×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

ধৈর্য ধরলে নিরাময় সম্ভব

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-10-24 13:04:13

তিন বছরের তিথি মায়ের কাছে বসে আপন মনে খেলা করছিল। ওর মা হঠাৎ লক্ষ করলেন তিথি স্থির হয়ে গেল। ওর চোখের মণিটাও একদিকে বেঁকে স্থির হয়ে থাকল। মা ‘তিথি’, ‘তিথি’ বলে ডাকলেন, ওকে কোলে তুলে নিলেন। এক মিনিট পরেই তিথি ফের স্বাভাবিক। ওর মা খুব ভয় পেয়ে গেলেন। হঠাৎ এইরকম ক্ষণিকের জন্যে স্থির হয়ে যাওয়ার সমস্যা তিথির আগেও হয়েছে। তাই এবার আর ঝুঁকি না নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিলেন। ছ’ বছরের টুকাইয়ের ঠান্ডা লেগে জ¦র হয়েছে। স্কুলও যায়নি। শুয়ে টি.ভি দেখছিল। হঠাৎ শরীরটা ওর শক্ত হয়ে গেল।  তারপর সারা শরীরে কাঁপুনি। মুখটা একপাশে বেঁকে গেল। ওর মা ও পিসি ঘরে ছিলেন। ওরা চেঁচিয়ে াুঠলেন। পাশের ঘর থেকে ঠাকুমা ছুটে এলেন। ওর মুখ-চোখে জলের ঝাপটা দিলেন। দু’এক মিনিট পর কাঁপুনি কমে গেল। টুকই ফের স্বাভাবিক হয়ে গেল। এই ধরনের ঘটনা ছোট ছেলেমেদের কখনও সখনও ঘটে থাকে। মা-বাব ও অভিভাবকেরা স্বভাবতই খুব ভয় পেয়ে যান। কী করবেন বুঝতে পারেন না। এর পেছনে অনেক সময় দায়ী থাকে মৃগি। শৈশবে এপিলেপ্সি বা মৃগিরোগ অনেক সময় খবই সমস্যার সৃষ্টি করে। বিশেশ করে রাতবিরেতে প্রথমবার মৃগির আক্রমণ হলে মা-বাব দিশেহারা হয়ে পড়েন। কারণ তারা আগে এই রোগের স্বরূপ দেখেননি। শৈশবে মৃগিরোগ শিশুদের নার্ভঘটিত অসুস্থতা বা নিউরোলজিক্যাল অসুস্থতার মধ্যে র্মগিরোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। জন্মের পর যে কোনো বয়সেই মৃগি রোগের আক্রমণ ঘটতে পারে। অন্য বিভিন্ন কারণও থাকে। এপিলেপ্সি বা মৃগি হল মস্তিস্কের সাময়িক এক অস্বাভাবিক অবস্থা। শুধু একবারই নয়, প্রায়শ হতে পারে। মস্তিস্কের অসংখ্য নিউরোনের মধ্যে কিছু নিউরোনের অস্বাভাবিকতার জন্য অস্বাভাবিক ও সাময়িক উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় বলে মনে করা হয়। অতিরিক্ত এই নার্ভ উদ্দীপনা ও প্রবাহ হঠাৎ সৃষ্টি হয় এবং পুনরায় সম্ভাবনা থাকে। মৃগিরোগ অনেক রকমের হতে পারে।  যেমন আংশিক বা পার্সিয়াল ও সার্বিক বা জেনারেলাইজড এপিলেপ্সি।পার্সিয়াল এপিলেপ্সির একটি অংশে এপিলেপ্সি দেখা যায়। যেমন জ্যাকসনিয়ান ফোকাল এপিলেপ্সি। এছাড়াও সাইকোমোটর বা টেম্পোরাল এপিলেপ্সিতে আচার-আচারণের অসংলগ্নতা শুধু দেখা যায়। এই ধরনের মৃগিরোগ সারা শরীরে কম্পন বা খিঁচুনি কিছুই দেখা যায় না। সার্বিক বা জেনারেলাইজড এপিলেপ্সি অনেক রকমের হয়ে থাকে।  যেমন গ্ল্যান্ডমল এপিলেপ্সি, পেটিটমল এপিলেপ্সি, ইনফ্যানটাইল স্প্যাজম। ঠিক জন্মের পর শৈশবে বিভিন্ন ধরনের মৃগিরোগ দেখা যায়। নবজাতকের খিঁচুনি বা এপিলেপ্সি সাধারণত মস্তিস্কে আঘাতজনিত কারণে হতে পারে। প্রসবের সময় বা জন্মনোর পর কোনো কারণে নবজাতকের মাথায় আঘাত লাগলে এপিলেপটিক ফিট হতে পারে। প্রি ম্যাচিওর বেবি বা জন্মের আগে জন্মানো নবজতকের অনেক সময় রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকার জন্য (হাইপোগ্লাইসিমিয়া) খিঁচুনি দেখা যায়। অনেক সময় নিউরোলজিক্যাল অসংলগ্নতার জন্য এক ধরনের মৃগি দেখা যায়, তাকে বলে ইনফ্যানটাইল স্প্যাজম বা ওয়েস্ট সিনড্রোম। এ এক জটিল সমস্যা ও অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা প্রযোজন। অনেক সময় শৈশবে জ্বর হলে বা জ্বর বাড়লে খিঁচুনি দেখা যায়। তাকে ফ্রেব্রাইল কনভালশন বলে। অনেক শিশুরই ভাইরাল ফিভার হলেই কনভালশন বা খিঁচুনি দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই ফ্রেব্রাইল কনভালশনের পারিবারিক ইতিহাস থাকে। এসব শিশুদের জ¦র হলেই অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হয়। জ¦র যাতে না বাড়ে তার জন্য জ্বর কমানোর ওষধ যেমন প্যারাসিটামল ইত্যাদি সময়ে ব্যবহার করলে আর খিঁচুনি হয় না। গ্ল্যান্ডমল এপিলেপ্সি এই ধরনের মৃগি রোগে রোগী দাঁড়িয়ে থাকলে পড়ে যায়, অজ্ঞান হয়ে যায়, হাত-পা শক্ত হয়ে যায় এবং পরে খিঁচুনি দেখা যায়। তারপর খিঁচুনি থেমে যায় ও রোগীর সংজ্ঞা বা জ্ঞান ফিরে আসে। শিশুরা দাঁড়িয়ে থাকলে পড়ে যায়, এর জন্য হাতে-পায়ে আঘাতও লাগতে পারে। জ্ঞান হারানোর জন্যে বলতে বা বুঝতে পারে না। অনেক সময় জিভ কামড়ে ফেলে। অনেক সময় মৃগি শুরু হওয়ার আগে মুখ থেকে আওয়াজ করে। অনেক ছেলেমেয়ে চোখে আলোর ঝলকানি দেখে থাকে বা শরীর  হঠাৎ অস্বস্তি হয়। পেটিটমল এপিলেপ্সি এতে হাত-পায়ের শক্তভাবে বা শরীরে খিঁচুনি দেখা যায় না। এই মৃগিরোগ ছেলেমেয়েরা হঠাৎ কিছু সময়ের জন্য চুপ হয়ে যায়া। স্থির থাকে। তারপরেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। এই মৃগিরোগ নির্ণয় করা খবই শক্ত। অভিজ্ঞ দৃষ্টিতে অনেক সময় ধরা পড়ে। ই.ই.জি পরীক্ষায় ধরা পড়তে পারে। ই.ই.জি বা ইলেকট্রো এনকেফালোগ্রাফি মৃগিরোগ নির্ণয়ের একটি অন্যতম উপায়। অবশ্য অনেক সময় মৃগিরোগ ই.ই.জি পরীক্ষাতেও ধরা পড়ে না। টেম্পোরাল লোব বা সাইকোমোটর এপিলেপ্সি: এটা নির্ণয় করা ও পেটিটমলের থেকে আলাদা করা বেশ কঠিন। এই ধরনের মৃগি রোগে বিভ্রান্তিমূলক আচারণ বা ব্যবহার, অসংলগ্ন কথা বলা, হঠাৎ উদ্ভট আচরণ, মুখে অস্বাভাবিক স্বাদ পাওয়া, গন্ধ অনুভব করা ইত্যাদি দেখা যায়। “জ্বর হলেই অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হয়। জ্বর যাতে না বাড়ে তার জন্য জ¦র কমানোর ওষধ যেমন প্যারাসিটামল ইত্যাদি সময়ে ব্যবহার করলে আর খিঁচুনি হয় না।” মাথা ঘোরা, ভয় ইত্যাদিও সমস্যাও হয়ে থাকে। কখনও কখনও মৃগিরোগের খিঁচুনি পর পর ঘটতে থাকে এবং রোগীর সম্পূর্ণ জ্ঞান ফেরার আগেই আবার খিঁচুনি হয়। একে অবস্থায় অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মৃগিরোগের আক্রমণ ঘটলে বা সন্দেহ হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন। মৃগিরোগ প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টি এপিলেপটিক ড্রাগ ব্যবহার করতে হয়। অনেক সময় অচেতন রোগীকে বিশেষ করে স্ট্যাটাস এপিলেপটিকাসের ক্ষেত্রে এপটয়েন ইঞ্জেকশন দিতে হয়। খিঁচুনির সময় শিশু বা কিশোর যাতে হাতে-পায়ে আঘাত না পায় তারজন্য গজ বা কাপড়ে টুকরোকে দাঁতের মাঝে দেওয়া যেতে পারে, চামচও ব্যবহার করা যায়। ‘মাউথ গ্যাগ’ ব্যবহার করা যেতে পারে।  কখনোই ভয় পেয়ে হৈচৈ করা বা খিঁচুনের সময় হাত-পা চেপে ধরা উচিত নয়। রোগীর চোখেমুখে জলের ঝাপটা দেওয়া যেতে পারে। যেহেতু শিশুরা সাময়িক (অল্প সময়ের জন্য) জ্ঞান হারায় সে জন্য কিছু খাওয়ানো বা জল পান করানোর চেষ্টা কখনোই করা উচিত নয়। রোগীর সম্পূর্ণ জ্ঞান ফিরে আসার পর দধি বা খাবার খাওয়ানো যেতে পারে। নিয়মিত ওষধ খাওয়ালে মৃগিরোগ প্রতিরোধ সম্ভব ও সম্পূর্ণ সেরে যেতে পারে। এর জন্য ধৈর্য ধরে নিয়মিত ওষুধ খাওয়াতে হয় এবং কখন কখনও দু১তিনবছর বা তারও বেশি সময় ওষুধ খাওয়াতে হয়। তার পরেও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন