ঘুমন্ত অবস্থাতেও পা চলছে?
ডাঃ সন্দীপ সেন গুপ্ত
2019-04-18 13:47:49
‘রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম’ হল পায়ের একটি অস্বস্তিকর রোগ। এই রোগে রোগীর একটি অথবা দুটি পায়েই অস্বস্তিকর অনুভূতি এবং অস্থিরতা দেখা যায়। পা-দুটো ঝিনঝিন করে। তীক্ষ্ম কিছু দিয়ে খোঁচা দেওয়া, কোনো কিছুর চলে বেড়ানো বা টেনে ধরার মতো অনুভূতির কথা রোগীরা বর্ণনা করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাতে শোবার পর এসব হয়। একই সঙ্গে পা নাড়াচাড়া করার (শোওয়া অবস্থাতেই বা হেটে চলে) তীব্র ইচ্ছাও রোগীর মধ্যে দেখা যায়। অনেক সময় ঘুমের মধ্যেও কারো কারো পা অস্থিরভাবে নড়ে ওঠে বা ঝটকা লাগার মতো ছিটকে যায়। কিছু ক্ষেত্রে না নাড়াচাড়া করলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়, কিন্তু এই রোগে ঘুমের খুবই বিঘ্ন ঘটতে দেখা যায়।
রেস্টলেস লেগ সিনড্রোমেরর কারণ
অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। কিছু ক্ষেত্রে শরীরে আয়রনের ঘাটতি ঘটলে এই রোগটি হতে পারে। মহিলাদের গর্ভাবস্থায় কখনো কখনো এই রোগের লক্ষণ দেখা যায়। অল্প কিছু ক্ষেত্রে বিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, অ্যানিমিয়া এবং পার্কিনসন সিনড্রোমের রোগীদেরও একই রকম লক্ষণ দেখা যায়।
রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
সাধারণত রোগীর দেওয়া রোগ লক্ষণের বর্ণনা থেকেই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়। কিছু ক্ষেত্রে রক্তের খুব সাধারণ পরীক্ষা যেমন---শ্বেতকণিকা, লোহিতকণিকার মাত্রা প্রভৃতি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। অল্প কিছু ক্ষেত্রে রক্তের মধ্যে আয়রনের মাত্রা নিরুপনেরও প্রয়োজন হয়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে পায়ের নড়াচড়া বা জার্ক-এর মাত্রা নিরূপণের জন্য পলিসনমোগ্রাফ পরীক্ষার দরকার হতে পারে।
রোগ নিরাময়ে আকুপাংচার চিকিৎসা
আকুপাংচার চিকিৎসা যে অতি সূক্ষ্ম সুচের সাহায্যে করা হয় এখন বোধ হয় তা অনেকেই জানেন। শরীরে চামড়ার ওপর অবস্থিত নির্দিষ্ট কিছু বিন্দুতে উপযুক্তভাবে পরিশোধিত ওই সূক্ষ্ম সুচগুলি ফোটানো হয়। দক্ষ হাতে ব্যথাহীনভাবেই ওই সুচগুলি ফুটিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দেওয়া হয়। ‘রেস্টলেস লেগ সিনড্রোমের’ ক্ষেত্রে মাত্র ২টি বা ৪ টি বিন্দুতে (পায়ের) সুচগুলি ফোটানো হয়। রোগীর শারীরিক গঠন, রোগের তীব্রতা, রোগ কতটা পুরনো এগুলি দেখার পর সুচগুলিতে উপযুক্ত উত্তেজনা প্রদান করা হয়। প্রয়োজন মতো মক্মা নামক একপ্রকার ভেষজ সেঁক বা বৈদ্যুতিক উত্তেজনাও সুচগুলিতে দেওয়া হয়। এছাড়া সেভেন স্টার হ্যামার বা রোলার হ্যামারের সাহায্যে পায়ের আক্রান্ত অংশের চামড়ায় উত্তেজনা প্রদান করা হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১০-১৫ টি সিটিংয়ের মধ্যেই নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
চিকিৎসা ছাড়াও যা করা দরকার
- তামাকজাত দ্রব্য, মদ, কফি প্রভৃতি ত্যাগ করা দরকার।
- নিয়মিত কিছু সহজ সরল ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
- শোবার ঘর এবং বিছানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং আরামদায়ক হওয়া দরকার।
- শোবার আগে পায়ে হালকা এবং শুকনো গরম সেঁক উপকারি।
অনেক রোগীই প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগটিকে অবহেলা করেন। পরে যখন রোগ মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি করে, তখনই চিকিৎসকের কাছে আসেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে ব্যস্ত চিকিৎসক রোগের লক্ষণগুলি ভালো করে না শুনে ঘুমের ওষুধ দিয়ে রোগীকে বিদায় দেন। কেউ কেউ রোগটি সম্পর্কে ওয়াকিবহালই নন। রোগীকে মনের ভুল হচ্ছে বলে বা মানসিক রোগী ধরে নিয়েই চিকিৎসা করেন। ফলে রোগের কোনো সরাহাই হয় না। উভয় পক্ষই সচেতন হলে রোগ নিরাময় সহজ হয়ে উঠবে।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন