কিডনি উল্টোদিকে থাকলে
ডাঃ পার্থপ্রতিম দত্ত
2019-03-09 11:50:14
এক্টোপিক কিডনি হল কনজেনিটাল ক্রটি। সাধারণ অবস্থায় কিডনি থাকে বুকের যে পাঁজর আছে তার তলায়, অ্যাবডোমেনের দু’পাশে। কিন্তু কখনো কখনো জন্মগত ক্রটির কারণে কিডনির অবস্থান বদলে যায়। কখনো তলপেটে আবার কখনোবা ওপরে এমনকী কখনোবা বিপরীত দিকে থাকে। এইরকম অবস্থাকে বলা হয় এক্টোপিক কিডনি। যদিও এ জাতীয় সমস্যা খুব কম, এক লাখ মানুষের মধ্যে ন’শো জনের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
কী সমসা তৈরি হয়
সাধারণ এক্টোপিক কিডনির কারণে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। রোগীর যদি কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে এক্টোপিক কিডনি নিয়ে ভাবনাচিন্তা না করাই ভালো। যদি সমস্যা হয় তাহলে এক্টোপিক কিডনির ডায়াগনোসিস অর্থাৎ আলট্রাসোনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান বা এম.আর.আই করে দেখা হয়।
এক্টোপিক কিডনি অস্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে যে যে সমস্যা হতে পারে—ইউরিন ঠিকমতো ড্রেনেজ হয় না। কারণ এক্টোপিক কিডনি যখন বিপরীত দিকে বা নীচের দিকে থাকে তখন কিডনি থেকে যে ইউরেটর বেরোয় তাতে কোনো অবস্ট্রাকশন বা বাধা থাকতে পারে, অস্বাভাবিক অবস্থায় থাকার জন্য স্টোন বা পাথর হতে পারে এবং ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইউরিন রিফ্লাক্স হয়ে কিডনিতেও চলে আসতে পারে ব্লাডার থেকে। তখন সংক্রমণ হবার সম্ভাবনা থাকে এবং তার ফলে জ্বর, ব্যথাবেদনা হয়।
এই সময় ডায়াগনোসিসের জন্য সিটি স্ক্যান, এম.আর.আই. ইউ.এস.জি ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়।
কোনো রোগীর এক্টোপিক কিডনির সাথে স্টোন থাকলে সার্জারির প্রয়োজন। কিন্তু মাইক্রো সার্জারি চলবে না। ওপেন সার্জারি করা দরকার কারণে এক্ষেত্রে রোগীর অ্যানাটমিটা স্বাভাবিক থাকে না। সার্জারি করাটাও খুব কষ্টকর হয়। তাই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ভালো করে স্ক্রিনিং করে তবেই ওপেন সার্জারি করা উচিত।
এছাড়াও এক্টোপিক কিডনির জন্য সংক্রমণ হতে পারে, কোনো বাধা থাকতে পারে, দু’টো কিডনি একসাথে জোড়া লেগেও সমস্যা হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসারও হতে পারে।
এত সব কারণের জন্য এক্টোপিক কিডনির পরীক্ষা-নিরীক্ষা সঠিকভাবে করে সার্জারি করার প্রয়োজন হয়।
কোনো বাচ্চারা যদি এক্টোপিক কিডনি থাকে তাহলে অন্য কনজেনিটাল অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে। তাই স্ক্রিনিং করাটা খুবই প্রয়োজন।
এক্টোপিক কিডনি কেন হয় তার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। বাচ্চা যখন মায়ের পেটে থাকে এবং অর্গানগুলো যখন গঠন হতে থাকে তখন অস্বাভাবিক অবস্থানের কারণে অথবা মেটারন্যাল নিউট্রিয়েন্টের কারণেও হতে পারে। শিশু মাতৃগর্ভে শিশু থাকার সময় ঠিকঠাক খাবার না খাওয়া, সঠিক ফ্লুইড (তরল খাবার) না গ্রহণ করার ফলেও হতে পারে এক্টোপিক কিডনি।
প্রতিরোধ
সেরকম কিছু নেই, শুধু যারা মা হতে যাচ্ছেন তাদের সঠিক খাবারের ওপর নজর দেওয়া উচিত। জল বেশি খেতে হবে।
এক্টোপিক কিডনি মানেই যে কিডনি ফাংশন করছে না তা নয়। সমস্যাটা হল অস্বাভাবিক অবস্থায় থাকার জন্য কোনো চোট লাগতে পারে। পাঁজরার তলায় সাধারণ অবস্থায় কিডনি থাকে বলে সুরক্ষিত থাকে কিন্তু এক্টোপিক কিডনিতে সেটা থাকে না বলে অনেক সময় আঘাত লাগতে পারে। আগে থেকে জানা থাকলে খেলাধুলোর সময় একটু সতর্ক থাকা যায় যাতে কোনো আঘাত না লাগে।
আজকাল মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চেকআপ করাতে গিয়ে অনেক সময় ধরা পড়ে যে এক্টোপিক কিডনি স্টোন, সংক্রমণ বা অন্য কোনো অসুখ না থাকলে কোনো কিছু করার দরকার একেবারেই নেই। একদম স্বাভাবিক অবস্থায় যেমন লোকে থাকে তেমনই থাকা উচিত।
প্রস্রাবে জ্বালা, যন্ত্রণা, জ্বর, বমি, সংক্রমণ হলে তো রোগী নিজেই আসবে ডাক্তারের কাছে। তাই অযথা ভয়ের কোনো কারণ নেই।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন