×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

পোড়া কেসে প্রাথমিক চিকিৎসাটা অত্যন্ত জরুরি

ডাঃ অরিন্দম সরকার
2019-03-15 11:01:33

দৈনন্দিন জীবনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনা আকছার ঘটে। একজন মানুষ নানাভাবে পুড়ে যেতে পারে। আগুন লেগে পুড়ে যাওয়ার ঘটনাই বেশি ঘটলেও কোনো কারখানায় দুর্ঘটনাবশত কেমিক্যালে পুড়ে যাওয়া কিংবা ইলেকট্রিক কারেন্টে পুড়ে যাওয়ার ঘটনাও নিছক কম নয়।  বহুতল বাড়ি কিংবা দোকান-বাজার শট সার্কিট হয়ে আগুন লাগার ঘটনা তো আমরা মাঝে মাঝেই দেখতে পাই। তবে পুড়ে যাওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে বাড়িতে।  বিশেষ করে বাড়িতে রান্না করার সময়।  এই সময় অসাবথানতার কারণে মহিলাদের কাপড়ে আগুন লেগে যাওয়া থেকে  শুরু করে গ্যাসের নব খুলে বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা আকছারই ঘটে। বাড়িতে কাজ করার সময় গরম ইস্ত্রি থেকে পুড়ে যাওয়া সুইচ বা সুইচ বোর্ড থেকে তড়িতাহত হয়ে পুড়ে যাওয়ার কারণ তৈরি হয়।  কমবয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে গায়ে গরম জল পড়ে গিয়ে, দুধ বা খাবার উল্টে গিয়ে  পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। প্রদীপ জ্বালাতে গিয়ে বয়স্ক মহিলা বা উৎসবের মরসুমে বাজি পোড়াতে গিয়ে শিশু থেকে যুবক যে কেউ আগুন দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। কেরোসিন তেল গায়ে ঢেলে যারা আত্মহত্যা করতে যায়, ঠিক সময়ে তাদের উদ্ধার না করতে পারলে ক্ষতির পরিমাণ বিপদসীমা পেরিয়ে যেতে পারে। তাতে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়। বিদ্যুৎ নিয়ে যারা কাজ করেন কর্মক্ষেত্রে তড়িতাহত হয়ে তাদের পুড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। কারখানায় অ্যাসিড জাতীয় রাসায়নিক, গ্যাস ইত্যাদি থেকেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে।

পোড়ার পরিমাণ

চামড়ার কতটা গভীরে গিয়ে কতটা ক্ষতি করল সেই ভিত্তিতে যে কোনো পোড়াকে চারটে পর্যায়ে ভাগ করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে পোড়ায় গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। রুল ০৮৯ অনুসারে আগুনে পোড়ার পরিমাপের হিসেব করা হয় এইভাবে—

মুখ ও মাথা       ৯%

সম্পূর্ণ হাত       ৯%

শরীরের সামনের অংশ    ১৮%

শরীরের পিছনের অংশ    ১৮%

সম্পূর্ণ পা         ১৮%

যৌনদ্বার ও মলদ্বার        ১%

আগুন বা গ্যাসে পোড়ার ক্ষেত্রে নিঃশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ভেতরে গ্যাস প্রবেশ করে নাকের ভেতরের অংশ, শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হলে চিকিৎসার গুরুত্ব বেড়ে যায়। অন্যদিকে তড়িতাহত হলে ক্ষত খুব গভীর হাড় পর্যন্ত চলে যেতে পারে। তাছাড়া কখনও কখনও হার্ট বা কিডনিও মারাত্মক রকমের ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দেখা গেছে শরীরের যে অংশ বিদ্যুদের সংস্পর্শে আসে এবং যে অংশ মাটি স্পর্শ করে থাকে তড়িদাহতের কারণে এই দুই অংশে বেশি ক্ষতি হয়।

প্রথমেই যা করা উচিত

আগুনে পোড়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাপড়ে আগুন লাগার পরে মাটিতে গড়াগড়ি খেলে ও মোটা চাদর বা কম্বলে মুড়ে নিলে যেমন দ্রুত আগুন নিভে যায়, তেমনি শারীরিক ক্ষতিও কম হয়। হাত ও পায়ের সাধারণ পোড়া জলের নীচে ধরলে জ্বালা কম হয়, ফোস্কাও কম পড়ে। পুড়ে যাওয়ার ফলে কাপড়েরর কোনো অংশ শরীরে আটকে গেলে সেটাকে জোর করে টেনে না তুলে জলের নীচে ধরা উচিত। ভারতীয় প্রাচীন পদ্ধতি অনুসরণ করে পুড়ে যাওয়া অংশে নারকেল তেল বা আলু ছেঁচা লাগানো যেতে পারে। দ্বিতীয় পর্যায়ে পোড়ার ক্ষেত্রে অবশ্য পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা ভালো। পোড়ার পরিমানণ ১৫%-এর বেশি হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন, সেই সঙ্গে নিয়মিত ড্রেসিংও করা উচিত।

সাবধানতা

রান্নঘরের জানালা সর্বদা খোলা রাখুন, বিশেষ করে কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও রাতে এগজোস্ট ফ্যান থাকলে তা অবশ্যই ব্যবহার করবেন।

গ্যাসের নব যাতে ঠিকঠাক বন্ধ করা হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। গ্যাস পাইপ নিয়মিত পরীক্ষা করা দরকার। সিন্থেটিক কাপড় পরে রান্না করবেন না এবং শাড়ির আচল ও সালোয়ার কামিজের ওড়না  সব সময় কোমরে গুজে রাখুন। শিশুদের দূরে রাখতে হবে যে কোনো দাহ্য বস্তু, গরম দুধ ও গরম জল থেকে। বাড়িতে বিদ্যুদের প্লাগ পয়েন্ট ও দেওয়ালের নীচের দিকে থাকলে এক্ষুনি স্থান পরিবর্তন করা দরকার। বিদ্যুৎকর্মীরা কাজের সময় রবারের জুতো, চোখে গ্লাস, হাতে গ্লাভস পরবেন। কারখানার কর্মীদেরও একই রকম সতর্কতা অবলম্বন দরকার।

বিভিন্ন অঙ্গে জন্মগত কাটা

ঠোঁট কাটা বা তালু কাটাকে ক্লেফট লিপ ও ক্লেফট প্যালেট বলে। এই জন্মগত ক্রুটি দুটো একসাথে বা আলাদাভাবে হতে পারে।

  • ঠোঁট কাটা: এটা সম্পূর্ণ বা অসম্পূর্ণ হতে পারে। ডান ও বাম বা উভয়দিকে একসাথে হতে পারে। বামদিকে তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। মূলত মায়ের অপুষ্টি, ভিটামিনের অভাব ও জিনঘটিত দোষের জন্য দেখা দিতে পারে এই সমস্যা। বাবা ও মায়ের থাকলে শতকরা ২৫ ভাগ সন্তানের হতে পারে। চিকিৎসা হিসেবে তিন মাস থেকে ছ’মাস বয়সের মধ্যে অপারেশন করে ঠিক করা হয়। হালকা সেলাইয়েল দাগ পরবর্তীকালে থাকতে পারে। সম্পূর্ণ কাটা হলে সেইদিকের নাকের ও নাকের অপারেশনও একই সাথে করা হয় অথবা বাচ্চা বড় হলে আট বছর বয়সের পরে করা যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুখের মাড়িও কাটা থাকতে পারে, সেক্ষেত্রেও একই সাথে বা পরে আট বছর বয়সের পর মাড়ির অপারেশন করা হয়।
  • তালু কাটা: এটাও সম্পূর্ণ বা অসম্পূর্ণ হতে পারে। এক্ষেত্রে দুধ খাওয়ার সময় নাক দিয়ে দুধ বেরিয়ে আসে ও অপারেশন না করলে নাকি সুরে কথা বলার সমস্যা দেখা দেয়। খাবার সময় দুধের সাথে হাওয়া বাচ্চার পেটে চলে যায় বলে অল্প খাবারে পেট ভরে যায় ও শিশু অপুষ্টিতে ভোগে।

এক্ষেত্রে শিশুর বিশেষ যত্ন নিতে হবে। বসিয়ে খাওয়াতে হবে। লম্বা চামচে করে বা ঝিনুক দুধ নিয়ে জিভের পিছনের দিকে দিতে হবে। খাবার পরে পিঠে চাপড় দিয়ে ঢেকুর তোলাতে হবে।

চিকিৎসা হিসেবে অপারেশন সাধারণভাবে দশ মাস বয়সে, দশ কেজি ওজন ও দশ মিলিগ্রাম হিমোগ্লোমিন থাকলে করা হয়।

অপারেশনের আগে তালুতে প্লেট লাগানো হয় যাতে খাবার নাক দিয়ে বেরিয়ে না আসে ও দু’পাশের মাড়ি যথার্থ স্থানে থাকতে পারে। দশ মাস বয়স হলে তবেই এই অপারেশন করা হয়। সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘন্টা। অপারেশনের পরে স্পিচ থেরাপি বা কথা বলানোর পদ্ধতি শেখানো হয়।

  • কানের পাতা কাটা বা ছোট কান : কানের পাতা কাটা থাকলে কসমেটিক সার্জারির সাহায্যে ঠিক করা যায়। কোনো কাটা দাগ থাকে না। মানুষের কানের বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হয় ছ’ বছরে। সেজন্য এই অপারেশন ছ’বছর বা তারপরে করা হয়। এই অপারেশন প্রথাগত পদ্ধতিতে দু’বারে করা হয় ও দু’বারের মধ্যে ছ’মাসের ব্যবধান থাকে। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে একবারেও করা যেতে পারে। দুটো পদ্ধতিতেই কানের কার্টিলেজ বা তরুণাস্থির ফ্রেম বুকের কার্টিলেজ থেকে নিয়ে করা হয় ও তারপরে কানে চামড়ার নীচে এটা প্রতিস্থাপন করা হয়। ছ’মাস পরে আবার দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাপ করা হয়। বর্তমানে কার্টিলেজের বদলে সিলিকন ফ্রেম দেওয়া যায়। কিন্তু এর ব্যবহারে কিছু সমস্যা থাকার এখনও জনপ্রিয় হয়নি।
  • চোখের পাতা কাটা: চোখের ওপরের বা নীচের পাতা জন্মগতভাবে কাটা থাকতে পারে। পরিমাণে অল্প হলে সরাসরি প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যম আর বেশি হলে ফ্ল্যাপ সার্জারির মাধ্যমে ঠিক করা হয়।
  • আঘাতজনিত কাটা : এতক্ষণ জন্মগত কারণগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবার আঘাতজনিত কারণ ও পুরনো দাগ বা স্কার ফেস সম্বন্ধে আলোচনা করা যাক।

মুখের বাইরের যে কোনো অংশ কেটে গেলে খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে ও রক্তপাত বন্ধ করে চামড়ার নীচে একটি সেলাই ও চামড়ার ওপরে খুব সরু সুতো দিয়ে সেলাই করা হয়। যে কোনো প্লাস্টিক সার্জেন এই কাজটি ভালোভাবে করে থাকেন। চার বা পাঁচদিনের মাথায় এই সেলাই কাটা হয় ও আঠাযুক্ত কাগজ লাগিয়ে রাখা হয়। কিছু ক্ষেত্রে শুধু চামড়ার নীচে সেলাই দিয়ে অ্যাডেসিভ গ্ল্যু বা আঠা দিয়েও লাগানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে বাইরে কোনো সেলাই থাকে না।

সেলাই কাটার পর সিলিকন শিট এবং জেল ছ’মাস পর্যন্ত লাগানো হয় যাতে দাগ মিলিয়ে যায় বা হালকা হয়। সাধারণভাবে এই সেলাই বলিরেখা বরাবর ফেলতে চেষ্ট করা হয়। চার-পাঁচদিনের পুরনো ক্ষত, কিছুটা ইনফেকশন বা খুব মোটা সুতো দিয়ে সেলাই করা থাকলে সেই ক্ষেত্রে নতুন করে সেলাই করা যেতে পারে। অনেকটা জায়গা ছাল ওঠা হলে স্থায়ী দাগ বা লালচে দাগের সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের কসমেটিক সার্জারি অর্থাৎ ব্লিস্টার গ্রাফট বা পালভেরাজড গ্রাফটের চেষ্ট করা যেতে পারে।

মুখের পুরনো কাটা দাগ স্কার রেভিশন সার্জারির সাহায্যে হালকা করা হয়। এই ক্ষেত্রে পুরনো দাগ বলিরেখা বরাবর ফেলা হয় বা জেড প্লাস্টি করা হয়। অর্থাৎ অনেকগুলো ছোট অংশে ভাগ করা হয়, যাতে প্রথমেই চোখে না পড়ে। অসমান দাগ ও পুরনো সেলাইয়ের ক্ষেত্রে এর সাথে অনেক সময় ডার্মাব্রেশন বা ডায়মন্ড বার দিয়ে ঘষে সমান করা হয় বা লেজারের সাহায্য নেওয়া হয়।

মুখে ব্রণর দাগের জন্য প্রয়োজন অনুসারে কেমিক্যাল পিল, ডার্মাব্রেশন লেজার বা সার্জারির সাহায্য নেওয়া হয়।

কানের পাতা কেটে গেলে তিনটি স্তরে অর্থাৎ সামনের ও পিছনের চামড়া ও তরুণাস্থি আলাদাভাবে সরু সুতো দিয়ে সেলাই করা হয়।

চোখের পাতা কেটে গেলে বা কোনো অংশ নষ্ট হলে প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন। স্কিন গ্রাফট বা ফ্ল্যাপ-এর প্রয়োজন হতে পারে।

ঠোঁট কাটার ক্ষেত্রে তিনটি স্তরে সেলাই করা হয় ও কাটা দাগ যাতে বোঝা না যায় খুব সরু সুতোর সাহায্যে সেইভাবে সেলাই করা হয়।

বাচ্চারা অনেক সময় মুখে কাঠি বা ব্রাশ দিয়ে অসাবধানতাবশত তালু বা গালের ভিতরের অংশ কেটে ফেলে। ছোট আকারের হলে ও রক্তপাত না হলে সেলাই না করলেও চলে। বড় ধরনের হলে সাধারণত সেলাই করা হয়। তবে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। রোগীকে বার বার কুলকুচি করে মুখ পরিষ্কার রাখতে বলা হয়।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন