×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

অল্পবয়সী মেয়েদের নানান মেয়েলি সমস্যা

ডাঃ বিশ্বজ্যোতি গুহ
2019-04-23 13:24:05

অল্পবয়সীদের মেয়েদের যে সমস্ত স্ত্রী রোগ বা গাইনোলজিক্যাল সমস্যা দেখা দেয় সেগুলির মধ্যে একটা কমন সমস্যা হল বেশি ব্লিডিং হওয়া। সাধারণত ১০-১২ বছর বয়স থেকেই পিরিয়ড বা মাসিক শুরু হয়। প্রত্যেক মেয়ের জীবনে এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। পিরিয়ড ঠিক সময়ে না হওয়াটাই বরং সমস্যায় ফেলে দেয়। কিশোরী মেয়েরা সাধারণত যে যে সমস্যায় ভোগে সেগুলোর কয়েকটি হল---

মাসিকের সময় বেশি ব্লিডিং হওয়া

মাসিকের সময় অনেক মেয়েদের বেশি রক্তস্রাব হতে দেখা যায়। বহুক্ষেত্রে এই রক্তস্রাব অনেকদিন ধরে ধাকে এবং ক্লট হয়ে যায়। যাদের স্কুল থাকে তারা বেশি রক্তস্রাব হবার কারণে স্কুল বা কলেজে যেতে পারে না। যা একটা সমস্যা তৈরি করে। মাসিক বেশি হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে যদি রক্তস্রাবের সাথে ক্লট বেরিয়ে আসে।

আজকাল অল্পবয়সী মেয়েদের মধ্যে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বেশি হতে দেখা যাচ্ছে। তার ফলে সমস্যা যেটা হয় সেটা হল অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা। পলিসিস্টিক ওভারির কারণে কখনো মাসিক হয় দু’এক মাস বাদে বাদে। কখনোও বা তার স্থায়িত্ব থাকে একদিন বা দু’দিন। পলিসিস্টিক ওভারি হওয়ার একটা অন্যতম কারণ হল খুব স্ট্রেস, বেশি মোটা হয়ে যাওয়া, হাত-পা-গায়ে লোম বাড়তে থাকে, অল্প বয়সে ডায়াবেটিস এসে যায়।

খুব বেশি পরিমাণ রক্তস্রাবহলে তার চিকিৎসা করতে হবে। কারণ প্রতি মাসে খুব বেশি পরিমাণে রক্ত শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে রক্তশূণ্যতা তৈরি হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ আছে যেগুলোর প্রয়োগ সুফল পাওয়া যায়। তাই চিকিৎসা করানো উচিত।

যদি পরীক্ষায় পলিসিস্টিক ওভারির সন্ধান পাওয়া যায় তাহলে আলট্রাসাউন্ড করে দেখে নিতে হবে সিস্টের উপস্থিতি কোথায়।

খুব বেশি স্ট্রেস, জাষ্ক ফুড খাওয়া, নিয়মিত শরীর চর্চা না করা, ডায়েট কন্ট্রোল ঠিকমতো না হলে পি.সি.ও অর্থাৎ পলিসিস্টিক ওভারি দেখা যায়। এছাড়া দেরি করে, কম পরিমাণে মাসিক হওয়ার সমস্যা থাকলেও ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া উচিত। প্রথমে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। সাফল্য না হলে ল্যাপরোস্কোপির সাহায্যে সিস্টগুলোকে অপারেশন করে বাদ দেওয়া হয়।

প্রস্রাবে সংক্রমণ

 অল্পবয়সী মেয়েদের হামেশাই প্রস্রাবে সংক্রমণ হতে দেখা যায়। যেহেতু মেয়েদের ইউরেথ্রা ছোট হয় সেজন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংক্রমণ হতে দেখা যায়। মেয়েদের ইউরেথ্রা ৩.৭ সেমি হয় যা খুবই ছোট। সংক্রমণের জায়গা থেকে সিস্টাইটিস হয়, তার থেকে কিডনি ইনফেকশন। তাই ইউরিন কালচারের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয় সংক্রমণ সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার জন্য।

স্কুল কলেজের মেয়েরা সাধারণত যেটা করে সেটা হল স্কুল কলেজের গিয়ে একদম জল খান না। এটা তাদের বোঝানো উচিত জল খাওয়াটা বেশি পরিমাণেই করতে হবে। না হলে প্রস্রাবে সংক্রমণ হতে পারে। স্কুল একসাথে অনেক মেয়ে এক জায়গায় টয়লেট করে কিন্তু ওয়াশ করে না ঠিকমতো। অপরিষ্কার টয়লেট থেকেও সংক্রমণ হয়। আবার খুব বেশিক্ষণ প্রস্রাব ধরে রাখাটাও খারাপ। তার থেকেও সংক্রমণ হয়।

সাদ স্রাব

অল্পবয়সী মেয়েদের মাসিক শুরু হওয়ার সাথে সাথে অল্প পরিমাণে সাদা স্রাব আসে। এই স্রাব সাধারণত স্বাভাবিক। কোনো কারণে যৌন উত্তেজনা হলেও সাদা স্রাব দেখা যায়। তবে এর পরিমাণ যখন বেড়ে যায় বা চুলকানি থাকে, হলদেটে দুর্গন্ধযুক্ত হয়, তখন চিকিৎসককে দেখিয়ে নিতে হবে। প্রত্যেকবার টয়লেট করার সময় জল দিয়ে জায়গাটা ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ছোট মেয়দের এ ব্যাপারে প্রথম থেকেই শেখানো উচিত।

খুব বেশি পরিমাণে সাদা স্রাব হলে ব্যাপারটা ফেলে রাখা উচিত নয়। ওখান থেকে সোয়াব নিয়ে কালচার পাঠাতে হয়। কালচারে দেখা হয় কী গ্রোথ হচ্ছে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করালে একশোভাগ ভালো হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। নয় থেকে এগারো বছর বয়সে এইচ.পি.ভি ভ্যাকসিন নিয়ে নেওয়া উচিত যা পরবর্তীকালে সারভাইকাল ক্যানসারকে প্রতিরোধ করে।

আই পিল

আজকাল বহু মেয়েই আই পিল ব্যবহার করে। এটা সম্বন্ধে তাদের নিজেদের সাবধান হতে হবে। এতে পিরিয়ড হবার যে স্বাভাবিক নিয়ম সেটা নষ্ট হয়ে যায়। আই পিল খাবার ফলে তার পরের পিরিয়ডগুলো আর স্বাভাবিক নাও হতে পারে। আই পিল খাওয়াটা কিন্তু সমস্যা নয়। তবে মনে রাখতে হবে এর সাফল্য যে সব সময় ঠিকঠাক হবে তাও নয়। কারণ এর ফেলিওর রেট কম নয়। একশো জনের মধ্যে আশি জনের কাজ করলেও ২০ জনের কাজ করবে না। কেউ হয়তো ভাবল আমি আই পিল খেয়েছি কিছু হবে না। কিন্তু পরে দেখা গেছে এমন একটা স্টেজে প্রেগনেন্সি ধরা পড়ল যে তখন আর কিছু করার নেই। তাই ডাক্তাররা সব সময়ই বলেন যদি আই পিল খাবার পর মাসিক ঠিক সময় না হয় তাহলে দয়া করে ইউরিনটেস্ট করে নেওয়া দরকার।

আই পিল খেলেও ডিম বেরোনা বন্ধ হয় না। এর ফলে বাচ্চাটা অনেক ময় টিউবে বসে যায় এবং টিউবে গর্ভঞ্চার হয়। পরবর্তীকালে টিউব বাদ দিতে হয়। আর দুটো টিউব বাদ গেলে যে ক্ষতিটা হয় তা হল, বিয়েল পর বাচ্চা হবার সম্ভাবনা থাকে না। অনেক মেয়েই আজকাল ওষুধ খেয়ে অ্যাবরশন করাচ্ছে। এটাও খুব খারাপ। গর্ভসঞ্চার দু’জায়গায় গতে পারে---জরায়ুর মধ্যে এবং বাইরে। যদি জরায়ুর মধ্যে গর্ভসঞ্চার হয় তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। ওষুধটা খেলে ব্লিডিং হয়ে গর্ভ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু যদি জরায়ুর বাইরে গর্ভসঞ্চার হয় তাহলে কিন্তু এই ওষুধটা খেলে, এক্টোপিক প্রেসনেন্সি থাকলে তা র‌্যাপচার করতে পারে। এছাড়া ভবিষ্যতে বাচ্চা আসার অসুবিধা হবে, টিউব ড্যামেজ হয়। অনেক সময় দেখা যায় পুরোপুরি অ্যাবরশন হল না, কিছুটা রয়ে গিয়ে ইনফেকশন তৈরি হল। আর এসব থেকেই পরবর্তীকালে ইনফার্টিলিটি তৈরি হল। এই কারণে অল্পবয়সী মেয়েদের যারা মা তাদের উচিত মেয়েকে সবরকমভাবে তার সেক্সুয়াল ধারণাকে তৈরি করে দেওয়া এবং যেসব গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যা আসবে সেগুলি ঠিক কীভাবে ডাক্তারের কাছে উপস্থিত করা। সব রোগেরই চিকিৎসা আছে। তাই চিকিৎসার সুবিধা নিয়ে নিজেকে সুস্থ রাখা উচিত।

কতকগুলো নিয়ম যদি মেয়েরা মেনে চলে তবে কোনো সমস্যাই তৈরি হয় না।

  • জীবনশৈলীর পরিবর্তন।
  • জাষ্ক ফুড, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড না খাওয়া।
  • নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। বিশেষ করে পিরিয়ডের সময়।
  • নোংরা ন্যাপকিন ব্যবহার না করা। তিন-চার ঘন্টা অন্তর ন্যাপকিন পরিবর্তন করতে হবে।
  • টয়লেটের জায়গা অর্থাৎ প্রস্রাবের জায়গা পরিষ্কার জলে ধোওয়া।
  • কোনো নোংরা পাবলিক টয়লেট ব্যবহার না করলে ভালো।
  • যথেচ্ছ আই পিল ব্যবহার না করা।
  • অ্যাবরশন করতে হবে, এই সম্ভাবনাকে তৈরি হতে না দেওয়া।

শারীরিক কোনো অসুবিধাকে অবহেলা করা উচিত নয় কখনো।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন