ফাইব্রো সারকোমা অহেতুক ভয় পাবেন না
ডাঃপ্রসেনজিৎ সরকার
2019-03-27 11:30:38
ফাইব্রয়েডসের সমস্যা নতুন কিছু নয়। অনেকেরই হয়। ইউরেটাসের পেশিতে একটা স্তর থাকে যেটাকে মায়োমেট্রিয়ম হওয়ার কারণে বেশি ব্লিডিং হয়। বাচ্চা হওয়ার সমস্যা আসতে পারে।
পেশি বা মাসল দু’ধরনের। এক ভলান্টারি মাসল যেগুলোকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। যেমন হাতের মাসল, পায়ের মাসল, পেটের মাসল। এগুলোকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাই এগুলো হল ভলান্টারি মাসল। আর এক ধরনের মাসল আছে যারা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেটা নিজের মতো করে কাজ করে যায়, নিয়ন্ত্রণের ব্যাপার থাকে না। যেমন হার্টের মাসল, লাংসের মাসল, খাদ্যনালীর মাসল, ইউরিনারি বা প্রস্রাবের থলের মাসল। এই মাসলগুলো কিন্তু প্রতিনিয়নত কাজ করে যাচ্ছে। খাদ্যনালীর মাসল কাজ করে যাচ্ছে তাই খাবারটা হজম হতে হতে নীচের দিকে নামছে। হার্ট তার কাজটা করে যাচ্ছে ক্রমাগত, না থেমে করে যাচ্ছে। এগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।
এই দু’ধরনের মাসলেই কিন্তু সারকোমো হতে পারে। সারকোমা মানে হচ্ছে মাসল থেকে উৎপন্ন ক্যানসার।
গায়নোকোলজিক্যাল সারকোমা
গায়নোকোলজিক্যাল মাসল সাধারণত ইউটেরাস সম্পর্কিত হয়। ইউটেরাসকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। অর্থাৎ ইনভলানটারি মাসল। ইউটেরাসে সারকোমা নিজের থেকেও হতে পারে। আবার অনেক সময় এটা হয়তো ফাইব্রয়েড আকার দেখা দিতে পারে।
ইউটেরাসে ফাইব্রয়েড কিন্তু নিরীহ টিউমার। অধিকাংশে ক্ষেত্রেই এর কোনো লক্ষণ থাকে না। অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, প্রচন্ড পেটে ব্যথা এসব নিয়ে রোগী যখন ডাক্তারের কাছে আসেন তখন রোগটি ধরা পড়ে।
অনেক সময় দেখা যায়, যে টিউমারটিকে ফাইব্রয়েড মনে হয়েছিল সেটা আসলে একটি সারকোমা।
যদি প্রচন্ড ব্লিডিং বা রক্তস্রাব সাথে টিউমারটি খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায় তাহলে ভাবতে হবে ফাইব্রয়েড সারকোমার কথা। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা করতে হবে তাড়াতাড়ি। যেটা সাধারণ ফাইব্রয়েডে একটু সময় নিয়ে করা চলে।
এগুলো ইউটেরাসে হলে দেখা যায় হঠাৎ করে টিউমারটি খুব বেড়ে গেল, পিরিয়ডে গোলযোগ কিংবা পেটে ব্যথা শুরু হল।
কোন বয়সে হতে পারে
পঞ্চাশ বছরের আশেপাশে ফাইব্রয়েড সারকোমা হতে পারে। তার মানে দেখা যাচ্ছে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে এসেছে ঠিক ওই সময় এর প্রকোপ খুব বেশি দেখা যায়। অন্য সময় যে হবে না তা নয়, কিন্তু পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি বন্ধ হয়ে যাবার সময়টায় একটু বেশি রিস্ক থাকে।
রোগ নির্ণয়
রোগী যখন তার রোগ-লক্ষণগুলো নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান, চিকিৎসক তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারেন যে পেটে একটা টিউমারের মতো মনে হচ্ছে, খুব রক্তস্রাব হচ্ছে কিংবা হঠাৎ করে টিউমারটি বাড়তে শুরু করেছে। চিকিৎসক প্রথমিক পরীক্ষার পরই যেটা করতে দেন সেটা হল আলট্রাসোনোগ্রাফি। চিকিৎসক যদি সন্দেহ করেন যে ফাইব্রয়েড সারকোমা, তা হলে সেটাকে সি.টি.স্ক্যান করতে বলা হয়। বর্তমানে সি.টি.স্ক্যান করতে বলা হয়। বর্তমানে সি.টি.স্ক্যান-এর চেয়েও যেটা বেশি পরিষ্কার ছবি তুলে ধরে তা হল এম.আর.আই বলা হয়।
এবারে দেখার বিষয় যদি সারকোমা হয় তাহলে কতটা কী ছড়িয়েছে শরীরের ভেতর, সেজন্য এম.আর.আই করা হয়। এম.আর.আই সে ব্যাপারে একটা স্পষ্ট ছবি তুলে ধরে।
সাধারণত ক্যানসার ছড়ায় তিনভাবে—
- রক্তের দ্বারা।
- লিম্ফ নোড/ গ্ল্যান্ডের দ্বারা।
- সোজাসুজি আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
সারকোমা সবচেয়ে বেশি ছড়ায় রক্তের মাধ্যমে। প্রথম দিকে বোঝা যায় না। বেশির ভাগ সারকোমা শেষ পর্যায়ে ধরা পড়ে। তার মানে ব্লাড দিয়ে আগেই লিভারে পৌছে গেছে, সেই অবস্থায় সাধারণত রোগটি ধরা পড়ে। ফলে রোগীর বাচার আশা খুব কম থাকে। কারণ যখন রোগটি ধরা পড়ে চিকিৎসা করানোর মতো অবস্থায় থাকে না।
চিকিৎসা
চিকিৎসা মানে সারকোমাকে অপারেশন করে বাদ দিতে হবে। জরায়ুতে হলে জরায়ু অথবা অন্য যেখানে হোক সারকোমা, বাদ দিতে হবে। যেহেতু সারকোমা অনেক দেরিতে ধরা পড়ে তাই শরীরে অনকেটা ছড়িয়ে পড়ে।
যাই হোক, চিকিৎসা হিসেবে প্রথমে অপারেশন পরে রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপি অবশ্যই প্রয়োজন।
যদিও তা সত্ত্বেও বাচার আশা খুব ক্ষীণ। কারণ অনেকটা ছড়িয়ে পড়ার পর ডায়াগনোসিস হয়।
আশার কথা
তবে কেউ যেন না ভাবেন যে ফাইব্রয়েড টিউমার মানেই ক্যানসার। মাত্র এক শতাংশ ফাইব্রয়েড টিউমার সারকোমোতে পরিণত হয়। তাই অযথা আশাষ্কিত হবার কিছু নেই। ফাইব্র্রয়েড হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনিই বলে দেবেন আপনার কী চিকিৎসা করা উচিত। কোনো রোগকেই দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করিয়ে ফেলে রাখা কাজের কথা নয়। তাই চিকিৎসার সুযোগ নিয়ে সুস্থ থাকুনম ভালো থাকুন।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন