×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

গলার স্বরের পরিবর্তন পিছনে থাকতে পারে ক্যানসারও

ডাঃ দেবাশীষ মুখার্জি (ই.এন.টি. বিশেষজ্ঞ, বেলভিউ নার্সিংহোম)
2019-05-07 12:22:27

চোখে চোখে কথা বলে যদি গোটা জীবনটাই কাটিয়ে দেওয়া যেত তাহলে তো আর কথারই সৃষ্টি হত না। ‘কেন কিছু কথা বলো না’ বলে অনুযোগ করাই কি সম্ভব হত? একমাত্র বোবা হলেই কথা না বলে থাকা সম্ভব। কথা না বলতে পারলে আমরা হাঁপিয়ে উঠি। তাই কথা তো বলতেই হবে আর কথা বলার জন্য চাই স্বর। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে গলার স্বর পরিবর্তন এখন এতটাই স্বাভাবিক ঘটনার পর্যবসিত হয়েছে যে অনেক সময় আমরা বিষয়টাকে ততটা গুরুত্ব দিই না। আর ঠিক এই কারণেই পরবর্তীকালে অনেক সময় গলার স্বর ভঙ্গের কারণ হিসেবে অনেক বড় রোগ এসে ভিড় করে জীবনে।

গলার স্বর পরিবর্তন সম্বন্ধে বলার আগে গলা থেকে কীভাবে স্বর বেরোয় সে সম্বন্ধে জানা দরকার।

আমাদের ফুসফুসে যে বাতাস থাকে, সেই বাতাসটা যখন দুটো ভোকাল কর্ডের ফাঁকের মধ্যে দিয়ে বেরোয় তখন ভোকাল কর্ডের ফাঁকের মধ্যে দিয়ে বেরোয় তখন ভোকাল কর্ডে একটা নেগেটিভ এয়ার প্রেসার হয়। সেই নেগেটিভ এয়ার প্রেসার হলে ভোকাল কর্ডে একটা কম্পন সৃষ্টি হয় এবং সেই কম্পনের ফলে শব্দ বেরোয়, যা তালু, জিভ, ঠোঁটের সাহায্যে কথা সৃষ্টি করে। এভাবেই আমরা কথা বলি। 

কথা বলার স্টাইল বা ভঙ্গী প্রত্যেকটি মানুষের এক একরকম। অনেক সময় কথা বলার ভুল পদ্ধতিগত কারণে আমাদের গলা ভেঙে যায়। কথা বলার সময় ভুল পেশির অতিরিক্ত ব্যবহার গলার স্বর সম্পূর্ণ পাল্টে দিতে পারে।

স্বরভঙ্গ নানা কারণে হতে পারে

ভোকাল কর্ডের ওপর অত্যধিক চাপ পড়ে স্বরভঙ্গ হয়ে থাকে। ভোকাল কর্ড আসলে দু’টো পেশি। মানুষের গায়ের জোরের যেমন তারতম্য আছে, ভোকাল কর্ডের ক্ষমতারও তেমনি ব্যক্তিবিশেষ তারতম্য হয়। নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে অত্যধিক চিৎকার করে কথা বললে ভোকাল কর্ডটি ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং গলার স্বরের পরিবর্তন হয়। ফিল্ম আর্টিস্ট, থিয়েটার বা যাত্রা করতে গেলে গলার সমস্যা হয়। সিনেমার অভিনয়ে জোরে চিৎকার করে কথা বলার দরকার হয় না। অপরপক্ষে থিয়েটারের অভিনেতাদের সিনেমা করতে গিয়ে গলার কোনো অসুবিধে হয় না। উঁচু ক্লাসে পড়ানোর সময় শিক্ষকদের চিৎকার করে পড়ালেও সমস্যা হয়। দীর্ঘদিন স্বরের অপব্যবহারের ফলে ভোকাল কর্ড দুটো মোটা হয়ে যায় এবং কথা বলার সময় ভোকাল কর্ড দুটো জোড়া লাগে না, ফাঁক থাকে, ফলে গলার স্বর ভেঙে যায়।

চিকিৎসা

এক্ষেত্রে কথা না বলে স্বরযন্ত্রকে বিশ্রাম দিতে উপযুক্ত ক্ষেত্রে ভয়েস থেরাপি করতে হবে।

অ্যাসিড ল্যারিনজাইটিস

রাত্রে খাবার পর খাদ্যনালী থেকে অ্যাসিড পরের দিকে উঠে এসে স্বরযন্ত্রের কাছে জমা হয়। এর ফলে দুটো ভোকাল কর্ডের নীচের অংশ মোটা হয়ে যায় এবং গলার স্বরের পরিবর্তন হয়।

চিকিৎসা: ওষুধপত্র খেতে হবে। ধূমপান, মদ্যপান পরিহার করতে হবে। বেশি তেল, ঘি, মশলাযুক্ত খাবার বর্জনীয়।

ভোকাল নডিউল

একে সিঙ্গারস নডিউলও বলা হয়। অভিনেতা, রাজনৈতিক নেতা, বাস কনডাক্টর, শিক্ষক, হকারদের মধ্যে ভোকাল নডিউল হবার প্রবণতা দেখা যায়। এক্ষেত্রে ভোকাল কর্ডের দু’দিকেই মুসুরডালের মতো দানা হয়।

চিকিৎসা: কথা না বলে গলার বিশ্রাম, নিয়মিত ভাপ নেওয়া দরকার। উপরোক্ত ব্যবস্থায় কাজ না হলে মাইক্রোসার্জারি করতে হয়।

অ্যাকিউট ল্যারিঞ্জাইটিস

সাধারণত গলার সংক্রমণ হলে অনেক সময় ভোকাল কর্ডও আক্রান্ত হয়। এই সংক্রমণ ভাইরাল বা জীবাণুজনিত। জ্বর, গলাব্যথা, সর্দিকাশির সঙ্গে গলাও বসে যায়। উপযুক্ত চিকিৎসা গলার বিশ্রাম দরকার।

ক্রনিক ল্যারিঞ্জাইটিস

অ্যাকিউট ল্যারিঞ্জাইটিস ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে ক্রনিক ল্যারিঞ্জাইটিসে পরিণত হয়। যারা কলকারখানায় কাজ করেন, অত্যধিক ধূমপান করেন এবং অত্যধিক পরিবেশ দূষণের বলি হন তাদের এই রোগ বেশি দেখা যায়।

চিকিৎসা: গলার বিশ্রাম, ভয়েস থেরাপি, ধূমপান বর্জন, দূষণমুক্ত পরিবেশে থাকার চেষ্টার মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

ভোকাল কর্ডে ছত্রাক সংক্রমণ

যারা দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড জাতীয় ইনহেলার ব্যবহার করেন, তাদের ভোকাল কর্ডে ছত্রাকজনিত সংক্রমণ হয় এবং গলা বসে যায়।

চিকিৎসা: কিছুদিনের জন্য ইনহেলার বন্ধ রাখা, ইনহেলার ব্যবহারের পর গার্গল করা, নিয়মিত গলা ধুয়ে পরিষ্কার করা দরকার।

টিবি ল্যারিঞ্জাইটিস

ফুসফুস টিউবারকুলোসিসে আক্রান্ত হলে ভোকাল কর্ডেও টিবির সংক্রমণ হতে পারে এবং গলার স্বর বসে যায়।

চিকিৎসা: ফুসফুসের টিবির যথাযথ চিকিৎসা করলে গলার স্বর ঠিক হয়ে যায়।

ভোকাল কর্ডের পলিপ

যে কোনো একদিকের ভেকাল কর্ডে পলিপ হলে গলার আওয়াজ বসে যায়। পলিপ অনেকটা আঙুরের মতো দেখতে হয়।

চিকিৎসা: মাইক্রোসার্জারি।

ভোকা কর্ডের ক্যানসার

ভোকাল কর্ডের একদিকে বা দু’টো ভোকাল কর্ডের সংযোগস্থলে ফুলকপির ফুলের মতো টিউমার হয়।

চিকিৎসা: মাইক্রোসার্জারি ও বায়োপসি। পরে দরকার মতো শল্যচিকিৎসা ও রেডিয়েশন ।

ভোকাল কর্ডের সাধারণ টিউমার

ভোকাল কর্ডে প্যাপিলোমা বা ফাইব্রোমা জাতীয় সাধারণত টিউমার হলেও গলার স্বর বসে যায়।

চিকিৎসাঃ মাইক্রোসার্জারি।

হাইপো থাইরয়েড

কোনো রোগীর হাইপো থাইরয়েড হলে স্বর বসে যেতে পারে। এক্ষেত্রে রক্তে টি.এস.এইচ-এর পরিমাণ বেড়ে যায়।

চিকিৎসা: ওষুধের সাহায্য চিকিৎসা করা হয়।

ভোকাল কর্ডের পক্ষাঘাত

কোনো কারণে ভোকাল কর্ডের পক্ষাঘাত হলেও গলার স্বর বসে যায়। এর পিছনে প্রধানত ফুসফুসের বা থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যানসার দায়ী থাকে।

চিকিৎসা: ফুসফুসের বা থাইরয়েড ক্যানমারের উপযুক্ত চিকিৎসা করতে হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

রোগীর সমস্যা অনুযায়ী নিম্নলিলিখত পরীক্ষাগুলোর প্রয়োজনীয়তা ঠিক করতে হবে।

  • ফাইবার অপটিক ল্যারিঙ্গোস্কোপি।
  • বুকের এক্স-রে বা সি.টি.স্ক্যান।
  • গলার সি.টি.স্ক্যান।
  • রক্ত এবং থাইরয়েড পরীক্ষা

তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ল্যারিঙ্গিয়াল ফ্রেমওয়ার্ক, ফোনো সার্জারি। আধুনিক বিশ্বে বিশেষত ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামীদের মধ্যে এই সার্জারি বহুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এর সাহায্য প্রয়োজন অনুসারে গলার স্বর ও স্পীচ এমনকী কথা বলার ধরন পর্যন্ত পরিবর্তন করা যায়।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন