×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

দাঁত, নাক থেকেও হতে পারে গলার ব্যথা

ডাঃ অভীক কুমার জানা
2019-04-23 11:30:43

আমরা সবাই জানি যে জীবনের কোনো না কোনো সময়ে প্রত্যেককেই গলা ব্যথার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এটাই যে বহুক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের প্রবণতা হল এটাই যে, কোনও ওষুধের দোকানে গিয়ে টুকটাক কিছু ওষুধ কিনে খেয়ে নেওয়া। নিজের চিকিৎসক জীবনের অভিজ্ঞতায় এমন কিছু রোগী দেখেছি যারা বারংবার রোগভোগের পরেও কোনও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবুকে না দেখিয়ে এভাবেই গলা ব্যথার স্বচিকিংসা করে চলেছেন।

ছোটদের গলা ব্যথা সাধারণত সর্দি-ঠান্ডা লেগেই হয়। কিছু ক্ষেত্রে কান বা দাঁত থেকেও গলা ব্যথা হতে পারে। আর বড়দের ক্ষেত্রে গলা ব্যথার বহু কারণ থাকে। মূলত গলারই কোনো সমস্যা থেকে হচ্ছে নাকি অন্য কোনো জায়গা থেকে ব্যথাটা গলায় ছড়াচ্ছে এটা প্রথমেই দেখা দরকার। প্রথমত, আমাদের দেখতে হবে ব্যথাটা নতুন না পুরনো। অনেকদিন ধরে ব্যথা হলে আনুসঙ্গিক যেসব জায়গাগুলো থেকে ব্যথা আসতে পারে সেগুলো ভালো করে পরীক্ষা করা দরকার। এক্ষেত্রে নাক, কান, দাঁত, মাড়ি ইত্যাদি জায়গাগুলো ভালো করে দেখা দরকার।

যদি এইসব জায়গাগুলোতে কোনও সমস্যা ধরা পড়ে তাহলে তার আগে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। তাতে যদি কষ্ট লাঘব না হয় তখন গলার কারণ খুঁজে দেখা দরকার। উল্টোদিকে, ব্যথা যদি কেবল গলাতেই থাকে তখন গলার আনুষঙ্গিক কোনও সমস্যা যেমন গলার স্বরভাঙা, খেতে কষ্ট হওয়া, ‍মুখ দিয়ে রক্ত আসা ইত্যাদি আছে কিনা জানা দরকার। গলার নিজস্ব ব্যথা অনেকসময় কিছু অদ্ভুত কারণেও হতে পারে। যেমন নাকের সমস্যা, গলার হাড় বৃদ্ধি কিংবা অ্যাসিডিটি বা অম্বল। বহু ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এই কারণগুলো মাথায় না রেখে রোগী নিজের খেয়ালখুশি মতো দোকান থেকে আন্দাজে ব্যথার বা অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট কিনে খেয়ে যাচ্ছে। এই প্রবণতা কিন্তু মারাত্মক। কারণ রোগী হয়তো ভাবছে যে তার ব্যথা কমে গেল। ভিতরে কিন্তু মুল রোগটি থেকে গেল। অনেকে ক্ষেত্রেই  একটু বয়স্ক রোগীদের বারে বারে গলা ব্যথা হয়। যা খুবই ভয়ের কারণ। বিশেষ করে তিনি যদি কোনও নেশায় আসক্ত হয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ সম্ভাবনার কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আর একটি দরকারি বিষয় হল যে, অনেক সময় চিকিৎসক হিসেবে আমরা দেখেছি রোগের মূল উৎস খোঁজার জন্য আমাদের বেশ খানিকটা সময় ও অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা লাগছে। এক্ষেত্রে রোগীরা অধৈর্য হয়ে পড়েন। তাই এটা মাথায় রাখা দরকার যে গলা ব্যথা এমনই একটি অদ্ভুত রোগ যার উৎস নাক, কান, দাঁত, মাড়ি ছাড়াও হাড়, নাক, অ্যাসিডিটি ও শরীরের অন্য কোথাও লুকিয়ে থাকার দুরারোগ্য ব্যাধি থেকেও হতে পারে।

হাড় বৃদ্ধি

টনসিলের পিছনে একটি হাড় থেকে যা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় বেড়ে যেতে পারে। এর থেকে গলার একদিকে বা ‍দু’দিকে অসহ্য ব্যথা হতে পারে। সাধারণ ব্যথা ভেবে রোগীরা ব্যথার ট্যাবলেট খেতে থাকেন। যাতে শুধু সাময়িক আরাম পাওয়া যায়। এই অসুখটির প্রাথমিক চিকিৎসা ওষুধে নিরাময় না হলে সার্জারি করতে হবে। এই সার্জারি এমন কিছু আহামরি নয় যে আতষ্কিত হতে হবে। প্রত্যেকের সাধ্যের মধ্যে করানোর মতো একটি সাধারণ অপারেশন মাত্র। যা করলেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায় রোগী।

নাক থেকে গলা ব্যথা

নাকের সমস্যা হলে গলার বিশেষ এক ধরনের ব্যথা হয় ও ঢোক গিলতে কষ্ট হতে পারে। এটা এতটাই কষ্টকর হয় যে রোগী ভীষণভাবে আতষ্কিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বাড়ির ডাক্তারবাবুকে দেখিয়ে নানারকম ওষুধ খেয়েও যখন কষ্ট কমে না। তখন তারা খারাপটাই ধরে নেয়। সবচেয়ে মজার বিষয় হল এই রোগটাকে প্রমাণ করার জন্য সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা কিন্তু হয় না। আমরা অনেকেই জানি যে গলার সমস্যায় এন্ডোস্কোপি অথবা স্ক্যান করতে হতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে তাতে কিছুই ধরা পড়বে না। তাই রোগ নির্ণয় নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকেই করতে হয়।

এখানে একটা কথা অবশ্যই বলা দরকার যে ‍মুড়িমড়কির মতো পরীক্ষা করানো যেমন একদমই বাঞ্চনীয় নয়, তেমনই এন্ডোস্কেপির মতো পরীক্ষা বেশিরভাগ সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এন্ডোস্কোপির কথা শুনে অনেকে অতিরিক্ত ভয় পেয়ে যান। গলার এন্ডোস্কোপি কিন্তু পেটের এন্ডোস্কোপি মতো নয়। এতে ব্যথা অথবা বিন্দুমাত্র কষ্ট হয় না। মুখটা শুধু হাঁ করে বসে থাকতে হয়। যার জন্য বাচ্চারাও নির্ভয়ে এটি করাতে পারে। তাই এন্ডোস্কোপির ভীতিতে কখনোই পিছিয়ে যাওয়া উচিত নয়।

গলার ক্যানসার হলে

দুর্ভাগ্যবশত যদি ব্যথার কারণ ক্যানসার বলে নির্ণয় হয় তাহলেও কিন্তু ভেঙে পড়ার কোনও কারণ নেই। যদি শুরুর দিকে এটি ধরা পড়ে, তাহলে সুচিকিৎসার দ্বারা সারাজীবন নীরোগ থাকা সম্ভব। যদি দেরি করেও ধরা পড়ে তাহলে একদম আশাহত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এখানে একটা কথা মাথায় রাখা দরকার, গলার ক্যানসার অনেক ক্ষেত্রেই শরীরের আশপাশের কোনও অঙ্গ থেকে আসতে পারে। তাই এই রোগটি ধরা পড়লে চিকিৎসক যদি সেই অঙ্গগুলির পরীক্ষার জন্য নানাবিধ টেস্ট করতে বলেন তাহলে রোগীর অবশ্যই উচিত তা করা। কারণ অনেক সময় আমরা দেখেছি যে, রোগীরা মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন যে এতসব পরীক্ষা করাতে নারাজ থাকেন। তারা বোঝার চেষ্টা করেন না যে এটা ছাড়া মূল রোগের উৎস খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, বারে বারে গলা ধরে যাওয়া যা অনেক সময় আমরা খুব হালকাভাবে নিই। তা কিন্তু এই মারণ রোগের অন্যতম লক্ষণ। সাধারণ মানুষ অনেক সময় এটাকে ফ্যারেনজাইটিস বলে ভাবেন। যা কিন্তু আদবে নয়। গলা ধরে যাওয়াকে ল্যারিনজাইটিস বলে যা সাধারণ ঠান্ডা লাগা, জোরে কথা বলা এগুলো থেকে যেকোনো সময় হতে পারে। কিন্তু তা বার বার হলে তখনই চিন্তার ব্যাপার। কিন্তু তার মানে এই নয় যে গলা ধরা মানেই ক্যানসার। গলার নডিউল পলিপ এগুলি হলে তাতেও কিন্তু গলার স্বর ভাঙে। তখন মাইক্রো ল্যারিঙ্গোস্কোপিক সার্জারি করে তা খুব সহজেই ভালো করা সম্ভব। এবং তা একদমই ব্যয় সাপেক্ষা নয়।

গলার ক্যানসার দ্রুত শরীরের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে তাই খুব তাড়াতাড়ি রোগটা নির্ণয় না করতে পারলে রোগীকে পুরো সুস্থ করে তোলা অত্যন্ত কঠিন। তাই শরীরের অন্যান্য জায়গায় ক্যানসারের মতো গলার ক্যানসার কিন্তু বেশি সময় দেয় না।

থাইরয়েড থেকে গলা ব্যথা

থাইরয়েড গ্ল্যান্ড আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি। অনেকসময় এর মধ্যে বিশেষ ধরনের ইনফেকশন হলে তার থেকেও মাঝে মাঝে গলা ব্যথা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় মেডিসিনের ডাক্তারবাবুকে দেখাতে বলি। এটিও কিন্তু অত্যন্ত সাধারণ অসুখ। যার চিকিৎসাও খুব সহজ।

আর একটি কারণ থেকে ঠিক একই জায়গায় গলা ব্যথা হতে পারে। গলায় হায়ড (Hyoid) নামক একটি হাড় আছে। যার পাশে জেলির মতো একটি পদার্থ থাকে। এই জেলি বা বার্সাতে (Bursa) যদি ইনফেকশন হয় তাহলেও কিন্তু ব্যথা হতে পারে। বলাইবাহুল্য, এর চিকিৎসাও বিন্দুমাত্র কঠিন নয়।

সতর্কতা অবলম্বন অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ

  • খুব গরম থেকে এসে কনকনে ঠান্ডা পানীয় খাবেন না।
  • দাঁতের কোনও সমস্যাকে ফেলে রাখবেন না। এর থেকে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • নির্দিষ্ট সময়ে সুস্থ আহারে করার ও গ্যাস অম্বলকে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
  • নিজের চিকিৎসা নিজে না করা।
  • গলার স্বরভাঙা বা খেতে কষ্ট অথবা মুখ থেকে রক্ত আসা কিংবা প্রায়শই ঘুসেঘুসে জ্বর ও ওজন কমে যাওয়া এগুলো যদি গলা ব্যথার সঙ্গে থাকে তাহলে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া উচিত।
  • মাঝে মাঝে গার্গল করা যেতে পারে।
  • ভিটামিন-ই ট্যাবলেট, মধু, তুলসি পাতা খেয়ে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়। কিন্তু তার পরেও একই সমস্যা থাকলে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ধৈর্য ধরে চিকিৎসায় এগোনো ও পুরো চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। গলা ব্যথার সাথে যদি কোথাও ফোলা থাকে তাহলে সেটি অত্যন্ত ভয়ের বিষয়। এমন অনেক রোগীকে দেখা যায় যারা একসাথে অ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করাচ্ছেন। এটা কিন্তু একদমই বাঞ্ছনীয় নয়। বিশ্বাস মানুষের স্বতন্ত্র বিষয়। কিন্তু এই দুটি পন্থা একসাথে অবলম্বন করতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই একটি পন্থা যাচাই করে তবেই অপরটিতে যাওয়াই উচিত।

সাধারণ চিকিৎসায় যদি ব্যথার উপশম না হয় তাহলে টনসিল, গলায় গ্ল্যান্ড বাড়া, হাড় বাড়া এগুলির সার্জারি করা প্রয়োজন। এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সার্জারির সিদ্ধান্তের আগে ওষুধের গুণাগুণ ভালো করে যাচাই করে নেওয়া উচিত। তেমনই রোগীরও দায়িত্ব ডাক্তারবাবু কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তার কথামতো চলা। অনকে সময় তারা ভাবেন হয়তো অস্ত্রোপচার খুব ভয়ের ব্যাপার। তাতে কেবলই রোগটা বাড়ে। বলার উদ্দেশ্য এটাই যে গলা বথ্যার ক্ষেত্রে অনেক কারণেই সার্জারির প্রয়োজন। সর্বশেষে যেটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে সাধারণ মানুষ হিসেবে অনেক সময়ই আমরা গুরুতর কারণকে আমরা লঘু করে দেখি। যার ফলে গলা ব্যথাকে সাধারণ সর্দি লাগার পরিণাম হিসাবে আমরা জানতে ও বুঝতে অভ্যস্ত। যার ফলে মূল রোগের চিকিৎসা অনেক ক্ষেত্রেই  বিলম্বিত হয়ে যায়। তাই চিকিৎসক হিসেবে আমাদের সাধারণ পাঠকবন্ধুর কাছে এটাই আমার বিনীত অনুরোধ, এই সমস্যাকে লঘুভাবে না দেখে, নিজের চিকিৎসা নিজের হাতে না করে সত্বর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কারণ শরীরের কোন অংশ থেকে কোন রোগের জন্য আপাতদৃষ্টিতে এই কষ্ট হচ্ছে, এটা কেবল তারাই ধরতে পারবেন।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন