×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

থাইরয়েডের ওষুধ কি সারাজীবন খেতে হবে

ডাঃ শুভষ্কর চৌধুরী
2019-05-09 13:51:56

দেখা গেছে, মহিলারা পুরুষদের তুলনায় থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখে বেশি ভোগেন। মনে করা হয় বিশেষ কিছু স্ত্রী হরমোনের প্রভাবেই মহিলাদের থাইরয়েড গ্রন্থির বেশি সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে এ ব্যাপারে সঠিক কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য মেলেনি।

মহিলাদের শরীরে থাইরয়েড হরমোনের ভূমিকা

থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন যৌন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর পরিণতিতে যেমন সাহায্য করে তেমনই মহিলাদের জরায়ুর গঠন সম্পূর্ণ করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। যদি কোনো কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি স্বাভাবিক না থাকে তাহলে তা স্বাভাবিকভাবে হরমোনও নিঃসরণ করবে না ফলে হয়ঃসন্ধির স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তনও ঠিকঠাক হবে না।

এছাড়া শিশু কন্যার দৈহিক বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রিত হয় থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের মাধ্যমে। সঠিকভঅবে এই হরমোনগুলো ক্ষরিত হলে শিশু কন্যার বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকে। অর্থাৎ গড়ে বছরে চার থেকে ছয় সেন্টিমিটার বৃদ্ধি ঘটে। থাইরয়েড হরমোনগুলোর প্রভাবে, অন্যান্য কিছু হরমোনের সহায়তার বালিকাদের শরীরে দু’তিন বছরে প্রায় পনেরো থেকে কুড়ি সেমি বৃদ্ধি ঘটে। থাইরয়েড হরমোন ঠিকভাবে নিঃসৃত না হলে কিন্তু দৈহিক বৃদ্ধি নিদারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড গ্রন্থির ভূমিকা

গর্ভাবস্থায় শিশুর বিকাশে বিশেষ করে মস্তিষ্কের বিকাশে মায়ের থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভ্রুণ সৃষ্টির প্রথম কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত মায়ের থাইরয়েড হরমোনগুলোই শিশুর শরীরে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম চালায়। এজন্য এই সময় মায়ের শরীরে অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন সংশ্লেষিত হয়। ফলে এই সময় মায়ের শরীরে আয়োডিনের চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থিনিঃসৃত হরমোন স্তনের দুধ নিঃসরণেও সাহায্য করে। তাই মায়ের শরীরে এই সময় আয়োডিনের চাহিদা থাকে দ্বিগুণ।

থাইরয়েড হরমোন অধিক ও স্বল্প ক্ষরণজনিত সমস্যা

গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে যদি থাইরয়েড গ্রন্থি সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে বিপদের সম্ভাবনা থাকে। স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণের জন্য রক্তে স্বাভাবিক মাত্রায়ে থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন থাকা প্রয়োজন। রক্তে থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের মাত্রা কম বা বেশি হলেই ক্ষতি।

থাইরয়েড গ্রন্থি ঠিকমতো কাজ না করলে মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসবের সময় নানারকম জটিলতা দেখা দেয়। রক্তে থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের মাত্রা কম বা বেশি যাই হোক না কেন তার ফলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও গর্ভের প্রথম দিকেই বাচ্চা নষ্ট হওয়া অর্থাৎ মিসক্যারেজের সম্ভাবনাও থাকে। আবার অনেক সময় দেখা যায় গর্ভাবস্থায় হয়তো কোনো গন্ডগোল হল না, কিন্তু মা মৃত বাচ্চা প্রসব করলেন। তাই গর্ভবতী মায়েদের রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা গর্ভাবস্থায় অন্তত বার তিনেক পরীক্ষা করে দেখা স্বাভাবিক করার জন্য গর্ভবতী মাকে সঠিক খাদ্য ও চিকিৎসা দিতে হবে।

মহিলাদের থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন রোগ

  • গয়টার

গয়টা বা গলগন্ড রোগটি মহিলাদেরই বেশি হয়। আয়োডিনের অভাব ছাড়াও গয়টার হবার যে মূল কারণ অর্থাৎ অটো ইমিউন থাইরয়েড ডিসঅর্ডার পুরুষদের থেকে মহিলাদেরই বেশি হয়। এর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনও পর্যন্ত জানা না গেলেও মনে করা হয় মহিলাদের দেহে নিঃসৃত কিছু প্রজনন হরমোনই এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

  • হাইপোথাইরয়েডিজম

পুরুষ ও মহিলা উভয়ই মোটামুটিভাবে একই কারণে হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত হন। এর কারণে মুখ ফোলে, মাথা ও ভ্রূণ চুল পড়ে যায়, গলার স্বর ভেঙে গিয়ে কর্কশ হয়ে যায়। এছাড়া আরও দু’একটি কারণ মহিলাদের মধ্যে লক্ষ করা যায়। হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণে মহিলাদের রজঃচক্রের গন্ডগোল দেখা যায়। সাধারণভাবে দেখা যায় কোনো কোনো মহিলাদের রজঃস্রাবের সময় রক্তস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে বেশি। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে উল্টোটাও হয়, রক্তের পরিমাণ কম থাকে।  এছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের অভাবে মহিলাদের জরায়ুর বিকাশ সঠিকভাবে না ঘটলে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। রক্তস্রাবের পরিমাণ বেড়ে গেল হাইপোথাইরয়েডিজমের সাথে সাথে অ্যানিমিয়াও দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা

হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণে যে অ্যানিমিয়া হয়, তা থাইরয়েডের চিকিৎসা করালে হাইপোথাইরয়েডের সাথে সাথে অ্যানিমিয়াও ভালো হয়ে যায়।

অনেকের ধারণা আছে, গর্ভধারণের সময় বা বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোকালীন এই ওষুধ বন্ধ করে দিতে হয়। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ওষুধের ডোজ বরং বাড়িয়ে দিতে হয়।

গর্ভাবস্থায় হাইপোথাইরয়েডিজম রোগীদের তিন মাস অন্তর রক্ত পরীক্ষা করে রক্তে থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের মাত্রা নির্ণয় করে দেখা হয় ওষুধ সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করা হচ্ছে কি না। সঠিক মাত্রায় ওষুধ খেলে তবেই গর্ভস্থ বাচ্চার সঠিক বিকাশ ঘটবে এবং সন্তানের জন্ম স্বাভাবিক হবে।

মায়ের হাইপোথাইরয়েডিজম মানেই সন্তানেরও ভবিষ্যতে এই রোগ হবে এমনটা নয়। এরকম ঘটনা ঘটতে দেখা যায় না বা ঘটলেও খুব কম সংখ্যায় ঘটে। সাধারণত হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত থাইরক্সিন ওষুধ সারাজীবন খেয়ে যেত হয়।

সন্তান প্রসবের পরে দু’তিন মাসের মধ্যে মায়ের যদি হাইপোথাইরয়েডিজম হয় তবে তাকে সারাজীবন ওষুধ নাও খেতে হতে পারে।

এক্ষেত্রে চিকিৎসা শুরুর ছয় মাস থেকে দু’ বছর পর থাইরয়েড গ্রন্থি স্বাভাবিক কাজ করতে শুরু করে। সেরকম হলে থাইরক্সি বন্ধ করে করে দেওয়া যেতে পারে।

  • হাইপারথাইরয়েডিজম

সাধারণত মহিলাদের গর্ভাবস্থায় গর্ভের জটিলতার কারণে এই রোগটি হয়। রক্তে থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের মাত্রা বেশি হতে পারে। এর প্রথম কারণ হল কোরীয় কার্সিনোমা। এটা এক ধরনের ক্যানসার। এছাড়া স্ট্রমা ও ওভারিয়াই নামে একটি বিশেষ ধরনের ডিম্বাশয়ের টিউমারের কারণেও রক্তে থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। হাইপার থাইরয়েডিজমে রজঃস্রাবের সময় রক্তস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে কম থাকে। এরকম হলে ডাক্তারবাবুর সাথে যোগাযোগ করুন।

চিকিৎসা

রেডিও অ্যাক্টিভ আয়োডিন থেরাপি দ্বারা চিকিৎসা করা হয়। হাইপো থাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় আন্যান্য কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সাথে মহিলাদের বিশেষ করে ৫০ বছর বা তার অধিক বয়স্কা মহিলাদের ক্ষেত্রে হাড় দুর্বল হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

পোস্ট মেনোপজাল পিরিয়ড এই সমস্ত মহিলাকে অতিরিক্ত মাত্রায় থাইরক্সিন জাতীয় ওষুধ দিলে তাদের অস্টিওপোরোসিস হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া অতিরিক্ত মাত্রায় আয়োডিন প্রয়োগে গর্ভস্থ শিশুর ক্রেটিনিজম বা নিওনেটাল হাইপোথাইরয়েডিজম হবার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে সঠিক মাত্রা প্রয়োগের জন্য বার বার রক্ত পরীক্ষা করা দরকার।

হাইপার থাইরয়েডিজমের রোগী যদি অতিরিক্ত মাত্রার ওষুধ খান তাহলে অনেক সময় গর্ভস্থ সন্তানের দেহে সেই ওষুধ প্রবেশ করে শিশুটির শরীরে হাইপোথাইরয়েডিজম সৃষ্টি করতে পারে। সন্তান ভূমিষ্ট হলে তার দেহ থেকে ওষুধের প্রভাব কেটে যায় সরবরাহের অভাবে এবং শিশুটির স্বাভাবিক শিশুতে পরিণত হয়।

এছাড়া মহিলাদের হাইপারথাইরয়েজিমের চিকিৎসা কাঠিমাজোল জাতীয় ওষুধ দিয়ে করা হয়। বর্তমানে প্রেপাইল থাইরয়েডিজম নামে একটি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। বাজার এই ওষুধ পিটিডি নামে পাওয়া যায়। যে সমস্ত মহিলা গর্ভধারণ করেছেন বা যেসব মহিলা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধটি প্রয়োগ অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে করা হয়।

যে তথ্যগুলো জানা প্রয়োজন

  • সন্তান প্রসবের কয়েক মাসের মধ্যে মা হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত হলে অনেক সময় সারাজীবন ওষুধ খেতে হয় না।
  • অন্য সব ক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় রোগীকে সারাজীবন থাইরক্সিন জাতীয় ওষুধ খেতে হবে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় অধিক মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়।
  • মা থাইরয়েড গ্রন্থির রোগে আক্রান্ত হলে যে সন্তানও আক্রান্ত হবে এমন কথা বলা যায় না। তাই এই রোগে আক্রান্ত মহিলারা নিরাপদে মা হতে পারেন।
  • হাইপারথাইরয়েডিজমে মহিলাদের ক্ষেত্রে পিটিয়ে জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
  • থাইরয়েড গ্রন্থির রোগে আক্রান্ত মহিলাদের অ্যানিমিয়া হয় ও তাদের রজঃস্রাব গন্ডগোল দেখা যায়। তাই রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি অ্যানিমিয়ার চিকিৎসাও জরুরি।
  • মহিলাদের গয়টার বেশি হয়। যারা দীর্ঘদিন থাইরক্সিন খাচ্ছেন তাদের অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধের জন্য ক্যালসিয়াম খেতে হবে। 

  • সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন