×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

হার্টের সমস্যার জন্য কতটা দায়ী কোলেস্টেরল

ডাঃ প্রলয়েশ চ্যাটার্জি
2019-04-16 16:38:48

হার্ট অ্যাটাক বা হার্টজনিত সমস্যাগুলো কয়েকটা বিশেষ ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে। যেমন হাই ব্লাডপ্রেসার, হাই ব্লাড কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ধূমপান, বংশগতি, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ইত্যাদি।

এইসব কারণে থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করলে হার্ট অ্যাটাককে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব।

আজ আমরা আলোচনা করব করোনারি আর্টারি ডিজিজে কোলেস্টেরলে ভূমিকা কতখানি।

প্রথম আমরা জানব কোলেস্টেরল জিনিসটা আসলে কী?

কোলেস্টেরলটা হচ্ছে চর্বির ভিতরে থাকা একটা পদার্থ, যা কিন্তু একা থাকে না। কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও ফসফোলিন এই তিনটি জিনিস একসাথে থাকে।

এখন কথা হচ্ছে কোলেস্টেরল ছাড়া কি আমরা বাঁচতে পারি? উত্তর হল—পারি না। কারণ কোলেস্টেরল কতকগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের জন্য দরকার। এক, কোলেস্টেরল সেল মেমব্রেন তৈরি করে। যত ছোট ছোট সেল আছে তার যে মেমব্রেন তা তৈরি করে। দুই, স্টেরয়েড তৈরি করতে কোলেস্টেরল লাগে। তিন, গলব্লাডার ‘বাইল সল্ট’ তৈরি করার জন্য কোলেস্টেরল লাগে।

আবার কোলেস্টেরলের সাথে থাকে ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো ট্রাই গ্লিসারাইড। এই ট্রাই গ্লিসারাইড যদি হাইড্রোলাইজ না হয় তাহলে আমরা এনার্জি পাব না। প্রত্যেক দিন আমরা যা খাই তার ক্যালোরির ৪০ ভাগ অবদান থাকে ফ্যাটের। এই ফ্যাটটা হাইড্রোলাইজড হয়ে বিভিন্ন অংশে গিয়ে এনার্জি দেয়। সেলমেমব্রেন তৈরি করে কোলেস্টেরল চলে যায় পেরিফেরিতে। পেরিফেরিতে গিয়ে সেলমেমব্রেন তৈরি করতে সাহায্য করে।

দু’রকমের কোলেস্টেরল হয়—একটা ভালো এবং একটা খারাপ। ভালো কোলেস্টেরল হল ‘হাই ডেনসিটি লাইপো-প্রোটিন’। অর্থাৎ এইচ.ডি.এল এবং খারাপ কোলেস্টেরল হল ‘লো ডেনসিটি লাইপো-প্রোটিন’ অর্থাৎ এল.ডি.এল । এগুলো কিন্তু একা থাকতে পারে না। এল.ডি.এল কোলেস্টেরল যদি বেশি থাকে তাহলেই যত গন্ডগোল। এই জিনিসটা কিন্তু ভীষণ জটিল। এটা এখনও আমরা বুঝে উঠতে পারিনি, কী কারণে কতগুলো নির্দিষ্ট আর্টারিতে এই ঘটনা ঘটে। করোনারি আর্টারিতে ন্যারোয়িং তৈরি করে। অর্থাৎ সরু হয়ে যায়। বড় আর্টারিতে অ্যানিউরিজম তৈরি করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বেশি ফ্যাট গ্রহণ করলেই যে কোলেস্টেরল বেশি হবে সেটা কিন্তু নয়। অনেক মোটা লোকের কোলেস্টেরলের মাত্রা মাপলে দেখা যায় তাদের কোলেস্টেরল স্বাভাবিক, অথচ অনেক রোগ লোকের কোলেস্টেরল অনেক বেশি।

এর আবার অনেকগুলো দিক আছে। জন্মগত ডেফিসিয়েন্সি। ফ্যাটটাকে মেটাবলাইজড করে তার ডেফিসিয়েন্সি থাকার জন্য বেড়ে যায়।

কতকগুলো কারণ আছে যেটাকে আমরা ফ্যামিলিয়ার হাইপার লিমিডিমিয়া বলি যা বংশগত। সেটা জিনের সাথে ট্রান্সফার হচ্ছে অর্থাৎ জেনেটিক ডিসঅর্ডার।

অন্যান্য কারণেও কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। যেমন রেনাল ফেলিওর, যদি কেউ ধূমপান করেন, যদি কারো ডায়াবেটিস থাকে, হাইপো থাইরয়েড থাকলে ইত্যাদি ক্ষেত্রেও কোলেস্টেরল বাড়ে। কোলেস্টেরল যেতেহু জলে দ্রবীভূত হয় না, তাই পিত্তে কোলেস্টেরল জমে জমে পাথর তৈরি করে।

কোলেস্টেরল কীভাবে করোনারি অ্যার্টারিকে খারাপ করে? সব খারাপ একসাথে একজায়গায় দেখতে পাওয়া যায় না। হঠাৎ দেখা গেল একটা বিশেষ আর্টারি একটা বিশেষ জায়গায় খারাপ হয়ে গেছে। লুসেনটা ন্যারো হয়ে গেছে। তার কারণ ফ্যাটগুলো গিয়ে ভিতরের স্তরে (ইনার লেয়ারে) গিয়ে জমা করে। জমা করার সাথে সাথে শরীরের প্রতিরোধ মেকানিজম সেখানে কাজ করল---ম্যাক্রাফেজ ছুটে এল, বডি পাওয়ার ছুট এল। এবার তাকে অ্যারেস্ট করল। তারপর চারদিক থেকে ফাইবার টিস্যু এসে তার ওপর জমতে শুরু করল। তখন লুসেনটা সুর হয়ে যায়। যে মুহূর্তে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হল। রক্ত চলাচল বাধা সৃষ্টির জন্যই আমাদের কতকগুলো লক্ষণ দেখা দেয়। বুকে ব্যথা হয়, বুক ভারী হয়ে যায়। বুকের ব্যথা হাতে ছড়িয়ে পড়ে, পিছনের দিকে যায়, শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। তখণ আমরা বলি করোনারি আর্টারি ডিজিজে হয়েছে । সুতরাং এই যে করোনারি আর্টারি ডিজিজ বললাম এর সাথে অন্যান্য রোগও থাকতে পারে। যেমন ক্যারোটিরাট। গলায় যে বড় বড় আর্টারি আছে সেই আর্টারিতে ন্যারোয়িং থাকতে পারে। হয়তো বড় অ্যাওর্টার দেওয়ালে গিয়ে শক্ত করে দেয়। সেটা শুরু হল খুব ছোট বয়স থেকেই। ছ’মাস বয়স থেকে আর্টারির দেওয়ালগুলো শক্ত হতে থাকে।

এটা একটা সাধারণ ঘটনা। বয়স যত বাড়ে তত আর্টারির পথগুলো ছোট হতে থাকে, আর্টারির দেওয়াল শক্ত হতে থাকে।

মোদ্দ কথা, রক্তে কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারইড বেশি হলে তা আর্টারির ভিতর জমে গিয়ে সরু হয়ে যায়। এর ফলে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। আর হৃৎপিন্ডে বা হার্টে রক্তপ্রবাহ কম হলে যে উপসর্গের সৃষ্টি হয় তাকে বলে অ্যাঞ্জাইনা। তাহলে দেখা যাচ্ছে কোলেস্টেরল বেশি থাকলে করোনারি আর্টারি ডিজিজের সম্ভাবনা বেশি।

করোনারি আর্টারি ডিজিজের অনেক ফ্যাক্টর আছে। তার মধ্যে মেজর ফ্যাক্টর হল হাইপারলিপিডিমিয়া।

অনেক সময় দেখা যায় কোলেস্টেরল কম আছে, ট্রাইগ্লিসারাইড প্রচুর বেশি। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এইচ.ডি.এল একদম কম, কিন্তু এল.ডি.এল প্রচুর বেশি। এগুলোকে বলা হয় ডিসলিপিডিমিয়া। তার মানে লিপিডের যে অনুপাত থাকার কথা নেই সমতটা ঠিকমতো থাকছে না।

কোলেস্টেরল কোন কোন জায়গা থেকে পাব? অর্থাৎ ঘুরিয়ে বললে আমরা কী কী খাবার বাদ দেব? রেড মিট খাওয়া বন্ধ করতে হবে। খুব ইচ্ছা হলে মাসে দু’একদিন দু’-এক টুকরো। ডিমের হলুদ অংশ অর্থাৎ কুসুম বাদ দিতে হবে। স্যাচুরেটেড তেল অর্থাৎ যে তেল ঠান্ডাতে জমে যায় যেমন ঘি, বনস্পতি বন্ধ রাখতে হবে। মাখন, চিজ, পেস্ট্রি, আইসক্রিম, বাদাম, সরযুক্ত দুধ, কাজুবাদাম, নারকেল সব বাদ দিতে হবে। এগুলো খেলে শরীরে মদ জমে যায় বলে খেতে বারণ করা হয়। ধূমপান করলেও কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। ফাস্ট ফুড, পিৎজা, অ্যালকোহল এগুলো সব বন্ধ করতে হবে। মাঝে মাঝে দু’ একবার চলতেই পারে। কিন্তু অভ্যাসে পরিণত করলে চলবে না। অনেকে আছেন একটা ডিমে পোয়ায় না, তারা আবার দুটো তিনটে ডিম একসাথে খেয়ে ফেলে। অনেকে আছে সবজি খায় না, শুধুই মাংস খায়। এরকম হলে বিপদের সম্ভাবনা বেশি।

আর একটা জিনিস হল ভাজাভুজি, বেশি তেল দিয়ে রান্না করে খুব অল্প তেলে রান্না করতে হবে। যারা আমিষভোজী তারা যত খুশি মাছ খান। বড় মাছ, ছোট মাছ। ডিম যদি পছন্দ হয় ডিমের কুসুম বাড়িতে যদি ছোট বাচ্চা থাকে তাকে দিন, ডিমের সাদা অংশটি খান। একটার জায়গায় তিনটে খেতে পারেন। দুধ খেতে বাধা নেই। তবে সেটা স্কিমড মিল্ক হতে হবে। স্কিমড মিল্কের ছানা, দই, দুধ খেতে পারেন।

একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, যে রান্না বেশি মুখরোচক তাতে ফ্যাট বেশি না থাকলে হতে পারে না। সুতরাং মুখরোচক খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এটা যদি বন্ধ করা যায় তাহলে করোনারি আর্টারি ডিজিজ হবে না। তার মানে অনেক টাকা বেঁচে যাবে। এখন একটা স্টেন্ট আশি হাজার থেকে এক লাখ বিশ হাজার টাকা দাম। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকমের দাম।

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির খরচ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। বাইপাস সার্জারির খরচ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। রেগুলার ওষুধ যা খাওয়া হয় তার দামও অনেক। ভালো খাবার খেয়ে ভবিষ্যৎ নষ্ট করে কোনো লাভ নেই।

শেষ কখা হল এতসব পড়ে অহেতুক ভয় পাবার কোনো মানে নেই। ছোট শিশুদের ঘি, দুধ, ডিম, মাখন থেকে বঞ্চিত করবেন না। অতিরিক্ত না খেলেই হল। শরীরের গঠন, প্রজনন এবং বিপাকের জন্য কোলেস্টেরল অতি আবশ্যিক। শুধুমাত্র যাদের রক্তে বেশি কোলেস্টেরল আছে তারাই সতর্ক হবেন। মাঝে মাঝে লিপিড প্রোফাইল চেক করে নেবেন। প্রতিদিন ব্যায়াম করুন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, নিয়ম করে হাঁটুন।

খাদ্যে কোলেস্টেরল না থাকলেও শরীরে এটা তৈরি হতে পারে। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট যখন শরীরে সম্পূর্ণ দাহ্য হয় না, ডায়াবেটিস থাকলে এটা হয়, ভোজ্য তেল ও ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার থেকে শরীরে তৈরি হয় কোলেস্টেরল। আবার অতিরিক্ত ফ্যাট শরীরে জমা থাকলেও হতে পারে কোলেস্টেরল। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে সুস্থভাবে বাঁচুন।


সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন