×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

মাসিক পিছিয়ে দেওয়া যায়

ডাঃ চিন্ময় বসু
2019-04-18 12:42:55

ঋতু বা মাসিক নারীজীবনে এক অমোঘ ছন্দ যা থেকে নারীদেহের রহস্যের খানিকটা আঁচ পাওয়া যায়। এ যেন বিধাতার দেওয়া এক নিয়মিত ক্ষত যা নারী জীবনের ট্রাজিক পরিপূর্ণতা দেয়। বিজ্ঞান মানুষকে অনেক কিছুই অনুধাবন করতে সাহায্য করেছে। মানুষ বুঝতে পেরেছে কেন মাসিক হয়। কিন্তু সেটা বড় কথা নয়। অনেক নারীর কাছেই এই প্রতিমাসে নিয়মিত রক্তপাত শুধু বিরক্তি, ঘৃণাই নয়, এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার অংশীদার হওয়ার ক্ষমতা, যা তার স্বামীটিরও নেই। সন্তান ধারণের মতোই এই নিয়মিত ঋতুস্রাব নারীজীবনের একচেটিয়া অভিজ্ঞতা। আজ আমরা এই ঋতুর প্রকরণ বিশদভাবে জানার সাথে সাথে কীভাবে এই ঋতুকে পিছিয়ে দেখা যেতে পারে সে ব্যাপার আলোচনা করব।

মাসিক হল জরায়ুর ভিরতকার পাতলা আবরণ বা ঝিল্লি, যা সারা মাস ধরে হরমোনের মিশ্র প্রভাব গড়ে ওঠে। স্বাভাবিক ভাবেই এই আবরণী কলা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়েই নির্গত হয় আর তার সাথে থাকে কিছুটা রক্ত। সার্ভিক্স থেকে নির্গত কিছু মিউকাস ও কিছু ভ্যাজাইনাল সিক্রিয়েশন (রস), যদিও রক্ত বলা হয়, এটা কিন্তু খাঁটি রক্ত নয়। এক্ষুনি যেমন বলা হল কোষ, কলা, মিউকাস ও রক্তের মিশ্রণ এটি। লালচে বাদামী এই তরল রক্তের চেয়ে কিছুটা গাঢ় বর্ণের। তবে বিভিন্ন কারণে যখন বেশি মাসিক হয় তখন কিন্তু তা আসল রক্তই, বর্ণে ও গঠনে।

৩-৫ দিন স্থায়ী এই প্রয়োজনীয় রক্তপাত। এমনকী ২-৮ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হলেও স্বাভাবিক ধরা হয়। ২৮ দিনের এই ছন্দের শুরু ধরা হয় যেদিন মাসিক শুরু সেনিদটাকে প্রথম দিন বা ডে-ওয়ান ধরে। সেই থেকে পরের মাসিক শুরুর দিনের তফাৎটাই হল ঋতুচক্র। ২৮ দিন ধরা হলেও ২১-৩৫ দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়।

মাসিকের আগের সময়টাকে বলা হয় মলিমিনাল। প্রতি মাসে নির্গত তরলের পরিমাণ গড়ে ৩৫ মিলিলিটার হলেও ১০-৮০ মিলি তরল নিষ্ক্রমণ স্বাভাবিক ধরা হয়।

১৩ বছর বয়স মাসিক শুরুর বয়ষ হলেও মেনার্কি ৪-১৮ বছর হল লিমিট। তবে ১০ বছরের আগে বা ১৬ বছরের পরে মাসিক শুরু হলে ডাক্তারি পরামর্শ জরুরি হয়। মেনোপজ হল মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হওয়া যা ৪০-৫০ বছরের মধ্যে হয়। আমাদের দেশে ৫১ বছর বয়সকে মেনোপজের লিমিট ধরা হয়।

এবার আসা যাক মানুষ ঋতুস্রাবের কারণ সম্বন্ধে কী জেনেছে তার আলোচনায়। পিটুইটারি গ্রন্থি থাকে মাথায়, মস্তিষ্কের নীচের অংশে। সেখান থেকে নির্গত গোনাডোট্রফিন নামক হরমোনের প্রভাবে নারীদেহের ডিম্বাশয় থেকে (ও কিছুটা অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে) নিঃসুত হয় ইস্ট্রোজেন আর প্রজেস্টেরন, মানে দুটো সেক্স হরমোন। ইস্ট্রোজেন আবিষ্কার করেন জার্মান বিজ্ঞানী নাৎসী পার্টির সদস্য অ্যাডলক চেনাল্ড। এর জন্য তিনি ১৯৩৯ সালে নোবেল পেলেও তা প্রত্যাখান করেন সরকারি নীতির জন্য। পরে ১৯৪৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অবশ্য তিনি এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।

১৯৩৩ সালে ডাঃ অ্যালেন আবিষ্কার করেন প্রোজেস্টেরন।

এই ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের প্রভাবে জরায়ুর মধ্যে প্রতিমাসে এন্ডোমেট্রিয়াম কলা উৎপন্ন হয় এবং এই দুটো হরমোনের অভাবেই মাসিকের আকারে ওই এন্ডোমেট্রিয়াম বিনষ্ট হয়ে রক্ত মিশ্রিত অবস্থায় খসে পড়ে।

অনুস্থানে দেখা যাচ্ছে ১৯৩৭ সালে ডাঃ ফস ইস্ট্রোজেন ব্যবহার করে প্রথম মাসিক হওয়া রুখে দেন। এর বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল ৩ জুলাই ১৯৩৭-এর বিট্রিশ মেডিকেল জার্নালে। এর অনেক পরে ১৯৬০ সালে প্রোজেস্টরন প্রয়োগে ওয়েস্টমিনস্টার লন্ডন হসপিটালে ডাঃ স্মেডলি মাসিক অবরোধ করেন।

এইখানে সাধারণ পাঠকের একটু কনফিউশন হবে যে, ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের প্রভাবেই যদি মাসিক হয় তবে তার প্রয়োগে মাসিক বন্ধ বা রুদ্ধ হবে কেন?

মানুষ জেনেছে শরীরে পিটুইটারির ওপরে মস্তিষ্কের অংশ হাইপোথ্যালামাস থেকে নির্গত রিলিজিং ফ্যাক্টর পিটউটারি নিঃসৃত গোনাড্রোট্রফিন ও ডিম্বাশয় থেকে নির্গত ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন (সেক্স হরমোন) হরমোনগুলো এক ফিডব্যাক সম্বন্ধে আবদ্ধ।

এরা প্রত্যেকেই প্রত্যেককে প্রভাবিত করে। কোনো হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তন হলে অপরগুলো প্রভাবিত হয়। যেমন শরীর যে পরিমাণ সেক্স হরমোন থাকে ঋতুচক্রোর বিভিন্ন সময়ে, বাইরে থেকে এই হরমোন প্রয়োগ করে মাত্রা বাড়ালেই পিটুইটারি থেকে গোনাটোট্রফিনের পরিমাণ কমতে থাকে। মাসিক হতে দেয় না।

আজকাল বিদেশে লেখাপড়া, খেলাধুলো ও আরো নানা সামাজিক বাধ্যবাধকতায় তিন মাসের পিল বেরিয়েছে, যার নাম সিজনিক।

আর যারা পিল খান না, ছুটি, পুজো, পরীক্ষা, খেলাধুলোর কারণে মাসিক পিছিয়ে নিতে ইচ্ছুক তারা সাধারণত নরহথিস্টেরোন নামক প্রোজেস্টেরন ওষুধ খেলে পিরিয়ড রুখতে পারবেন। মাসিক শুরুর ৩-৪ দিন আগে থেকে ৫ মিগ্রা ট্যাবলেট দিনে তিনবার ব্যবহার করলে শুধু ওষুধে ওই মাসিককে রোখা যায়। ট্যাবলেট খেয়ে যেতে হবে। যতদিন বন্ধ রাখা দরকার ততদিন। ওই ট্যাবলেট বন্ধ করার ২-৩ দিনের মধ্যে মাসিক হয়ে যাবে। পরের মাস থেকে ওই হয়ে যাওয়া মাসিকের হিসেবে মাসিক আসবে। এই ট্যাবলেট খুবই নিরাপদ।

কখনো কখনো একটু ফোলা ভাব, পেটের গন্ডগোল, স্তনের অস্বস্তি ও লিপিডো বা যৌনতা হ্রাসপেতে পারে। মনে রাখতে হবে এটা কিন্তু জন্মনিরোধকারী নয়। এই প্রোজেস্টেরন জাতীয় হরমোন আসলে জরায়ুর ভিতরে এন্ডোমেট্রিয়াম আবরণকে ধরে রাখে বা সুরক্ষিত রাখে। এই হরমোনের মাত্রা শরীরে এই সম্বন্ধে অতি জটিল এবং হিসেবের পথ ধরে চলে।

ফলত শরীরে সেক্স হরমোনের মাত্রা না কমার কারণে মাসিক অবরদ্ধ হয়। এন্ডোমেট্রিয়াম কলার আবরণটি জীবিত অবস্থায় রয়েই যায়, ফলে মাসিকও হয় না।

ষাটের দশকে যখন সেক্স হরমোন গঠিত পিলের আবিষ্কার করেন জন রক, বিজ্ঞানীরা জানতেন এই হরমোন প্রয়োগে যতিদিন খুশি, অন্তন তিনমাস, মাসিক আটকে রাখা সম্ভব। কিন্তু তারা ২৮ দিনের চক্রই মানলেন। তার কারণ জর রক চেয়েছিলেন রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনুমোদন থাকুক এই জন্ম নিয়ন্ত্রণ বটিকায়। যদিও রোমান ক্যাথলিকের অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তবে ২৮ দিনের এই সাইকেল চালু থাকল। আসলে পিলের অভাবে যে মাসিক তা কিন্তু আসল মাসিক নয়, তা হল উইথড্রল ব্লিডিং।

যারা ওরাল পিল খান, তারা সহজেই মাঝখানে কোনো গ্যাপ না দিয়ে পরের স্ট্রিপটি চালু করলেই আর মাসিক হবে না। এরকম তিনমাস করা চলতেই পারে। ডিপোপ্রোভেরা নামক জন্ম নিয়ন্ত্রণ ইঞ্জেকশন নিলে তিনমাস মাসিক বন্ধ থাকে। এছাড়া আরও কয়েক প্রকার প্রোজেস্টেরন যেমন ডুভাস্টোন ইত্যাদি প্রয়োগেও মাসিক অবরোধ করা যায়।

তবে একটা স্বাভাবিক জিনিসকে শুধুমাত্র প্রয়োজনের কারণেই বন্ধ করা উচিত—এ কথাটাও বিশেষ করে মনে রাখতে হবে।


সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন