×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

পুড়ে যাওয়া কখন কতটা বিপজ্জনক

ডাঃ অরিন্দম সরকার
2019-03-27 11:24:07

পুড়ে যাওয়ার ঘটনা সাধারণত বেশি ঘটে বাড়িতে। রান্না করতে গিয়ে কাপড়ে আগুন লাগে, গ্যাস স্টোভ ফেটে কিংবা গ্যাস সিলিন্ডার বার্স্ট করে দুর্ঘটনা তো আকছারই ঘটে। গরম ইস্ত্রি থেকে পুড়ে যাওয়া বা সইচবোর্ডে শক লেগে, শট সার্কিট হয়ে, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে গরম জল গায়ে পড়ে বা গরম জিনিস পড়ে গিয়ে পা, পেট পুড়ে যাওয়ার ঘটনাও নেহাত  কম ঘটে না। বাজির টুকরোয় পুড়ে যায় একটা গোটা বস্তি, সিগারেট-বিড়ির ছুড়ে দেওয়া টুকরো থেকেও ঘটে যায় কতটা দুর্ঘটনা। ধানের গোলা পুড়ে যায় লন্ঠনের আলোয় আর বড় বড় বসসবাড়ি, স্টিফেন কোর্ট, আমরি জ্বলে ওঠে শট সার্কিট থেকে। আগুন সবকিছুকে গ্রাস করে নেয় লেলিহান শিখা দিয়ে। এক নিমেষে গ্রাস করে নেয় সবকিছু স্থাবর, অস্থাবর, তাজা প্রাণ। আগুণের ধোয়াতে দমবন্ধ হয়ে মারা গেছে কতলোক কতবার।

তাই আগুন নিয়ে খেলা করা কখনোই উচিত নয়। তবু তারই মধ্যে যারা পুড়ে গিয়ে বেঁচে যান এবং কিছুটা দগ্ধ হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে হবে যাতে রোগী সম্পূর্ণ সেরে যেতে পারেন। ঝলসোনো পোড়া দাগ কারো কারো জীবন, বিশেষ করে মেয়েদেরকে দহন করে সারাটা জীবন। কোনো অংশ আটকে আছে তাহলে টানাটানি করবেন না, চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তিনি কেটে বার করে দেবেন পোশাক এবং ড্রেসিং করে কোনো মলম দেবেন যা পোড়ার কারণে ব্যবহুত হয়। তিনি যে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে দেবেন সেগুলো ঠিকমতো খাওয়ান। পুড়ে যাওয়া মাত্র পোড়া জায়গায়  বরফ জলের ধারা দিলে জ্বলন কিছুটা কম হয় বা শীতল জলের পট্রিও ক্ষতস্থানে দিলে রোগীর আরাম বোধ হবে।

সাধারণত ছোটখাটো পুড়ে যাওয়া দু’-তিন সপ্তাহেই শুকিয়ে যায়। ক্ষতস্থান শুকিয়ে গেলে ওই জায়গাটা লালচে বা গোলাপী রঙের হয় অথবা মেলানিন নষ্ট হয়ে সাদা দাগের সৃষ্টি হয় আবার অনেকটা জায়গা জুড়ে কালো হয়েও যেতে পারে হাইপার পিগমেন্টেশনের ফলে।

একটা কথা মনে রাখতে হবে, বয়স্ক বিশেষ করে প্রাপ্ত বয়স্কদের শরীর যদি পনেরো থেকে কুড়ি শতাংশ পুড়ে যায় তাহলে হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে দেওয়া দরকার। শিশুদের ক্ষেত্রেও দশভাগ পুড়লে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। কারণ পোড়ার সাথে সাথে অনেক রকম কমপ্লিকেশন চলে আসে। আগুন পুড়ে গেছে বলেই যে   বিপজ্জনক তা হয়তো নয়, আবার অনেক সময় কম পুড়লেও ক্ষতির পরিমাণ বেশি থাকে।

 ধরা যাক, মুখের একটা পাশ পুড়ে গেছে। কিন্তু তাতেই তার হয়তো চোখের পাতা পাড়েছে, চোখ নষ্ট হয়েছে, কান নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক সময়ই দেখা গেছে পোড়ার কারণে গলা দিয়ে পোড়া গ্যাস শ্বাসনালীতে ঢুকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, ফুসফুসের কোষকে নষ্ট করেছে।

ইলেকট্রিক বার্ন সব সময় গভীর থাকে হিট বেশি থাকার কারণে হাত বা পায়ের অংশ খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।ইলেকট্রিক বার্ন থেকে গ্যাংগ্রিন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। গ্যাংগ্রিন হলে হাত বা পায়ের অংশেকে বাদ দিতে হয়। অনেক সময় নার্ভও বাদ যায়। তখন সার্জারির প্রয়োজন হয়।

কাদের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক

যাদের কিডনি ফেলিওর কিংবা হার্টের অবস্থা ভালো নয় কিংভা ডায়াবেটিস আছে সে সব ক্ষেত্রে অল্পস্বল্প পুড়ে যাওয়া মানেও হাই রিস্ক। যে সব মহিলা প্রেগন্যান্ট তাদের ক্ষেত্রেও পুড়ে যাওয়া মানেই খুবই ঝুকির। কারণ রোগীর সেপ্টিসেমিয়া হয়ে মৃত্যুও হতে পারে। আবার কোনো পুরুষ বা মহিলার যদি নীচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলেও অনেক সময় বিপজ্জনক হতে পারে।

যেসব ক্ষেত্রে স্নায়ু, শিরা, অস্থি, মাংসপেশি পুড়ে যায় সেগুলো কিন্তু বিপজ্জনক নক কেস হিসেবে চিকিৎসকরা চিহ্নিত করেন। কারণ এইসব ক্ষেত্রে চিকিৎসা চলাকালীনও রোগী মারা যেতে পারে।

চিকিৎসা

ছোটখাটো পুড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ফোলা জলভরা অংশটাকে স্টেরিলাইজ করে, কোনো কাচি দিয়ে কেটে মলম লাগিয়ে ড্রেসিং করে দেওয়া হয়। পুড়ে যাওয়া অংশে অয়েন্টমেন্ট বা ভেসলিন বেসড নন-অ্যান্টিবায়োটিক লোশন লাগানো যেতে পারে যেমন, লিকুইড প্যারাফিন। যাদের পুড়ে গিয়ে সাদা হয়ে গেছে সেখানে স্টেরয়েড অয়েন্টমেন্ট লাগানো হয়। অন্যদিকে হাইপারপিগমেন্টেশন হয়ে শুকিয়ে যাওয়া ক্ষতস্থান কালচে হয়ে গেলে মাস তিনেক অপেক্ষা করা হয়। তার পরেও যদি জায়গাটি স্বাভাবিক না হয় তবে হাইড্রোকুইনোন বেসড মলম লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়, তাতে কালচে ভাবটা অনেকটা কমে।

দ্বিতীয় পর্যায়ের যে পোড়া সেগুলো হয়তে একটু বেশি এলাকা জুড়ে হয়েছে, সেই জায়গাগুলো অনেক সময়ই লাল হয়ে ফুলে ওঠে, চুলকোয় কিংবা বারবার ফেটে যাবার প্রবণতা থাকে। এই রকম ক্ষেত্রে তিনরকম পন্থায় চিকিৎসা হতে পালে। প্রেসার গার্মেন্ট পদ্ধতি অর্থাৎ মোজার মতো একটা জিনিস পরে ক্ষতস্থানে চাপ দেওয়া হয়। ফলে কোলাজেন সিন্থেসিস হয়ে আনস্টেবল বার্ণ কোলায়েড স্টেবল হয়ে যায়। দ্বিতীয় অতিরিক্ত ফুলে গেলে সিলিকন জাতীয় ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয়। তৃতীয়ত আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ নিয়ে লেজার ব্যবহার করা হচ্ছে। লাল হয়ে যাওয়া অংশে ইনটেনস পালস লাইট থেরাপি করা হয়। এতে খুব দ্রুত কাজ হয়। লাল ভাবটা কমে যায়। চামড়ার ওপর দিয়ে যে শিরাগুলো দেখা যায় সেখানে ফ্রাইবোসিস হতে শুরু করে। এতে চুলকানিও থাকে না, আর পুড়ে যাওয়া অংশের ব্যথাও কমে যায়। একটু পুরনো ক্ষত বা ক্ষতস্থানের গভীরতা কিছুটা বেশি, যেখানে স্কার হয়ে আছে বা জায়গাটি কালো হয়ে গেছে, সেখানে নন-সার্জিক্যাল পদ্ধতিতে স্কিন গ্রাফটিং ও করা হয়। চামড়ার একই স্তরে থাকা যে সব ক্ষত কালো হয়ে গিয়ে বিকৃত হয়ে গেছে তাকে স্বাভাবিক করে তুলতে ফ্র্যাকশনাল কার্বন ডাই অক্সাইড লেজারের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এতে গ্রাফট খুব মসৃণ হয়। শুকনো স্কারগুলো একটু ভেজা ভেজা হয়ে যায়।

আগুনে পোড়ার কারণে রোগীর ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথার ওষুধ এবং উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার প্রয়োজন। শরীরের বেশির ভাগ চামড়া নষ্ট হয়ে গেলে অপারেশন করে বাদ দেওয়া হয়। এরপর যেটুকু চামড়া শরীরে থাকে তা বাড়িয়ে নিয়ে পোড়ার ক্ষতস্থান ঢাকা হয়। যদি যথেষ্ট পরিমাণ চামড়া না থাকে তাহলে অন্য লোকের চামড়া নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়। চামড়া না পাওয়া গেলে শিশুর জন্মের সময় মায়ের শরীরে যে ফুল বা প্লাসেন্টা থাকে তা থেকে পাতলা মেমব্রেন ছাড়িয়ে নিয়ে ব্যবহার করা হয়। তবে সেই মেমব্রেন ব্যবহার করার আগে এইচ. আই.ভি ও হেপাটাইটিস রোগ আছে কি না তা পরীক্ষা করা দরকার।

যাদের পুড়ে গেছে তাদের উচ্চ প্রোটিনযুক্ত ও ক্যালোরি আছে এমন খাদ্যের তালিকা রোজকার জীবনে রাখতে হবে।

পুড়ে গিয়ে অনেক সময় হাত, পা ও গলার বিকৃতি দেখা যায়, তাই বার্নের চিকিৎসা চলাকালীন একজন ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্য প্রয়োজন যাতে প্রতিটি অঙ্গ নড়াতে কোনো অসুবিধে না হয়।

কসমেটোলজিস্টের ভূমিকা

পুড়ে গিয়ে বা বিদ্যুতের কারণে শক লেগে পুড়ে গেল অনেক সময় হাত বা পায়ের কিছুটা অংশ বাদ দেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে একজন কসমেটোলজিস্ট কৃত্রিম ভাবে হাত পা তৈরি করে তার জীবন চলার পথটাকে সুগম করতে পারেন। কারো যদি চোখের পাতা বা কান পুড়ে যায় তিনি সেগুলো নতুন করে তৈরি করে দিতে পারেন, সাদা দাগ থাকলে লেজারের সাহায্যে স্কিন গ্রাফট বা লাইট থেরাপি করতে পারেন। মাথার চুল পুড়ে গেলে চুল গ্রাফটিং করে বসিয়ে দেওয়া হয়। মুখ পুড়ে গেলেও স্কিন গ্রাফটিং করে নর্মাল জীবেনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

পুড়ে যাওয়া বিশেষত যাদের ৩০-৪০ ভঅগ পুড়ে গেছে তাদের একটু বিশেষ যত্ন আবশ্যক। কারণ আগুণে পোড়া রোগীর বেশির ভাগ সময় ইনফেকশন হয়ে সেপ্টিসেমিয়া হয়ে যায় । এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে। তাছাড়া আগুনে পুড়ে শরীরে বিকৃতি আসে তাই রোগী ডিপ্রেশনে ভোগে। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারি চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক সাপোর্টটাও দিয়ে যেতে হবে।

সাবধানতা

আগুন মানেই বিপজ্জনক। বাড়িতে বাচ্চা থাকলে হাতের কাছ থেকে লাইটার এবং দেশলাই দূরে রাখতে হবে। বাড়ির অয়্যারিং চেক করতে হবে নিয়মিত। বেশি পুরনো বাড়ি হলে একটু সজাগ দৃষ্টি রাখুন যাতে কোথাও কোনো কানেকশন লুজ না থাকে। ইলেকট্রিকের কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটামাত্রই মেন সুইচ বন্ধ করুন। কেউ যদি সুইচ আটকে যায় তাদে কখনোই ধরবেন না। কাঠের টেবিল বা চেয়ারে উঠে তাকে টেনে নামান। যদি  চোখ কিংবা অন্য কোথাও ছেকা লাগে বা কিছু আগুনের ছিটে এসে পড়ে তাহলে বারবার ঠান্ডা আগুনের ছিটে এসে পড়ে তাহলে বার বার ঠান্ডা জলে ধুতে হবে জায়গাটা, হাত-পা পুড়লে ঠান্ডা জলের ধারা দিতে হবে বা জলপট্টি। বিছানাতে বা মশারির মধ্যে বিড়ি-সিগারেট খাওয়া কখনোই নয়। পুড়ে যাওয়া মাত্রই হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে চিকিৎসার জন্য। যদি টিটেনাস বা অন্য কোনো ইঞ্জেকশনের দরকার হয় রোগীকে তা দিতে হবে। দাহ্যবস্তু সব সময় দূরে রাখুন। একটা ভুলে হয়ে যেতে পারেআমরি বা বড় বাজার কিংবা স্টিফেন কোর্ট। তাই আগুন থেকে সাবধানে থাকুন।


সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন