করে বেশি। সানসস্ক্রিনের নানা কেমিক্যাল নানভাবে ইউ.ভি.এ এবং ইউ.ভি.বি আটকে দেয়। ফলে চামড়ায় সূর্যের আলো লাগলেও কালো হয় কম।
এছাড়া আছে অন্য কিছু কেমিক্যাল যেমন হাইড্রোকুইনোন যা চামড়ার কালো রঙ কমাতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। তবে এই রাসায়নিকটি ব্যবহার কেবলমাত্র ডাক্তারের তত্ত্বাবধানেই হওয়া উচিত। এছাড়াও নিয়াসিনামাইড, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-সি এবং আরও কিছু জিনিস নানা ফরসা হওয়ার ক্রিমে থাকে।
এছাড়াও থাকে পারফিউম এবং হোয়াইট অপটিক্স। পারফিউমের কাজ সবারই জানা। আর হোয়াইট অপটিক্স ত্বকের ওপর সাদা আস্তরণ সৃষ্টি করে, যেটা থাকার ফলে সাময়িকভাবে ব্যবহারকারীও খুশি হয়। কিন্তু ত্বককে ফর্সা করতে এর কোনো ভূমিকা নেই।
হার্বাল, প্রাকৃতিক, আয়ুর্বেদিক ইত্যাদির ওপর বিশ্বাস করে অনেকেই ব্যবহার করেন। কিন্তু এইসব দ্রব্যগুলোর কেমিক্যাল টেস্ট করলে তবেই বোঝা যাবে প্রাকৃতিক না কেমিক্যাল।
আবার শুধু কোম্পানির কথার ওপর বিশ্বাস করলেও বিপদ। কেননা এগুলো কাজ করে কি না, নিরাপদ কি না, সেইসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাব রয়েছে। সবটাই ঐতিহ্য ও পরম্পারর ওপর আস্থা রাখার ব্যাপার।
আয়ুর্বেদিক হোক আর নাই হোক, ফর্সা হওয়ার ক্রিমে যে সব দাবি করা হয়,তার সত্যতার কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ নেই। তবে সানস্ক্রিণ লোশন ব্যবহারে তাদের কিছুটা ফর্সা করার ক্ষমতা থাকতেই পারে, বিশেষ করে যদি সেটা মুখে নিয়মিত মাখা হয়।
সমস্ত ধরনের কসমেটিক জিনিসের মধ্যে যে বস্তুটি সবচেয়ে বেশি চামড়ার অ্যালার্জি করে তা হল পারফিউম বা গন্ধদ্রব্য। প্রায় সব ফর্সা হওয়ার ক্রিমেই পারফিউম আছে। এছাড়াও থাকতে পারে হাইড্রোকইনোন; এই রাসায়নিকটি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা যায় না। আবার অনেক ফর্সা হওয়ার ক্রিমে পারদ থাকে। তবে বেশি মাত্রায় থাকলে অত্যন্ত ক্ষতিকর। আবার ফর্সা হওয়ার ক্রিমে স্টেরয়েড দিলে দ্রুত ফর্সা হওয়া যায়। কিন্তু ত্বকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়্ আয়ুর্বেদিক ক্রিমে উদ্ভিজ্জ স্টেরয়েডও থাকতে পারে।
অবশ্য স্টেরয়েড ক্রিম চর্মারোগের চিকিৎসায় খুব কাজে লাগে। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এর ব্যবহার করা ঠিক নয়। তবে এখন পাড়ার দিদি,দাদা, বৌদি, মাসীরা বলে দিচ্ছেন কালো মেয়ের চিকিৎসা। প্রথম খানিকটা ফর্সা হলেও কিছুদিন বাদে মুখ হয়ে যাচ্ছে লাল, ব্রণশোভিত। আর সবসময় জ্বালা ও চুলকানি।
বিজ্ঞাপনের গুরু গাছে চড়ে বটে, কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে তো চড়ে না। কাজেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই জাতীয় কোনো ক্রিম ব্যবহার করা উচিত নয়।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন