কোল্ড ড্রিষ্কস ও মদ্যপান ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির কারন
ডাঃ অয়ন রায়
2019-05-09 14:06:15
আজকের দিনে খুবই প্রাসঙ্গিক বিষয় হল ইউরিক অ্যাসিড থেকে হাড়ের ক্ষয় বা ক্ষতি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই ইউরিক অ্যাসিডের প্রাদুর্ভাব এখন খুব বেশিমাত্রায়। আগে এত ইউরি অ্যাসিডের হানাদারি ছিলনা। ইউরিক অ্যাসিড শরীরেই থাকে, কিন্তু যখন তার মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় বেড়ে যায় তখনই তার কুপ্রভাবে শরীর নানাভাবে অসুস্থ হয়। প্রধান কারণই হল খাদ্যাভ্যাসের এক বিরাট পরির্বতন। বর্তমানে আমরা সুষম আহারের পরিবর্তে অসুষম আহারই বেশি গ্রহণ করছি। অসুষম আহার বলতে জাষ্ক ফুডকেই বলছি। আজকাল অনেকেই বাইরের খাবার-দাবারে অভ্যস্ত। এর ফলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। বিশেষত যারা নিয়মিত কোল্ডড্রিষ্কস খান বা মদ্যপান করেন তাদের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই এক কথায় বলা যায় বেশী করে কোল্ড ড্রিষ্কস ও মদ্যপান ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির কারন।
খাওয়া-দাওয়া গন্ডগোল
কোন কোন খাবারের মধ্যে ইউরিক অ্যাসিড বেশিমাত্রায় আছে? দেখা যাবে তালিকাটা কিন্তু আগেরদিনের মতো আর নেই। যেমন আগে আমরা ঢ্যাঁড়শ, সিম, বীট, গাজর ইত্যাদি খেতে বারণ করতাম, এখন কিন্তু তা বলিনা। আমরা প্রধানত যে জিনিসটার ওপর বেশি জোর দিই তা হল অ্যালকোহল। এটা সব থেকে বেশি ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়। এছাড়া মাটন, বীফ, ডিম, মুসুর ডাল, টম্যাটো, সয়াবিন, বাদাম, পালংশাক, পুইশাক, কচু, সামুদ্রিক মাছ ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে বড় ভূমিকা নেয়। এছাড়া ইউরিয়া দিয়ে ভাজা যেসব সাদা মুড়ি সেগুলোও ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে দেশি লাল মুড়ি অনেক নিরাপদ।
কীভাবে বোঝা যাবে
সাধারণত শরীরের কোষগুলো স্বাভাবিকভাবে ভেঙে গিয়ে ইউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে এবং তা কিডনির দ্বারা পরিশোধিত হয়। কিন্তু খাদ্যাভ্যাসের কারণে যখন এটি বিশেষ মাত্রায় পৌঁছয় তখন কিডনি আর তা পরিশোধন করতে ব্যর্থ হয় এবং রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে। তখন ইউরিক অ্যাসিড গ্রন্থিগুলোতে গিয়ে জমা হয়। এগুলো একেবারে বালির দানার মতো সুক্ষ্ম। আমরা কোনো জায়গায় সিরিশ কাগজ ঘষলে যেমন জায়গাটা এবড়ো-খেবড়ো হয়ে যায় ইউুরক অ্যাসিডের সূক্ষ্ম দানাগুলো ঠিক এইভাবেই জয়েন্টগুলোকে ক্ষয় করে অসমান করে দেয়। ফলে ব্যথা-যন্ত্রণা শুরু হয়। হঠাৎ করে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখা যায় পায়ের বুড়ো আঙুল লাল হয়ে ফুলে গিয়ে যন্ত্রণা হচ্ছে। এটা খুব কমন এবং ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার প্রথম চিহ্ন। কিন্তু এখন আমরা দেখছি অন্যান্য গ্রন্থি যেমন হাঁটু, গোড়ালির সন্ধিস্থল ইত্যাদি জায়গাগুলোতে বা আঙুলের গাঁটগুলোতেও ব্যথা হচ্ছে অর্থাৎ ইউরিক অ্যাসিডের দ্বারা ক্ষতিগ্রন্থ হচ্ছে। সব গ্রন্থিগুলোতেই একই পদ্ধতিতে ইউরিক অ্যাসিড জমা হয়ে জায়গাটার মসৃণতাকে নষ্ট করে এবড়ো-খেবড়ো করে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করে দিচ্ছে। এর থেকেও বড় কথা আমরা যদি ইউরিক অ্যাসিড নিয়ে সাবধান না হই তাহলে তা হার্টের ভেসেল বা কিডনিরও ক্ষতি করতে পারে। অর্থাৎ শুধুমাত্র হাড় নয়, অন্যান্য জায়গাতেও ক্ষতি করে।
চিকিৎসা
ডাক্তারবাবুরা ইউরিক অ্যাসিড ধরা পড়লে প্রথমেই ওষুধ দেন না। ডায়েট কনট্রোলের মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিড কমানোর চেষ্টা করা হয়। যাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ডায়েট কন্ট্রোল করেও ইউরিক অ্যাসিডের আধিক্য কমছে না তাদের আমরা ওষুধ দিই। আগে ইউরিক অ্যাসিডের ওষুধ ছিল কলচিসাইন ট্যাবলেট। এখন আরো নতুন নতুন ওষুধপত্র এসেছে। এগুলো অনেক বেশি নিরাপদ। কিন্তু রোগী যদি হার্টের অসুখের শিকার হন অথবা দীর্ঘদিন ধরে ইউরিক অ্যাসিডে ভোগেন তাহলে কিন্তু ওই পুরনো ওষুধ কলচিসাইন জাইলোরিক আমরা দিই। কারণ এদের ক্ষেত্রে এই ওষুধই নিরাপদ এবং চলেও বেশি। ওষুধ সারা জীবনের জন্য কখনোই নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা ডায়েট কন্ট্রোলের ওপর বেশি জোর দিই। যখন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমে যায় তখন ওষুধের ডোজও আমরা কমিয়ে দিই এবং যদি দেখি বেশ কিছুদিন ধরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে তখন আমরা ওষুধ বন্ধ করার কথা ভাবি।
কারা আক্রান্ত হন
ইউরিক অ্যাসিড হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। সাধারণত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব কম, কিন্তু একেবারে নেই তাও বলা যাচ্ছে না। কারণ পনেরো-ষোলো বছরের রোগীও আসছে। এটা কিন্তু খুব সাম্প্রতিককালেই বেশি দেখা যাচ্ছে যার প্রধান কারণই হল জাষ্ক ফুড। এবং বিশেষ করে কোল্ড ড্রিষ্কস খাওয়ার প্রবণতা অত্যধিক বেড়ে গিয়ে এই অসুখ ডেকে আনছে। পিউরিন কনটেন্টটা কম থাকলেই এটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কীভাবে প্রতিরোধ
প্রধানত জোর দিতে হবে সঠিক খাওয়া-দাওয়ার ওপর। সঠিক আহার বলতে বলছি আগে ঢ্যাঁড়শ, সীম এগুলোকে বাদ দিতে বলতাম। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গেছে যে সবুজ সবজি শরীরের উপকারে আসে। তাই সেগুলো বাদ দিতে বলি না। এছাড়া টম্যাটোও ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে দেয়। মাছের মধ্যে সামুদ্রিক মাছ। আগে আমরা বড় মাছ খেতে বারণ করতাম। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বড় মাছের গুণাগুণ শরীরের কাজে লাগে তাই বড় মাছকে বাদ দিতে বলি না। সবশেষে বলি সুষম আহার গ্রহণ করুন, জাষ্ক ফুড থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন এবং সেইসঙ্গে সচেতন হোন, ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণেই থাকবে এবং আপনিও ভালো থাকবেন।
অনলাইনে চিকিৎসা সেবা পেতে আজই ডাউনলোড করুন হ্যালো ডাক্তার এশিয়া অ্যাপ
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন