গর্ভাবস্থায় হঠাৎ বিপত্তি
ডাঃ উজ্জল কুমার আচার্য
2019-03-29 12:22:36
ব্লাইটেড ওভাম
ভালোই চলছিল মুনমুনের। বিয়ের দু’বছর পর সুরঞ্জন ও মুনমুন সিদ্ধান্ত নিল এবার সন্তান চাই। দু’মাস পরে প্রস্রাব পরীক্ষায় জানতে পারে মুনমুন গর্ভবতী। ডাক্তার দেখানো হয়। ডাক্তারবাবু ওষুধপত্র লিখে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলেন। বাড়িতে এক আনন্দের পরিবেশ কিন্তু আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট দেখে ভ্রু কোঁচকালেন ডাক্তারব্বু ! প্রস্রাব রিপোর্টে প্রেগেনেন্সি পজিটিভ আর আলট্রানোগ্রাফিতে বাচ্চা নেই। ব্লাইটেড ওভাম! সেটা আবার কী? ব্লাইটেড ওভাম হল গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে নিষিক্ত ডিম্বাণুর বৃদ্ধি থেমে যাওয়া। আলট্রাসনোগ্রাফিতে দেখা যায় গর্ভস্থ থলি রয়েছে কিন্তু সেখানে কোনো ভ্রূণের অংশ নেই। ট্রোফোব্লাস্ট যা নাকি প্লাসেন্টা এবং মেমব্রেন তৈরি করে সেগুলি কাজ করতে থাকে বলে থলি বা স্যাক দেখা যায়। স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত দেখা যায় এক্ষেত্রে। ব্লাইটেড ওভামের প্রকৃত কারণ এখনও অজানা। নিষেকের সময় কোনো ক্রটির কারণে, ক্রোমোজোমের ঘাটতি বা আধিক্যের কারণে নিষিক্ত ডিম্বাণুর এক অংশ বাচ্চার ভ্রূণ তৈরি করতে পারে না। কিন্তু অপর অংশ যা কিনা প্লাসেন্টা এবং মেমব্রেন তৈরি করে সেগুলি কাজ করে। ফলে গর্ভাবস্থা চলতে থাকে এবং প্লাসেন্টাও তৈরি হয়।
তবে একবার ব্লাইটেড ওভাম হয়েছে বলেই ভেঙে পড়ার কোনো কারণ নেই। পরবর্তীতে সুস্থ সবল বাচ্চার জন্ম দেওয়া সম্ভব এসব মহিলার।
অপরিণত পর্দা ফেটে যাওয়া
বা সময়ের আগে পর্দা ফেটে যাওয়া
মৌলির গর্ভাবস্থা খুবই ভালো চলছিল। বাড়িতে স্বামীর যত্ন-আত্তির অভাব নেই শুশুড়িমা সর্বদা খেয়াল রাখছেন। এটা কোরো না, ওটা করো না। ভালোমন্দ খাওয়াও চলছে। কিন্তু রাত্রে শুতে যাবার সময় হঠাৎই বিপত্তি। শাড়ি সায়া ভিজে একাকার। পেটে তেমন কোনো ব্যথাও নেই। পূর্ণমাস হতে এখনও দেড় মাস সময় আছে।
গর্ভের সন্তানকে সুস্থ সুন্দর এবং সবল রাখার জন্য এক ধরনের তরল পদার্থ থাকে যাকে বলে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড। অ্যামনিওটিক ফ্লুইড থাকে আবার পর্দার মধ্যে। সাধারণত প্রসব প্রক্রিয়া শুরু হলে পর্দাটি ফেটে যায়। তবে ২৮ সপ্তাহের পরে এবং প্রসববেদনা শুরু হওয়ার আগে কোনো কারণে পর্দা ফেটে গেলে তাকে বলে প্রিম্যাটিওর রাপচার অফ মেমব্রেন। পর্দার স্থিতিস্থাপকা কম হলে বা পর্দা ভঙ্গুর হলে, জলের পরিমাণ বেশি হলে বা পলিহাইড্রামনিয়োস হলে, জরায়ুর মুখ ঢিলে থাকলে, সংক্রমণ ইত্যাদির কারণে পর্দা আগে ফেটে জল বেরিয়ে আসতে পারে।
গর্ভাবস্তা বেশি সময়ের হলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। কারণ সাধারণত দেখা যায় ২৮ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এক্ষেত্রে প্রসব শুরু হয়ে যায়। বাচ্চার অপরিণত হওয়ার সম্ভাবনা এক্ষেত্রে থেকে যায়। এছাড়া মা ও বাচ্চা উভয়েরই সংক্রমণের ভয় থাকে। ডাক্তারবাবুর পরামর্শ এসময় অতি অবশ্যই নিতে হবে। হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে মহিলাকে ভর্তি করতে হবে।
প্রি-টার্ম লেবার বা
সময়ের আগে প্রসব
সোমার প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ দিয়েছেন ডাক্তারবাবু ২৫ তারিখ। কিন্তু ১ তারিখেই প্রসববেদনা শুরু হয়ে যায় সোমার। আতষ্কিত সোমাকে নিয়ে ছুয়ে যায় ওর স্বামী ডাক্তারবাবুর চেম্বারে। প্রিটার্ম লেবার হল ৩৭ সপ্তাহের আগেই সোমাকে নিয়ে ছুটে যায় ওর স্বামী ডাক্তারবাবুর চেম্বারে। প্রিটার্ম লেবার হল ৩৭ সপ্তাহের আগেই বাচ্চা প্রসব হওয়া। পাঁচ থেকে দশ ভাগ ক্ষেত্রে সময়ের আগে প্রসব হতে দেখা যায় যা কিনা শিশুমৃত্যুর একটি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ। আগে স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত হয়ে থাকলে বা সময়ের আগে প্রসব হয়ে থাকলে, মূত্রনালীর সংক্রমণ হলে, অপুষ্টিতে ভুগলে, ধূমপান করলে, সময়ের আগে জলের পর্দা ফেটে গেলে, গর্ভাবস্থায় জ্বর বা অন্য কোনো সংক্রমণ হলে, ডায়াবেটিস, প্রেসার, অ্যানিমিয়া থাকলে প্রিটার্ম লেবার হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় যেকোনো ধরনের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা উচিত। ডাক্তারবাবুর পরামর্শে ওষুধ খাওয়া উচিত। এ সময়ে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকা দরকার বাঁদিকে কাত হয়ে। প্রয়োজনে ডাক্তারবাবুর পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বা স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন নিতে হতে পারে।
যমজ বাচ্চা বা টুইন
শ্রীপর্ণা চার মাসের গর্ভবতী। কিন্তু এ সময়ে পেটের আকার অনেক বড় মনে হচ্ছে। অস্বস্তি হচ্ছে সবসময়। পাশ ঘুরতেও অসুবিধা, মাঝে মধ্যে বুক ধড়ফড় করছে। ডাক্তারবাবু আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট দেখে শ্রীপর্ণাকে জানালেন পেটে একটি নয় দুটি সন্তান রয়েছে।
প্রতি পিরিয়ডে বা ঋতুচক্রে একটি মহিলা একটি ডিম্বাণু নি”সরণ করে থাকে। কখনো কখনো দুটি ডিম্বাণু নিঃসুত হতে পারে। দুটি ডিম্বাণু দুটি শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হলে দুটি ভ্রুণ তৈরি হয়ে যমজ সন্তানের সৃষ্টি হতে পারে। আবার কখনো একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু বিভাজিত হয়ে দুটি ভ্রুণের সৃষ্টি করতে পারে। সেভাবেও যমজ সন্তানের সৃষ্টি হতে পারে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায় ৮০ জনের মধ্যে একজন গর্ভবর্তী মহিলা যমজ সন্তানের জন্ম দেন। বংশে এরকম ইতিহাস থাকলে, বেশি বয়সে গর্ভবতী হলে, বেশি বার গর্র্ভবতী হলে, ওভুলেশনের জন্য ওষুধ ব্যবহার করলে যমজ সন্তানের জন্ম হতে পারে। আলট্রাসনোগ্রাফিতে গর্ভস্ত ভ্রূণ যমজি কিনা বোঝা যায়। ডাক্তারবাবুর পরামর্শে এসময় চলতে হবে। বিশ্রাম নিতে হবে যথেষ্ট, সুষম খাবার খেতে হবে।
এক্টোপিক প্রেগনেন্সি
দু’মাসের গর্ভবতী মাধবী। গত রাতে হঠাৎ তলপেটে ব্যথা, সামান্য রক্তপাত দেখা দেওয়ায় ডাক্তারবাবুর শরণাপন্ন হয়ে জানতে পারেন গর্ভাবস্থা জরুয়ুর মধ্যে না হয়ে ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে হয়েছে। এমার্জেন্সি অপারেশন করে বাঁচতে হবে মাধবীকে।
গর্ভাবস্থা জরায়ুর মধ্যে না হলে ওভারি, ফ্যালোপিয়ান টিউব ইত্যাদি জায়গায় হলে তাকে বলে এক্টোপিক প্রেগনেন্সি। তলপেটে সংক্রমণ, ফ্যালোপিয়ান টিউবের অপারেশন, ওভুলেশনের জন্য ওষুধ খাওয়া, তলপেটের বড় কোনো অপারেশন, কৃত্রিম উপায়ে গর্ভধারণ, গর্ভপাতের কারণে এক্টোপিক প্রেগনেন্সি হতে পারে। ঋতুস্রাব বন্ধ, পেট ব্যথা, যোনি দিয়ে রক্তপাত এই রোগের প্রধান উপসর্গ। রোগীকে খুব ফ্যাকাশে দেখায় এবং রোগ নির্ণয়ে দেরি করলে রোগী শকে চলে যায়। আলট্রাসনোগ্রাফি করে রোগ নির্ণয় করে চটজলদি অপারেশনের দরকার হয়। প্রতি ২০০ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।
এ.পি.এইচ বা প্রাক প্রসব রক্তক্ষরণ
সাড়ে আট মাসের গর্ভবতী পাপড়ি। বয়স একটু বেশিই –৩৫ । সকাল থেকে হঠাৎই ব্লিডিং শুরু হয়েছে। সেরকম কোনো ব্যথাও অনুভূতহচ্ছেনা। ডাক্তারেরে শরণঅপন্ন হয়ে আকুল জিজ্ঞাসা পাপড়ির—ডাক্তারবাবু, সন্তান ঠিক আছে তো ? মা হতে পারব তো?
প্রসবের আগে প্লাসেন্টার কারণে রক্তপাত দেখা যায় ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে। এছাড়া জরায়ুর মুখে পলিপ এবং আঘাতের কারণে ৫ ভাগ ক্ষেত্রে ব্লিডিং হতে পারে। তবে ২৫ ভাগ ক্ষেত্রে কোনো কারণ ছাড়াই হতে পারে রক্তক্ষরণ। তবে এ.পি.এইচ বা প্রাক-প্রসব রক্তক্ষরণের প্রধান কারণ প্লাসেন্টা প্রিভিয়া। এক্ষেত্রে প্লাসেন্টা বা অমরা বা ফুল জরায়ুর ওপরের অংশে প্রোথিত না হয়ে আংশিক বা সম্পূর্ণভআবে নীচের অংশে অবস্থান করে।
বেশি বয়সে বাচ্চা নেওয়া, অধিক সংখ্যক বাচ্চা, আগে সিজার হয়ে থাকলে, ধূমপানের কারণে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হতে পারে। আলট্রাসনোগ্রাফি করে রোগ নির্ণয় করে রোগীকে হাসপাতাল বা নার্সিংহোম রেখে চিকিৎসা করতে হয়। প্রয়োজনে রক্ত দিতেও হতে পারে। উন্নয়নশীল দেশে এই রোগে ৫ শতাংশ মা আর ২০ শতাংশ শিশু মারা যায়।
মোলার প্রেগনেন্সি
শ্রীপর্রনার পিরিয়ড ৩ মাস বন্ধ। আজ দুপুরে হঠাৎই যোনিপথে রক্তপাত এবং সামান্য তলপেটে ব্যথা অনুভূত হওয়ায় ডাক্তারবাবুকে দেখান। ডাক্তারবাবু আলট্রাসনোগ্রাফি করে রিপোর্ট দেখে যা বললেন তাতে শ্রীপর্ণ আর রাহুল দু’জনের চক্ষু ছানাবড়া। পেটে নাকি বাচ্চা নেই, পরিবর্তে রয়েছে আঙুরের থোকার মতো পদার্থ।
মোলার প্রেগনেন্সি হল গর্ভবতী মহিলার প্লাসেন্টা বা অমরার রোগ। কম বয়সে বা বেশি বয়সে গর্ভবতী হলে এমনটি দেখা যায়। ২-৩ মাস রজঃস্রাব বন্ধ থাকার পর হঠাৎ করে ব্লিডিং এবং পেট ব্যথা হতে থাকে। আস্তে আস্তে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে গর্ভাবতী, সঙ্গে থাক বমি, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা। শেষে যোনিপথ দিয়ে আঙুরের থোকার মতো পদার্থ বের হতে থাকে। রোগী ক্রমশ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। আলট্রাসনোগ্রাফিতে রোগ ধরা পড়ে। হাসপতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি করে দিতে হয়। প্রচুর রক্তপাত, সংক্রমণ জরায়ু ফুটো হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা এমনকী ভবিষ্যতে ক্যানাসর হওয়াও অসম্ভব নয় এক্ষেত্রে।
এক্ল্যাম্পশিয়া
কম বয়সে বিয়ে হয় সুচন্দ্রার। বিয়ের পরপরই সন্তা সম্ভবা হয় সুচন্দ্রা। পাঁচ মাস থেকে হাত-পা যোনিদ্বার ফুলতে থাকে। ডাক্তারবাবুকে দেখিয়ে প্রেসারের ওষুধও খাচ্ছিলেন। ওষূধের অনিয়মের কারণে সেদিন হঠাৎই মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে খিঁচুনি শুরু হয় সুচন্দ্রার। গর্ভাবস্থায় প্রেসার বেশ, সঙ্গে প্রস্রাব দিয়ে প্রোটিন নির্গত হলে তাকে বলে প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়া। আর প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়ার সঙ্গে রোগীর খিঁচুনি হলে তাকে বলে এক্ল্যাম্পশিয়া।
প্রথম বাচ্চার ক্ষেত্রে ৭৫ ভাগ সম্ভাবনা থাকে। ৫ গুণ বেশি হয় যমজ বাচ্চার ক্ষেত্রে। অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না অর্থাৎ রোগীর মৃত্যু ঘটে। এক্ল্যাম্পশিয়ার রোগীকে দ্রুত হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা উচিত।
সময় মতো প্রাক-প্রসব পরিচর্যা, ডাক্তার দেখানো, প্রেসার বেশী থাকলে ওষুধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা, ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মতো অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া জরুরি এই রোগ প্রতিরোধের জন্য।
ব্রিচ বা ওল্টানো শিশু
অপর্ণা ন মাসের গর্ভবতী। ডাক্তাবাবুকে আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টটা দেখাতে ডাক্তারবাবু বললেন, আপনার পেটের বাচ্চার পজিশন ওল্টানো আছে। শুনে বিষশ ভয় পেয়ে গেলেন অপর্ণাদেবী।
ব্রিচ বা ওল্টানো শিশু বলতে বোঝায় গর্ভস্থ শিশুর মাথা নীচের দিকে না ওপরের দিকে থাকা। ২৮ সপ্তাহেরমধ্যে ২০ ভাগ গর্ভবতীর ক্ষেত্রে, ৩৪ সপ্তাহে ৫ ভাগ এবং পূর্ণমাসে ৩-৪ ভাগ গর্ভবতীর ক্ষেত্রে ব্রিচ বা ওল্টানো অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। অপরিণত শিশু, যমজ, জল কম থাকা, বিকলাঙ্গতা, জরায়ুর অস্বাভাবিকতা, নাড়ির দৈর্ঘ ছোট হওয়া ব্রিচ বা ওল্টানো বাচ্চার কারণ।
আলট্রাসনোগ্রাফি করে বা ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা করে ডাক্তারবাবুরা শিশুর অবস্থান বুঝতে পারেন। ব্রিচ প্রেজেনটেশনে মায়ের চেয়ে শিশুর ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। স্বাভাবিক প্রসবের সময় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, মাথায় রক্ত জমা, হাত-পা-কলার বোনের ফ্র্যাকচারের সম্ভাবনা থাকে। তাই ডাক্তারবাবুরা সময়ে সিজারিয়ান করে সমস্যা দূর করেন।
আই ইউ জি আর বা
গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি রোধ
মালতির ওজন তুলনামূলক কম। পূর্ণমাস হতে চলল, ওজন মাত্র ৪৫। তাছাড়া এসময় খাওয়ার রুচি না থাকায় একপ্রকার অপুষ্টিতে ভগছে যে কেই দেখলে বুঝতেই পারবে। ডাক্তারবাবু ন’মাসে আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট দেখে বললেন, বাচ্চার পুষ্টি খুবই কম হয়েছে, সমস্যা হতে পারে শিশুর। গর্ভাবস্থায় শতকরা ৩ থেকে ১০ ভাগ ক্ষেত্রে ইল্ট্রা ইউটেরাইন গ্রোথ আইইউজিআর দেখা দিতে পারে।
বাচ্চার হাইপক্সিয়া বা ব্রেনে অক্সিজেন কমে যেতে পারে, মেকোনিয়াম, অ্যাসপিরেশন, হাইপোগ্লাইসেময়িা, পলিসাইথেমিয়া দেখা দেয়। দেখা দেয় স্নায়ুতন্ত্রের রোগ।
গর্ভাবস্থায় মায়ের পূর্ণ বিশ্রাম, অ্যাসপিরিন, জিষ্ক প্রয়োজন। অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে।
চিকেন পক্স
ছ’মাসের গর্ভবতী সুনীতা। সেদিস সকাল থেকে গা-হাত-পা ব্যথা এবং বিকেল থেকে সারা গায়ে র্যাশ। ডাক্তারবাবু দেখে বললেন, চিকেন পক্সে আক্রান্ত সুনীতা। শুতে আঁতকে উঠলেন বাড়ির লোকজন।
গর্ভাবস্থায় প্রথমদিকে চিকেন পক্স হলে তা বাচ্চার চূড়ান্ত ক্ষতি করতে পারে। এই জীবাণু প্লাসেন্টার মধ্য দিয়ে শিশুকে আক্রমণ করতে পারে এবং সেক্ষেত্রে বাচ্চার জন্মগত ক্রটি বা বিকলাঙ্গতা সৃষ্টি করতে পারে। ক্ষতির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি হয় ১৩ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে আক্রান্ত হলে। ২০ সপ্তাহের পর আক্রান্ত হলে বাচ্চার সেরকম ক্ষতি হয় না। বাচ্চার হাত-পা ছোট হয়ে যাওয়া, বৃদ্ধি এবং বুদ্ধি ব্যাহত হওয়া, ছানি পড়া, মস্তিষ্ক ছোট হওয়া, ব্রেন অ্যাট্রফি, কোরিওরেটিনাইটিস ইত্যাদি হতে পারে ২০ সপ্তাহের আগে সংক্রমণ ঘটলে। গর্ভাবস্থায় চিকেন পক্সের ভ্যাকসিন নেওয়া নিষেধ। অ্যাসাইক্লোভির জাতীয় ওষুধ গর্ভাবস্থায় নিরাপদ এবং অসুস্থতার সময়সীমা কমিয়ে দেয়।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস
আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা গার্গী। রক্তপরীক্ষা করে জানতে পারলেন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। ডাক্তারবাবু বললেন জেসটেশনাল ডায়াবেটিস মেলিটাসে আক্রান্ত। গর্ভাবস্থায় ১৪ ভাগ মহিলা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। বংশে ডায়াবেটিসরে প্রকোপ থাকলে, আগের বাচ্চার জন্মকালীন ওজন ৪ কেজির বেশি হলে, আগে মৃত বাচ্চা প্রসব হয়ে থাকলে পেটে জলের পরিমাণ বেশি হলে, যোনিদ্বারে ছত্রাক সংক্রমণ ঘটলে, বয়স ৩০-এর বেশি হলে, অতিরিক্ত মেদ হলে ডায়াবেটিস হতে পারে গর্ভাবস্থায়। খাওয়ার দু’ঘন্টা পরে রক্তে ১৪০ মিগ্রা/ ডেলি গ্লুকোজের মাত্রা হলে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বলা যায়।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে নানারকম অসুবিধে হতে পারে। যেমন গর্ভপাত, সময়ের আগে প্রসব, সংক্রমণ, উচ্চ রক্তচাপ, পলি হাইড্রামনিয়োস, প্রসবের পর রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। এছাড়া বাচ্চা আকারে বড় হওয়া, জন্মের সময় আঘাত ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
এ সময় গর্ভবতী মহিলার ক্যালোরি পরিমাণ মতো গ্রহণ করতে হবে। স্বাভাবিক মহিলাদের জন্য ২০০০-২৫০০ কিলোক্যালোরি এবং বেশি ওজনের মহিলাদের জন্য ১২০০-১৮০০ কিলোক্যালোরি গ্রহণ দরকার। নিয়মিত ব্যায়াম করা দরকার। ডাক্তারের পরামর্শে ইনসুলিন নিতে হতে পারে। ২৫ ভাগ মহিলার ডায়াবেটিসে ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে এবং ইনসুলিন না প্রয়োজন হলে নর্মাল ডেলিভারি করা যেতে পারে। কিন্তু ইনসুলিনের প্রয়োজন হলে এবং বাচ্চার ওজন বেশি হলে ৩৮ সপ্তাহে সিজার করে বাচ্চা প্রসব করান ডাক্তারবাবু।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন