×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

প্রসবের পর রক্তস্রাব অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে

ডাঃ সবুজ সেনগুপ্ত (স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ; মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, চার্নক হসপিটাল)
2019-04-23 11:57:53

প্রসব হয়ে যাবার একটু-আধটু রক্তস্রাব তো স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু কতটা হলে সেটা দুশিন্তার কারণ হবে বা রোগিনীর ক্ষতি হসে সেটা জানা আছে কি? স্বাভাবিক প্রসবের পর পাঁচশো মিলি, এবং সিজারিয়ান ডেলিভারির পর এক লিটার, এ পর্যন্ত হলে স্বাভাবিক বলে ধরে নিতে হবে। কিন্তু যদি তার বেশি হয় তাহলে কিন্তু সব কিছু ছেড়ে সেটাকে বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে।

এই প্রসবোত্তর রক্তস্রাবের সাথে আমার জীবনের দুটো মর্মান্তিক ঘটনা জড়িয়ে আছে।

তখন থার্ড ইয়ারে সবে উঠেছি। ক্লিনিক্যাল সাইডে গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে আমরা যে মেডিকেল স্টুডেন্ট সেটা জাহির করা চলছে। থিওরি ক্লাশ শুরু হবার আগেই গাইনীতে লেবার রুমে ডিউটি পড়ল। দু’জন দু’জন করে ইন্টার্ন স্টুডেন্ট ডিউটিতে থাকত বারো ঘন্টার জন্য, তারপর বারো ঘন্টার বিশ্রাম এবং আবার বারো ঘন্টা—এরকম তিন সপ্তাহের ডিউটি। তার মধ্যে দশখানা নর্মাল ডেলিভারি নিজের হাতে করিয়ে তার রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। মুশকিলের ব্যাপারটা হচ্ছে কোনো থিয়োরির বিদ্যে হবার আগেই আমাদের দু’জনের ডিউটি শুরু হয়ে গেল লেবার রুমে। প্রথম দিন সন্ধে ছ’টা থেকে পরের দিন সকাল ছ’টা পর্যন্ত। আমি যে মেডিকেল কলেজের কথা বলছি সেটা তখন অসমের একমাত্র মেডিকেল কলেজ। অসম তখন সাত ভাই চম্পা হয়ে যায়নি। সেই নাগাল্যান্ড, অরুণাচল, মনিপুর সব জায়গা থেকেই অগুন্তি রোগী আসত দুর্গম রাস্টাঘাট পেরিয়ে। যাইহোক, সমানে পেশেন্ট আসছে এমার্জেন্সিতে, যাদের সিজার করতে হবে, সিনিয়ারকে খবর দেওয়া হচ্ছে—সে এক হৈ হৈ ব্যাপার। রাত্রি বারোটার সময় একটি মেয়েকে স্ট্রেচারে করে সোজা লেবার রুমে নিয়ে আসা হল। বাচ্চা হঠাৎ বাড়িতেই হয়ে গেছে। মায়ের বয়স মাত্র সতেরো। রান্নাঘরে শাশুড়িকে সাহায্য করছিল, হঠাৎ বাচ্চা বেরিয়ে এসেছে সেরকম কোনো লেবার পেন ছাড়াই। পরে জেনেছি এটাকে বলে প্রেসিপিটেট লেবার। যাতে কোনো জানান না দিয়েই বাচ্চা হঠাৎ ভূমিষ্ঠ হয়ে যায়। তারপরেই শুরু হয় প্রচন্ড রক্তস্রাব। কোনো রকমে সবাই মিলে এখানে নিয়ে এসেছে। মেয়েটির নিষ্পাপ মুখ অতিরিক্ত রক্তপাতে ব্লটিং পেপারের মতো সাদা, চোখ বুজে আছে। সিনিয়রদের প্রচুর চেষ্টা সত্ত্বেও রক্তস্রাব বন্ধ করা গেল না। থিয়েটার রেডি করারও সুযোগ সে দিল না। একটু পরেই সে চিরকালের মতো বিদায় নিল। তার আগে একবারের মতো চোখ খুলে, আমরা দু’টো বোকার মতো মাথার কাছে দাঁড়িয়েছিলাম, আমাদের জিজ্ঞেস করল ‘ডাক্তারবাবু আমি কি মরে যাচ্ছি?’ সতেরো বছরের একটি নিষ্পাপ মুখের এই প্রশ্ন অনেকদিন পর্যন্ত দুঃ  স্বপ্নেও আমাকে তাড়া করেছে। আজও চোখ বুজলে আমি সেই মুখটি দেখতে পাই। আর প্রফেসর এসে যেটা ডায়াগনোসিস করলেন সেটাও আজীবন ভুলতে পারব না। ‘অ্যাকিউট ইনভার্সাল অব ইউটেরাস’। মানে বাচ্চা হঠাৎ বেরিয়ে আসার ফলে প্লাসেন্টা টানের চোটে জরায়ুকেও উল্টে বাইরে নিয়ে এসেছে। প্রায়ই যে ঘটে এ ঘটনা, তা নয়। কিন্তু জীবনের শুরুতেই এ ঘটনা আমার মনটাকে অনেকটাই ওলটপালট করে দিয়েছিল।

দ্বিতীয় ঘটনার নায়িকা আমার খুড়তুতো দিদি। আমরা অসমে থাকতাম। বাবা চা বাগানের ডাক্তার ছিলেন বলে। বাকি কাকা-জ্যেঠারা সবাই থাকতেন কলকাতায়। পড়াশোনার চাপে কলকাতার খুব কমই আসা হত। আর জ্যেঠতুতো,, খুড়ততো ভাইবোনদের সাথে সেরকম পরিচয় ছিলই না। প্রথম কলকাতা এলাম প্রি-মেডিকেল পরীক্ষা দিয়ে। কাকা. জ্যেঠামশাই, মামাদের বাড়িতে ঘুরে ঘুরে থাকা হচ্ছে। প্রচুর আদর আর খাওয়ার মধ্যে দিন কাটছে। সেজ কাকার বাড়িতে গিয়ে এই দিদির সাথে দেখা হবার সাথে সাথেই ভালোবেসে ফেললাম। বয়সে হয়তো আমার থেকে সামান্যই বড় কিন্তু যেমন দিদিসুলভ ভালোবাসা দিয়েছিল সেদিন তা আজও মনে আছে। ক’দিন বাদেই এই দিদির বিয়ে হয়ে গেল। আমাদের যাওয়া হয়নি। দাদা ও বাবা গিয়েছিলেন। বছর দুয়েক বাদে খবর পেলাম আমার সেই দিদি মা হতে গিয়ে কলকাতার এক নামী নার্সিংহোমে মারা গেছে। স্বাভাবিক প্রসব হবার পরে তাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছিল। রাত্রিতে হঠাৎ প্রচন্ড রক্তস্রাব হওয়াতে বিছানাতেই তার শেষদিন ঘনিয়ে আসে। মাথার কাছে ঘন্টি ছিল কিন্তু বাজাতে পারেনি। কোনা কারণে আয়াও হয়তো কাছে ছিল না। মর্মান্তিক ঘটনা!

এই পর্যন্ত পড়ে কেউ যেন মনে না করেন যে যারা মা হবে বা হতে যাচ্ছে তাদের মনে আমি একটা ভীতি তৈরি করার চেষ্টা করছি। একেবারেই না। দুটো ঘটনাই অত্যন্ত বিরল ঘটনার মধ্যে পড়বে। নিরাপদে মা হবার জন্য প্রধানত তিনটি জিনিসের দরকার, একজন অভিজ্ঞ স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকা আর এমন একটি হসপিটাল বা নাসিংহোম যেখানে অভিজ্ঞ অ্যানসথেটিস্ট আছেন আর আছে ব্লাডব্যাষ্কের সুবিধা।

বাচ্চা প্রসব হয়ে যাবার পর মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বেরিয়ে আসে প্লাসেন্টা বা ফুল। এটারই নাম হচ্ছে থার্ড স্টেজ অব লেবার। এই পর্ব সুচারুভাবে সম্পন্ন না হলে কখনোই চিকিৎসকের উচিত নয় স্থান ত্যাগ করা। কারণ প্লাসেন্টা বেরোনোর সময়ই হতে পারে সেই প্রচন্ড রক্তস্রাব। তখন যদি দেখা যায় প্লাসেন্টা বেরোতে দেরি হচ্ছে অভিজ্ঞ চিকিৎসক তক্ষুনি সেটা বের করার চেষ্টা করেন, দরকার হলে এমনকী অজ্ঞান করে ভেতরে হাত ঢুকিয়ে (ম্যানুয়াল রিমুভাল অব প্লাসেন্টা)। বেশির ভাগ সময়ে প্লাসেন্টা বের করে নিলেই রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে আসে।

একটা জীবনদায়ী ওষুধের নাম তো করতেই হবে এখানে। সেটা হচ্ছে আর্গোমেট্রিন বা মেথার্জিন। এটা প্রয়োগ করার প্রায় সাথে সাথে জরায়ু শক্ত হয়ে সষ্কুচিত হয়ে যায়। ফলশ্রুতি, রক্তস্রব কমে আসা।

মাতৃঅঙ্গে কোথাও যদি আঘাত লেগে থাকে তার জন্যও রক্তস্রাব হতে পারে। এই সময় চিকিৎসক তাও দেখে নেন কোথাও কোনো ছেঁড়া-খোঁড়া আছে কি না। থাকলে অবশ্যই ভালো করে তা জুরে দেয়া উচিত।

প্রসবে সহায়তা করতে গিয়ে অনেক সময় ফরসেপস দরকার হয়। যদিও একসময় বহুল প্রচলিত ছিল, আধুনিককালে এর ব্যবহার অনেক কমে গেছে। খুব শিক্ষিত হাতে না হলে এতে জরায়ুমুখে (সার্ভিক্স) আঘাত লাগার সম্ভাবনা বা যোনিদ্বারের অনেক ওপরে আঘাত লাগে যেটাকে বলে ‘ভল্ট টিয়ার’। দুটো ক্ষেত্রেই প্রচুর রক্তস্রাব হবার ভয় থাকে আর এগুলো মেরামত করাও অনভিজ্ঞদের কাজ নয়। অজ্ঞান করার ডাক্তারবাবুর দরকার তো পড়বেই।

এ পর্যন্ত লিখে কলম থামানোর কথা। কিন্তু ভাবছি এই এতটা লেখার কি সত্যিই কোনো দরকার ছিল? ভাবী মায়েদের বা অন্যান্য পাঠক-পাঠিকাদের কি দরকার এসব জেনে। সামান্য একটু জ্ঞানলাভ ছাড়া আর কিছুই নয়। বরঞ্চ এটা বেশি দরকার তাদের যারা ভেবেছেন পরে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হবেন। তাদের হাতেই ভার থাকবে একটি মা ও শিশুকে বিপদমুক্ত করে তাদের আত্মীয়স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়ার। তাতে কোনো গাফিলতি হলে ঈশ্বর ক্ষমা করবেন না।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন