×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

হাসপাতালে প্রসব সব থেকে নিরাপদ

ডাঃ অবিনাশ চন্দ্র রায়
2019-05-07 12:03:05

শুরুতেই এটা বলা ভালো যে প্রতিটি প্রসূতির প্রসব হোক হাসপাতালে। এটা দেখা গেছে যে হাসপাতালে প্রসব হলে মা ও শিশুর মৃত্যু বহুলাংশে প্রতিরোধ করা যায়। আমাদের দেশের সরকারের চেষ্টাও তাই। হাসপাতালে রয়েছেন দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও কর্মী, জীবনদায়ী ওষুধ ও প্রয়োজনে রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা। কোনো বিপদ হলে সহজেই মোকাবেল করা সম্ভব। আমাদের দেশে বহু পরিবার বাড়িতে প্রসব করাতে গিয়ে মা অথবা শিশুর মৃত্যু ডেকে আনেন। তাই প্রসব যন্ত্রণা শুরুর আগেই ঠিক করে রাখতে হবে কোন হাসপাতালে ডেলিভারি হবে। গর্ভাবস্থায় পরিচর্যা কালে যখন জানা যায় যে এই প্রসূতির বেশি বিপদ হতে পারে প্রসবকালে, তখন তাকে সেই হাসপাতালে ডেলিভারি করাতে হবে যেখানে ভালো ও উন্নত ব্যবস্থা আছে জটিল সমস্যা মোকাবিলার। এবং প্রয়োজন হলেই সিজার করতে হতে পারে এমন সুব্যবস্থা। আর যেটা বেশি বিপদের গর্ভ নয়, তাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসব করানো যাবে।

স্বাভাবিক প্রসব বা নরমাল ডেলিভারিতে চিকিৎসক বা ডাক্তারবাবুর খুব বেশি কিছু করবার থাকে না। প্রসব যন্ত্রণা শুরু থেকে প্রায় আট-দশ ঘন্টার মধ্যে শিশু ভূমিষ্ট হয়। ডাক্তারবাবু শুধু মা ও মায়ের প্রসবের অগ্রগতি ঠিকঠাক ভাবে হচ্ছে কি না তাই খেয়াল রাখেন। ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্বে যদি শিশু যোনির মুখে আটকে থাকে তখন অবশ্য যোনির মুখ কিছুটা কেটে অথবা ফরসেপ দিয়ে মায়ের দ্রুত প্রসব করার ব্যবস্থা করা হয়। এ সব কিছুই করা হয় সম্পূর্ণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ভাবে।

কোনো প্রসূতি যখন গর্ভযন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে আসেন প্রথমেই তার বহিঃপ্রজনন অঙ্গ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় যাতে প্রসবের সময় কোনো সংক্রমণ না হয় মায়ের ও শিশুর।

পেট পরিষ্কার করবার জন্য ডুস দেওয়া হয়। মা’কে হাঁটাচলা করতে বলা হয় যদি না জলের থলি ভেঙে যায়।

প্রসবযন্ত্রণার শুরুতে হালকা খাবার দেওয়া হয়। সুপ ও জল খেতে পারেন, তবে ভারি খাবার নয়। প্রসব যন্ত্রণা বাড়লে শিরা দিয়ে স্যালাইন বা আই.ভি. ফ্লুইড দেওয়া হয়।

প্রসূতি নিজে প্রস্রাব করুক এটা হলে ভালো। প্রসব যন্ত্রণার শেষ দিকে প্রসূতি যখন নিজে প্রস্রাব করতে পারে না তখন বাধ্য হয়ে ক্যাথেটার দিয়ে প্রস্রাব থলি খালি করা হয়।

ব্যথার ওষুধ: গর্ভযন্ত্রকালীন ব্যথা কমার ওষুধ দেওয়া হয় যাতে মায়ের কষ্ট অনেকটাই লঘব হয়।

সর্বদা মায়ের স্বাস্থ্য, প্রসবের অগ্রগতি ও গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর লক্ষ্য রাখা হয় যাতে উভয়ের মধ্যে কারও স্বাস্থ্যহানি না হয়। যদি দেখা যায় যে নরমাল বা স্বাভাবিক প্রসব করতে গেলে মা অথবা শিশুর বেশি বিপদের সম্ভাবনা আছে তখন সিজার করে প্রসব করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রসবের পরপরই শিশুর নাক, মুখ, গলা সাকসন ক্যানুলা দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। কর্ড কেটে বাচ্চাটাকে শুকনো গরম টাওয়েল দিয়ে জড়িয়ে নার্সের হাতে দেওয়া হয়।

বাচ্চা প্রসবের পরবর্তী অবস্থাকে থার্ড স্টেজ অফ লেবার বলে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিপদের সময়। এ সময়ে এক মিনিটের মধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে জরায়ু থেকে, যাকে বলে পি.পি.এইচ। এর জন্য হতে পারে মায়ের মৃত্যু। তার মানে যে মায়ের গর্ভ অবস্থায় শুরু থেকে শিশুপ্রসব পর্যন্ত কোনো সমস্যাই ছিল না, প্রসবের পর এক-দু’মিনিটের মধ্যে হঠাৎ জরায়ু থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য সেই মা-ই মূর্চ্ছা যেতে পারেন। হতে পারে মৃত্যু। সঙ্গে সঙ্গে এমার্জেন্সি পরিসেবা দরকার। এই জন্যই উচিত হাসপাতালে প্রসব করানো। বাড়িতে প্রসব করানো কিছুতেই নয়।

প্রসবের তৃতীয় পর্যায়ে যখন গর্ভের ফুল পুরোপুরি জরায়ু থেকে নিষ্কাশিত হয়, যোনির মুখে কোনো আঘাতের চিহ্ন থাকে না এবং জরায়ু থেকে রক্তক্ষরণের পরিমাণ তেমন কিছু থাকে না তখন মাকে প্রসবাগার থেকে বিছানায় স্থানস্তরিত করা হয়।

নির্বিঘ্নে প্রসব শেষে বিছানায় আসার পরেও একঘন্টা সময় আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একে ফোর্থ স্টেজ অপ লেবার বলে। এই সময়ে মাকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তার নাড়ির গতি, রক্তচাপ, জরায়ুর সংকোচন ও যোনি দিয়ে বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছে কি না তার খেয়াল রাখা হয়। এই সময়ে অতি রক্তক্ষরণে সব কিছু ওলটপালট হয়ে যেত পারে। হতে পারে মায়ের মৃত্যুও। প্রসবকালে মায়ের মৃত্যু সত্যিই বড় বেদনার।

মহারানী মমতাজ তার চোদ্দতম সন্তানের জন্মের অব্যবহিত পরে মারা যান, জরায়ু থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য। কারণ চোদ্দতম সন্তানের গর্ভ মানেই বেশি বিপদের গর্ভ। রাজকীয় চিকিৎসাও মৃত্যুর হাত থেকে মহারানী মমতাজকে রক্ষা করতে পারেনি। শোকসন্তপ্ত সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয়তমা পত্নীয় মৃত্যুতে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য মমতাজ মহল স্পাপন করেন আগ্রায়। এ যেন এক শোকের স্মুতিসৌধ।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন