×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

স্পন্ডিলাইটিসে দারুণ কাজ দেয় যোগব্যায়াম

ডাঃ সুনীল ঠাকুর (বিশিষ্ট অস্থি বিশেষজ্ঞ)
2019-04-17 15:51:43

স্পন্ডিলাইটিস । ঘাড়ে, পিঠে বা কোমরে যে কোনও জায়গায় হতে পারে। তবে ঘাড়েই বেশি হতে দেখা যায়।

স্পন্ডিলাইটিস হচ্ছে মেরুদন্ডে প্রদাহজনিত সমস্যা। যেমন অ্যাষ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস, রিউম্যাটয়েড স্পন্ডিলাইটিস ইত্যাদি।

ঘাড়ের স্পন্ডিলাইটিসে ঘাড়ে ব্যথার সাথে সাথে হাত বরাবর যন্ত্রণা নেমে আসে। দিনে দিনে এই রোগের সমস্যা বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যেও এই রোগের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ছে।

সার্ভাইকাল স্পন্ডিলাইটিসের কারণগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায় একনাগাড়ে ঘাড় নীচু করে কাজ করা, সেলাই করা হোক বা লেখাপড়ার কাজ, কম্পিউটার নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ, অতিরিক্ত ওজন কিংবা ভারী স্কুলের ব্যাগ, উঁচু বালিশে শোয়া ইত্যাদি।

লাম্বার স্পন্ডিলাইটিসের ক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা প্রণালী অথবা কাজকর্মের ধরনের ওপরও মেরুদন্ডের বাত নির্ভর করে। দেখা গেছে যারা ক্রমাগত বসে কাজ করেন যেমন অফিসের করনিক, কম্পিউটারে কাজ, সোনা-রূপোর দোকানে যারা কাজ করেন তাদের মেরুদন্ডে বাত ধরতে পারে। তেমনি আবার যারা দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে কাজ করেন তাদেরও স্পন্ডিলাইটিস হতে পারে।

মেরুদন্ডের বিশেষ ধরনের সমস্যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং মধ্যবয়সীদের মেরুদন্ডে রক্তাল্পতা জনিত উপসর্গ মারাত্মক ধরনের বাত। একে অ্যাষ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস বলে। এই রোগে মেরুদন্ডে প্রদাহ হয় এবং শক্ত বা স্টিফ হয়ে বেশ সমস্যার সৃষ্টি করে। কিশোর-কিশোরীরা সামনের দিকে বেশিক্ষণ ঝুঁকে পড়লে অথবা মেরুদন্ডে ক্রমাগত সামান্য ধরনের আঘাতের জন্য এ ধরনের রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

অ্যাষ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস রোগটি মারাত্মক হওয়ার কারণে রোগীকে বেশ সমস্যায় ফেলে। সাধারণত কুড়ি থেকে ত্রিশ বছর বয়সী পুরুষেরা এই উপসর্গে বেশি আক্রান্ত হন। মহিলাদের অপেক্ষা পুরুষরাই দশগুণ বেশি ভোগেন। এটিকে রিউম্যাটয়েড ডিজিজের অন্যতম হিসেবে পরিগণিত করা হয়। এটি একটি বংশগত রোগ এবং সেটি প্রমাণিত হয় HLA B27 বা হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে। দেখা গেছে এই উপসর্গে আক্রান্ত শতকরা একশোজনেরই HLA B27  পজিটিভ হয়। এই রোগের উপসর্গ কোমরে ব্যথা থেকে। রোগী কোমরে ব্যথার কথা বলে এবং এই ব্যথা সামান্য থেকে শুরু হয়ে অসহ্য হতে পারে।

চলাফেরা, বসা, কাজ করা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। কিছুদূর হাঁটার পর কোমরে পিঠে বেশ ব্যথা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে ওই ব্যথা সারা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে এবং মেরুদন্ডের স্বাভাবিক সঞ্চালন বা ফ্লেক্সিবিলিটি কমতে থাকে। রোগী ক্রমশ সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বুকের পাঁজরার স্বাভাবিক সম্প্রাসারণ বা সংকোচন কমতে থাকে। ক্রমশ সারা মেরুদন্ডের সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায় এবং রোগীর চিত হয়ে শুতে অসুবিধা হয়। কারণ মেরুদন্ড ধনুকের মতো বেঁকে শক্ত হয়ে যায়। হাঁটাচলা করতে, বসতে, কাজকর্ম করতে বেশ অসুবিধা হয়। এক্স-রে করলে মেরুদন্ডের কশেরুকাগুলো বেশ পরিবর্তন ধরা পড়ে। শুরুতে পেলভিসের স্যাকরো-ইলিয়াক জয়েন্টে বিশেষ ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। ধীরে ধীরে সমস্ত মেরুদন্ডের হাড়ে শক্তভাব পরিলক্ষিত হয়। মেরুদন্ডের কশেরুকার মধ্যবর্থী অংশ দেখা যায় না অর্থাৎ বাঁশের গাঁটের মতো দেখায়। জংঘাসন্ধি, কনুই ইত্যাদির মধ্যেকার ফাঁক কমে যায় এবং হাড়গুলো হমে যায়। রক্তের ই.এস.আর বেড়ে যায় এবং HLAB27 টেস্ট পজিটিভ হয়।

কোনও কোনও ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান এমনকী এম.আর.আই স্ক্যান দরকার হতে পারে। বুকের এক্স-রে, ইসিজি, ইকো-কার্ডিওগ্রাম করে রোগের মূল্যায়ন করতে হতে পারে।

ডাক্তারের পরামর্শমতো ব্যথা কমাবার ওষুধ দিতে হবে। নানা ধরনের ট্যাবলেট ও ইঞ্জেকশন বেরিয়েছে যেগুলো উপকার দেয়। কিন্তু রোগীর সামগ্রিক অবস্থা বুঝে তা ব্যবহার করতে হয়।

ফিজিওথেরাপি বেশ ভালো ফল দেয়। তাই উপসর্গের শুরু থেকে ব্যায়াম-আসন, তাপ প্রক্রিয়া যেমন আলট্রাসোনিক ও শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি উপযুক্ত অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে নিতে হবে। হাইড্রোথেরাপি ও সওনা বাথ রোগ সারাতে বিশেষ করে মেরুদন্ডের সঞ্চালন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। মেরুদন্ডের শক্তভাব কমাতে অনেক সময় সার্জারির প্রয়োজন হয়। তবে সবক্ষেত্রেইফিজিওথেরাপি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

এছাড়া স্পন্ডিলাইটিসের অন্যান্য কারণগুলো হল শিরাদাঁড়ার গঠনগত ক্রুটি যেমন দুটো ভার্টিব্রার মধ্যবর্তী চাকতি স্থানচ্যূত হয়ে স্নায়ুমূলে চাপ সৃষ্টিকরে। মেরুদন্ডের স্বাভাবিবক বক্রতা নষ্ট হয়ে যাওয়া, দুটি ভার্টিব্রার মধ্যবর্তী জায়গা কমে যাওয়া, ঘাড়ের হাড় বেড়ে সার্ভাইবাল রিব্ব হওয়া, কোমরে ভার্টিব্রা ও স্যাক্রাম হাড়ের একীভূত হওয়া, ওই হাড়গুলোর মধ্যে বা ওই সংলগ্ন অঞ্চলে সংক্রমণজনিত রোগ বা টিউমার ইত্যাদি।

স্পন্ডিলাইটিস থেকে দীর্ঘস্থায়ী আরাম লাভ করতে ফিজিওথেরাপি, যোগাসন ও প্রাণায়াম বিশেষ উপকারী। উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কারণে যখন প্রতিদিন অনিদ্রার সমস্যা শুরু হয়, সঙ্গে ঘোড়ে ব্যথা, তখন প্রাণায়াম ও মেডিটেশন খুব জরুরি। এছাড়া প্রয়োজনমতো ওষুধ ও খাদ্যভ্যাসের পরিবর্তনও জরুরি।

উঁচু বালিশে শোওয়া বন্ধ করতে হবে। সামনে ঝুঁকে কাজ বা লেখাপড়া করা চলবে না। শক্ত খাটে শুতে হবে। ভিটামিন-ই, সি যুক্ত সবজি ফল বাদাম ও দানাশস্য তার সঙ্গে মাল্টি ভিটামিন খেতে হবে। দুধ-মাছ-চিকেন-ছানা-আপেল-বেদনা-পেয়ারা-সয়াবিনে আছে ক্যালসিয়াম এবং সবুজ শাকসবজিতে আছে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। এগুলো দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।

ঘাড়ের ও কোমরের ব্যায়াম বিশেষ করে পদ্মাসন, প্রাণায়াম, ভুজঙ্গাসন, শলভাসন ইত্যাদি যোগ ব্যায়ামের সাহায্যে ঘাড় ও পিঠের বেদনাকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়। ব্যথার জায়গায় গরম সেঁক, ব্যথা কমাবার মলম, গলা ও কোমরের বেল্ট বিশেষ ব্যথার জন্য প্রয়োজন।

কম্পিউটার তো থাকবেই, কিন্তু একনাগাড়ে কম্পিউটারে কাজ না করে মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে হবে।

‘হেলথ ইজ ওলেলথ’ কথাটি মনে রেখে আপনার দেহ ও মনকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখার দায়িত্ব কিন্তু আপনার।


সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন