×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

আকাশে ঘুড়ি উড়বে, আর শিশুরা দেখবে না

ডাঃ অমরনাথ মল্লিক
2019-05-07 11:52:13

সেদিন আন্দুল রাজবাড়ির কাছে ‘কিশলয়’ নামে শিশুদের একটি বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। খুবই প্রাণবন্ত, উপভোগ্য এক অনুষ্ঠানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের শিক্ষিকা ও বাবা-মায়েদের সঙ্গে ‘শিশুদের সমস্যা’ নিয়ে আলোচনা করছিলাম। ওখানে সব দেখেশুনে আমার উপলব্ধি হল এখন শিক্ষিকা এবং বাবা-মায়েরা ছেলে-মেয়েদের দুরন্তপনা নিয়ে খুবই খুবই চিন্তা করেন।

অবশ্য চিন্তাভাবনা যে খুব অমূলক তা কখনোই নয়। প্রত্যেকেরই একটি বা দুটি সন্তান। সে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া শিখবে, স্কুলে দুষ্টুমি করবে না, মিসদের কথা শুনবে, এসব সব বাবা-মা চেয়ে থাকেন। তাদের এই প্রত্যাশা থাকতেই পারে। কিন্তু বুঝতে হবে শৈশব একটি শিশুর জীবনে একবারই আসে এবং শৈশবের কিছু স্বাভাবিক বৈশিষ্ট থাকে, তাকে অস্বীকার করা যায় না।

শিশু জন্ম সূত্রে কিছু গুণাগুণ নিয়ে জন্মায়, যা সে বাবা-মা, ঠাকুরদা-ঠাকুমাদের কাছ থেকে পেয়ে থাকে—গায়ের রঙ, চুল, চোখের মণি বা আচার-আচরণের বৈশিষ্ট। অবশ্যই শিশু তার পরিবেশ থেকে, অর্থাৎ যে পরিবেশে বড় হচ্ছে সেখান থেকেও অনেক কিছু শিখে থাকে। যা তার শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে সহায়থা করে থাকে।

ভাবুন তো, একটা ছোট ছেলে সারাক্ষণ চুপচুপ বসে থাকে, শুধু বই পড়ে আর স্কুলে যায়, ছুটোছুটি করে না, দুষ্টুমি করে না, বল নিয়ে খেলা করে না---তাকে কি ঠিক সুস্থ শিশু বলা যায়? সেটা কি খুব ভালো? শৈশবই তো দুরন্তপনা করার সময়। শিশু দুরন্ত হবে না? বয়ষ্ক মানুষ হুটোপটি করবে, ঘুড়ি ওড়াবে, প্রজাপ্রতি ধরবে? দুঃখের কথা আজকের দিনে অনেক বাবা-মা একথা বুঝতে চান না। তারা চান ছেলেমেয়ে শান্তশিষ্ট হয়ে অভিভাবকের সব কথা শুনে চলবে। স্কুলে কোনো দুষ্টুমি করবে না। তবে যে সব ছেলেমেয় খুবই শান্ত, বাধ্য তাদের কিন্তু পরে সমস্যা হতেও পারে! সুতরাং ছেলেমেয়ে হুটোপটি, দুষ্টিমি করলেই অস্বাভাবিক মনে করা কখনোই ঠিক নয়। তবে কিছু ছেলেমেয়ে থাকে যারা মাত্রাতিরিক্ত চঞ্চল, কোনো বিষয়ে কখনোই মনোসংযোগ করতে পারে না, সারাক্ষণ ছটফট করছে, তাদের আচার-আচরণ দেখলেই বোঝা যায়। তাদের মধ্যে অনেকেই মাত্রাতিরিক্ত চঞ্চলতা ও অত্যধিক অমনোযোগিতার জন্যে লেখাপড়া বা অন্যান্য-আচরণ সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে। তাদেরকে অ্যাটেনশন ডেফিসিট, হাইপার অ্যাক্টিভ ডিসঅর্ডার বা এ.ডি.এইচ.ডি আক্রান্ত ছেলেমেয়ে বলে মনে করা হয়। কিন্তু তাই বলে কোনো ছেলে বা মেয়ে স্কুলে ‍দুষ্টুমি করেলে, মিস যখন পড়াচ্ছেন তখন জানলা দিয়ে বাইরে আকাশে ঘুড়ি দেখলে বা গাছে পাখির ডাক শুনলেই ভেবে তাকে এ.ডি.এইচ.ডি আক্রান্ত শিশু মনে করা ঠিক নয়।

প্রকৃতির নিয়মে যেমন একই গাছের কোনো ফুল বড় হয় আবার কোনো ফুল ছোট হয় তেমনি সব ছেলেমেয়ের একই বয়সে আচার-আচরণ একই রকম হতে পারে না। এ বিষয়টা বাবা-মা, অভিভাবক ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও বুঝতে হবে। ‘রেডি মেড’ কিছু আশা করা ঠিক নয়। কোনো ছেলে খেলতে ভালোবাসে, কোনো মেয়ে গান শুনতে চায় আবার কোনো মেয়ের নাচের প্রতি ঝোঁক থাকতে পারে। এসব জেনে ও বুঝে প্রশিক্ষণ দিলে খুবই ভালো হয়। সব ছেলেমেয়েদেরই লেখাপড়া ভালো লাগবে, এমন ভাবাটা কি ঠিক? তাছাড়া কোনো ছেলে কেন পড়তে চায় না, একটি মেয়ে কেন লিখতে চায় না তা অনুসন্ধান করা দরকার। ছেলেমেয়েদের মনে আগ্রহ তৈরি করতে হবে। শাসন করে খুব ভালো ফল পাওয়া যায় না। দূরন্ত শিশুকে সামলাবার জন্য শাসন বা নিয়েমের বেড়াজালে বাঁধতে হতেই পারে কিন্তু তা যেন নির্যাতন না হয়। ‘শাসক করা যারা তারেই সাজে সোহাগ করে যে’—এই কথাটির মানে বুঝতে হবে। অনেক সময় মনোবিদ বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরও কোনো শিশুর দুরন্তপনা দেখে কোনটা স্বাভাবিক আর কোনটা অস্বাভাবিক বুঝতে অসুবিধে হয়। শিশুর অস্বাভাবিক দুরন্তপনা ঠিকই নজরে আসে এবং সেক্ষেত্রে উপযুক্ত পরামর্শ ও প্রশিক্ষন প্রয়োজন হয়।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন