মাড়ির অসুখ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র
ডাঃ অভিজিৎ চক্রবর্তী
2019-04-28 12:56:43
মাড়ির অসুখ বলতে সাধারণভাবে ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস বা অন্যান্য জীবাণু ঘটিত সমস্যাকে বোঝায়।
মাড়ির অসুখ মূলত প্রদাহজনিত অসুস্থতা। এখানে মাড়ি বলতে দাঁতের চারপাশে নরম মাড়ি সহ দাঁতকে চোয়ালের সঙ্গে ধরে রাখার যে বিশেষ হাড় আছে সেই সমগ্র অঞ্চলকে বোঝায়।
মাড়ির অসুখ সাধারণভাবে বিশেষ একটা বয়সের পর আমরা বেশি দেখতে পাই। যেমন পুরুষ ও মহিলা উভয়ক্ষেত্রেই এই সমস্যা ত্রিশ বছরের পর থেকে লক্ষ্য করা যায়। এই অসুস্থতা ধীরে ধীরে মাড়িকে যেমন আক্রমণ করে, তেমনি দাঁতের চারপাশের হাড়কে নষ্ট করে দেয়। সেই কারণে দাঁত নড়ে ও পড়ে যেতে পারে। এই ধরনের অসুস্থতার ক্ষেত্রে ব্যথা না হওয়ার কারণে প্রত্যেকের মধ্যেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার একটা অনীহা দেখা যায়।
একজন বিশেষজ্ঞ হিসাবে বলতে দ্বিধা নেই, এ দেশের শতকরা পঁচানব্বই ভাগ মানুষের মধ্যে মাড়ির অসুস্থতা থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে মাড়ির যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে তেমন সচেতনতা নেই।
মাড়ির অসুখ একজন ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে আরও বেশি জটিল আকার ধারণ করে। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, গর্ভবতী মায়েদের সন্তানের ওজন কম হওয়া বা আগেই শিশুর জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এই ধরনের সমস্যা থাকলে। তাই সুনির্দিষ্টভাবে চিকিৎসার যেমন প্রয়োজন, তেমনি একজন দন্ত বিশেষজ্ঞ ছাড়াও অন্যান্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। কারণ মাড়ির অসুন্থতা শুধু মাড়িতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, শরীরে নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে।
মাড়ির অসুখে অনেক ক্ষেত্রেই কিছু সাধারণ সমস্যা গুরুতর চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন মুখে দুর্গন্ধ, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, মাড়ি স্ফীত হওয়া ইত্যাদি। ইদানিংকালে মাড়িকে সুন্দর হাসির একটা অঙ্গ হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্যে মাড়ির চিকিৎসা করা সম্ভব। যার মধ্যে লেজার চিকিৎসা উল্লেখযোগ্য। লেজারের মাধ্যমে চিকিৎসা অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে কার উচিত।
মাড়ির ওপর অনেক সময় কালো ছোপ দেখতে পাওয়া যায়। যা মাড়িকে সৌন্দর্যের পরিপন্থি করে তোলা বা সৌন্দর্যে ব্যাঘাত ঘটায়।
আধুনিক চিকিৎসায় মাড়ির রঙের পরিবর্তন করাও সম্ভব, যা একজন মানুষকে কর্মের জগতে অনেক বেশি সাবলীল থাকতে সাহায্য করে। শিশুদের ক্ষেত্রেও মাড়ির নানাবিধ অসুস্থতা দেখা যায়। যার মধ্যে ভাইরাস জনিত অসুবিধা হল একটি। মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিরিয়ড শুরু হলে হরমোনের যে পরিবর্তন হয়, কিছু ক্ষেত্রে তার কারণেও বাড়ি মাড়ি স্ফীত হওয়া বা নানাবিধ সমস্যা দেখা যায়। এগুলিও চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে ফেলা সম্ভব।
বয়সকালে মাড়ির কিছু সমস্যা আমরা দেখতে পাই যা অনেকসময় নানাবিধ ওষুধ খাওয়ার কারণেও হতে পারে। এক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত ওষুধের পরিবর্তন ঘটালে এই অসুবিধা দূর করা সম্ভবভ
একটা প্রচলিত শব্দ আছে ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না বোঝা’। তেমনি দাঁতের সাথে লেগে থাকা মাড়িকে সুস্থ রাখার প্রবণতা না থাকলে বহু ধরনের অসুস্থতা ঘটতে পারে।
ইদানীংকালে মাড়ি নিয়ে নানাবিধ গবেষণা সারা বিশ্ব জুড়ে চলছে। আমাদের মতো দেশে মাড়ির চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনচেতনা যেমন প্রয়োজন, তেমনি একজন রোগীর ক্ষেত্রে প্রয়োজন মাড়ির চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বোঝা। এবং মাড়িকে কীভাবে পরিষ্কার ও সুন্দর রাখা যায় তা সঠিকভাবে জানা। যেমন প্রত্যেক মানুষের উচিত দিনে দু’বার করে সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করা যা ওপর-নীচে ব্রাশ করে করা সম্ভব। দুটো দাঁতের মাঝখানটা সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখার যে সমস্ত পদ্ধতি আছে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে তা সঠিকভাবে জেনে নেওয়াটাও প্রয়োজন। আর নরম ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে এবং ব্রাশের সাহায্যে জিভকেও পরিষ্কার করে নিতে হবে।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন