×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

মায়ের অপুষ্টি থেকে শিশুর চোখের নানা সমস্যা

ডাঃ এস .মুখার্জি
2019-03-29 11:20:16

ঘরে-বাইরে আজকার বেশির ভাগ ছেলেমেয়েদের চোখেই চশমা দেখতে পাই। ছোট বাচ্চা হোক বা কিশোর-কিশোরী, বেশির ভাগেরই চোখে  আজ বেশি পাওয়ারের চশমা ঠাসা। এসব দেখে স্বাভাবিকই  এই ভাবনা আসতে পারে যে আজকাল মানুষ কি বেশি চোখের অসুখে ভুগছে। উত্তর জানার আগে আমরা জেনে নিই যে কীভাবে আমরা দেখতে পাই।

আমাদের চোখের বাইরের যে স্তর আছে, তার ছ’ভাগের পাঁচ ভাগ সাদা রঙের এক প্রকার আঁশলা টিস্যু দিয়ে তৈরি, যার নাম স্ক্লেরা। এই স্ক্লেরা অস্বচ্ছ অর্থাৎ  এর মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশ করতে পারে না। আর চোখের সামনের ছ’ভাগের এক ভাগ জুড়ে যে স্বচ্ছ অংশ তার নাম কর্নিয়া। কোনো বস্তু থেকে আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে এই কর্নিয়ার মধ্য দিয়েই চোখের অ্যান্টিরিয়র চেম্বারে প্রবেশ করে। এর পর লেন্স এই আলোকরশ্মিকে চোখের একেবারে পিছনের স্তর রেটিনায় এনে ফেলে। অসংখ্য আলোকরশ্মি এই রেটিনার বস্তুটির একটি  ছবি তৈরি করার পর, সেই ছবি বা সংকেত যখন অপটিক নার্ভ হয়ে মস্তিষ্কের ভিস্যুয়াল এরিয়া বা দর্শন অঞ্চলে গিয়ে পৌঁছয় তখনই আমরা দেখতে পাই। নানা কারণে এই দৃষ্টিশক্তি কিংবা দর্শনেন্দ্রিয়ের সমস্যা হতে পারে। আর তার জন্য আমাদের পাওয়ার যুক্ত চশমা ব্যবহার করতে হতে পারে।

শিশু তার জম্মের সাথে সাথে পাওয়ার নিয়ে জন্মায়। জন্ডিস, ডায়াবেটিসের মতো পাওয়ার জন্মগত হতে পারে। সাধারণত আমাদের দূরে ও কাছের দৃষ্টিশক্তি যখন ক্ষীণ হয়ে আসে তখন পাওয়ার যুক্ত চশমার প্রয়োজন হয়। স্বাভাবিক একটি নির্দিষ্ট বয়সে এর প্রয়োজন ‍কিন্তু বর্তমানে শিশু বয়সে বা কৈশোর বয়সেই পাওয়ার যুক্ত চশমা প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। শিশু যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখন অন্যান্য নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরির সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয় শিশুর চোখ। ফলে গর্ভাবস্থায় মা যদি অপুষ্টি, মিজলস বা অন্য কোনো জটিল অসুখে ভোগেন তাহলে শিশু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জন্মাতে পারে চোখের নানা রকম জটিলতা নিয়ে।

আমাদের চোখের পাওয়ার নিয়ন্ত্রণ করে ভিটামিন ‘এ’। শিশুদের ক্ষেত্রে যেটা মাতৃদুগ্ধে প্রচুর পরিমাণে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে পাওয়ারের সমস্যার একটা কারণ হল মাতৃদুগ্ধ পান না করানো। বিশ্ব স্বস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে যে ২০০০ সালের আগে শিশুদের মাতৃদগ্ধ পান করানোর একটা প্রবণতা ছিল। তাই তখন এত চশমার ব্যবহার ছিল না। তাছাড়া তখন এত আলোর জৌলুস বা এত বিনোদনমূলক জিনিস ছিল না। যার ফলে এত চশমার প্রয়োজন ছিল না। সাধারণত একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে পুরুষ ও মহিলাদের কাছে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে থাকে। একে চলতি কথায় চালসে বলা হয়। আগে মহিলাদের ক্ষেত্রে চালসের বয়স ছিল ৩৪-৩৬ আর এখন ২৮-৩১-এর মধ্যে চালসে পড়ে। যেটা ছেলেদের ক্ষেত্রে ৩৩-৩৫ বছর।

পাওয়ার তিন রকমের হয়-----মায়োপিয়া অর্থাৎ যাদের মাইনাস পাওয়ার, হাইপার মেট্রোপিয়া অর্থাৎ যাদের প্লাস পাওয়ার এবং এর সাথে যাদের পার্টিকুলার অ্যাঙ্গেল কম বা বেশি লাগে, অ্যাসটিগম্যাটিজম।

মায়োপিয়া সব থেকে বেশি দেখা যায়। মায়োপিয়া সাধারণত ২০/২১ বছর পর্যন্ত বাড়তে থাকে। মেয়েদের বয়েসের ক্ষেত্রে ১৮-১৯ বছর আর ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর পর্যন্ত এরা চলতে থাকে। তারপর এটা থেমে যাবার সম্ভাবনা দেখা দেয় বা স্থিতি লাভ করে।

পাওয়ার হলে তো চশমা নিতেই হবে বা চশমা ছড়া কনট্যাক্ট লেন্সও ব্যবহার করা যেতে পারে। এখন বাজারে সফঠ, সেমি সফট লেন্স পাওয়া যায়। কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু সাবধানতা নেওয়া দরকার। যেমন ঠিক ভাবে রাখা, চোখ ধোওয়া। লেন্স হোক বা চশমার পাওয়ার. ডাক্তারবাবুকে দিয়ে সঠিকভাবে নির্বাচন করে নেওয়া একান্ত প্রয়োজনীয়।

অনেকে আছেন রাস্তার পাশে বা পাড়ার মোড়ে বসে চা খেতে খেতে খবরের কাগজ দেখছেন বা তাস খেলছেন, হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করলেন চোখে ঠিক স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন না। তখন তিনি পাশের কারো চশমা থাকলে সেটা চোখে পরে দেখলেন যে ঠিক আছে। এবার দোকানে গিয়ে ওই চশমা দেখিয়ে একটা চশমা কিনে ব্যবহার করতে শুরু করে দিলেন। এমন করা একদমই উচিত নয়। চোখের কোনো সমস্যা হলে চক্ষু চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দেখানো অত্যন্ত জরুরি। নিজে থেকে ডাক্তারি করে চশমা ব্যবহার করে চশমার পাওয়ার যদি ঠিক না হয় তাহলে যেসব সমস্যা হতে পারে তা হল—

  • মাথাব্যথা হতে পারে।
  • মাইগ্রেন বা সাইনাসের সমস্যা হতে পারে।
  • রেটিনার সমস্যা হতে পারে।
  • কার্নিয়ায় আলসার হতে পারে।
  • চোখ দিয়ে জল পড়তে পারে।
  • চোখে ছানি আসতে পারে।
  • নেত্রনালীর সমস্যা ও আঞ্জনি হতে পারে।

দৃশ্যের ও ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে পাওয়ার বাড়বে না কমবে।আমাদের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি হল ৬/৬ অর্থাৎ ৬ মিটার বা ২০ ফুট দূর থেকে ৬ মিলিমিটার বস্তুকে দেখতে পাওয়া।

আমাদের চোখের পাওয়ার ঠিক রাখতে ও চোখকে ভালো রাখতে যে সমস্ত বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত, সেগুলো হল---

  • সোজাসুজি সূর্যের দিকে তাকানো উচিত নয়।
  • অতিরিক্ত আলো বা খুব সামান্য আলোয় বই পড়া বা কাজ করা উচিত নয়।
  • সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঘরে বসে কখনোই টিভি দেখা. কম্পিউটার চালানো উচিত নয়। অণ্তত চল্লিশ ওয়াটের বাল্ব জ্বালানো উচিত।
  • পড়ার সময় চোখের খুব সামনে বই রাখা উচিত নয়। অন্তত দেড় থেকে দু’ফুট দূরে বই রাখতে হবে। চোখের সামনে বই না ধরলে যদি পড়তে অসুবিধা হয় তাহলে অবশ্যই চোখের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • চোখ কাজল বা সুর্মা পরলে সংক্রমণ হতে পারে, কারণ কাজলে কার্বন এবং সুর্মার মধ্যে সীসা থাকে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ না শুনে যখন-তখন নিজের ইচ্ছেয় আই ড্রপ ব্যবহার বা চশমা ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • প্রতি ৮০ থেকে ৯০ দিন অন্তর একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দেখানো  উচিত।

চোখকে ভালো রাখতে সচেতনতাই হল একমাত্র মূলধন।


সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন