×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

বাত রোগের প্রকার ভেদ

ডাঃ ডি. কর
2019-04-23 13:52:41

শীতের হাওয়া পড়তে না পড়তেই বাতের রোগীদের ব্যথা বেড়ে গেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠলেই গা-হাত-পা ভারি হয়ে থাকে, হাঁটুতে-কোমরে-পিঠে-আঙুলের আড়ষ্ট ভাব, রোদ ওঠার পরে স্বাভাবিক চলাফেরা। সব ঘরে বাতের একই ছবি। বাংলায় বাত বলতে যে কোনো ধরনের হাড়ের ব্যথাকে বোঝায়। কিন্তু আর্থ্রাইটিস বা বাত মানে অস্থি-সন্ধির প্রদাহ, ব্যথা ও তার চলন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। বাতের নানান প্রকার ভেদ আছে, যেমন অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, রিউম্যাটিক ফিভার, গাউট, স্পন্ডাইলোসিস, ক্যালকেনিয়াল স্পার ইত্যাদি। বাত ক্ষয়জনিত রোগ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় ও জয়েন্টের ক্ষয় শুরু হয়। ক্ষয় জীবনের ধর্ম, কাজেই বাতের ব্যথা-কম-বেশি থাকবেই। তবুও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় অনেকটাই ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস

অস্টিওআর্থ্রাইটিস সব বয়স্ক লোকেদের কম-বেশি থাকেই। সাধরণত হাঁটুতে হয়ে থাকে। মহিলাদের বেশি হয়। প্রথম হাঁটুর দুটো বড় হাড়ের মাঝখানে যে কার্টিলেজ থাকে তার ক্ষয় হয়। তখন বেশি হাঁটাহাঁটি করল, বনে ওঠার সময় ব্যথা হয়, আবার নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। ধীরে ধীরে কার্টিলেজের বেশি অংশ ক্ষয়ে গেলে দুটো হাড়ের মাঝখানের গ্যাপ কমে যায় ও হাড় দুটো কাছাকাছি চলে আসে। তখন হাড়ে-হাড়ে ঘসা খেয়ে হাড়ের মসৃণভাবে নষ্ট হয়ে যায় ও ছোটছোট ক্যালসিয়াম ডিপোজিশন শরু হয়। এদের বলা হয় অস্টিওফাইট। বেশি ক্ষয় হলে হাঁটু বেঁকে যায়। বেশিরভাগ সত্তর বছরের মহিলাদের হাঁটু বাঁকা থাকে। তখন ব্যথার তীব্রতা বাড়ে, হাঁটুতে কটকট শব্দ হয়, ভেতরে জ্বালা করে, হাঁটু ফুলে থাকে। হাঁটুকে চোট-আঘাত থাকলে অনেক কম বয়স থেকেই অস্টিওআর্থ্রাইটিস শুরু হতে পারে। যারা অত্যধিক হাঁটাহাঁটি করেন, দাঁড়িয়ে কাজ করেন, খেলাধুলো করেন বা ওজন বেশি থাকলে অস্টিওআর্থ্রাইটিস তাড়াতাড়ি শুরু হয়।

হাঁটু মুড়ে বা মাটিতে বসা যাবে না, সিঁড়ি ভাঙা যাবে না, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ বা বেশি হাঁটা যাবে না। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ও নী-ক্যাপ বা নী-ব্রেস ব্যবহার করতে হবে, সঙ্গে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খেয়ে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মনে রাখবেন যা ক্ষয়ে যাবে তা আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। কাজেই যত তাড়াতাড়ি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শুরু করবেন আপনার হাঁটু তত ভালো থাকবে।

রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস

এটি একটি অটোইমিউন ডিজিজ অর্থাৎ নিজের টিস্যু নিজেকেই আক্রমণ করে ও খেয়ে ফেলে। এখানে জয়েন্টের চারপাশে সাইনোভিয়াল মেমব্রেন ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ হয় ও হাড়ের ক্ষয় হয়। সাধারণত আঙুল, কবজি গোড়ালির জয়েন্ট আক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে ব্যথার সঙ্গে জয়েন্টের স্টিফনেস অনেক বেশি থাকে ও বিকৃতি ঘটে। সাধারণত দু’দিকের জয়েন্টই আক্রান্ত হয়। জয়েন্টগুলো লাল হয়ে ফুলে ওঠে, সকালে অনেকক্ষণ শক্ত হয়ে থাকে ও খুব তাড়াতাড়ি বেঁকে যায়। এটি একটি সিস্টেমিক ডিজিজ, সুতরাং রোগীকে ‘অ্যাজ এ সিস্টেমিক ডিজিজ, সুতরাং রোগীকে ‘অ্যাজ এ হোল’ চিকিৎসা করতে হয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় থেরাপিউটিক মেডিসিনের সঙ্গে অ্যান্টিমায়াজমেটিক মেডিসিন দিয়ে তবেই এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এটি একটি খারাপ ধরনের রোগ। এখানে খুব তাড়াতাড়ি জয়েন্টের ডিফরমিটি হয় অর্থাৎ হাত-পা, আঙুল বেঁকে যায়। রোগী খুব দ্রুত শয্যাশয়ী হয়ে যায়। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস পনেরো-ষোলো বছর বয়েসের বাচ্চাদেরও হতে পারে। তাকে জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস বলা হয়।

রিউম্যাটিক ফিভার

রিউম্যাটিক ফিভার মূলত বাচ্চাদের বেশি হয়, তবে বড়দেরও হতে পারে। জ্বর-সর্দি-কাশি, টনসিলাইটিস বা কোনো স্কিন ইনফেকশনের পর হঠাৎ করে কোনো একটি বা দুটি জয়েন্টে ব্যথা হয়। মূলত হাঁটু বা কনুই আক্রান্ত হয়। রোগের কারণ স্টেপ্টোকক্কাল ব্যাক্টেরিয়া। জ্বর, টন্সিলাইটিস বা স্কিন ইনফেকশন থেকে ব্যাক্টেরিয়া কোনো বড় জয়েন্টে বাসা বাঁধে। জয়েন্টটি ফুলে ওঠে, শক্ত হয়ে থাকে ও ব্যথা হয়। এখানে ‘এ.এস.ও টাইটার’বেশি থাকে। রিউম্যাটিক ফিভার কিছুদিন পরে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু ভয় অন্য জায়গায়। বাক্টেরিয়াগুলো গিয়ে শিশুদের হার্টে বাসা বাঁধে ও হার্টের ভালবগুলোকে নষ্ট করে দেয়। কিছুদিন পর বাচ্চা একটু খেলাধুলো করলেই হাঁপিয়ে যায় ও বুক ধড়ফড় করে। এখানে জয়েন্টের কোনো ক্ষতি হয় না, কিন্তু হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়। রিউম্যাটিক ফিভারে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করলে এ ধরনের সমস্যা হয় ন।

গাউট

গাউট মানে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। তরুণ অবস্থায় হঠাৎ করে পায়ের বুড়ো আঙুলের গোড়ায় প্রচন্ড ব্যথা হয়। লাল হয়ে ফুলে ওঠে, হাঁটুতে পারা যায় না। এক্ষেত্রে অল্প কিছুদিন হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খেলেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু পুরনো গাউটে শরীরের সমস্ত জয়েন্টের ব্যথা বেড়ে যায়। হাতের আঙুলগুলো ফুলে যায়, সকালে ওঠার পরে আড়ষ্ট হয়ে থাকে, হতে মুঠো করতে কষ্ট হয়। পুরাতন গাউটে অনেক সময় হাতে ও পায়ে শক্ত নডিউল তৈরি হয়। গাউট হলে টম্যাটো, পালং শাক, পুঁইশাক, বাঁধাকপি, দানা জাতীয় জিনিস, পাঁঠার মাংস, ডিমের সুকুম, বড় পাকা মাছ খাওয়া যাবে না। পুরাতন গাউটও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় সেরে যায়।

স্পন্ডইলোসিস

বাতের আর একটি অতি পরিচিত নাম স্পন্ডাইলোসিস। এটি প্রধানত শিরদাঁড়ার বাত। ঘাড় ও কোমরে বেশি হয়। কারণ ঘাড় ও কোমরের মুভমেন্ট সব থেকে বেশি। ঘাড়ের স্পন্ডাইলোসিসকে বলে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস ও কোমরের স্পন্ডাইলোসিসকে বলা হয় লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস। এক্ষেত্রে বয়ষ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিরদাঁড়ার দুটো হাড়ের মাঝখান থেকে যে নার্ভ বেরোয় তার ওপর চাপ পড়ে ও রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস : প্রথম দিকে মাঝেমধ্যে ঘাড়ে ফিক ব্যথা হয় আবার নিজেই ঠিক হয়ে যায়। পরের দিকে ফিক ব্যথা খুব ঘনঘন হতে থাকে। সামান্য ভারি জিনিস বা ব্যাগ বহন করলেই ঘাড়ে ব্যথা হয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ঘাড় শক্ত হয়ে থাকে ও ব্যথা হয়। কিছুক্ষণ পরে আবার ঠিক হয়ে যায়। এই ভাবেই শুরু হয় সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের প্রাথমিক লক্ষণ। নার্ভের ওপর হালকা চাপ পড়লে শুরু হয় মাথাঘোরা। এখানে রোগীর মাথা ঘুড়ে পড়ে যায় না, মনে হয় টাল খাচ্ছে। নার্ভের চাপ আরো বাড়লে ব্যথা হাত বরাবর নেমে আঙুল পর্যন্ত চলে আসে। হাতে চিনচিন ভাব বা অবশ ভাব থাকে। হাতের জোর কমে যায়। পরের দিকে হাত সরু হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মাথায়, হাতে বা কাঁধে কোনো ভারি জিনিস নেওয়া যাবে না। মাথা নীচু বা উঁচু করে কাজ করা যাবে না। কিছু ব্যায়াম ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগীরা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস :প্রাথমিক লক্ষণ হলে সামনে ঝুঁকে, বসে বা দাঁড়িয়ে অল্পক্ষণ কাজ করলেই কোমরে ব্যথা হয়, কোমর শক্ত হয়ে যায়। খানিকক্ষণ শুয়ে বিশ্রাম নেবার পর আরাম হয়। ধীরে ধীরে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ব্যথা বেশি থাকে, কোমর স্টিফ হয়ে থাকে, হাঁটতে কষ্ট হয়, কিছুক্ষণ পরে আস্তে আস্তে স্বাভাবকি হয়। পরের দিকে কোমরের ব্যথা যেকোনো একটি বা দুটি পা বরাবর নেমে আসে। কোমর থেকে ব্যথা প্রথমে থাই পর্যন্ত,  পরে হাঁটুর নীচে, আরো পরে পায়ের আঙুল পর্যন্ত নেমে আসে। সঙ্গে থাকে অবশ ভাব, পা কাঁপা ও পায়ের জোর কমে যাওয়া। এই অবস্থাকে বলা সায়টিকা। সায়াটিকা নার্ভের ওপর চাপ পড়লে এই লক্ষণগুলো পাওয়া যায়। ভারি জিনিস তুলবেন না, সামনে ঝুঁকে কাজ করবেন না, নরম বিছানায় শোবেন না, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করবেন না, অনেকক্ষণ হাঁটবেন না, বেশি সিঁড়ি ওঠানামা করবেন না। হোমিওপ্যাথিক ওষুধের সঙ্গে প্রয়োজনে কোমরে বেল্ট পড়তে হবে।

ক্যালকেনিয়াল স্পারে

আজকাল দিনে ক্যালকেনিয়াল স্পার বা গোড়ালির হাড় বাড়ার সামস্যা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মাটিতে পা দিতে পারে না। গোড়ালিতে মারাত্মক ব্যথা হয়, মনে হয় যেন সুঁচ ফোটাচ্ছে। খানিকক্ষণ বসে উঠে দাঁড়ালেও ব্যথা হয়। এক্স-রে করলে দেখা যায় হাঁড় বেড়ে আছে। এখানে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিয়ে হাড়টিকে সামান্য গলিয়ে দিলেই গোড়ালির ব্যথা কমে যায়। নুনের থুপি করে সেঁক দিতে হবে, নরম জুতো পরতে হবে ও কিছু ব্যায়াম করতে হবে। এখানে কোনোরকম ক্যালসিয়াম খাওয়া যাবে না।

যে কোনো বাতের রোগ মানেই ক্ষয়। প্রথম দিকে এই ক্ষয় হল মলিকিউলার লেভেলে, যা এক্স-রে’তে ধরা পড়ে না। পরের দিকে কার্টিলেজ ও হাড়ের ক্ষয় হয়, ক্যালসিয়াম ডিপোজিশন হয় অর্থাৎ রোগ অনেকটাই বেড়ে যায়। আরো পরে জয়েন্ট বেঁকে যায়। বাতের রোগ প্রথম থেকেই অ্যান্টিসিফিলিটিক মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয় যাতে ক্ষয়ের গতি কম করা যায়। পরে অ্যান্টিসাইকোটিক মেডিসিন দিতে হয়, ফলে ক্ষয়ের গতি কমার সঙ্গে ছোট ছোট হাড়ের ডিপোজিশনও কম হয়। ওষুধের সঙ্গে কিছু ব্যায়াম অবশ্যই করতে হবে, যাতে জয়েন্টের চারপাশে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়।


সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন