×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

হাঁটুতে বাত ধরে কেন

ডাঃ সুমন্ত ঠাকুর
2019-04-17 15:55:42

হাঁটুর গড়ন ও শক্তি স্বাভাবিক না থাকলে আমরা সাবলীলভাবে হাঁতে সক্ষম হই না। এই স্বাভাবিক চলাফেরার জন্য মানুষ যেসব স্ট্রাকচারের ওপর নির্ভরশীল সেগুলো হচ্ছে---

  • হাঁটুর লিগামেন্ট বিশেষ করে ক্রুসিয়েন্ট লিগামেন্ট।
  • মিডিয়াল ও ল্যাটারাল কো-ল্যাটারাল লিগামেন্ট।
  • দুটো কার্টিলেজ (মিডিয়াল ও ল্যাটারাল)
  • হাঁটুর চারপাশে মাংসপেশি।
  • শক্ত আবরণী অর্থাৎ ক্যাপসুল

হাঁটুর গতি বা মুভমেন্টস বেশ জটিল। কারণ দৌড়াদৌড়ি, সিঁড়ি ভাঙা, খেলাধুলো, ওঠাবসা সব ব্যাপারেই যে বিশেষ বিশেষ ভঙ্গিমার প্রয়োজন সে-সবই নির্ভর করে হাঁটুর শক্তি ও সাবলীলতার ওপর। হাঁটুর বাইরের দিকে সরে যাওয়া বন্ধ রাখে কো-ল্যাটারাল লিগামেন্ট। এই দুটো শক্ত রিবনের মতো বস্তুর হাঁটুর ভেতরের ও বাইরের দিকে শক্তভাবে লেগে থেকে হাঁটুর আলগা হতে দেয় না। এছাড়া আছে মজবুত ক্রসিয়েট (অ্যান্টিরিয়র ও পোস্টেরিয়র লিগামেন্টস যারা হাঁটুকে সামনের ও পিছনের দিকে সরে যেতে বাধা দেয়।) খেলাধুলোর সময় অথবা দুর্ঘটনার হাঁটুতে চোট লাগার সময় ক্রসিয়েন্ট লিগামেন্ট হাঁটুতে শক্তভাবে ধরে রাখে। কিন্তু চোট মারত্মক হলে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে এবং হাঁটু ঘুরে যায়। হাঁটু আলগা হয়ে পড়ে এবং সামান্য আঘাতে অথবা বেকায়দার পা পড়লে হাঁটু ঘুরে যায়, যাকে বলে ‘আনস্টেবল নি’। এ ধরনের অশক্ত হাঁটু নিয়ে রাস্তা পার হতে গেলে দুর্র্ঘটনা ঘটতে পারে। খেলাধুলো, সিঁড়ি ভাঙা প্রায় বন্ধ হতে বসে। আমরা অর্থাৎ অর্থোপেডিক সার্জেনরা একটি বিশেষ পরীক্ষা করে বুঝতে পারি ক্রসিয়েট লিগামেন্ট ছিঁড়েছে কি না। হাঁটুকে আঘাত থেকে রক্ষা এবং ঘর্ষণ থেকে বাঁচতে যাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য সে দুটো হচ্ছে মিডিয়াল ও ল্যাটারাল কার্টিলেজ। দেখতে অর্ধচন্দ্রাকৃতির মতো, যার জন্য ওদের বলা হয় সেমিলুনার কার্টিলেজ। এই দুটো স্ট্রাকচার টিবিয়া বোনের উপরিভাগে সন্ধির অভ্যন্তরে লেগে থাকে। যতক্ষণ স্বাভাবিক থাকে ততক্ষণ হাঁটুতে কোনো অসুবিধা দেখা দেয় না, অবশ্যই অন্যান্য স্ট্রাকচারগুলো নরমাল থাকলে। কিন্তু কার্টিলেজ ছিড়লে বিশেষ করে হাঁটু মোড়া অবস্থায় ঘুরে কার্টিলেজ ছিঁড়ে যায় এবং সেটা বোঝা যায় ম্যাকমারেজ টেস্টের মাধ্যমে। হাঁটু ফুলে যায়, ব্যথা হয় এবং হাঁটু একটি বিশেষ ভঙ্গিমায় আটকে যায়।

হাঁটুকে অবক্ষয় এবং আর্থ্রাইটিস থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব ওই সন্ধির নরমাস্থির ওপর। কার্টিলেজ সন্ধির হাড়ের শেষপ্রান্তে অবস্থান করে। এই যে আর্টিকুলার কার্টিলেজ সেটার সজীবতা রক্ষা করে সাইনুভিয়াল ফ্লুইড এবং এটা সহ্যমতো কাজকর্ম, হাঁটুচলা, খেলাধুলো ইত্যাদি সমাধান করতে সাহায্য করে। কিন্তু অতিরিক্ত চাপ, চোট-আঘাত এই স্ট্রাকচারকে সহজেই অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দেয়, ফলে বাতব্যাধি, সন্ধির সাবলীলতার অভাব ইত্যাদি দেখা দেয়।

হাঁটুর সামনে থাকে মালাইচাকি বা প্যাটেলা যেটা দেহের বৃহত্তর সিসময়েড বোন। এটির উৎপত্তি ঊরুর সামনের মাংসপেশি কোয়াড্রিসেপস মাসলের লিগামেন্টে থেকে। এটির কাজ হচ্ছে সন্থিকে চোট-আঘাত থেকে রক্ষা করা এবং হাঁটুকে সামনের দিকে সোজা করা। কিন্তু এই মালাইচাকিতে আঘাত লেগে ফ্র্যাকচার হলে বেশ ভোগায়। এছাড়া মালাইচাকিতে অবক্ষয় ধরলে বেশ ব্যথা হয় এমনকী হাঁটতে-চলতে কষ্ট হয়।

হাঁটুতে বাত ধরে কেন

হাঁটুতে বাতের কারণ অনেক। যেমন অস্টিওআর্থ্রোসিস, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, গেঁটেবাত বা গাউট, সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমেটোসাস ইত্যাদি। এছাড়া হাঁটুতে বিকৃতি, অতিরিক্ত চাপ, আঘাত এবং বেকায়দায় অর্থাৎ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হাঁটুর ব্যবহার বা কাজও পরবর্তীকালে বা বেশি বয়সে বাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে অনেকের অভিজ্ঞতায় বংশগত ও জেনেটিক কারণে হাঁটুতে বাদ দেখা যায়। হাড়ের উপাদানের হ্রাস ও ঘনত্ব কমে যাওয়া দরুনও বাত ধরে অথবা বাতের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। অস্টিওপোরোসিসের জন্য প্রায় পঁচিশ থেকে ত্রিশ শতাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে বাতের ব্যথা বেড়ে যায়।

হাঁটুর নরমাস্থিবা কার্টিলেজ যেটা সন্ধির দুটো বড় হাড়ের (ফিমার ও টিবিয়া) প্রান্তিক অংশে থাকে সন্ধিকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে ও সন্ধিকে সজীব রাখে সেটা আঘাতজনিত কারণে অথবা বয়ঃবৃদ্ধির জন্য কিংবা রোগাক্রান্ত হলে ওই নরমান্থিতে পরিবর্তন ঘটে। ক্রমাগত আঘাতে অথবা কোনো একটি বড় আঘাতে বিশেষ করে ফ্র্যাকচার হলে সন্ধির রক্ষাকবচের মতো কার্টিলেজে অবক্ষয় ধরে, ফলে ও কার্টিলেজ বিবর্ণ হয়ে যায় অর্থাৎ মসৃণ চকচকে ভাব নষ্ট হয়ে যায়। সন্ধির অভ্যন্তরস্থ ফ্লুইডে পরিবর্তন ঘটে এমনকী সাইনুভিয়াল ফ্লুইড কমে যায়, যার ফলে কার্টিলেজের স্বাভাবিক সাবলীলতা এবং সজীবতা হ্রাস পায়। বয়ঃবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কার্টিলেজের স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে, ফলে হাড়ে অবক্ষয় ধরে। কার্টিলেজের স্বাভাবিক শক্তি ও সজীবতা নির্ভর করে ওইসব উপাদানের ওপর এবং এ জন্যই গ্লুকোসামিন ও কনড্রাইটিন সালফেটকে বলা হয় নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট। এর জন্যই অবক্ষয়জনিত বাতকে প্রতিরোধ করার জন্য আমরা ক্লুকোসামিন ও কনড্রাইটিন সালফেটের তৈরি ক্যাপসুল খেতে বলি।

সন্ধিতে অবক্ষয় বাড়দে থাকলে কার্টিলেজ বেশি পরিমাণে নষ্ট বা ড্যামেজ হয়ে যায়। সন্ধির প্রান্তিক অস্থি এবড়ো-খেবড়ো এবং খসখসে হয়ে পড়ে। সন্ধির মধ্যে হাড়ের ছোট ছোট অংশ দেখা দেয় যাকে বলে অস্টিওফাইটস এবং এইসব হাড়ের ক্ষুদ্রাংশে সন্ধিতে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। চলতে অসুবিধা হয়, কড়কড়ে আওয়াজ হয় এবং সন্ধি আটকে যেতে পারে। ওইসব হাড়ের দানা কার্টিলেজকে আরও ড্যামেজ করে দেয়, যার ফলে হাঁটুর অবক্ষয়জনিত বাত আরও বৃদ্ধি পায়।

হাঁটুতে অবক্ষয় হলে কার্টিলেজের প্রান্তভাগে হাড় বেড়ে যায় এবং ওই বর্ধিত হাড় সন্ধিতে চাপের সৃষ্টি করে। ওইসব অস্টিওফাইটস সন্ধির লিগামেন্ট ও অন্যান্য অংশে চাপ দেয় ফলে নরম তন্ত্ততে অবক্ষয় ধরে এমনকী ছিঁড়েও যেতে পারে। অপারেশন করার সময় সন্ধিতে অভ্যন্তরের কার্টিলেজ, লিগামেন্ট ইত্যাদিতে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। তাছাড়া সন্ধির ভেতরের অর্ধচন্দ্রাকৃতির (সেমিলুনার) কার্টিলেজে এবং ক্রশিয়েট লিগামেন্টেও অবক্ষয় ধরে এবং ওইসব স্ট্রাকচারের ক্ষমতা ও সন্ধিকে সচল রাখার শক্তি কমে যায়। ফলে সন্ধি আলগা হয়ে যায় এবং হাঁটুতে-চলতে বেশ অসুবিধা হয়।

কারও কারও হাঁটু বাঁকা থাকে যার ফলে হাঁটুতে বাত তাড়াতাড়ি ধরে। সন্ধির ভেতরের দিকে অথবা বাইরের দিকে চাপ পড়ে এবং সন্ধির ভেতরের দিকে অথবা বাইরের দিকে চাপ পড়ে এবং সন্ধির অভ্যন্তরস্থ ফাঁক কমতে থাকে। এসবই দেহের ওজন সন্ধির ওপর পড়ার কুফল হিসেবে দেখা দেয়। ফলে বাতের প্রভাব বাড়ে। হাঁটুচলা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। সন্ধির বিভিন্ন অংশের  অবক্ষয়ের সঙ্গে সন্ধির সামনের হাড় অর্থাৎ মালাইচাকি বা প্যাটেলাতেও পরিবর্তন দেখা দিতে পারে বিশেষ করে ওই হাড়ের  ভিতরের দিকে একটি বিশেষ ধরনের চেঞ্জ হয় যাকে বলে কনড্রোমেশিয়া অব প্যাটেলা। বার বার সন্ধির হাড়ের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে প্যাটেলায় ওই ধরনের পরিবর্তন হয়।

সন্ধির ভেতরের বিভিন্ন অংশের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ফলে বিশেষ করে অবক্ষয় এবং হাড়ের টুকরো বা অস্টিওফাইটস জমার জন্য নি-জয়েন্টে বাতের সঞ্চার বা প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। হাঁটুর ভেতরের সাইনুভিয়াল ফ্লুইড কমতে পারে অথবা বেড়ে যেতে পারে। ফলে ঊরুর মাংসপেশি কমজোরি বা শুকিয়ে যেতে পারে কিংবা হাঁটু ফুলে যেতে পারে।

হাঁটুতে চাপ বা প্রেসার পড়লে বাত বাড়তে পারে। কারণ দেখা যায় যারা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে গ্যাসের সাহায্যে রান্না করেন কিংবা বাসে-ট্রামে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন বিশেষ করে কনডাক্টররাম তাদের হাঁটুতে বাত বেশি ধরে। যারা অনেকদিন পরিশ্রমের খেলায় যুক্ত থাকার পর অবসন নেন, তাদেও হাঁটুতে পরবর্তীকালে বাত ধরতে দেখা যায়। আসলে ওইসব কাজকর্মে হাঁটুতে দীর্ঘক্ষণ চাপ পড়ায় হাঁটুতে কার্টিলেজের রক্তসঞ্চালন কমে যায়, ফলে হাড়ের ওই অংশের স্বাভাবিক উপাদানের পরিমাণ কমে এবং বাতের সঞ্চার বা প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলে অথবা বেশিক্ষণ হাঁটাহাটি করলে সন্ধির ওপর দেহের ওজন পড়ে এবং মন্ধির অভ্যন্তরস্থ ফাঁক কমে, যার ফলে বাতের ব্যথা বাড়ে। আজকাল লিফট হওয়ার ফলে সিঁড়িভাঙা কমেছে তবুও সব বাড়ির বা অফিসে রো লিফট থাকে না, ওইসব বিল্ডিংয়ে  বার বার ওঠা-নামার দরুন হাঁটুতে প্রচন্ড চাপ পড়ে অবক্ষয় ধরে। সেজন্য যতটা সম্ভব হাঁটুতে চাপ কম দেওয়া দরকার। দেখা দরকার হাঁটু সন্ধিতে যেন ঘর্ষণ কম হয়। দেহের ওজন বাড়লে হাঁটুর ওপর চাপ বাড়ে, যার ফলে হাঁটুতে বাত বাড়ে। কার্টিলেজের ওপর স্বাভাবিক চাপ পড়লে বাত নাও ধরতে বা বাড়তে পারে। কিন্তু ওজন বৃদ্ধি বিশেষ করে ৬৫ থেকে ৭০ কে.জি-র বেশি বডি ওয়েট হলে কার্টিলেজে অবক্ষয় বাড়ে এবং বাতও বৃদ্ধি পায়। সেজন্য খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামাসন করে দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখাই বাঞ্ছনীয়। কারও কারও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বিশেষ করে থাইরয়েডের সমস্যা থাকে যেটা টি৩, টি৪, টি.এস.এইচ টেস্টের মাধ্যমে ধরা যায়। ওষুধ দিয়ে, পথ্য ঠিক করে চিকিৎসার মাধ্যমে দেহের ওজন কমিয়ে বাতের সমস্যার সমাধার করা যেতে পারে।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন