ক্রমাগত বমিতে খাদ্যনালী ফেটে যেতে পারে
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-10-24 12:24:58
অতিরিক্ত বমি, কিছুতেই বন্ধ না হওয়া, বমির সাথে রক্ত
কিংবা ডায়রিয়া,বাড়ির প্রাথমিক চিকিৎসায় কোনোভাবেই
যা উপশম হচ্ছে না, সঙ্গে যদি জ্বর থাকে তাহলে
অবশ্যই ডাক্তার দেখান অথবা হাসপাতালে নিয়ে যান।
হঠাৎ করে বমি শুরু হতে পারে নানান কারণে। বমি ইচ্ছেকে বলে নসিয়া। আর পাকস্থলি থেকে খাবার বেরিয়ে আসাকে বলে বমি। বমি হওয়ার ইচ্ছে অর্থাৎ বমি বমি ভাব এবং বমি, কোনো অসুখ নয় বরং রোগের লক্ষণ। অনেক রোগের কারণে বমি হতে পারে।
কী কী কারণে বমি হতে পারে
- ফুড পয়জনিং বা খাবারের বিষক্রিয়ার কারণে অসুস্থ থেকে বমি হতে পারে।
- গলব্লাডার অসুস্থ থাকলে।
- পাকস্থলিতে সংক্রমণের কারণে।
- খুব বেশি খাওয়া-দাওয়ার ফলে এবং অ্যাসিড হওয়ার কারণেও বমি হতে পারে।
- বারবার পায়খানা।
- প্রেগন্যান্সির প্রথমদিকে, শতকরা পঞ্চাশ থেকে নব্বইভাগ ক্ষেত্রে বমির ইচ্ছে এবং শতকরা পঁচিশ থেকে পঞ্চান্ন ভাগ ক্ষেত্রে বমি হতে দেখা যায়।
- হার্ট অ্যাটাকেও অনেক সময় বমি হয়।
- ব্রেনে আঘাত পেলে।
- পাকস্থলিতে ঘা থাকলে।
- ক্যানসারের কারণে কেমো বা রেডিওথেরাপি নিতে হলেও বমি হয়।
- মাইগ্রেন ও মাথার যন্ত্রণার কারণে বমি হয়।
- মেনিনজাইটিস হলে।
- এনকেফেলইটিসের কারণে।
- অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কারণেও বমি হয়।
- কিডনির অসুখেও বমি হতে দেখা যায়।
- বমির ইচ্ছা কিংবা বমি অনেক সময় রোগের লক্ষণ হিসাবে প্রকাশ পায়। যেমন অ্যাপেন্ডিসাইটিস, ইনটেস্টাইন ব্লক, ক্যানসার, টিউমার ইত্যাদি ক্ষেত্রে। কোনো কোনো ওষধের কারণেও বমি হতে দেখা যায় বিশেষত শিশুদের মধ্যে। বিষক্রিয়ার কারণেও বমি হয়। এক্ষেত্রে অবশ্য চেষ্টা করা হয় রোগীর যাতে বেশি করে বমি হয়, যাতে পাকস্থলি থেকে সমস্ত বিষটা উঠে আসে।
এছাড়া পাকস্থলি বা ক্ষুদ্রান্ত্রে আলসার হলেও বমি হতে পারে।
শিশুদের বমির কারণ
শিশুদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ে ভাইরাল সংক্রমণ, ফুড পয়জনিং, দুধে অ্যালার্জি হওয়ার কারণে পেট খারাপ, ইনটেস্টাইনে ব্লক থাকার কারণে, খুব বেশি বেশি খেয়ে ফেললে কাশতে কাশতে বমি হয় এবং হাই ফিভার থাকলেও কখনো কখনো বাচ্চারা বমি করে। খাবার পরে বমি কিংবা বমি বমি ভাব অনেক সময় খাবার বিষক্রিয়া থেকে হয়। গ্যাসট্রাইটিসের থাকলেও বমি হতে পারে।
বমির কারণে কী কী হতে পারে
- ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতা।
- শরীরের লবণ বা নুনের পরিমান কমে যায়।
- পুষ্টির অভাব।
- বমি বমি করতে করতে খাদ্যনালী ফেটে যেতে পারে।
অনেক সময় বমির সাথে রক্ত বেরিয়ে আসে। এক্ষেত্রে বমি করতে করতে গলা চিরে গিয়ে রক্ত আসতে পারে। আবার পাকস্থলির ক্ষত, পাকস্থলির ক্যানসার, অ্যাসপিরিন বা ব্যথা নিরোধক ওষুধের কারণে, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ এবং অ্যাকিউট লিউকেমিয়া থেকে রক্তবমি হতে পারে।
বমি বা বমির ইচ্ছে কি খুব ক্ষতিকর
সাধারণত বমি ক্ষতিকারক নয় তবে অনেক ক্ষেত্রে বমি হওয়ার কারণের মধ্যে লুকিয়ে থাকে জটিল রোগ। যেমন ব্রেনের মেমব্রেনের লাইনিং, ইনটেস্টাইন ব্লকেজ, অ্যাপেন্ডিসাইটিস এবং ব্রেন টিউমারের মতো গুরুতর কিছু রোগে বমির ভাব, বমি দেখা যায়।
বড়দের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রে হলে অতটা চিন্তার কিছু নেই। কারণ তারা বুঝতে পারে তাদের জলের তেষ্টা দেখে। ঠোঁট, মুখ শুকিয়ে যায় জলের জন্য। এসব ক্ষেত্রে বারবার জল খেতে হয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটাই খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে যদি বমি এবং ডায়রিয়া হয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা কী হবে
রোগীকে যখন ডাক্তারবাবুর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, ডাক্তারবাবু জানতে চেষ্টা করেন রোগীর সমস্যাটা কী। বমি কখন হয়েছে, কতবার হয়েছে, কী খাবার সে খেয়েছিল ইত্যাদি। বমির চিকিৎসার অন্যতম বিষয় হল কখনোই যেন শিশুটির ডিহ্রাইড্রেশন না হয়। আমরা জানি বারবার বমি করলে বমির মধ্যে দিয়ে শরীর থেকে অনেকখানি জল বেরিয়ে যায়। এই সিভিয়ার ডিহাইড্রেশনের কারণে বাচ্চাটিকে হয়তো হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। অ্যান্টি নসিয়া মেডিসিন দিয়ে বমি বন্ধ করা হয় বা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
অ্যান্টিবায়োটিক সাহায্য করে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে। ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন অথবা ও.আর.এস, যেটা নুন, চিনি ও জল সহযোগে বানানো হয় বা কিনতেও পাওয়া যায়, বারবার কওে সেটা খাওয়াতে হয়।
কখন যাবেন ডাক্তারবাবুর কাছে ?
অতিরিক্ত বমি, কিছুতেই বন্ধ না হওয়া, বমির সাথে রক্ত কিংবা ডায়রিয়া, বাড়ির প্রথমিক চিকিৎসায় কোনোভাবেই যা উপশম হচ্ছে না, সঙ্গে যদি জ্বর থাকে তাহলে অবশ্যয় ডাক্তার দেখান অথবা হাসপাতালে নিয়ে যান।
সাবধানতা
বমি হলে যথাসম্ভব পরিস্কার জল রোগীকে খাওয়ান। যতক্ষণ না বমি বন্ধ হবে কোনো সলিড ফুড খাওয়াবেন না। নিজের আয়ত্তের বাইরে চলে গেলে অবশ্যয় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ।