×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ লক্ষণরেখা পার করলেই ভয়ংকর বিপদ

ডাঃ সবুজ সেনগুপ্ত
2019-03-15 12:28:31

তখন আর কিছু করার ছিল না। মিনতি হালদার বড় হাসপাতালের বড় ডাক্তারবাবুর কাছে পৌছনোর অনেক আগেই তার চোখ চিরকালের জন্য বুজেছে।

অথচ এমনটি হবার কথা ছিল না। মিনতি হালদারের কোরো রোগ ছিল না। শুধু মা হতে চেয়েছিল সে।

গ্রামের সরকারি হাসপাতালে নিয়মিত দেখিয়ে এসেছে সে। ডাক্তারবাবু কখনো থাকেন কখনো থাকেন না। রক্তচাপও তো নাকি প্রথম দিকে স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু সাত-আট মাসের পর থেকেই একটু একটু করে বাড়তে থাকে। প্রথম দিকে ডাক্তারবাবু খুব একটা গুরুত্ব দেননি যদিও দেওয়া উচিত ছিল। কারণ মিনতির মা-বাবা দু’জনের উচ্চ রক্তচাপের রোগী। বাবা তো মিনতির বিয়ের কিছুদিন পরেই হার্ট অ্যাটাকে সংসারের মায়া কাটিয়েছেন। এই বিপদসংকেতগুলোকে ডাক্তারবাবু খুব একটা গুরুত্ব দেননি। যাইহোক যখন ডেলিভারির তারিখ আর মাত্র একমাস দূরে—মিনতি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেল। তার ক’দিন আগে থেকেই অবশ্য হাত-পাগুলো খুব ফুলে যাচ্ছিল। তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে দেখা গেল রক্তচাপ সাংঘাতিক ভাবে বেড়ে গেছে। ডাক্তারবাবু তৎক্ষণাৎ শহরের বড় হাসপাতালে নিয়ে যাবার পরামর্শ দিলেন। গাড়ি ভাড়া করে সবাই মিনতিকে নিয়ে শহরের দিকে রওনা হল। বন্যায় রাস্তাঘাট অবস্থা কাহিল। জোরে চালানো দূরে থাক,স্বাভাবিক গতিতেও চালানো মুশকিল। যাইহোক, একঘন্টার রাস্তা প্রায় তিন ঘন্টায় শেষ করে হাসপাতালে পৌছনোর মিনিট দশেক আগে আরকবার অজ্ঞান হয়ে গেল মিনতি এবং এবার খিঁচুনির সাথে। তার পরের কথা আগেই বলেছি।

মিনতি হালদারের এই পরিণতি কোনও সভ্য দেশে কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু আমাদের দেশে শহরে না হলেও গ্রামেগঞ্জে এখনও ঘটে চলেছে এমন লজ্জার মৃত্যু! আচ্ছা রক্তচাপ ব্যাপারটা কী? শিরা দিয়ে রক্ত যখন প্রবাহিত হয়ে যায় তখন শিরার দেওয়ালে যে চাপ দেয় সেটাই রক্তচাপ। দুটো অংশে ডাক্তারবাবুরা এটা মেপে থাকেন। সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক। সাধারণ ১২০/৮০ মিমি অব মার্কারি হচ্ছে স্বাভাবিক রক্তচাপ। গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি সময় এটা বেশির ভাগ মেয়ের ক্ষেত্রে একটু কমে যায়। এটাকে বলা হয় ‘মিড প্রেগন্যান্সি ড্রপ’। কিন্তু কারো কারো মিড প্রেগন্যান্সি ড্রপ পাত্তা না দিয়ে রক্তচাপ বাড়তে থাকে। ১৪০/৯০ হচ্ছে লক্ষণরেখা। এটাকে স্পর্শ করলেই ডাক্তারবাবুদের ভ্রু কুঁচকে যায়, ছাড়িয়ে গেলে তো কথাই নেই।

প্রতিটি গর্ভবতী মেয়েকে রক্তচাপ পরীক্ষা করে তবেই তাকে চিকিৎসাপত্র দেওয়া উচিত। এটা এতই জরুরি।

সাধারণত অনেকটা হেঁটে বা কষ্ট করে জার্নি করে এলে তৎক্ষণাৎ তার রক্তচাপ পরীক্ষা করা হয় না। একটা স্বাভাবিক যুক্তি যে এই পরিশ্রমের দরুন মেয়েটির সিস্টোলিক রক্তচাপ একটু বেশি দেখাবে, যেটা ওর স্বাভাবিক অবস্থা নয়। সুতরাং একটু বিশ্রাম নিয়ে জিরিয়ে টিরিয়ে যে রক্তচাপটা দেখা হয় সেটাই ওর স্বাভাবিক রক্তচাপ।

ছাত্রাবস্থায় আমরা একটা বই খুব পড়তাম। এন্টিনেটাল কেয়ার। লেখকদ্বয় ব্রাউন আর ব্রাউন। মানে পিতাপুত্র। আমরা বলতাম বুড়ো ব্রাউন আর ছোকরা ব্রাউন। এই বইটার কতগুলো কথা বেশ ভাববার। ওদের বইতে ছিল, কেই পরিশ্রম করে হাপাতে হাপাতে এলে তৎক্ষণাৎ তার রক্তচাপ দেখবে আর বেশি দেখলে সেটাকে গুরুত্ব দেবে। ওদের বক্তব্য ছিল, এইটুকু পরিশ্রমে যার সিস্টোলিক রক্তচাপ বেশি দেখায় তাকে মার্কা মেরে রাখো। ভবিষ্যতে সে-ই তোমাকে বেশি রক্তচাপ নিয়ে সমস্যায় ফেলবে। একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না এই তত্ত্ব।

বেশি রক্তচাপ আর তার সাথে পা ফোলা যদি থাকে তো সেই রেগিণীকে নিয়ে ডাক্তাবাবুরা তক্ষুণি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আগেই বলেছি ১৪০/৯০ হচ্ছে লক্ষণরেখা, এটা স্পর্শ করলেই সতর্ক হয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে পূর্ণ বিশ্রাম, সুনিদ্রা। পাতে নুন একদম বাদ। পাঁচ-ছ’দিনের জন্য ট্রাষ্কুলাইজার (ডায়াজিপাম) দিয়েও দেখা যেতে পারে।

এই লক্ষণরেখা ছাড়িয়ে ১৫০/১০০ হলে রক্তচাপ কমানোর জন্য ওষুধ খেতে হবে। মিথাইল ডোপা, লেবেটালর ইত্যাদি ওষুধ দিয়ে ডাক্তারবাবুরা এই রক্তচাপকে বাগে আনার চেষ্টা করেন। উদ্দেশ্য শুধু গর্ভস্থ শিশু যেন কিছুটা পরিপূর্ণতা পায়। মোটামুটি একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থায় পৌছলে সিজারিয়ান ডেলিভারি করিয়ে মা-শিশু দু’জনকেই বিপদমুক্ত হয়ে থাকে।

এই পদক্ষেপ সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে নেওয়া চাই। নইলে পরিণতি মিনতি হালদারের মতো হতে পারে। বাগে আনতে না পারা রক্তচাপ ডেকে আনতে পারে ভয়ংবর খিচুনিকে, যেটা ডাক্তারি পরিভাষায় একল্যামটিক ফিট। এই একল্যামসিয়া গর্ভাবস্থায় বোধহয় সবচাইতে ভয়ংকরী। সুখের কথা আজকাল গ্রামাঞ্চলেও সুচিকিৎসকেরা পৌঁছে যাচ্ছেন আর সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে একল্যামসিয়া বা তার জন্য মৃত্যুর হার অনেক কমে এসেছে।

গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতেও পারে। হঠাৎ রক্তচাপ কমে গেলে মাথা ঘুরতে বা ঝিম ঝিম করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের মতো সংকটজনক যদিও নয় তবুও হঠাৎ পড়েটড়ে গেলে (নিম্ন রক্তচাপের জন্য) সংকটজনক হতেই পারে।

নিম্ন রক্তচাপের বড় কারণ হচ্ছে ডিহাইড্রেশন, মানে শরীরে জল কমে যাওয়া। প্রচন্ড গরমের সময়ও এটা হতে পারে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও হঠাৎ রক্তচাপ কমে গিয়ে মূর্চ্ছা যাওয়ার মতো বিপদ হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় যদি শোওয়া থেকে হঠাৎ কেউ দাঁড়িয়ে পড়ে বা অনেকক্ষণ বসে থেকে হঠাৎ দাড়িয়ে পড়ে রক্তচাপ কমে গিয়ে মাথা ঘুরে যেতে পারে বা সাময়িক ভাবে অঞ্জানও হয়ে যেতে পারে। তখন চোখে দেখাও সমস্যা হতে পারে।

যদি ডিহাইড্রেশনের জন্য রক্তচাপ কমে যায় তো চিকিৎসক ইনট্রাভেনাস ড্রিপে জীবনদায়ী তরল (সেলাইন বা ডেক্সট্রোস) দিয়ে মুমূর্ষূ রোগীকে চাঙ্গা করে তোলেন।

কম রক্তচাপে কতকগুলো টোটকা।

  • বেশি কেরে জল খাওয়া।
  • পাশ ফিরে শোওয়া।
  • যদি হঠাৎ মাথা ঘুরে যায় তো বসে পড়ে বা শুয়ে পড়ে মাথা শরীরের বাকি অংশের চাইতে নীচে লেভেলে রাখলে কিছুক্ষণ পরে সব ঠিক হয়ে যায়।
  • শরীরের ভঙ্গিমা বদল করার সময় যেমন শোওয়া থেকে হঠাৎ উঠতে গিয়ে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে উঠতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়ামও কিন্তু রক্তচাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করবে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন