×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

চাপ কাটানোর সেরা উপায় মনের জোর

ডাঃ অমরনাথ মল্লিক
2019-03-08 15:44:16

টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করছেন এমন অভিনেতা-অভিনেত্রী ও রিয়ালিটি শো’তে অংশ নেওয়া ছেলেমেয়রা বিভিন্ন মানসিক সমস্যা, যেমন হতাশা, উৎকন্ঠা বা অনিশ্চয়তা, রাগ ইত্যাদির চিকিৎসা ও সহায়তার জন্যে প্রায়ই আসেন। এর মানে এই নয় যে, তরুণ প্রজন্মের যারা টিভি সিরিয়ালে কাজ করছেন তারা আজকাল বেশি করে মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। মানসিক সমস্যা আগেও ছিল এখনও আছে। কিন্তু এটা ঠিক এখনকার জটিল জীবনযাত্রা, দ্রুত সামাজিক পরিবর্তন, পারিবারিক পরিকাঠামোর তথা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। মানসিক চাপ ও চাহিদা এতই বেড়েছে যে উৎকন্ঠ, হতাশা, নিঃসঙ্গতা, বিরক্তি ও রাগ আমাদের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে ব্যাহত করছে।

অভিনয় এমনই পেশা, যে পেশায় বিশেষ গুণ ও পারদর্শিতার ভীষণ প্রয়োজন থাকে। আসলে অভিনয় সহজ কাজ নয়। প্রতিভা, শিক্ষা ও অনুশীলনের মধ্যে দিয়েই এর স্ফুরণ ঘটে। তাই ভালো অভিনয় করতে গেলে প্রচুর পরিশ্রম লাগে।

আগেকার দিনে যারা ভালো অভিনেতা বা অভিনেত্রী ছিলেন তারা বড় পর্দায় চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। যদিও তখন এত বড় পর্দায় চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। যদিও তখন এত উন্নত ক্যামেরা, মিউজিক বা অন্যান্য ব্যবস্থা ছিল না। সব থেকে বড় কথা এত অর্থ ও ছিল না। সুচিত্রা সেন তখনকার দিনে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পেতেন। কিন্তু সেই অষ্কের পারিশ্রমিক এখনকার দিনে অনেক অভিনেত্রীই পেয়ে থাকেন। উত্তমকুমার, বিকাশ রায় থেকে শুরু করে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বা জহর রায়রা সারা অভিনয় জীবনে যত সময় ক্যামেরার সামনে কাটিয়েছেন আজকের মেগা সিরিয়ালের এক একজন অভিনেতা-অভিনেত্রী তার থেকে অনেক, অনেক বেশি সময় ক্যামেরার সামনে কাটিয়ে থাকে। আমি বলতে চাইছি তখনকার অতি ব্যস্ত অভিনেতারাও অনেকটা সময় শুধু নিজের জন্য পেতেন বা কাজের বাইরেও তাদের সময় থাকতো। কিন্তু এখন এক-একজন অভিনেতা একসঙ্গে দু’তিনটি সিরিয়ালের জন্য দিনের প্রায় দশ-বারো ঘন্টা ব্যয় করে। এত দীর্ঘসময় মেকআপ, লাইট ও অন্য চরিত্রের ভিতরে থেকে সংলাপ বলে হয়তো তাদের নিজের সত্তা ও ব্যক্তিগত জীবনবোধই বিপন্ন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন চরিত্রের রূপ দিতে গিয়ে নিজের স্বকীয়তা, ভালো লাগা, মন্দ লাগার দিকগুলো অনেক সময় হারিয়ে যায়। অনেকের কাছে শুনেছি টানা দশ-বারো ঘন্টা করে সপ্তাহে পাঁচ-ছ’দিন কাজ করতে হয়। আর ছুটি বা রিলাক্সেশন মানে পার্টি, হৈ-হল্লোড় ও মদ খাওয়া। অ্যালকোহল কি কখনো মনের ক্লান্তি বা হতাশা দূর করে? সাময়িকভাবে অ্যালকোহল মুডকে স্টিমুলেট করলেও পরিমাণ বেশি হলেই কিন্তু অ্যালকোহল ডিপ্রেসনই বাড়ায়।

হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে তুলসী চক্রবতী—কেউ কম প্রতিভাবান ছিলেন না। তুলসী চক্রবর্তী যে কত বড় অভিনেতা ছিলেন তা সকলেই জানেন। কিন্তু কতই না আর্থিক অসুবিধের মধ্যে তার জীবন কেটেছে ! আজকের দিনে মিডিয়া ও টিভিতে অর্থের ছড়াছড়ি। অভিনয়ের সঙ্গে যারা জড়িত, কি বড় পর্দা, কি ছোট পর্দা পারিশ্রমিক অনেক বেশি। হঠাৎ মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা এই আশাতীত অর্থ পেয়ে নিজেদের আবেগ, উচ্ছ্বাসের লাগাম অনেক সময় ধরে রাখতে পারে না। হঠাৎ জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে গিয়ে অনেকেই বেসামাল হয়ে পড়ে। যে কোনো নেশার ক্ষেত্রে ‘জিন’-এর প্রভাব আজ বিজ্ঞানসম্মত স্বীকৃতি আদায় করেছে। অ্যালকোহল বা অন্যান্য নেশা যেমন সিগারেট, গাজা বা চরস কে কতটা নিতে পারবে, সেটা যেমন একটা ব্যাপার, তেমনই নেশার জিনিসের প্রতিক্রিয়া সবার ক্ষেত্রে এক নয়। অর্থ, নাম, যশের হাতছানি অনেক সময় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের উদভ্রান্ত করে দেয়। কাজের চাপে ও নেশায় তারা পারিবারিক জীবন থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। অনেক কম বয়সি ছেলেমেয়ের অসাধারণ প্রতভা থাকে। কিন্তু গ্ল্যামার আর অর্থের মোহে তা অনেক সময় অবহেলিত হয়! তখনকার দিনে সিনেমা-থিয়েটারের পত্রিকা বলতে ছিল ‘উল্টোরথ’ ‘সিনেমা জগৎ’। এখন অনেক পত্র-পত্রিকা এবং টি.ভি-র বিভিন্ন চ্যানেলে সিনেমার প্রচার ও সমালোচনা। প্রচারের আলোয় আসার অদম্য ইচ্ছাও অভিনেতাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি করে। অনেকেই প্রচারের আলোকে নিজেকে অতি সাহসী ও বেপরোয়া করে তুলতে চায়। অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী আবার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে চায়। শ্রীমতী সুচিত্রা সেন অভিনয় জগত থেকে স্বেচ্ছায় নির্বাসন নিয়ে সযত্নে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে চেয়েছিলেন। অসুস্থ অবন্থায় বেলভিউ নার্সিংহোম চিকিৎসার সময় তার ছবি তোলার জন্যে জনৈক সাংবাদিক নিজেই রোগী সেজে আই.সি.ইউ-তে ভর্তি হয়েছিলেন! এই ঘটনা বোঝা যায় ইচ্ছে থাকলেও একজন খ্যাতনামা অভিনেতা বা অভিনেত্রী প্রচারের আলো থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারেন না। অভিনয় যাদের পেশা তাদের মানসিক ধৈর্য ও স্থিরতা বড়ই প্রয়োজন। পরিবার ও সমাজের সাহায্য ছাড়া মানসিক শান্তি বজায় রাখা কঠিন।

আজকের প্রজন্মের যেসব ছেলেমেয়েরা অভিনয়কে ‘পেশা’হিসেবে গ্রহণ করছে তাদের সুস্থির ভাবে ভাবনা-চিন্তা করে চলতে হবে। অমিতাভ বচ্চন দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় করছেন। অত বড় মাপের অভিনেতা কমই দেখা যায়। উনি মদ, সিগারেট তো দূরের কথা কোল্ড ড্রিষ্কসও পছন্দ করেন না। অভিনয় করতে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার পর থেকে দীর্ঘদিন স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে জীবন যাপন করেন। ‘মায়েসথেনিয়া গ্রেভিসের’ মতো অসুস্থতাকে নিয়ন্ত্রিত করতে পেরেছেন। সম্পূর্ণ নিরামেষ আহার করেন। ওনার গ্ল্যামার আজও অম্লান ! অভিনেতাদের জীবন যাপনে যথেষ্ট সংযম প্রয়োজন-খাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম ও অবসর বিনোদনই দীর্ঘদিন কাজ করবার শক্তি যোগায়। একটু চেষ্টা করলেই মনের জোরে অনেক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা যায়। আত্মবিশ্বাস ও পজিটিভ চিন্তা হতাশা, উৎকন্ঠাকে দূর করে ও জীবনে সফলতা আনে।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন