×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

যত কান্ড প্যাংক্রিয়াসে

ডাঃ কিংশুক দাস
2019-04-17 13:30:16

সরাসরি প্যাংক্রিয়াটাইটিসে যাওয়ার আগে চলুন দেখে নিই প্যাংক্রিয়াস বস্তুটি কী? প্যাংক্রিয়াস অর্থাৎ অগ্ন্যাশয় আমাদের শরীরের একটা অন্যতম প্রধান অঙ্গ। যেটা খাদ্য পরিপাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই অগ্ন্যাশয় থাকে পেটের ঠিক ওপরের দিকের মাঝামাঝি জায়গায়। ভাবতেও অবাক লাগে এই ৭৫-১০০ গ্রাম ওজনের অঙ্গটার মানব শরীরে নানা কারিকুরি দেখে। সত্যি কথা বলতে কী মিশরীয় যুগে এই অঙ্গ অম্বন্ধে কোনো ধারণা ছিল না। প্যাংক্রিয়াস সম্বন্ধে প্রথম জানা যায় অ্যারিস্টটল আর গ্যালনের সময়ে। কিন্তু তখন প্যাংক্রিয়াসকে ভাবা হত কেবলমাত্র একটা সাপোর্টিভ প্যাড অফ টিস্যু। কেউ কেউ মনে করতেন এটা বোধ হয় লিভার থেকে পাতার মতো বেরিয়েছে। আর এটা কোনো কাজের নয়। এই তো সেদিন----১৬৪২ সালে, উইরসাং মহাশয় প্রথম অগ্ন্যাশয় নালীর বর্ণনা করেন। আর ১২৫ বছর হয়ে গেল যখন ডাঃ ফিজ প্রথমবার অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসের বর্ণনা দেন। এই অগ্ন্যাশয় গ্ল্যান্ডের দুটো ভাগ—একটা হল এক্সোক্রাইন আর অপরটি হল এন্ড্রোক্রাইন।

এই এক্সোক্রাইন ভাগের কাজ হল (এখান থেকে নিঃসারিত হরমোনগুলো) খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করা। যেমন—চর্বি পরিপাককারী উৎসেচক ‘লাইপেজ’, কার্বোহাইড্রেট পরিপাককারী উৎসেচক ‘প্রোটিনেজ’ বা ‘ট্রিপসিম’। এই খাদ্য পরিপাককারী উৎসেচকগুলো প্যাংক্রিয়াসের অ্যাসিনার সেলের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় সঞ্চিত থাকে। আর তারপর প্যাংক্রিয়াস থেকে ক্ষরিত হয়ে ডিওডেনামে পৌঁছে সক্রিয় হয়। ক্ষুদ্রান্ত্রে খাদ্যের বিভিন্ন ভাগকে হজম করায়। এন্ড্রোক্রাইন অংশ থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন আর গ্লুকাগন রক্তে শর্করা অর্থাৎ সুগারের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

প্যাংক্রিয়াসে কী কী রোগ হয়

এক্সোক্রায়াটাইটিস অংশের রোগ হল অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস এবং ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিস।

এন্ড্রোক্রাইন অংশের রোগ হল ডায়াবেটিস। আর ক্যানসার তো প্যাংক্রিয়াসের যেখানে সেখানে হতে পারে।

প্রথমেই চলে আসি প্যাংক্রিয়াটাইটিস এর আলোচনায়। প্যাংক্রিয়াটাইটিস দু’ ধরনের হতে পারে—অ্যাকিউট অর্থাৎ ক্ষণস্থায়ী এবং ক্রনিক অর্থাৎ দীর্ঘস্থায়ী।

কোনো মানুষের প্যাংক্রিয়াটাইটিস হবে কি না তা তিনটে জিনিসের ওপর নির্ভর করে। এক, তার জিনের গঠন কী রকম। দুই, পরিবেশগত কোনো ফ্যাক্টর আছে কি না। তিনি ধূমপায়ী বা মদ খান কি না। তার ওপর গ্যাসট্রোইন্টেস্টিনাল ট্রাক্টে পাথর আছে কি না। তিনি মেটাবলিক সিনড্রোমের রোগী কি না। শরীরে চর্বি বেশি আছে কি না। ট্রাইগ্লিসারাইডের রোগী কি না ইত্যাদি ইত্যাদি। তিন, তার প্রতিরোধ ক্ষমতা প্যাংক্রিয়াটাইসকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারছে কি না।

এখানে উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন যে ১০০ জন পুরুষ যদি অ্যালকোহল খান তাদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ জনের প্যাংক্রিয়াটাইটিস হবে। বাকিদের হয় না কারণ তারা জিন এবং ইমিউনোলজিক্যাল দিক থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে। লাক ফ্যাক্টর আর কি !

অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস

এর মানে হল অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ। এই রোগের উপসর্গ হল পেটে তীব্র ব্যথা, বমি ভাব, পেট ফুলে যাওয়া, আর রোগটা তীব্র হলে রক্তের চাপ কমে যায়। শ্বাসকষ্ট, কিডনি ফেলিওর এবং পরিশেষে মৃত্যু।

অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে হালকা অর্থাৎ মাইল্ড। আর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে তীব্র অর্থাৎ সিভিয়ার। এই মাইল্ড প্যাংক্রিয়াটাইটিস রোগীদের ধরা সবসময় সহজ হয় না। পেটের ব্যথাকে গ্যাসের ব্যথা ভেবে অনেকে টপাটপ অ্যান্টাসিড বা গ্যাসের বড়ি খান। আবার বলি, কোনো ব্যথাই গ্যাসের ব্যথা নয়। তাই অনেকদিন ধরে ওপরের পেটে ব্যথা চলতে থাকলে তাকে অবহেলা না করে রক্তের লাইপেজ এবং অ্যামাইলেজ পরীক্ষা করা খুব জরুরি। ১৫ থেক ২০ শতাংশ রোগীর ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে ১২ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে।  এই সময় দেখা দেয় অর্গান ফেলিওর। রোগীর যদি মাল্টি অর্গান ফেলিওর হয় তাহলে চিকিৎসা খুবই কঠিন। আমরা গ্যাসট্রোএন্টারোলজিস্টরা বলি প্রথম ১২ থেকে ২৪ ঘন্টায় প্যাংক্রিয়াটাইটিসের হার্ট অ্যাটাকের থেকেও মারাত্মক। হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট ওষুধ আছে কিন্তু প্যাংক্রিয়াটাইটিসের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। সিভিয়ার প্যাংক্রিয়াটাইটিসের রোগীকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করে আইভি স্যালাই, অক্সিজেন, ব্যথার ওষুধ দিয়ে প্যাংক্রিয়াসের নেক্রোসিসকে আটকে দিতে হবে। সিভিয়ার প্যাংক্রিয়াটাইটিসে প্যাংক্রিয়াসের যে পচন ধরে তার চিকিৎসা হল স্যালাইন আর স্যালাইন। এই সিভিয়ার প্যাংক্রিয়াটাইটিসের রোগীদের ৪০ শতাংশ মারা যান।

এইবার একটু দেখে নেওয়া যাক অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসের কারণগুলি। তাহলেই বুঝতে পারবেন সতর্কতা কেন ভীষণ জরুরি। সবচেয়ে প্রধান কারণ হলে পিত্তথলিতে পাথর (গলব্লাডার স্টোন)। আমরা প্রায়শই দেখেছি গলস্টোনে মাঝে মধ্যেই পেটে প্রায় ব্যথা হয়। আর রোগী কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাকে গ্যাসের ব্যথা বলে উড়েয় দেন। আবার অনেক সময় স্টোনটা পিত্তনালীতে পিছলে গিয়ে প্যাংক্রিয়াটাইটিসের সৃষ্ট করে। তাহলে গলব্লাডার স্টোনের রোগীর যদি একবার প্যাংক্রিয়াটাইটিস হয় তাহলে তার গলব্লাডার স্টোন অপারেশন করা খুবই জরুরি। এই পিত্তনালীর পাথর অথবা বালির দানার মতো পাথরের চিকিৎসা হল ইআরসিপি করে পিত্তনালীর মুখ কেটে দিয়ে পিত্তনালীকে পরিষ্কার করে দেওয়া। দ্বিতীয় কারণটা হল মদ্যপান। একজন মানুষ যদি টানা ৫-১০ বছর মদ্যপান করেন তাহলে তার প্যাংক্রিয়াটাইটিস হবার সম্ভাবনা ১০ থেকে ২০ শতাংশ। আবার একজন মানুষ হঠাৎ করে যদি একদিন অনেকটা মদ খেয়ে ফেলেন তাহলেও তার প্যাংক্রিয়াটাইটিস হতে পারে। আর এখানে বলে রাখা দরকার মদ্যপায়ী রোগী যদিও প্রথমবার পেটের ব্যথার কথা বলেন কিন্তু জানবেন তার ভেতরে ভেতরে প্যাংক্রিয়াটাইটিস হয়েই গেছে মদ খাওয়ার জন্য। যারা সপ্তাহে এক-দু’ দিন মদ খান তাদের ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিস দেখা দেয়। এছাড়া যে যে কারণে অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস হয় তার মধ্যে হল সংক্রমণ। সেটা যেকোনো ভাইরাস যেমন মাম্পস, কাক্সাকি-বি, সাইটোমেগালো, হেপাটাইটিস, এন্টারোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মিজলস ভাইরাস প্রভৃতির সংক্রমণের হতে পারে। আর ব্যাক্টেরিয়য়ার মধ্যে টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু সবাই প্যাংক্রিয়াটাইটিস  সৃষ্টি করতে পারে। এখানেও বলে রাখা দরকার ‘রাউন্ড ওয়ার্ম’ থেকেও প্যাংক্রিয়াটাইটিস হতে পারে। ওষুধের মধ্যে খিঁচুনির ওষুধ, ক্যানসারের ওষুধ, এইডসের ওষুধ, টেট্রাসাইক্লিন, মেট্রোনিডাজোল ইত্যাদি থেকেও প্যাংক্রিয়াটাইটিস হতে পারে। অন্যান্য কারণ বলতে জন্মগত কারণ—অটোইমিউন প্যাংক্রিয়াটাইটিস। আঘাতজনিত কারণেও প্যাংক্রিয়াটাইটিসও হতে পারে। আর আগেই বলেছি মেটাবলিক সিনড্রোম থেকে ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, ডিসলিপিডিমিয়া ছাড়াও প্যাংক্রিয়াটাইটিস হতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত ইআরসিপি-র পরেও ১ থেকে ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে প্যাংক্রিয়াটাইটিস দেখা দিতে পারে।

অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা

রক্তের লাইপেজ এবং অ্যামাইলেজ পরীক্ষা করতেই হবে প্যাংক্রিয়াটাইটিস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে। রক্তের ডব্লুবিসি কাউন্ট, সিআরপি, এলএফটি, কিডনি ফাংশন, চেষ্ট এক্স-রে, ইউএসজি এবং পেটের সিটি স্ক্যান করতে হবে। এগুলো পরীক্ষা করে রোগের তীব্রতা এবং ব্যাপ্তি সম্বন্ধে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়। আর রোগের কারণ তো জানা যায় মদ্যপানের ইতিহাস থেকে। ইউএসজি থেকে জানা যায় পাথর বা রাউন্ড ওয়ার্ম হয়েছে কি না। রক্তের লিপিড ফ্যাক্টর থেকে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কতটা আছে, অটো ইমিউন অ্যান্টিবডি করে কারণ ধরা হয়। কিছু ক্ষেত্রে এম.আর.সি.পি করা হয়। পিত্তনালীতে পাথর বা কৃমি এবং প্যাংক্রিয়াস ডিভিশন ধরা হয়। এখন আবার কিছু ক্ষেত্রে এন্ড্রোসনোগ্রাফির মাধ্যমে প্যাংক্রিয়াসের গঠনগত বিকৃতি বা পিত্তনালীর ছোট পাথর অনায়াসে ধরা সম্ভব হচ্ছে।

অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসের চিকিৎসা

যাদের প্যাংক্রিয়াটাইটিস মাইল্ড তাদের এক থেকে দু’দিনের মধ্যে মুখ মুখে খাওয়ানো শুরু করা হয় এবং তিন থেকে চার দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। অনেক সময় এই ধরনের রোগীদের ডাক্তারবাবুর তত্ত্বাবধানে বাড়িতেও রাখা সম্ভব হয়। আর প্যাংক্রিয়াটাইটিস যদি সিভিয়ার হয় তাহলে প্রথম দু’ তিন দিন আইভি স্যালাইন, ব্যথার ওষুধ আর অক্সিজেনের দরকার হতে পারে। খুব তাড়াতাড়িই রোগীকে মুখে খাওয়ানো শুরু করা হয়। কোথাও যদি সংক্রমণ থাকে বা প্যাংক্রিয়াসে সংক্রমণ হয় তাহলে দ্বিতীয় সপ্তাহে জীবনদায়ী অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়।

যে রোগীর মাল্টি অর্গান ফেলিওর হয় তার প্রত্যেকটা অর্গানের আলাদা আলাদা চিকিৎসা করা হয়। যেমন কিডনির ডায়ালিসিস, লাংয়ের জন্য ভেন্টিলেশন। যদি গলব্লাডারের পাথর পিছনে পিত্তনালীতে আটকে প্যাংক্রিয়াস এবং জনডিস হয় তাহলে এমার্জেন্সি ইআরসিপি করে পিত্তনালীর পাথর বার করা যেতে পারে। রোগী যদি তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ না হয়, প্যাংক্রিয়াসে নেক্রোসিস চলতেই থাকে, প্যাংক্রিয়াসে পুঁজ হয় অথবা প্যাংক্রিয়াসের চারপাশ সংক্রমিত হয় তাহলে চার সপ্তাহের পর রোগীর অপারেশন দরকার হয়ে পড়ে যাকে বলে নেক্রোসেকটমি।  এখানে বলে রাখা দরকার, বিজ্ঞানের হাত ধরে এখন এন্ডোস্কোপির সাহায্যে প্যাংক্রিয়াসের সংক্রমণ এবং পুঁজের চিকিৎসাও করা যায় কিছু ক্ষেত্রে। অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসে সারাজীবনের জন্য কোনও বিধিনিষেধ নেই। ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিসের রোগীদের মতো প্যাংক্রিয়াটিক এনজাইমের কোনো ভূমিকা নেই।

বার বার প্যাংক্রিয়াটাইটিস হলে

কারণগুলো প্রায় একইরকম। মদ খাওয়া, বেশি ওজন, গলব্লাডার স্টোন অপারেশন, মদ বন্ধ না করা, প্যাংক্রিয়াটাসের গঠনগত ক্রুটি বা বংশগত প্যাংক্রিয়াটাইটিস। এছাড়া ক্যালসিয়ামের তারতম্য এবং অটো ইমিউন প্যাংক্রিয়াটাইস তো আছেই। যদি ঠিখ সময়ে চিকিৎসা করা না যায় তাহলে এরকম বারবার প্যাংক্রিয়াটাইটিস হতে হতে ক্রুনক প্যাংক্রিয়াটাইটিস হয়ে যায়। এখানে বলে রাখা দরকার, প্রায় ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীর এই বারবার প্যাংক্রিয়াটাইটিস এবং ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিসের কারণটা বৈজ্ঞানিকদের এখনও অজানা। ভাবতে দুঃখ লাগে, যাকে আজ থেকে পনেরো বছর আগে প্যাংক্রিয়াটাইটিসে বারবার ভুগতে দেখেছি, আজও তার কারণ জানা যায়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিস ভেতরে ভেতরে চলতে থাকে এবং জানান দেয় অনেক পরে।

এবার এটা নিয়েই আলোচনা করব। এই ধরনের রোগীদের পেটে হালকা ব্যথা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীর গ্যাসের ব্যথা বলে উড়িয়ে দেন। ঠিখ যেমন লিভারের ৮০ শতাংশ কোষ নষ্ট হলেই তবে সিরোসিস বা সিরোসিসের লক্ষণ দেখা দেয়, ঠিক সেরকমই প্যাংক্রিয়াসের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কোষ নষ্ট হলে তবেই প্যাংক্রিয়াটাসের কষ্টগুলো দেখা দেয়। ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিসে যে কষ্টগুলো হয় সেগুলোর মধ্যে যেমন পেটে মাঝে মধ্যেই ব্যথা (তীব্র নাও হতে পারে), ক্ষুধামানন্দ্যতা, পাতলা পায়খানা, পায়খানায় তেল ভাসা, রোগীর ওজন কমে যাওয়া, শরীরে ভিটামিনের অভাব বোধ হওয়া এবং ডায়াবেটিসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়া। যখন এইগুলো এসে গেছে তখন ধরেই নিতে হবে রোগটা অ্যাডভান্স। আর ধরুন পেটে হালকা অস্বস্তি, একটু পাতলা পায়খানা, একটু ওজন কমছে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিস আছে কি না তা দেখতে হবে।আর একটা ব্যাপার আমাদের মতো গরম দেশে পাওয়া যায় তার নাম ট্রপিক্যাল প্যাংক্রিয়াটাইটিস। আমাদের বাংলাদেশে ছোটবেলা থেকে রোগ শুরু হয়। সত্যিকারের কারণ কেউ জানে না বললেই চলে। বিদেশের থেকে এখানকার প্যাংক্রিয়াটাইটিসের ধরন আলাদা। এতে প্যাংক্রিয়াসে বড় বড় পাথর হয়।

এছাড়া ইডিওপ্যাথিক প্যাংক্রিয়াটাইটিস তো আছেই। ধরন কীভাবে? ৯০ শতাংশ সেলের কাজ ধ্বংশ হওয়ার  আগে ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিস ধরা খুব মুশকিল। রক্তের লাইপেজ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক থাকে। রক্তের প্রোটিন, ভিটামিন এবং ট্রেস এলিমেন্ট কমে যায়। ইউএসজি, এন্ড্রোসনোগ্রাম, এমআরসিপি, সিটি স্ক্যান করে ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিস ধরা যায়। রক্তের ফাস্টিং এবং পিপি সুগার তো করতেই হবে ডায়াবেটিস আছে কিনা জানার জন্য। এছাড়া এখন ফিকাল ইলাস্টেস এবং ব্রিদ টেস্ট করেও ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিস ধরা হয়। এখানে বলে রাখা দরকার যেকোনো ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিসের রোগীর প্যাংক্রিয়াসে ক্যানসার হচ্ছে কি না তার পরীক্ষা করিয়েই নিতে হবে। এই পরীক্ষার ডাক্তারি নাম CA-19-9।

ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিসের চিকিৎসা

মদ্যপান তো বন্ধ করতেই হবে। মনে রাখা দরকার, সিগারেট খাওয়া সরাসরি প্যাংক্রিয়াসের ক্ষতি না করলেও প্যাংক্রিয়াটাইটিসের গতিকে ত্বরান্বিত করে এবং মদ্যপান প্যাংক্রিয়াসে ক্যানসার সৃষ্টি করে। রক্তে চর্বির চিকিৎসা, ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির চিকিৎসা, অটো ইমিউন প্যাংক্রিয়াটাইটিসের চিকিৎসা করাতে হবে। রোগীকে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল খেতে হবে যা প্যাংক্রিয়াটাইটিসের পাথরগুলো ই এসডব্লু এল-এর সাহায্যে ভেঙে ফেলে ইআরসিপি-র মাধ্যমে বার করে দেওয়া যায় অগ্ন্যাশয় থেকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্যাংক্রিয়াসের অপারেশনের দরকরা হয়। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা রক্তে সুগারের পরিমাণ অনুযায়ী করতে হবে।

সবচেয়ে প্রধান চিকিৎসা প্যাংক্রিয়াস থেকে এনজাইম নিঃসরণ হওয়ার ফলে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়, যার ফলে খাবার ঠিকমতো পরিপাক না হওয়ার রোগীর পাতলা পায়খানা, ওজন কমে যাওয়া, ভিটামিনের অভাব বোধ হওয়া, এই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। তাই রোগীকে বাইরে থেকে এনজাইম সরবরাহ করা হয় ক্যাপসুলের মাধ্যমে। যার ফলে ফ্যাট, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট শোষণ হয়। একে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ‘প্যাংক্রিয়াটাইটিক এনজাইম রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি’ (পিইআরটি)। এই পিইআরটি-র ফলে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যান এবং দীর্ঘায়ু হন। যে যে জিনের ক্রটির জন্য প্যাংক্রিয়াটাইটিস হয়ে সেগুলো আমরা ধীরে ধীরে জানতে পেরেছি। আগামী দিনে জিন থেরাপির সাহায্যে বংশগত প্যাংক্রিয়াটাইটিস অচিরেই দূর করতে পারা যাবে বলে আশায় আছি।

তাহলে ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিসের রোগীর কি না খেয়ে থাকবে? একদমই তা নয়। এসব রোগীরা বাড়ির তৈরি খাবারই খেতে পারবেন। জানা গেছে এসব রোগীদের খাদ্যে ফ্যাটের পরিমাণ স্বাভাবিক বা তার কাছাকাছি রাখতে হবে তাদের চার থেকে আট চামচ তেল খাবারে দেওয়া চলবে। তিনি অনুষ্টান বাড়িতেও খেতে পারবেন। যেগুলো বারণ, একেবারে গলা পর্যন্ত খাবেন না। মাছ, মাংস, ডিম, চার পাঁচরকম ভাজাভুজি খাবেন না। আর ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিসের রোগীরা ওষুধ এবং ডায়াবেটিক রোগীদের ডায়াবেটিস ওষুধ ঠিক নিয়ম করে খেয়ে যেতে হবে।

এখন আমরা ডায়াবেটিসের আগের স্টেজকে বলি প্রি-ডায়াবেটিক, হাইপার টেনশনের আগের স্টেজকে বলি প্রি-হাইপার টেনশন। অর্থাৎ রক্তে সুগারের মাত্রা ১০০ পার হলে বা ব্লাডপ্রেসার ১২০/৮০ পেরোলে আমরা সাবধান হই। যারা মোটাসোটা, মদ খান, ধূমপায়ী, গলস্টোন আছে, যারা শাকসবজি কম খান, যাদের রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেশি, এদের ভবিষ্যতে প্যাংক্রিয়াটাইটিস হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই যেমন ভাবে আমরা হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করার কথা চিন্তা করি, ঠিক তেমনি যাতে অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস না হয় সেই চেষ্টাও করি। তাই বলি বিজ্ঞানমনস্ক হবার কথা। শরীরের মেদ ঝরিয়ে ফেলুন, প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি-ফলমূল খান, বংশে প্যাংক্রিয়াসের অসুখ থাকলে নিজে থেকে ডাক্তারবাবুকে দেখিয়ে নিন। পেটে ব্যথা হলে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন। কোনো ব্যথাকেই গ্যাসের ব্যথা বলে উড়িয়ে দিয়ে বাজার চলতি মেট্রোনিডাজোল ট্যাবলেট খাবেন না।


সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন