×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

স্টেরয়েডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অত্যন্ত ভয়ষ্কর

ডাঃ আশিষ মিত্র
2019-04-23 11:19:22

আমাদের কিডনির ঠিক ওপরে টুপির মতো একটা গ্রন্থি থাকে যা থেকে আপৎকালীন হরমোন নিঃসৃত হয়। একে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ড বলে। এই অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির বাইরের অংশ থেকে কর্টিকোস্টেরয়েড নামে এক হরমোন নিঃসৃত হয় যাকে আমরা সংক্ষেপে স্টেরয়েড হরমোন বলি।

কিন্তুযে স্টেরয়েড আমরা অর্থাৎ ডাক্তাররা রোগীদের ওপর প্রয়োগ করি সেটা হল সিন্থেটিক স্টেরয়েড বা কেমিক্যাল দিয়ে প্রস্ত্তুত করা কৃত্রিম স্টেরয়েড, যার সঙ্গে শরীরের নিজস্ব স্টেরয়েড হরমোনের গঠনগত সাদৃশ্য আছে। তাই এই কৃত্রিম স্টেরয়েডের কার্যকারিতা আমাদের শরীরের স্বাভাবিক স্টেরয়েড হরমোনের মতোই।

স্টেরয়েডের রকমফের

  • ট্যাবলেট।
  • ইঞ্জেকশন।
  • ইনহেলার।
  • চর্মরোগে ব্যবহৃত মলম
  • চোখের রোগের জন্য ড্রপ

স্টেরয়েড মানেই কি খারাপ

স্টেরয়েড মানেই কিন্তু গেল গেল রব তোলার কোনো কারণ নেই। কিন্তু প্রয়োগ করার আগে দেখতে হবে যে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে কি না। একটা উদাহরণ দিলে পাঠকদের বুঝতে সুবিধে হয়। আমাদের দেশে রোগীর আত্মীয়পরিজনেরা খুব তাড়াতাড়ি ফল চান বা চটজলদি রোগ সারাতে চান। গ্রামের দিকে বা শহরেও এখানো কিছু আর.এম.পি আছেন যারা রোগী জ্বর নিয়ে গেলে একটা স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন (ডেকাডন জাতীয়) দিয়ে দেন। তাতে তাড়াতাড়ি জ্বর নেমে গেল। এতে করে সবাই খুব খুশি। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না রোগীর যদি মেনিনজাইটিস, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েডের মতো সংক্রামক রোগ থাকে তাহলে স্টেরয়েড সেই রোগ বাড়িয়ে তুলতে পারে। এক, জ্বর কমলেও ভেতরে ভেতরে রোগ বাড়তে থাকে। এবং রোগের প্রকৃতি চিকিৎসা না করে বারংবার স্টেরয়েড প্রয়োড করলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই বলে কি মেনিন জাইটিসে স্টেরয়েড দেওয়া হয় না? হ্যাঁ, দেওয়া হয়। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে দেওয়া হয় এবং চার দিনের জন্য। তার বেশি নয়। বুঝতেই পারছেন স্টেরয়েড ব্যবহার অনেকটা শাঁখের করাতের মতো। তাই স্টেরয়েড শুরু কিংবা বন্থ করার আগে এই ওষুধের ব্যবহার সম্বন্ধে সম্যক ধারণা আছে এরকম এক মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে ভালো হয়। এতে করে অযথা ঝুঁকি এড়ানো যায় এবং বিজ্ঞানসম্মত ভাবে এই ওষুধও প্রয়োগ করা যায়।

দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ব্যবহার করলে

যা জানা উচিত

দীর্ঘদিন স্টেরয়েড খাচ্ছেন এমন রোগীর সঙ্গে সবসময় একটা স্টেরয়েড কার্ড রাখা উচিত যাতে স্টেরয়েডের নাম, ডোজ, কোন রোগের জন্য খান এবং ডাক্তারের নাম অবশ্যই লেখা থাকতে হবে। বিদেশে কিন্তু এটা রুটিন মাফিক করা হয়।

  • হঠাৎ করে স্টেরয়েড বন্ধ করা উচিত নয়।
  • ডোজ আস্তে আস্তে কমিয়ে তবে বন্ধ করা উচিত। এ ব্যাপারে চিকিৎসক আপনাকে সাহায্য করবেন।
  • সিরিয়াস কোনো রোগে (এমনকী জ্বর হলেও) স্টেরয়েডের ডোজ প্রয়োজনে বাড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণত এই সময় দ্বিগুণ ডোজে স্টেরয়েড খেতে হয়।
  • যখনই কোনো ডাক্তারখানা বা হাসপাতালে যাবেন প্রথমেই আপনি দীর্ঘদিন স্টেরয়েড খাওয়ার কথা ডাক্তারকে বলবেন। এতে করে আপনার চিকিৎসার সুবিধা হবে।

কর্টিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার

  • ফুসফুসের রোগ
  • হাঁপানি বা অ্যাজমা।
  • ক্রনিক ব্রষ্কাইটিস বা সি.ও.পি.ডি।
  • সারকয়ডোসিস।
  • এ.আর.ডি.এস (প্রদাহজনিত কারণে ফুসফুসের লিভারের মতো শক্ত হয়ে যাওয়া।)
  • রক্তের রোগ
  • লোহিত কণিকা ভেঙে যাওয়ার জন্য রক্তাল্পতা।
  • রক্তের ক্যানসার
  • কিডনির সমস্যা
  • নেফ্রোটিক সিনড্রোম
  • গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস
  • পেটের রোগ
  • ক্রনস ডিজিজ।
  • আলসারেটিভ কোলাইটিস
  • অটোইমিউন হেপাটাইটিস
  • গাঁটে রোগ বা রিউম্যাটলজি
  • লুপাস
  • পলিমায়ালজিয়া রিউম্যাটিকা।
  • টেম্পোরাল আর্টারাইটিস
  • রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস
  • জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস
  • ভ্যাসকুলাইটিস
  • নার্ভের রোগ
  • মস্তিষ্কে জল জমে যাওয়া (প্রধানত টিউমারজনিত)
  • নিউরোপ্যাথি : মেনিনজাইটিস
  • চর্মরোগ
  • পেসফিগাস
  • একজিমা
  • টিউমার
  • লিম্ফোমা।
  • অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর

স্টেরয়েডে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

  • শরীরের অ্যাড্রেনাল বা পিটুইটারি গ্রন্থির কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া। সাধারণত দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে এমনটা হতে পারে।
  • ব্লাডপ্রেসার বেড়ে যাওয়া।
  • পেটের সম্যা, যেমন প্যাংক্রিয়াটাইসি, গ্যাসট্রিক আলসার।
  • কিডনির সমস্যা, যেমন বারবার প্রস্রাব পাওয়া, রাত্রে প্রস্রাব হওয়া।
  • মস্তিষ্কের সমস্যা, যেমন অনিদ্রা, ডিপ্রেশন, ছটফটানি।
  • হরমোন ঘটিত সমস্যা, যেমন ওজন বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, বৃদ্ধি কমে যাওয়া বা বেঁটে হয়ে যাওয়া। মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
  • হাড় এবং মাংসপেশির সমস্যা, যেমন হাড়ের ক্ষয় এবং অস্টিওপোরোসিস, মাংসপেশির ব্যথা এবং দুর্বলতা, কোমরের হাড়ের ক্ষয় এবং ভেঙে যাওয়া , মেরুদন্ডের হার ক্ষয়ে ভেঙে যাওয়া।
  • চর্মরোগ, যেমন চামড়া পাতলা হয়ে যাওয়া,  সামান্য আঘাতে চামড়ার নিচে রক্ত জমা হওয়া।
  • চোখের সমস্যা, যেমন চোখে ছানি পড়া, গ্লুকোমা হওয়া।
  • জীবাণুর সংক্রমণ, যেমন টিউবারকুলোসিস বা যক্ষ্মা, সেপটিসেমিয়া, সংক্রামক চর্মরোগ, ছত্রাক জাতীয় জীবাণুর সংক্রমণ।
  • হার্টের গন্ডগোল, যেমন রক্তে লিপিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, হৃৎস্পন্দনের গন্ডগোল।
  • মান্টু পরীক্ষা এবং বুকের এক্স-রে করে দেখতে হবে যক্ষ্মা আছে কি না।
  • ডায়াবেটিস আছে কি না রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তারপর প্রত্যেক ভিজিটে ইউরিন পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে মূত্রে গ্লুকোজ আসছে কি না।
  • প্রত্যেক ভিজিটে ব্লাডপ্রেসার দেখতে হবে।
  • স্টেরয়েড শুরু করার আগে চোখে গ্লুকোমো এবং ছানি আছে কি না দেখতে হবে। স্টেরয়েড শুরু করার পর প্রতি তিনমাস অন্তর চোখ পরীক্ষা করতে হবে। এক বছর হয়ে গেলে বছরে অন্ততপক্ষে একবার চোখ পরীক্ষা করতে হবে।
  • বছরে একবার বি.এম.ডি পরীক্ষা করতে হয়ে যাতে অস্টিওপোরোসিস হচ্ছে কি না বোঝা যায়।
  • রোজ ওজন দেখতে পারলে ভালো হয়। তার সঙ্গে উচ্চতা মাপতে হবে যাতে করে ওবেসিটি হলে বা শিরদাঁড়া ছোট হয়ে গেলে বোঝা যায়।
  • রক্তে পটাশিয়ামে মাত্রা তিনমাস অন্তর পরীক্ষা করা উচিত এবং কমে গেলে চিকিৎসা করতে হবে।
  • মুখে, নখে, চামড়ায়, যোনিতে বা মলদ্বারে ছত্রাকজাতীয় জীবাণুর সংক্রমণ হচ্ছে কি না দেখতে হবে।
  • ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে বা হাঁটতে হবে। নিয়মিত ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-ডি খেতে হবে।
  • কোনো অপারেশন করতে হলে অপারেশনের সাতদিন আগে থেকে ভিটামিন-এ খাওয়া শুরু করতে হবে।
  • স্টেরয়েড চলাকালীন ধূমপান এবং মদ্যপান না করাই ভালো।
  • ব্যথার ওষুধ না খাওয়াই ভালো। একান্তই খেতে হলে সঙ্গে প্রতিদিন একটা করে ওমিপ্রাজোল-২০ খালিপেটে খেতে হবে।
  • একদিন অন্তর স্টেরয়েড খেলে ভালো হয়।

স্টেরয়েড কী কী নামে পাওয়া যায়

স্টেরয়েডের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। কারোর ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশন ভালো কাজ করে। আবার কারো ক্ষেত্রে ভালো মলম বা ড্রপ। বিভিন্ন প্রকার স্টেরয়েডের নাম হল—

  • প্রেডনিসোলন : ওয়াইসোলন বা ওমনাকর্টিল নামে ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়।
  • ট্রায়ামসিনোলন : টাইকর্ট বা কেনাকর্ট নামে পাওয়া যায়।
  • ডেক্সামেথাসোন : ডেকডান বা ডেকাড্রন নামে পাওয়া যায়।
  • বেটামেথাসোন : বেটনেসল নামে পাওয়া যায়।
  • মিথাইল প্রেডনিসোলন : সলুমেড্রল নামে পাওয়া যায়।
  • ফ্লুসিনোলন
  • ডেফ্লাজোকর্ট : ডেফজা এ এনজোকর্ট নামে পাওয়া যায়।

মনে রাখতে হবে

  • স্টেরয়েড শুরু করার আগে ডাক্তারবাবুর সঙ্গে আলোচনা করে নিন যে আদৌ দরকার কি না।
  • অনেক ক্ষেত্রে (যেমন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি কর্মক্ষম হলে) স্টেরয়েড কিন্তু জীবনদায়ী ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ওষুধ ফুরিয়ে গেছে বা কিনতে ভুলে গেছি বলে হঠাৎ বন্ধ করতে যাবেন না। শক হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
  • ডায়াবেটিক রোগীদের স্টেরয়েড ব্যবহার করার ফলে ব্লাডসুগারের মাত্রা চড়চড় করে বাড়তে থাকে। সেক্ষেত্রে কিন্তু ইনসুলিন দিয়ে ডায়াবেটিস কনট্রোল করতে হবে।
  • হাঁপানি ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ইনহেলার হল বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা। খুব বাড়াবাড়ি ছাড়া স্টেরয়েড ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হয় না। ইনহেলার নেওয়ার পর মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • চর্মরোগের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড ব্যবহার করবেন না। ওষুধের দোকানে স্টেরয়েড, অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিফাঙ্গালের ককটেল মলম বিক্রি হয়। অনেক অন্ধকার ঢিল ছোঁড়ার মতো এগুলো ব্যবহার করেন। বাস্তব সত্যি হল স্টেরয়েড লাগালে ব্যাক্টেরিয়া বা ফাংসাসের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। তাই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড ব্যবহার করবেন না। মুখমন্ডল তো একদম নয়।
  • আর্থ্রাইটিস বা বাতের রোগে এখন স্টেরয়েড ছাড়া অনেক ভালো ওষুধ এসে গেছে। তাই আর্থ্রাইটিসে দীর্ঘমেয়াদি স্টেরয়েড ব্যবহার করতে হলে এইসব ওষুধের সঙ্গে কম ডোজে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয় যাদে পাশ্র্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানো যায়।
  • জ্বর থাকা অবস্থায় স্টেরয়েড না শুরু করা ভালো। কেননা এতে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে সংক্রমণ শরীরে নেই নিশ্চিত হলে আর্থ্রাটিস জনিত জ্বরের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • তিন মাসের বেশি স্টেরয়েড খেলে হাড়ের ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস এড়াদে সপ্তাহে একবার বিশফসফোনেট গ্রুপের ওষুধ খেতে হবে। সঙ্গে প্রতিদিন ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-ডি খেয়ে যেতে হবে।
  • নিয়মিত ব্লাডপ্রেসার মাপতে পারলে ভালো হয়। তিনমাসে একবার ব্লাড গ্লুকোজ মাপতে হবে।
  • স্টেরয়েড চলাকালীন জ্বর হলে, পেটে ব্যথা হলে, হঠাৎ শরীর দুর্বল লাগলে, অস্বাভাবিক ওজন বেড়ে গেলে বা শরীর ফুলে গেলে দেরি না করে ডাক্তার দেখান।

  • সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন