×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

নীল হয়ে যাওয়া শিশু

ডাঃ শান্তনু গুড়িয়া (শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ)
2019-03-27 11:41:26

জানেন কি, আপনার ছোট্ট সোনামনিটিরও হতে পারে হার্টের অসুখ? শিশুদের হার্টের অসুখ অনেক সময় বাবা-মা’র নজর এড়িয়ে যায়, কেননা লক্ষণগুলো ঠিকঠাক জানা না থাকলে অন্য কোনো রোগের উপসর্গ বলে মনে হতে পারে। শিশুদের হার্টের অসুখ মূলত জন্মগত বা কনজেনিটিাল হার্ট ডিজিজ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকোয়ার্ড হার্ট ডিজিজও দেখা যায়। এক হাজার আট জন নবজাতক (০.৮%) জন্মগ্রহণ করে জন্মগত হার্টের অসুখ বা সি.এইচ.ডি নিয়ে। যদি আগেভাগে ডায়াগনোসিস সম্ভব না হয় তবে ক্রিটিক্যাল সি.এইচ.ডি নিয়ে জন্মানো নবজাতক জন্মের প্রথম দিনেই সম্পূর্ণ নীল হয়ে যায় (ডাক্তারি পরিভাষায় ‘সায়ানোসিস’) অথবা ‘শক’ অবস্থয় চলে যেতে পারে। যেগুলো খুবই ভয়ানক এমার্জেন্সি এবং নবজাতকের মৃত্যুর অন্যতম কারণও হতে পারে। যে অসুখগুলো অতটা মারুত্মক নয় সেগুলো অনেক সময় বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অন্য কোনো অসুখের সময় পরীক্ষা করতে করতে হঠাৎ পাওয়া অস্বাভাবিক হৃৎপিন্ডের শব্ধ হিসেবে ধরা পড়তে পারে। তাই বাবা-মা’কে পরামর্শ, জন্মগত হার্টের অসুখের কী কী লক্ষণ হতে পারে জেনে নিন।

লক্ষণ

  • নবজাতক শিশুটি কাদতে কাদতে নীল হয়ে যায়
  • বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় দুধ টানতে সমস্যা হয়। শিশুটি ধীরে ধীরে খায় এবং প্রতিবার খুব কম পরিমাণ খায়। একটুতেই ক্লান্ত হয়ে যায়।
  • কোলে বসিয়ে রাখলে ভালো থাকে। বিছানায় শুইয়ে দিলে কষ্ট হয়।
  • সবসময় বিরক্ত হয়ে থাকে, ঘ্যানঘ্যান করে।
  • শিশুটি ঠিকমতো টেনে খেতে পারে না। তাই অনেকক্ষণ ধরে খায়।
  • খাওয়ার সময় কপাল, মাথার তালু বেশ ঘেমে যায়।
  • বড় বাচ্চারা হাটা বা দৌড়ানোর সময় সহজেই হাপিয়ে যায়। উবু হয়ে বসে পড়ে। ঠোঁট, আঙুলের ডগা নীল হয়ে যায়।
  • হঠাৎ হঠাৎ শিশু অজ্ঞান হয়ে যায়।
  • ঘন জ্বর, সর্দি-কাশি বা রেসপিরেটরি ইনফেকশন লেগেই থাকে। এমনকী হাসপাতালে ভর্তি করারও দরকার পড়ে।
  • শিশুর বৃদ্ধি (ওজন) ঠিকমতো হয় না। উচ্চতার তুলনায় এসব ক্ষেত্রে ওজনই বৃদ্বিই বেশি ব্যাহত হয়।

‘ব্লু-বেবিজ’ হার্টের অসুখ

 এ ধরনের অসুখে শিশু খুব কাদে। হাঁটা অথবা দৌড়ানোর সময় হঠাৎ নীল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে শিশু অজ্ঞান হয়ে যায়, এমনকী মারাও যেতে পারে। এই রোগটি তুলনায় বিরল হলেও এ সম্পর্কে দু’চার কথা জেনে রাখা জরুরি। এই রোগের অন্যতম কারণটি হল ’টেট্রালজি অফ ফ্যালট (টি.ও.এফ)। ব্লু-বেবি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাদের হাঁটু যতটা সম্ভব বুকের কাছে নিয়ে আসতে হবে। এতে ওদের নীল হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা আটকানো যাবে। এছাড়া শরীরে ঠিকঠাক জলের পরিমাণ বজায় রাখতে হবে। রোদে রোদে দৌড়াদৌড়ি বন্ধ করতে হবে। অনেক সময় ‘প্রোপানোলর’ জাতীয় ওষুধ কার্যকরি।

রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজ

(আর.এইচ,ডি)

এটি একটি অ্যাকোয়ার্ড বা জন্মের পরে হওয়া হার্টের অসুখ। সাধারণত পাঁচ বছর বয়সের পর এই অসুখ দেখা যায়। মূল লক্ষণ অস্থি-সন্ধিতে ব্যথা ও ফোলা ভাব। কাজেই এ জাতীয় লক্ষণ দেখা দিলেই বাত বা জয়েন্টের সমস্যা বলে ব্যথার ওষুধ কিনে খাওয়াবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। মাথায় রাখুন, হার্টের অসুখেও এমনটা হতে পারে।এটি প্রতিরোধ করার জন্য শিশুটিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে প্রতি একুশ দিন অন্তর পেনিসিলন ইঞ্জেকশন দিতে হবে। দশ বছরের নীচে এর ডোজ ৬ লাখ আই.ইউ এবং দশ বছরের উর্ধ্বে ১২ লাখ আই.ইউ। প্রসঙ্গত বলে রাখি এই ইঞ্জেকশন দেওয়ার চব্বিশ থেকে ছত্রিশ ঘন্টার পর পর্যন্ত। তাই স্কুলে পড়া শিশুদের ক্ষেত্রে শনিবার বিকেলে হল ইঞ্জেকশন নেওয়ার পক্ষে আদর্শ। আর.ডি.এইচ প্রতিরোধে এটি একটি অত্যাবশ্যক পদক্ষেপ। খুব ভালো হয় যদি পঁয়ত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত ইঞ্জেকশন নিয়মিত নেওয়া যায়। তবে প্রাক্টিক্যালি রিউম্যাটিক জ্বরের পর পাঁচ বছর পর্যন্ত ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। যাদের পেনিসিলনে অ্যালার্জি আছে, তাদের ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার ওষুধ এরিথ্রোমাইসিন দেওয়া যেতে পারে।

এবার আসি, কেন কী কী কারণে হয় জন্মগত হার্টের অসুখ সে বিষয়ে। খুব কম ক্ষেত্রেই কারণ পাওয়া যায়।

কারণ

  • জেনেটিক (১০%): ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতা, জেনেটিক মিউটেশন। এর মধ্যে ‘ডাউন সিনড্রোম’ অন্যতম প্রধান কারণ।
  • পরিবেশ (৩-৫%): কেমিক্যালস, যেমন আইসোট্রেটিনয়ান, অ্যান্টিএপিলেপ্টিক বা মৃগিরোদের ওষুধ ইত্যাদি। কিছু ভাইরাস যেমন রূবেলা বা জার্মান মিজলস। মা বিশেষ কিছু মাদক গ্রহণ করলে কিংবা ধূমপানের অভ্যাস থাকলে। গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের সময় মা হাই অলটিটিউডে থাকলে।
  • জেনেটিক + পরিবেশগত (৮৫%): কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো একটি সন্তানের হার্টের অসুখ থাকলে পরবর্তী সন্তানটির ক্ষেত্রে এ অসুখের আশষ্কা বেড়ে যায়। তবে মায়ের কাছ থেকে শিশুর এই অসুখ পাওয়ার ঝুঁকি তুলনায় কম।

অ্যাকোয়ার্ড হার্টের অসুখ

এগুলো মূলত ডিজেনারেটিভ হার্ট ডিজিজ। ইনঅ্যাক্টিভ লাইফস্টাইল এবং অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়ার প্রবণতা শিশুদের মধ্যে শারীরিক স্থূলত্ বা ওবেসিটি এবং উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার জন্য দায়ী। যার ফলে হার্টের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

ডায়াগনোসিস কীভাবে

  • হাইপার অক্সিয়া টেস্ট : নীল হয়ে যাওয়া নবজাতকটিকে ১০০% অক্সিজেনে রাখা হয়। এবং তার ধমনীর রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন যদি ১০০ এম.এম.এইচ.জি দাঁড়ায়, তবে মনে করা হয় তার নীল অবস্থার জন্য ফুসফুসের রোগ দায়ী। অপরদিকে যদি স্যাচুরেশন ১০০%-এর নীচে থাকে, তবে হার্টের অসুখ সন্দেহ করা হয়।
  • বুকের এক্স-রে : হার্টের সাইজ বিভিন্ন রকম হতে পারে বিভিন্ন হার্টের অসুখে, যেমন—
  • বুটের মতো হার্ট: টেট্রালজি অফ ফ্যালট (টি.ও.এফ)
  • ডিমের মতো হার্ট : ট্রান্সপজিশন অফ গ্রেট আর্টারিজ
  • স্নো-ম্যান বা তুষারমানবের মতো হার্ট: টোটাল অ্যানোমালাস পালমোনারি ভেনাস রিটার্ন।
  • রিব নচিং বা পাঁজরা ক্ষয়ে যাওয়া : কো-আর্কটেশন অফ অ্যাওর্টা (বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে)
  • টু-ডি ইকোকার্ডিওগ্রাফি+ ডপলার স্টাডি হার্টের মধ্যে ছিদ্রের অবস্থান, ছিদ্রের আকৃতি, রক্ত চলাচল বিষয়ক বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়।
  • ই.সি.জি

চিকিৎসা

মূলত দু”ধরনের মেডিক্যাল এবং সার্জিক্যাল।

শিশুটির বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সুনিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় হার্টের ওপর ওয়ার্কলোড কমানোর জন্য ডায়ইউরেটিক জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ডিজিটক্সিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। তবে এগুলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো উপযুক্ত ডোজে ব্যবহার করা আবশ্যক।

শিশুদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ে নন-সার্জিক্যাল মেথডে চিকিৎসা  করার চেষ্টা করা হয়। ক্যাথিটার ইন্টারভেনশনের সাহায্যে হৃদযন্ত্রের ছিদ্র, ভালভের সমস্যার চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। তবে কিছু জটিল সমস্যার অবশ্য সার্জারির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন মাসকিউলার ভি.এস.ডি-তে ছিদ্রটি অনেক সময় দু’বছর আপনা থেকেই বুজে যায়। তাই এসব ক্ষেত্রে দু’বছর বয়সে আপনা থেকেই বুজে যায়। তাই এসব ক্ষেত্রে দু’বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায়। আবার কোনো কোনো জটিল কেসে সঙ্গে সঙ্গে সার্জারি করতে হয়, না হলে তা সফল হয় না। তাই এ ক্ষেত্রে হার্টের সার্জেনের মতামতই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জন্মগত হার্টের অসুখ ধরা পড়লে তাই অযথা কালবিলম্ব না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হোন। অযথা আতষ্কিত হবেন না।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন