কিডনির টিউমার পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব
ডাঃ চন্দ্রনাথ সরকার
2019-03-09 11:37:12
টিউমার কথাটি শুনলেই আমাদের ভয় হয় এই কারণে যে টিউমারটি ক্যানসার নয় তো ! শরীরে অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গের মতো কিডনি বা বৃক্কতেও টিউমার হয় এবং কখনো কখনো তা ক্যানসারও হতে পারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৫০ সালের পর থেকে কিডনি ক্যানসারের হার শতকরা ১২ ভাগ বেড়ে গেছে। যদিও চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগিতর ফলে এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা এখন অনেক বেশি দিন বেঁচে থাকেন।
রোগ লক্ষণ কী কী
ওপরে পেটের পিছন দিকে ব্যথা, মূত্রের সাথে রক্ত, জ্বর, পেটের মধ্যে ফোলা এগুলোর একটি বা সবগুলোই রোগীর লক্ষণের মধ্যে পড়ে। তবে আজকাল আলট্রাসোনোগ্রাফির বহুল প্রয়োগের ফলে অনেক সময়েই কিডনির টিউমার আগেই ধরা পড়ছে। বিশেষত যখন আলট্রাসোনোগ্রাফি করা হচ্ছে অন্য কোনো কারণে।
এ প্রসঙ্গে বলা দরকার যে, আরও কিছু কারণে মূত্রের সাথে রক্ত আসতে পারে। যেমন কিডনিতে পাথর হলে, জীবুণু সংক্রমণ হলে অথবা কিছু ওষুধ খেলে। যদি কোনো ব্যথা বা জ্বালা না হয় এবং প্রস্রাবে টকটকে লাল রক্ত আসে সেক্ষেত্রে আলট্রাসোনোগ্রাফি করা উচিত এতটুকু দেরি না করে। কিডনির এই পরীক্ষার জন্য অবশ্য পেট খালি রাখার কোনো প্রয়োজন হয় না।
কারণ কী কী
যেহেতু সঠিকভাবে কারণ জানা যায়নি সেজন্য অনেক প্রাকৃতিক, জৈবিক এবং পরিবেশগত ফ্যাক্টরকে এই টিউমার তৈরি হওয়ার কারণ হিসেবে ধরা হয়। যেমন ধূমপান, পেট্রোলিয়াম, ক্যাডমিয়াম, অ্যাসবেস্টস প্রভৃতি পদার্থের সংস্পর্শে আসা, বেশি পরিমাণে ব্যথা নিরোধক ওষুধ খাওয়া বা পলিসিস্টিক কিডনির অসুখ (যাতে কিডনিতে অনেক সিস্ট হয়) ইত্যাদি।
চিকিৎসা
যেহেতু আমাদের শরীরে দুটো কিডনি আছে তাই এক্ষেত্রে ক্যানসারের একটি ভালো দিক হল যে, সঠিক সময়ে ধরা পড়লে এটিকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা যায়। অপারেশন করে টিউমারকে বা প্রয়োজনে একদিকের কিডনিকেও আংশিক বা পুরো বাদ দিয়ে দেওয়া সম্ভব। কোনো রোগীল ডান কিডনিতে টিউমার হয়েছে সেক্ষেত্রে যদি পুরো ডানদিকের কিডনিই বাদ চলে যায় অপারেশনের ফলে তাহলে বাঁদিকের কিডনি দিয়েই রোগী সুস্থ শরীরে বাঁচতে পারে।
তবে এই অসুখ যদি ধরা পড়তে দেরি হয় বা কিডনি থেকে ছড়িয়ে গিয়ে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ধরে নেয় তাহলে সেক্ষেত্রে অপারেশন করা যায় না। ওষুধ (কেমোথেরাপি) প্রয়োগ করতে হয়।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমূহ অগ্রগতির ফলস্বরূপ আজ এই রোগের মারণক্ষমতাও বহুল পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। যেখানে পঞ্চাশের দশকে একশো জনের মধ্যে প্রায় পঁয়ষট্টি জনই পাঁচ বছরের আগেই মারা যেত সেখানে এই শতাব্দীতে এই মৃত্যুহার মাত্র তিরিশ শতাংশ। তাই বলা যায় যে, কর্কটরোগ হলেও কিডনির এই রোগটির থাবা থেকে বহুলাংশে মুক্তি আজ সম্ভব।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন