×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

বজ্রপাতে কেন এত মৃত্যু

সুমিত মুখোপাধ্যায়
2019-03-29 12:06:34

বজ্রপাত। সাধু ভাষা। চলতিতে বাজ পড়া। বাজ পড়ার সঙ্গে আমাদের নানা সংস্কার জড়িয়ে আছে, অবশ্য সেগুলোকে কুসংস্কার বলতে কোনো বাধা নেই। অনেকে আবার রাগের মাথায় অভিশাপ দেন ‘তোর মাথায় বাজ পড়ুক’। মোটকথা বজ্রপাত মোটেই সুখের নয়। এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে মৃত্যু বা ক্ষয়ক্ষতির হিসেব।

বজ্রপাতের কারণটা কী জেনে নেওয়া যাক। খন্ড মেঘে প্রচুর পরিমাণে ধনাত্মক বা ঋণাত্মক তড়িৎ জমা হলে পরে তখন ওই মেঘখন্ড ধনাত্মক তড়িৎযুক্ত হলে ভূ-পুষ্ঠের ওপর নিজের প্রভাব ঘটিয়ে ঋণাত্মক তড়িৎ সৃষ্টি করে। এর ফলে মেঘের ধনাত্মক তড়িৎ এবং ভূ-পুষ্ঠের ঋণাত্মক তড়িতের মধ্যে এক তড়িৎ ব্যবধানের সৃষ্টি হয়, যাকে পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় বলে বিভব প্রভেদ।

এই বিভব প্রভেদ অনেকটা পাহাড়ের চূড়ার মতো অর্থাৎ যত বিভব প্রভেদ বাড়ে ততই যেন পাহাড়ের চূড়াটা ভূ-পৃষ্ট থেকে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। আর চূড়াটার উচ্চতা বৃদ্ধি মানেই বিপদ। ভূ-পৃষ্ট আর মেঘের মধ্যে যত বিভব প্রভেদ বাড়তে থাকে ততই বড় বড় শক্তিশালী তড়িৎ স্ফলিঙ্গ তৈরি হয়। এই তড়িৎ স্ফুলিঙ্গকে বলে বিদ্যুৎ চমক। প্রথমে তড়িৎ স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়। তারপরে হুড়হুড় করে জলপ্রপাতের জলের মতো মেঘ ও ভূ-পৃষ্ঠের মধ্যে তড়িৎমোক্ষণ হয়। গোটা ব্যাপারটা সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে ঘটে। একেই বলে বজ্রপাত বা বাজ পড়। তড়িৎমোক্ষণের পথ উজ্জল বিদ্যুৎস্ফুলিঙ্গে আলোকিত হয়।

এতো গেল বজ্রপাতের কারণ। প্রশ্ন উঠতে পারে বজ্রপাতে এত প্রচন্ড শব্দ হয় কেন? উত্তর হল বিভব প্রভেদ ক্রমশ বাড়তে থাকলে বায়ুস্তম্ভের ওপর চাপ তৈরি হয়। যে মুহুর্তে বজ্রপাত হয় বা বাজ পড়ে ঠিক সেই মুহুর্তে সংকুচিত বায়ুস্তম্ভেও প্রচন্ড বেগে প্রবাহিত হয়, এর ফলে তৈরি হয় শব্দ।

বজ্রপাত বা বাজ পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে উঁচু বাড়ি, উঁচু দেওয়াল, উঁচু গাছ প্রভৃতির ওপর। তারের জাল, টেলিফোন পোস্টগুলোও যথেষ্ট বিপজ্জনক। তড়িৎগ্রস্ত মেঘ ভূ-পৃষ্ঠে বিপরীত তড়িৎ আবিষ্ট করে এবং পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী পরিবাহীর গোড়ার সমতড়িৎ আবিষ্ট করে। এর ফলে অতি অল্প সময়েই বিভব প্রভেদ অত্যন্ত বেড়ে গিয়ে বজ্রপাতের অনুকূরে পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাই বৃষ্টির সময় ওই জাতীয় জায়গায় বাজ পড়ার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু যেমন ঘটতে দেখা যায় দেমনি ভীষণভাবে চোখের সামনে দেখা যায় বাড়িতে ইলেকট্রনিক্সের জিনিসপত্র নষ্ট হতে। বজ্রপাতের বিদ্যুৎপ্রবাহ থেকে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতিগুলোকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় যন্ত্রগুলোকে বাজ পড়ার আগে বর্তনী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। টিভির অ্যান্টেনার সংযোগ এবং কেবলের সংযোগ থাকলে তাও খুলে দিন। ফোনের লাইনও খুলে দিন। খুলে দিন কম্পিউটারের প্লাগ।

এবার আসি নিজেকে কীভাবে বাঁচাবেন। এখন বেতের বাঁটওয়ালা ছাতার ব্যবহার নেই বললেই চলে। বেতের জায়গায় লোহার ব্যবহার। প্রায় সব ছাতার মাথায় তীক্ষ্ম সরু লোহার দন্ড বেরিয়ে থাকে। তার ফলে এই অংশে সুচিমুখ থাকার জন্য এবং তড়িৎ পরিবাহী লোহার দন্ড বেরিয়ে থাকায় ওই ছাতার ওপর অর্থাৎ আপনার মাথায় বজ্রপাত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই লৌহদন্ডের সুচিমুখে প্লাস্টিক টুপি পরিয়ে ছাতা ব্যবহার করুন। যে সমস্ত বাড়ির সঙ্গে বজ্রনিবারক যুক্ত আছে যেখানে আশ্রয় নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

যারা মাটির সংলগ্ন ধাতব ছাদযুক্ত গাড়িতে আছেন তারাও নিরাপদ। যাদের এলাকায় মাইক্রোওয়েভ টাওয়ার বা রেলের সিগন্যালিংয়ের উচ্চ টাওয়ার আছে তারাও নিরাপদ। দেখা গেছে সাধারণত ওইসব এলাকায় বাজ পড়ে না। বাঁচানোর জন্য বজ্রবহ ব্যবহার করা উচিত। বজ্রবহ হল একটি অবিচ্ছিন্ন পুরু তামার পাত। বজ্রবহ তৈরি করা হয় বেশে পুরু তামার পাত দিয়ে । কারণ সরু হলে গলে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তামার পাতটির মাথায় থাকে সূচালো কতকগুলো তামার শলাকা। তামার পাতটি মাটির গভীর একটি চওড়া তামার পাতের সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় মাটিতে পোঁতা হয়। সুচিমুখগুলো তড়িৎমোক্ষণের সাহায্যে মেঘের উচ্চ তড়িৎকে প্রশমিত করে। ফলে উচ্চ বিভব প্রভেদের যে মাধ্যম লঙ্ঘন করলে বজ্রপাত হয়, সেই উচ্চ বিভবের কখনোই সৃষ্টি হয় না। এর ফলে বাডির ওপর বজ্রপাতও হয় না।

বজ্রপাতের সময় সাবধান থাকতে হবে যাদের বুকে পেসমেকার বসানো আছে তাদের। উচ্চ মাত্রার তড়িৎ প্রভাবের মধ্যে পড়ে গেলে আপনার ক্ষতি না হলেও পেসমেকারটি খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই এই সময় অর্থাৎ বিদ্যুৎ চমকের সময় নিরাপদ আশ্রয়ে আশ্রয় নিন।

বলতে আপত্তি নেই, সতর্ক হলেই যে মাথায় বাজ পড়বে না এমন কথা নয়। দেখা গেছে কখনও কখনও পরিষ্কার নীল আকাশেও বজ্রপাত হয়। তবে সতর্ক হলে বজ্রপাতের বিপদ অনেকটাই এড়ানো যায়। বাঁচানো যায় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম।


সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন