সুগারের লক্ষণ ও প্রতিকার
ডাঃ অলকেন্দু ঘোষ
2019-03-27 12:46:24
অল্প বয়সে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে অর্থাৎ যারা টাইট-ওয়ান শ্রেণীভুক্ত তাদের চেহারা সাধারণত পাতলা হয়। আর যারা টাইট-টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন তারা মূলত মোটাসোটা হন।
লক্ষণ
- দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ করে মানুষটি খুব রোগা হতে শুরু করেছে। অথচ সে প্রচুর পরিমাণে খাচ্ছে। খিদে আছে। স্বাভাবিক বা তার চেয়ে বেশি। যেন রাক্ষুসে খিদে।
- বারবার জলতেষ্টা। আকন্ঠ পিপাসা।
- প্রচুর পরিমাণে এবং বারবার প্রস্রাব হচ্ছে। সাধারণত রাতের দিকেই যেতে হচ্ছে বারবার।
- একটা অস্বাভাবিক ক্লান্তি। সারাদিন কাজকর্ম সবই করছে কিন্তু প্রচন্ড ক্লান্ত।
সাধারণত এইসব লক্ষণগুলো নিয়েই মানুষ চিকিৎসকের কাছে আসেন। বলা যায় এটা কোনো মানুষের কাছে প্রথম সতর্কবার্তা ডায়াবেটিসের।
এছাড়া দেখা যায় শরীরের কোথাও কেটে গেলে সহজে তা শুকোচ্ছে না।
দু’ ধরনের ডায়াবেটিসেই মূলত একই ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এই ক্ষতিগ্রস্ততার পরিমাণের খানিকটা তারতম্য আছে। টাইপ-ওয়ানে কতকগুলো অর্গান বা অঙ্গ-প্রতঙ্গ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার টাইপ-টু তে অন্য কতকগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। কিডনি বা হার্ট কোনটা কত ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা ডায়াবেটিস কোন ধরনের তার ওপর নির্ভর করে। এইভাবে আলাদা বিভাগ করে নেওয়ার জন্য চিকিৎসার পদ্ধতি আলাদা করা সম্ভব হয়েছে। এতে সঠিক চিকিৎসাও খানিকটা সহজ হয়েছে।
ডায়াবেটিস শরীরের রোগ প্রতরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায়। সাধারণভাবে আমাদের শরীরে কিছু ব্যাক্টেরিয়া থাকে যেগুলো আমাদের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু ডায়াবেটিকদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে এরা এই ব্যাক্টেরিয়াগুলো থেকেই বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়।
ডায়াবেটিস শরীরের সমস্ত আভ্যন্তরীণ যন্ত্রপাতি বা অর্গানগুলোকে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। ব্রেন, চোখ, হার্ট ,লাং, কিডনি কোনোটাই এর আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায় না। তবে আক্রমণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিডনি, চোখ ও মস্তিষ্কের। তাই এগুলো নিয়ে বেশি সচেতনতা আবশ্যক। এগুলোর ক্ষতিগ্রস্ততাকে আমরা অর্গান ড্যামেজ বলি।
সচেতনতা
নিয়ম করে ছোটবেলা থেকেই অবশ্যভাবে কিছু ব্যায়াম করে যেতে হবে। যাতে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রম অবশ্যই হয়। কেবল মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া নয়, শারীরিক পরিশ্রমই রক্তে শর্করার পরিমাণকে বাড়তে না দিতে অনেকটা সাহায্য করবে।
ফার্স্ট লাইফ, ফাস্টফুড থেকে দূরে থাকতে হবে। খাদ্য তালিকায় টাটকা শাক-সবজি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যে সব মানুষরা অত্যন্ত ফাস্ট লাইফ কাটায়, পরিশ্রম থেকে যারা শত হাত দূরে, জীবন কত উচুতে ওঠা যায়, কত বেশি উপার্জন করা যায় এই যাদের ধ্যানজ্ঞান, যারা ফাস্ট ফুড অভ্যস্ত তাদের সুগার হওয়ার সম্ভাবনা বহু বেশি, এদের বংশগতভাবে সুগার থাকুক আর না থাকুক।
জন্ডিস নামটির সাথে আমরা সকলেই অল্পবিস্তর পরিচিত। কারণ বেশিরভাগ লোকই জীবনের কোনো না কোনো সময় এই অসুখটির দ্বারা কাবু হয়েছে। এই অসুখটি থেকে সাবধান। কারণ জন্ডিস হলে তাকে সনাক্ত করা সহজ নয়। জন্ডিস হয়েছে, অধিকাংশ মানুষ সেটা বুঝতেই বহু সময় অতিবাহিত করে ফেলেন। ফলস্বরূপ জন্ডিস তখন মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং তাতে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই জন্ডিস সম্বন্ধে একটা ধারণা থাকা খুব দরকার। তাহলে বড় কোনো বিপত্তির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানো সম্ভব।
ভাইরাল হেপাটাইটিসে আমাদের যকৃতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এটি সংক্রামিত হয় খাবার আর পানীয়ের মাধ্যমে। আমাদের যকৃতে যে কোষগুলো থাকে, তাদের বলা হয় হেপাটোসাইট। এই কোষগুলো হেপাটাইটিস ভাইরাসের দারা আক্রান্ত হয়। এই অসুখের প্রধান লক্ষণগুলো হল ক্ষুধানিবৃত্তি, বমি বমি ভাব, সঙ্গে অল্প তাপমাত্রা। প্রথম দফায় থাকে সমস্ত শরীরে একটা প্রদাহ, চুলকানি, সাধারণত সেটি হয় চোখে, ত্বকে এবং পায়ের নীচে।
প্রতিরোধ
- প্রথমে যেটা মেনে চলতে হবে তা হল কোনোরকম ভারি কাজ অথবা পরিশ্রমের কাজ একেবারেই না করা। রোগীকে বেশিরভাগ সময় বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিতে হবে।
- জনডিসের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ জলপান করা বাঞ্ছনীয়।
- যেহেতু হেপাটাইটিস লিভারের অসুখ, তাই গ্লুকোজের জল নিয়মিত কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর পান করতে হবে।
- যদি অসুস্থ ব্যক্তি অনবরত বমি করেন তাহলেও তাকে গ্লুকোজের জল খাইয়ে যেতে হবে, তসে সেটা আই.ভি. রুটের মাধ্যমে অর্থাৎ ইন্ট্রাভেনাস বা শিরার মধ্যে দিয়ে গ্লুকোজ শরীরে প্রবেশ করাতে হবে।
- জনডিসের ভয়াবহতা বা জটিলতা কমাতে হলে যে ব্যাপারটির ওপর সবচেয়ে বেশি নজর রাখতে হবে সেটি হল রোগীর বা আক্রান্ত ব্যক্তির ডায়েট। ওষূধের সাথে সাথে সঠিক খাবার জনডিস কমাতে সাহায্য করে।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন