×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

বহু সন্তানের জননী আশীর্বাদ না অভিশাপ

ডাঃ তমোহন চৌধুরি
2019-04-17 16:14:50

জরায়ু হল সন্তানে ধারণের অঙ্গ। এর ওপরের অংশকে গর্ভাশয়, মাঝের অংশকে জরায়ুমুখ ও নীচের অংশকে যোনিপথ বলা হয়। জরায়ুর যে কোনো অংশেই ক্যানসার হতে পারে তবে জরায়ুর মুখ বা গ্রীবার ক্যানসারই এদেশে মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

ভারতবর্ষে মহিলাদের মধ্যে যে সমস্ত ক্যানসার হয় তার মধ্যে শীর্ষস্থানে আছে জরায়ুমুখের ক্যানসার। শহরাঞ্চলে এই হার তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। গ্রামের মহিলাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় দেরিতে হওয়ার কারণে অনেক মহিলাই অকালে মৃত্যুবরণ করেন।

কারণ

অর্থনৈতিক কারণকে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে এই রোগটি বেশি দেখা যায়। নোংরা পরিবেশ, অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্নতা এবং অল্প বয়সে বিবাহ ও সন্তান ধারণ, বার বার সন্তান অর্থাৎ বেশি সন্তান এবং একাধিক যৌনসঙ্গী, খুব কম বয়স থেকে যৌন সংসর্গ করা, একাধিক পুরুষের সাথে সহবাস এই ক্যানসারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এছাড়া সিফিলিস, কিছু ভাইরাসঘটিত রোগ, এইচ.এস.ভি-টু এবং এইচ.পি.ভি-ও এর কারণ।

উপসর্গ

অনিয়মিত বা কখনো কখনো কিংবা মেনোপজের পরে ভ্যাজাইনাতে রক্তপাত কিংবা যোনিদেশ থেকে সাদা গোলাপি কিংবা সঙ্গম-পরবর্তীকালে রক্তপাত, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব ও পেটে ও কোমরে ব্যথা নিয়ে রোগটি প্রকাশ হয়।

জরায়ু মুখের ক্যানসারকে চিকিৎসকরা মূলত সার্ভাইক্যাল ক্যানসার হিসেবে বেশি চেনেন। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসস সংক্রমণে জরায়ুমুখের ক্যানসার দেখা যায়।

রোগ নির্ণয় জরুরি

জরায়ু মুখের ক্যানসারকে চারটি স্তরে ভাগ করা যায়। প্রাথমিক স্তর বা প্রথম স্টেজে ধরা পড়লে শতকরা নব্বই ভাগ ক্ষেত্রে আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা থাকে। রোগ নির্ণয় যদি দেরিতে হবে রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা ততই কমে। শেষ স্তরে রোগ ধরা পড়লে নিরাময়ের সম্ভাবনা থাকে শতকরা চার ভাগ। এই কারণে দ্রুত রোগ নির্ণয় জরুরি। অনেক সময় অনভিজ্ঞ চিকিৎসক কিংবা গৃহচিকিৎসক এটাকে পলিপ সন্দেহে চিকিৎসা করেন।

সাধারণত জরায়ু ক্যানসার ৩৫ বছর পর থেকেই দেখা যায় । তবে আগেও যে হবে না তার কোনে মানে নেই।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞের কাছে উপরোক্ত লক্ষণ নিয়ে কোনো মহিলা চিকিৎসার জন্যে এলে তাদের বিশেষ স্পেকুলাম দিয়ে পরীক্ষা করা হয় সার্ভিক্সের কোনো গ্রোথ হচ্ছে কি না দেখার জন্য। অথবা গ্রোথ হলেও সেটা বিনাইন নাকি ম্যালিগন্যান্ট তা দেখে নেওয়া যায়। এছাড়া ব্লিডিং হচ্ছে কি না কিংবা আঙুল দিয়ে ছুঁলে ভেঙে যাচ্ছে কি না এসব দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিনাইন অথবা ম্যালিগন্যান্ট সম্বন্ধে।

বিনাইন থাকলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। বিনাইন গ্রোথটাকে অপারেশন করে বের করে দেওয়া যায় সহজেই। রোগী আরোগ্যলাভ করে। কিন্তু ম্যালিগন্যান্ট হলে তা বেড়ে চলে এবং ভ্যাজাইনাতে নেমে আসে এবং জরায়ুর দু’পাশের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। ফ্রোজেন পেলভিস অর্থাৎ জরায়ুতে আক্রান্ত হলেও পুরো পেটের মধ্যে অর্থাৎ তলপেটের রেক্টাম, ব্লাডার, ভ্যাজাইনাতে ছড়িয়ে পড়ে।

ফ্রোজেন পেলভিসকে জরায়ু মুখের ক্যানসারের চতুর্থ স্টেজ বলা চলে।

রোগী যখন ভ্যাজাইনাতে রক্তপাত নিয়ে অথবা সহবাসের পর রক্তপাত হচ্ছে এইরকম অবস্থায় একজন ক্যানসার বিশেষজ্ঞের কাছে আসেন তখন চিকিৎসকরা ডায়াগনোসিস করে সিদ্ধান্ত নিতে চেষ্টা করেন যে এই ব্যাপারটা জরায়ুমুখের ক্যানসারের কারণে হয়েছে কি না।

সেক্ষেত্রে ক্লিনিক্যালি স্পেকুলাম দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। সেখানে গ্রোথ দেখা গেলে বায়োপসি নেবার চেষ্ট করা হয়। এই ধরনের বায়োপসি খুব সিম্পল। এর জন্যে রোগীকে অজ্ঞান করার দরকার হয় না, চেম্বারে শুইয়ে নিয়ে পাঞ্চ বায়োপ্সি নেওয়া , জরায়ুমুখে কোনো বড় গ্রোথ নেই, শুধু ছোট্ট আলসার বা ঘা মতো হয়ে আছে তখন স্কারিং সাইটোলজি পরীক্ষা করা হয়। একটা কাঠের টুকরো দিয়ে জরায়ুমুখের কোষ চেঁছে আনা হয়। এই চেঁছে আনা জিনিসটা মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এতে ক্যানসার কোষ থাকলে ধরা পড়বে। আমরা সবাই জানি এইচ.পি.ভি অর্থাৎ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস থেকে জরায়ু ক্যানসার হয়। তাই এইচ.পি.ভি ভাইরাসের জন্যেও কিছু কিছু পরীক্ষা আছে। এই পরীক্ষাগুলো করলে জানা যাবে। রোগীর জরায়ুমুখের ক্যানসার আছে কি না।

এই সময় স্টেজ কী সেটা জানা জরুরি। কারণ স্টেজের ওপর নির্ভর করে কী চিকিৎসা হবে। অর্থাৎ কতটা ছড়িয়েছে। এটা জানার জন্য ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করতে হবে। জরায়ুর চারপাশে ছড়িয়েছে কি না দেখতে হবে। এর জন্য কতকগুলো নিয়মকানুন আছে। এছাড়া সি.টি.স্ক্যান করে দেখা যেতে পারে। এ ধরনের আরও কিছু পরীক্ষা করে জানা যেতে পারে রোগের অবস্থা ও গতি-প্রকৃতি। পেটের বাইরেও ছড়াতে পারে এবং সেটা ফুসফুসে পৌছে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বুকের এক্স-রে করা হয়।

কোনোরকম লক্ষণ না থাকলেও দেখে নেওয়া হয় বুকের এক্স-রে করে যে ফুসফুসে ছড়িয়েছে কি না। জরায়ু ক্যানসার আরও দূরে গলায় ছড়াতে পারে, লিম্ফ-নোডে ছড়াতে পারে, সেখানেও হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয়।

এইচ.পি.ভি ভাইরাস সাধারণত অপরিচ্ছন্নতা, যোনিদেশ অপরিষ্কার রাখার কারণে বাসা বাঁধে শরীরে।

চিকিৎসা

চিকিৎসা শুরু করার আগে দেখতে হবে রোগী কোন স্টেজে আছে।

এক, দুই, তিন ও চার—এই চারটে স্টেজ। স্টেজ এক এবং দুই হলে জরায়ু বাদ দেওয়া হয়। এর সাথে জরায়ুর চারপাশের টিস্যুকেও বাদ দেওয়া হয়।

এরপর দেখা হয় রিস্ক ফ্যাক্টর আছে কি না। যদি প্যাথলজিক্যাল রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে তাহলে রেডিয়েশন দেবার দরকার পড়ে।

স্টেজ তিন এবং চার যেখানে অপারেশন করা যায় না, সেখানে রেডিয়েশন দিতে হয়। আজকাল অবশ্য শুধু রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয় না, রেডিয়েশনের সাথে সাথে কেমোথেরাপিও দেওয়া হয়।

প্রত্যেক সপ্তাহে একটা করে কেমোথেরাপি ও পাঁচটা করে রেডিয়েশন দেওয়া হয়। এটা হল কমবাইন্ড কেমো রেডিয়েশন থেরাপি। এটাই এখন জরায়ুমুখের ক্যানসারের চিকিৎসা।

এর পরে ফলোআপে থাকতে হয়। প্রথম দিতে পাঁচ/ছয় সপ্তাহ পর ফলোআপ করা হয়। তারপর তিনমাস, ছ’মাস বাড়িয়ে নেওয়া হয়। শেষে বছরে একবার করে দেখা হয়। সেটাই যথেষ্ট।

তৃতীয় এবং চতুর্থ স্টেজে রেডিয়েশনের সাথে সাথে ব্র্যাকি থেরাপি করা হয়। এটার সাহায্যে শুধুমাত্র জরায়ুমুখের আক্রান্ত অংশটির চিকিৎসা করা হয়।

স্টেজ থ্রি-তে সার্ভাইভাল ক্যানসার পাঁচ বছরে পচিশ-ত্রিশ ভাগ, স্টেও ওয়ান এবং টু-তে আশি ভাগ কিওর করে।

রেডিয়েশন দেবার পরও তিন-চার বছর পরে রেডিয়েশন প্রোফেফিস বলে এক ধরনের অসুখ হয়। এতে পায়ুমুখ বা রেক্টামে প্রদাহ, ব্লিডিং,যন্ত্রণা হয়। ক্রমাগত ব্লিডিং হওয়ার কারণে রোগীর হিমোগ্লোবিন কমে যায়। পায়খানার সাথে বার বার রক্ত বেরোয়। আগেকার দিনে খুব বেশি হত, যখন রেডিয়েশনের যন্ত্রপাতি খুব ভালো ছিল না।

বর্তমানে অনেক উন্নতি হয়েছে। লিনিয়ার অ্যাক্সেলেটর যন্ত্রে রেডিয়েশন দেওয়া হয়, ফলে সমস্যা অনেকটাই এড়ানো যায়।

রোগী ফলোআপে আসে। চিকিৎসা করা একটু মুশকিল হয়। স্টেরয়েড ও অন্যসব ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।

প্রতিরোধ

স্বাস্থ্যের মান উন্নত করতে হবে। অল্প বয়সে বিবাহ ও মাতৃত্ব, বহু সংখ্যক সন্তান, একাধিক যৌন সঙ্গী এবং যৌনরোগ প্রতিরোধ করতে হবে। দ্রুত রোগটিকে চিহ্নিত করে চিকিৎসা করতে হবে।


সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন