প্রসাধনী দ্রব্য থেকে ত্বকের রোগ
ডাঃ সন্দীপ ধর
2019-04-23 13:28:07
কসমেটিক বা প্রসাধনী বলতে আমরা বুঝি সেই সমস্ত সামগ্রী যা সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কাজে লাগে। যেমন টোনার, মায়েশ্চারাইজার, ক্রিম, ফাউন্ডেশন মেক আপ ইত্যাদিইত্যাদি। এইসব প্রসধনী যেমন অতি সাধারণ একটি মেয়েকে অপরূপ লাবণ্যময়ী করে তুলছে তেমনি এইসব কসমেটিকসের হাত ধরে নানা সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকস র্যাশ, অ্যালার্জি, ফুসকুড়ির মতো সমস্যা তৈরি করে জীবনকে করে তুলছে নাজেহাল। এইসব সমস্যা নিয়েই আজকের আলোচনা করা যাক।
- কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস : এই ধরনের রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ত্বকের ওপর কোনো পদার্থ লাগালে তা যদি ত্বকে অ্যালার্জির সৃষ্টি করে তার থেকে, হেয়ার ডাই মেটাল অর্থাৎ হাত ঘরির ব্যান্ড, ইমিটেশন গহনা, পায়ের জুতোর ওপরের ব্যান্ড যা ত্বকে চেপে বসে থাকে এসব থেকে ত্বকের নির্দিষ্ট অংশে চুলকানি শুরু হয়। ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি হতে পারে। কখনও রসের মতো চটপটে পদার্থ নিঃসৃত হয়। এর কারণ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা স্কিন অ্যালার্জির জন্য দায়ী। এই ধরনের রাসায়নিক (PPD-Para Phexylebe diamine) কপালের বিন্দি বা টিপেও থাকে, যা টিপকে কপালে ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- কেমিক্যাল পিল : পুরনো ত্বককে নতুনভাবে প্রতিস্থাপন করার জন্য কেমিক্যাল পিল ব্যবহার করা হয়। কেমিক্যাল পিল ব্যবহারের ফলে ত্বকের যেমন উন্নতি হয়, ঠিক তেমনি হাইপার পিগমেন্টেশন রিষ্কলস, ব্রণ, রোসাশিয়া, মেলাজমা ইত্যাদি রোগের জন্য এই চিকিৎসা খুবই কার্যকরী। এই কারণে এর জনপ্রিয়তার হার দিন দিন বাড়ছে। ১৯৯৯ সালে আমেরিকায় প্রথম এই পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্যালোন বা বিউটিপার্লারে এই পদ্ধতির প্রচলন আছে। কসমেটির্কস সার্জেন ও ডার্মাটোলজিস্টরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন। সাধারণত তিন ধরনের কেমিক্যাল পিল ব্যবহার হয়। সুপার ফেসিয়াল, মিডিয়াম এবং ডিপ সুপার ফেসিয়াল পিল সব ধরনের ত্বককে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আধুনিক যুগে সুপার ফেসিয়াল এবং মিডিয়ামের ব্যবহার বেশি। সুপার ফেসিয়াল এবং মিডিয়াম ডেপথ পিলস খুব সূক্ষ্মতার সঙ্গে স্কিন রিষ্কলস বা ত্বকের কোঁচকানো ভাব দূর করে। এর ফলে ত্বক যেমন টানটান হয় তেমনই ত্বকের উজ্ঝ্বলতা বাড়ে।
এই সুপার ফেসিয়াল অথবা মিডিয়াম ডেপথ পিল ব্যবহারের ফলে নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হয়। কারণ এই সব জিনিসের মধ্যে নানা অ্যাসিড থাকে। অর্থাৎ নানা ধরনের অ্যাসিড দিয়েই পিল তৈরি হয়। ফলে প্রায়শই দেখা যায় মেয়েরা নানা ধরনের স্কিন অ্যালার্জি নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে এসে উপস্থিত হয়। সুপার ফেসিয়াল পিলকে আরও বেশি কার্যকর করার জন্য এর সাথে হাইড্রক্সি অ্যাসিড ও বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড, ট্রাইক্লোরো অ্যাসিটিক অ্যাসিড যোগ করা হয়। এসব জিনিস যেমন ত্বকের দাগ তুলে কোঁচকানো ভাব দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল রাখে, তেমনি মনে রাখতে হবে এই জিনিসগুলো ত্বকের ওপর থেকে খুব হালকা একটা স্তর তুলে ফেলে। পিগমেন্টেশন দূর করতে সুপার ফেসিয়াল পিল খুব ফলপ্রদ। এই জিনিসগুলো তৈরি হয় একটা নির্দিষ্ট মাপকাঠিতে মেপে। কিন্তু অনেক কোম্পানি বেশি লাভ করার লোভে বেশি বিক্রির কথা মাথায় রেখে ট্রাইক্লোরো অ্যাসিটিক অ্যাসিড এবং বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে ব্যবহার করার ফলে ত্বকের ক্ষতি হয়। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকই ঠিক করে দিতে পারেন রোগীর কোন ধরনের ফেসিয়াল প্রয়োজন এবং ঠিক কোনটা তার ত্বকের জন্য উপকারী !
- আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড এবং বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড : রোদ থেকে মুখে পিগমেন্টেশন হয় এবং হালকা দাগ দেখা দেয়। ত্বকে রুক্ষতা ও কোঁচকানো ভাব আসে। আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড এবং বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের মিশ্রণ ব্যবহার করে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া বয়সের কারণে ত্বকে যে রুক্ষতা আসে এ.এইচ.এ এবং বি.এইচ.এ ব্যবহারের ফলে তা কেটে গিয়ে অনেক বেশি মসৃণ হয়ে ওঠে ত্বক।
আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড হল প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে তৈরি। এই এ.এইচ.এ যে সব অ্যাসিডের সংমিশ্রণে তৈরি হয় তা হল গ্লাইকোলিক অ্যাসিড (আম থেকে এই অ্যাসিড পাওয়া যায়), সাইট্রিক অ্যাসিড (সাইট্রাস যুক্ত ফল থেকে পাওয়া যায়) এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড (টক দই থেকে পাওয়া যায়)। হাইড্রক্সি অ্যাসিডের ব্যবহার সেই অতীত যুগে ক্লিওপেট্রার সময় থেকে চলে আসছে। কারো কারো মতে ক্লিওপেট্রা তার মুখের সৌন্দর্য ধরে রাখতে মুখে টক দই মাখতেন। কসমেটিক অ্যালার্জির কারণে যারা অ্যাসিড যুক্ত পিল মুখের ফেসিয়ালে ব্যবহার করতে পারেন না তারা ঘরোয়া পদ্ধতি হিসাবে আম বা লেবা জাতীয় ফল কিংবা টক দই দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। এতে আর যাই হোক মুখের ত্বকের কোনো ক্ষীত হবে না, এটা বলা যেতে পারে।
- গ্লাইকোলিক অ্যাসিড : এই অ্যাসিড খুবই জনপ্রিয় এবং কেমিক্যাল পিল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ডার্মাটোলজিস্টদের কাছে এই অ্যাসিড খুবই প্রিয়, যা ‘দ্য লাঞ্চ পিলস’ নামে পরিচিত। কারণ একজন রোগীর লাঞ্চ করতে যতটা সময় লাগে সেই সময়ের মধ্যেই এই অ্যাসিড ত্বকে ব্যবহার করে ত্বক পরিচর্যা করে রোগী তার কর্মে ফিরে যেতে পারে। এই পিল ব্যবহারে কোনো র্যাশ অথবা অ্যালার্জি বেরোয় না, যদি না রোগীর স্কিন খুব বেশি সেনসেটিভ হয়। এর ব্যবহারের সুবিধা ও কার্যকারিতার জন্য গ্লাইকোলিক পিল অন্যান্য সুপার ফেসিয়াল কেমিক্যাল পিলের মধ্যে এককদম এগিয়ে। আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ফটো এজিংয়ের চিকিৎসার জন্যও ভীষন কার্যকরী।
আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড পিল ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে, রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। বয়সকালে ত্বক কোঁচকানোর মতো যে ভাব হয় এই পিলের নিয়মিত ব্যবহারে তা অনেকটাই চলে যায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের যে কোলাজেন সিন্থেসিস কমতে শুরু করে আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড পিল ব্যবহারে তা আশ্চর্যজনকভাবে বাড়তে শুরু করে।
- ল্যাকটিক অ্যাসিড : এই অ্যাসিড খুবই জনপ্রিয়। কারণ এই আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের বেশিরভাগই বিভিন্ন ঘরোয়া জিনিস থেকে ও বিভিন্ন ময়েশ্চারাইজার থেকে পাওয়া যায়। ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। ল্যাকটিক অ্যাসিডের কাজ অনেকটা গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের মতোই। ত্বকের উন্নতির জন্য খুব ভালো কাজ করে।
- আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের অন্যান্য প্রতিক্রিয়া :সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে রিষ্কলস এবং পিগমেন্টেশনের সৃষ্টি হয়। এই সময় সাধারণত ত্বক রক্ষ ও শুষ্ক হয়। আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড রক্ষ ত্বকের জন্য খুবই কার্যকরী। এই আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড পিল ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে ও প্রখর আলো থেকে ত্বক নিজেকে রক্ষা করতে পারে।
কিছু রোগী, যাদের ত্বক স্পর্শকাতর, তারা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড পিল ব্যবহার করতে ভয় পায়। কারণ এই পিলে ব্যবহার করতে ভয় পায়। কারণ এই পিলে তাদের স্কিন অ্যালার্জি হয়। তাই যাদের স্কিন অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তারা সরাসরি এই এ.এইচ.এ পিল ব্যবহার না করে তার সাথে কিছু মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের অস্বস্তি থেকে অনেকটাই দূরে থাকতে পারেন।
- বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড : বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিডও ডার্মাটোলজিস্টদের কাছে খুবই জনপ্রিয় কেমিক্যাল পিল। এই অ্যাসিড তৈরিতে বেশ কিছু ঘরোয়া জিনিস লাগে। এই অ্যাসিড তৈরি হয় উইলো গাছের ছাল, উনন্টার গ্রিনের পাতা ইত্যাদি থেকে। আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের জনপ্রিয়তা দেখেই বিটা পিল তৈরি করা হয়। কেমিক্যাল পিলের নতুন সংযোজন হল বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড। বি.এইচ.এ পিল পিগমেন্টেশন দূর করে ত্বকের রুক্ষতা কমিয়ে দেয় এবং ত্বকের হালকা বলিরেখা পড়লে তা কমিয়ে দেয়। প্রায় বেশিরভাগ কাজকর্ম আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের মতো।
১৯০০ সালে পরীক্ষায় দেখা গেছে যে ৫০ শতাংশ স্যালিসাইলিক অ্যাসিড হাতে ব্যবহার কতে হাতের পিগমেন্টেশন দূর করা সম্ভব। ত্বকের অস্বস্তি দূর করতে আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড পিলের থেকে বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড পিল বেশি কার্যকরী। একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে যারা গ্লাইকোলাইজিক অ্যাসিড ব্যবহার করছেন তাদের মধ্যে কুড়ি শতাংশের নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে। আর যারা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ব্যবহার করেছেন তাদের মধ্যে চার থেকে সাত শতাংশের নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে।
বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড পিল একটা পরিপূর্ণ পিলস। শরীরের যেকোনো অংশে এই পিল ব্যবহার করা যায়। যাদের ড্রাই স্কিন এবং ফিসস্কেল আছে তাদের ক্ষেত্রেও ভালেঅ সাড়া পাওয়া গেছে।
কয়েকটি জনপ্রিয় পিল হল জেসচারস পিল, পিসিএ পিল, আলট্রা পিল। এই পিলগুলোর মূল কাজ হল ত্বকের ওপর থেকে হালকা একটা পর্দা তুলে দেওয়া যায় ফলে ত্বকের সেই জৌলুস ফিরিয়ে আনা যায়।
- হাইড্রক্সি অ্যাসিড ব্যবহারে অসুবিধে : যদিও আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড পিল খুবই ভালো জিনিস, কিন্তু এর আবার কয়েকটা অসুবিধা আছে। এই সুপার ফেসিয়াল কেমিক্যাল পিল ব্যবহার করে ত্বকে খুব কম পরিবর্তনই চোখে পড়ে। সূর্যের আলো থেকে ত্বকে দাগ, মেলাজমা ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে অন্তত চারটে সুপার ফেসিয়াল পিল ব্যবহার না করলে ত্বকের উন্নতি সঠিক বোঝা যায় না। চারটে পিল ব্যবহার করলে আসল পরিবর্তন চোখে পড়ে। এই কথাটা সব সময় চিকিৎসা শুরুর আগে রোগীকে জানিয়ে দেওয়া উচিত। কারণ রোগী দু-এক বার পিল ব্যবহার করে আশানুরূপ ফল না পেয়ে নিরাশ হয়ে যেতে পারে। সুপার ফেসিয়াল পিল খুব বেশিরকম রিষ্কল কিংবা খুব বেশি স্কারকে দূর করতে সক্ষম হয় না। যদিও বাজারে অনেক কসমেটিক প্রোডাক্ট আছে যারা দাবি করে যে তারা এসব বেশি পরিমাণে হওয়া দাগ-ছোপ, রিস্কল সবকিছুই মুছে দিতে পারে। এসব আজগুবি কথার কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।
যদিও আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড রোজকার ক্লিনজার বা ময়েশ্চারাইজার হিসাবে খুবই জনপ্রিয়, তথাপি কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে রোজ হাইড্রক্সি অ্যাসিড ব্যবহারের ফলে এই অ্যাসিড তার কাজের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং বেশি পরিমাণ ব্যবহারের ফলে ত্বকের সমস্যা দেখা যায়।
কেমিক্যাল পিল কতটা কার্যকর ভূমিকা নেবে সেটা নির্ভর করে কেমিক্যাল পিলের মধ্যে কোন অ্যাসিড কতটা করে ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপররে।
কোন কম্পানির জিনিস কতটা ভালো, কতটা খারাপ সেটা বলা কঠিন। দুটো কোম্পানির একই প্রোডাক্টের ক্ষমতা দু’রকম হওয়া বিচিত্র নয়।
- যেকোনো ধরনের সুপার ফেসিয়াল পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া : সুপার ফেসিয়াল পিল খুবই নিরাপদ যদি সেটা সঠিকভাবে লাগানো হয়। সঠিকভাবে না লাগানোর ফলে ত্বকে ইরিথমা অর্থাৎ মাছের আঁশের মতো আঁশ ওঠা, চুলকানি, অস্বস্তি, র্যাশ পর্যন্ত হতে পারে। ল্যাকটিক অ্যাসিড এবং হাইড্রোকুইনন ত্বকের সংস্পর্শে এল অনেক ক্ষেত্রেই ত্বকের অ্যালার্জি দেখা যায়।
অনেক সময় গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ত্বকের সংস্পর্শে এল ত্বকে অস্বস্তি হতে পারে। যাকে
ইরিটেট কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস বলা হয়। যেকোনো পিল বেশিমাত্রায় ব্যবহারে বা বার বার ব্যবহারে কিংবা সঠিকভাবে না লাগানোর ফলে ইরিটেট কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাই কোনো কসমেটিক্স ব্যবহার করার আগে নিজের ত্বককে ঠিক করে জেনে নেওয়া উচিত। এই কাজে সাহায্য করতে পারেন কোনো একজন দক্ষ ডার্মাটোলজিস্ট।
বেশিরভাগ বাজারজাত সানস্ক্রিন বা লোশন প্রায় অতিরিক্ত অ্যাসিড ব্যবহারে বানানো। এইজন্য সব সময় ডাক্তারকে দেখিয়ে মেডিকেটেড সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
অনেক সময় দেখা যায় নামী কোম্পানির সানস্ক্রিন ব্যবহার করেও স্ক্রিন আরও বেশি কালো হয়ে যায়।
কসমেটিক পিল সাধারণত বিভিন্ন কসমেটিক্স যেমন ফেস মাস্ক, ফেসিয়াল ক্রিম, নাইট ক্রিম সানস্ক্রিন-এ ব্যবহার হয়। কসমেটিক্স থেকে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি হলে তখন একটা ‘র্যাটেন ফেস্টিং’ করে নেওয়া হয়। দু’রকমভাব এটা করা যায়—ওপেন এবং ক্লোজ।
পরীক্ষার সময় কেমিক্যালটা নিয়ে সাধারণত পিঠে লাগানো হয়। তারপর মাইক্রোবোর্ড দিয়ে ৪৮ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘন্টা ঢেকে রাখা হয়। এরপর খুলে তার প্রতিক্রিয়াটা দেখা যায়।
ক্লোজ-এর ক্ষেত্রে যেটা করা হয় তা হল হাতের সামনের দিকে লাগানো হয় এবং ১২ ঘন্টার মতো রাখা হয়। দেখা হয় ফুলেছে কি না, লাল হয়েছে কি না অথবা ফোস্কা পড়েছে কি না। সেটা দেখেই বুঝে নিতে চেষ্টা করা হয় সিভিয়ার কতটা। যদি লাল হয় তবে বোঝা যায় ঠিক আছে, লাগানো যেতে পারে। কিন্তু যদি ফোস্কা পড়ে তবে নৈব নৈব চ—একদমই লাগানো উচিত নয়।
আমাদের দেশের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে খুব বেশি কসমেটিক্স ব্যবহার না করে ঘরোয়া নানান পদ্ধতিতে সৌন্দর্য বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। এতে স্কিনকে খুব জোরালো কোনো ক্ষতি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যায়।
কসমেটিক্স ব্যবহারের আর একটি অন্যতম শর্ত হল যা কিছু প্রসাধনী ব্যবহার করা হোক না কেন সেগুলো সবই রাতে শোবার আগে তুলে উচিত। বেবি অয়েল অথবা ঘরোয়া পদ্ধতিতে দুধের মধ্যে কটন ভিজিয়ে নিয়ে। সারা রাত লেগে থাকা প্রসাধনী বেশি ক্ষতি করে ত্বকের, চোখের এবং ঠোঁটের। তাই নিয়ম করে পরিষ্কার করা উচিত স্কিন।
তাহলে? কোনোকিছুই কি লাগানো যাবে না? না, ব্যাপারটা সেরকম কিছু নয়। কিছু তো সাবধানতা থাকবেই। তাহলেও একটু দেখে নেওয়া নিজের ত্বকে কী ধরনের কোন প্রসাধনী ঠিক। বাজারের চটকদার মোড়ক যতই সুন্দর হোক সেটা সবসময় নিজের ত্বকের সাথে নাও মিলতে পারে। কোনো অসুবিধা হলে প্যাচ টেস্ট করে দেখে নেওয়া যেতে পারে। কেনবার আগে প্রসাধন দ্রব্যের গায়ে লাগানো লেবেলগুলো লক্ষ্য করুন। তাহলে অনেকটাই জানা হয়ে যাবে সেই প্রসাধনী দ্রব্য সম্বন্ধে। কোনো অসুবিধা হলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন