×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

মোটা হলেই কি নাক ডাকবে

ডাঃ কুন্তল মাইতি
2019-03-15 11:32:12

আজকালকার দিনে নাক ডাকা একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। নাক ডাকার বিভিন্ন গ্রেড আছে, যেমন মাইল্ড স্নোরা, মডারেট স্নোরা এবং হেভি স্নোরা।

বর্তমানে একটা নতুন মেডিকেল টার্মস ব্যবহার করা হয় নাক ডাকার ক্ষেত্রে, স্লিপ অ্যাপনিয়া। এই অবস্থাকে আরো ভালো করে বোঝাতে বলা হয় অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া। স্লিপ মানে, ঘুম, আর অ্যাপনিয়া মানে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ ঘুমের মধ্যে লাংসে বা শরীরে অক্সিজেন ঢোকার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় এর নাম স্লিপ অ্যাপনিয়া।

তাহলে দেখা যাচ্ছে ঘুম আর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার একটা যোগাযোগ আছে। স্লিপ অ্যাপনিয়া নিয়ে অনেক রিসার্চ চলছে এবং মানুষের জীবনে এর একটা বিরাট প্রভাও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। যেমন প্রেসার বা সুগারের সমস্যা বিরাট মহামারির আকার ধারণ করেছে তেমন স্লিপ অ্যাপনিয়াও মানুষের জীবনযাত্রায় একটা বিরাট প্রভাব ফেলেছে।

স্লিপ অ্যাপনিয়া বাড়ার কারণ কী

প্রধান কারণ হচ্ছে ওভার ওয়েট অর্থাৎ বেশি ওজন। এই অতিরিক্ত ওজন আমাদের লাইফ স্টাইল বা জীবনশৈলির একটা বড় কারণ। এর কারণ প্রধাণত আমরা হাটাচলা কম করি, খুবই অলস জীবন যাপনে অভ্যস্ত। আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির সাথে সাথে আমরা এমন কিছু খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হয়েছি যে না চাইলেও কিন্তু সেই কারণে আমাদের শরীরের ওজন কিন্তু বাড়ছে। এবং ওজন বাড়ার সাখে সাখে কিংবা ওজন না বাড়লেও শারীরবৃত্তীয় কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। এটা বাচ্চা, বয়স্ক, যুবা সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে।

মানসিক অবসাদ, কাজেকর্মে উৎসাহ না পাওয়া, খাওয়া হজম না হওয়ার মতো নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এইগুলোর সদূর প্রসারী প্রভাব নাক ডাকার সমস্যাতে আসছে। এছাড়া আছে জন্মগত কিছু ত্রুটি, যেমন নাকের হাওয়ার প্যাসেজে বাধা।

নাক থেকে ফুসফুস পর্যন্ত হাওয়ার যাত্রা পথের কোনো জায়গাতে যদি বাধা থাকে সেটার জন্য হতে পারে অথবা কখনো কখনো হচ্ছে কখনো হচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যে। স্ট্যাটিক বা ডায়ানামিক অবস্ট্রাকশন যদি বিভিন্ন কারণে থাকে তাহলে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া আসে।

জন্মগত কিছু কারণে নাক থেকে শুরু করে এই ম্যাক্সিলা সাইনাসের অংশ প্যালেট বা তালু এবং স্বরযন্ত্রের ভিতর দিয়ে যেখানে হাওয়াটা যাচ্ছে এই জায়গাগুলোর গঠনগত কিছু ক্রটি থাকে। কিছু কিছু জন্মগত অসুখ আছে, কিছু ক্ষেত্রে জন্মগত ক্রটির কারণে আমাদের হাওয়া যাওয়ার প্যাসেজে কিছু কিছু গন্ডগোল থাকে যার জন্য হাওয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়।

কিছু জেনেটিক রোগ আছে যেগুলো ফ্যামিলিতে নেই, হঠাৎ করে হয়েছে, এমন রোগ জন্মগত কোনো ক্রটির জন্যে তাও হতে পারে। প্রধানত নাকের, ভেতরকার গঠন, চোয়ালের গঠন, জিভের পেছন দিকের অংশ, স্বরযন্ত্রের ক্রটির জন্যও হতে পারে। বয়স বাড়লে হাওয়া সংবহনকারি যে অংশ নাক থেকে ফুসফুসের মধ্যে সেই টিস্যুগলো আলগা হতে থাকলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্লিপ অ্যাপনিয়া দেখা যায়।

কোনো মানুষের যদি হঠাৎ করে ওজন বাড়ে, তাহলে কী হবে

যাদের বরাবরই ওজন বেশি তাদের ক্ষেত্রেও সমস্যা হয় ঠিকই কিন্তু হঠাৎ করে ওজন বেশি হলে সমস্যার প্রাদুর্ভাটা একটু বেশি। এই সব রোগীদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় দিনের বেশির ভাগ সময় এদের ঘুম পায়। কারণ রাতে ঘুম ভালো হয় না। ঘুমের বিভিন্ন স্টেজ আছে। গভীর ঘুম বা ডিপ স্লিপের একটা স্টেজ আছে কিন্তু সেই অবধি ঘুমটা যায় না। কারণ ঘুমের দু’-তিনটি স্টেজ যাওয়ার পরেই এদের নাক থেকে ফুসফুসের মধ্যে হাওয়া যাওয়ার যে প্যাসেজ সেখানে কোথাও বাধা পাওয়ার কারণে অক্সিজেন ফল করে। ওই সময় অক্সিজেন কুড়ি-ত্রিশে পৌছে যায়, সাধারণত যেটা পঁচানব্বই থেকে একশোর মধ্যে থাকার কথা। রোগীর শরীরে তখন হঠাৎ একটা ঝাকুনি হয় এবং রোগীর ঘুম তখন হালকা স্তরে চলে যায়। রোগী আবার অক্সিজেনটা বাড়াবার চেষ্টা করে। আমরা অনেক সময় দেখি যিনি নাক ডাকছিলেন তার ঘুমটা একটা ঝাকুনি দিয়ে ভেঙে যায়। একটা ঝাকুনির মতো হয়ে জেগে যায় রোগী। আসলে তখন সে ঘুমোচ্ছে। ফলে সর্বক্ষণই ঘুমটা বাধাপ্রাপ্ত হয়।

এর ফলে কী হয়

এর ফলে তার শরীরে অক্সিজেন কম ঢুকতে পার। যার ফলে শরীরের ক্যালোরি বার্ণ হয় না। ফলে উত্তরোত্তর ওজন বাড়তে থাকে। শরীরে ক্যালোরি বার্ণ না হলে রোগী যদি কম পরিমাণেও খায় তাহলেও ওজন বাড়ে। ওজন বাড়ার কারণটা অন্য জায়গায় আছে। ওজন বাড়ার কারণটা অন্য জায়গায় আছে। ওজন বাড়ছে এবং শরীরে অক্সিজেন যাচ্ছে না, সারাদিনের মানসিক অবসাদ, ঘুম ভালো হচ্ছে না তার ফলে মাসল টোন কমছে, মানসিক ইরিটেশন হচ্ছে, অ্যাংজাইটি-অবসাদে ভুগছে, যার প্রেসার ছিল না ধীরে ধীরে প্রেসার বাড়ছে, যার প্রেসার আগে থেকেই ছিল তার প্রেসার কন্ট্রোল হচ্ছে না,কম-বেশি হচ্ছে। যার সুগার ছিল না ধীরে ধীরে তার সুগার বাড়ছে। ডায়াবেটিসের দিকে যাচ্ছে, ওষুধ দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। শরীরে চর্বি জমছে, রক্তে কোলেস্টেরল বাড়লে যে সমস্যা হয় সেই ডিসলিপিডিমিয়া হচ্ছে। যার কারণে হার্টের অসুখ বাড়ছে, হাত-পায়ের রক্তসংবহনকারী শিরা-উপশিরাগুলো এই অ্যাথেরোস্কোরোসিস কোলেস্টেরল বাড়ার কারণে ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে, যে কারণে হার্টের অসুখ, বুকে ব্যথা, সিড়ি দিয়ে উঠতে গেলে হাঁপ ধরে যাচ্ছে। হাঁটতে পারছেনা, একটু ছুটে বাস ধরতে পারছে না, হাতে-পায়ে ব্যথা হচ্ছে, কিছুক্ষণ কাজ করার পর সিভিয়ার ক্র্যাম্প হচ্ছে ইত্যাদি এইসব নানা সমস্যা কিন্তু স্লিপ-অ্যাপনিয়া থেকে হচ্ছে।

ক্রনিক অসুখ ছাড়াও যে সব অসুখ ছিল না সেগুলো আসছে। ক্রনিক অসুখকে উত্তরোত্তর বাড়িয়ে দিচ্ছে, এর প্রভাব কিন্তু মারাত্মক সুদূরপ্রসারী।

কারোকারে ক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যে যে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে, সেই অক্সিজেন যদি অনেকক্ষণ কম থাকে, হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে রোগী মারাও যেতে পারে। এরকম ঘটনা প্রায়ই ডাক্তারবাবুরা পেয়ে থাকেন।

ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সাধারণ নাক ডাকায় এগুলো হয় না। খুব সিভিয়ার নাক ডাকার রোগী যাদের চিকিৎসা হয় না, যারা কোনো জীবনশৈলী পরিবর্তন করেন না তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের সাডেন কার্ডিয়াক সমস্যা এবং মৃত্যুর ঘটনাও দেখা যায়। এটাতে ভয়েল যথেষ্ট কারণ আছে যদি না সাবধান হওয়া যায়।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন