×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

আকুংপাংচার কীভাবে কাজ করে কিছু গবেষণালব্ধ তথ্য

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-10-24 14:04:22

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান  (মেডিসিন)-এর পাঠ্যপুস্তক হ্যারিসনস প্রিন্সিপলস ইন্টারন্যাল মেডিসিন-এর সর্বশেষ সংস্করণে (২০১৫) এক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান আমেরিকার ৩০ লক্ষেরও বেশি বয়স্ক নাগরিক তাঁদের নানা রোগের জন্য আকুপাংচার চিকিৎসা করেন। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ১৫০টি দেশে আকুপাংচার চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলিত। মাত্র কয়েক দশক আগেও ছবিটা এরকম ছিল ন। স্পষ্টত বর্তমানে কয়েক কোটি মানুষ এই চিকিৎসার সাহায্য নেন। সত্যি কথা বলতে কী, ঐতিহ্যমন্ডিত যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি মানুষ সুপ্রাচীন কাল থেকে ব্যবহার করছে বা করেছে, তাদের মধ্যে আকুপাংচার চিকিৎসা পদ্ধতির ওপরই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোর, আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপদ্ধতি অনুসরণ করে, সর্বাধিক গবেষণা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে বেশি প্রসারিত হয়েছে ও ব্যবহৃত হচ্ছে। একসময় এটি মূলত প্রসলিত ছিল চীন ও তার আশপাশের কিছু দেশে। চীনা নাম ‘চেন’। উনবিংসক উইলিয়াম টি বাইনে ইউরোপে এর প্রসার ঘটান। তিনিই নাম দেন আকুপাংচার (অ্যাকস-এর অর্থ সূচ)। আর ভারতবর্ষে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি, ১৯৫৯ সালে ডাঃ বিজয় কুমার বসু আকুপাংচার চিকিৎসা শুরু করেন এই কলকাতায় এবং তারপর অনেক চিকিৎসককে এতে প্রশিক্ষিত করেন। ১৯৭৭ সালে তাঁর সভাপতিত্বে আকুপাংচার অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এর পূর্ণ স্বীকৃতি দিয়ে কাউন্সিল গঠন করেছে, আকুপাংচার চিকিৎসকদেও ট্রেনিং ও রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করেছে। পশ্চিমবঙ্গের সব জেলা হাসপাতাল সহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে আকুপাংচার বিভাগ খোলা হয়েছে, সরকারিভাবে আকুপাংচারের ট্রেনিং ও রিসার্চ-এর জন্য প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হয়েছে। ২০১৫ সালে মহারাষ্ট্র সনকারও আকুপাংচারের পূর্ণ স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার আংশিক স্বীকৃতি দিয়ে অন্য রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আইনিভাবে আকুপাংচার প্র্যাক্টিস করার অনুমতি দিয়েছে। যাই হোক, এ অন্য প্রসঙ্গ। তবে আমেরিকায় আকুপাংচার সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি হয় ১৯৭১ সালে। পূর্বোক্ত হ্যারিসনের বইতেও বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমন-এর সাংবাদিক জেমস বোটন চীনে যান। তিনি ফিরে এসে বর্ণনা করেন কীভাবে চীনের চিকিৎসকরা তাঁর নিজের অস্ত্রোপাচারের পরবর্তী ব্যথা আকুপাংচারের সাহায্য কমিয়েছিলেন। একই সঙ্গে অন্যান্য নানা রোগে আকুপাংচার চিকিৎসা করার কথা বর্ণনা করেন। এরপর আমেরিকাতেও আকুপাংচারের প্রসার ঘটে। বর্তমান সেখানে ৪২টি রাজ্য ও কলম্বিয়া জেলার আকুপাংচারের জন্য লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। অচিকিৎসকদের জন্য ৩ বছরের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।  এর জন্য আলাদা কমিশন রয়েছে। এর পাশাপাশি ইউরোপের নানা দেশে এবং চীন বা জাপানে তো বটেই, আকুপাংচার কীভাবে কাজ করে তা জানার জন্য বিগত তিন-চার দশকে প্রচুর গবেষণা চালানো হয়েছে। ঐতিহ্যমন্ডিত প্রাচীন দার্শনিক ব্যাখ্যার পাশাপশি  এর কার্যকারিতর পিছনে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শরীরবিজ্ঞান অনুসারে কর্মপদ্ধতির ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আকুপাংচারের কার্যকারিতার শারীরবৃত্তীয় দিকগুলিকে সাধারণভাবে এইভাবে ভাগ করা হয়-ব্যথা কমানো, প্রদাহ কমানো, অ্যালির্জি নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করা, প্রশান্তিদায়ক  (সেডেটিভ) এবং অস্বাভাবিক শারীরিক ক্রিয়ার সংশোধন  (রেগুলেটারি) অর্থাৎ শরীরের কোনও অংশের কাজ বেশি বা কম হলে তাকে কম বা বেশি করে স্বভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে আকুপাংচারের নানা ধরনের ব্যথা কমানোর ভূমিকা রোগীর তুলনামূলকভাবে তাড়াতাড়ি বুঝতে পারেন এবং আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যথা কমানোর ওষধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এত বেশি যে, আন্তর্জাতিকভাবে আকুপাংচারের এই ভূমিকা বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। দীর্ঘস্থায়ী থেকে স্বল্পসময়ের নানা ধরনের ব্যথার জন্য এর ব্যবহারও সর্বাধিক। যেমন-নানা ধরনের বাত বা আর্থ্রাইটিস, স্পন্ডাইলোসিস, টেনিস এলবো, গোড়ালির ব্যথা, কোমরে ব্যথা, সায়টিকা ও বিভিন্ন ধরনের নার্ভেও ব্যথা, মাথার যন্ত্রণা (অবশ্যয় টিউমারজনিত কারণ ছাড়া), অস্ত্রোপচারের পরবর্তী ব্যথা, ক্যানসারের ব্যথা, বার্জারস ডিজিজের যন্ত্রণা ইত্যাদি ইত্যাদি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি আকুপাংচারে চিকিৎসাযোগ্য প্রায় ২০০ ধরনের রোগের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে এই ধরনের নানা রোগ সহ আরও নানা ক্ষেত্রের কথাও বলা হয়েছে। যেমন---হাঁপানি, ডাইরিয়া, টনসিলাইটিস, হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস, হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া বা শক, ক্যানসারের জন্য কেমোথেরাপির পশর্^প্রতিক্রিয়া, অ্যানওভিউলেশন জনিত বন্ধ্যাত্ব, পেপাটিক আলসার, ডায়াবেটিস মেলাইটাস (বিশেষত টাইপ-টু), অনিদ্রা ইত্যাদি ইত্যাদি বহু রোগ। সব ক্ষেত্রে যে আকুপাংচার রোগ নিরাময় করে তা নয়, তবে ওষধ ছাড়া এবং প্রয়োজনে কোনো ওষুধের সঙ্গে একযোগে আকুপাংচার চিকিৎসা বহু ক্ষেত্রে কষ্টের দীর্ঘস্থায়ী উপশম কওে কোনো পাশর্^প্রতিক্রিয়া ছাড়া, স্বল্প ব্যয়ে ও সহজতভাবে। তবে প্রায় ক্ষেত্রেই বেশ কিছুদিন ধরে বারবার চিকিৎসা করতে হয়। আকুপাংচারের সূ² সূচ ফোটানো আদৌ যন্ত্রণাদায়ক না হলেও, অনেকেই ভয় পান। এমন বহু রোগ আছে যেখানে বিশেষ কোনো ওষুধপত্র বা কার্যকরী চিকিৎসা যথেষ্ট কার্যকরী। যেমন বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস থেকে শুরু করে বার্জারস ডিজিজ। আকুপাংচার চিকিৎসা শুরু হয়েছিল দু’-তিন হাজার বছর আগে। মানুষ অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছিল বিভিন্ন ধরনের গাছগাছড়ার যেমন রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা আছে। “ আকুপাংচারের নানা ধরনের ব্যথা কমানোর ভূমিকা রোগীর তুলনামূলকভাবে তাড়াতড়ি বুঝতে পারেন এবং আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যথা কমানোর ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এত বেশি যে, আন্তর্জাতিকভাবে আকুপাংচারের এই ভূমিকা বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।” তেমনই বাইরের কোনো ওষুধের ব্যবহার না করে, শরীরের নির্দিষ্ট কিছু বিন্দুতে সূ² সূচ (আদিমকালে ছিল সূচলো পাথর)ফোটালেও ওই উত্তেজনায় শারীরিক নানা কষ্টের উপশম হয়। তখনকার জ্ঞান অনুযায়ী এই কার্যকারিতার ব্যাখ্যা হিসাবে জীবনীশক্তি, দ্ব›দ্বমূলক ইন-ইয়াং তত্ত¡, পঞ্চভূত তত্ত¡ ইত্যাদির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু গত শতাব্দীর ৭০-এর দশকের শেষের দিকে আমেরিকায় তার প্রসারের পরে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তার ওপর গবেষণা চালিয়ে আকুপাংচারের কর্মপদ্ধতির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ক্রমশ জানা যাচ্ছে। সংক্ষেপে একে বলা হয় ‘নিউরো-এন্ডোক্রিনাল-ইমিউন মেকানিজম’, যাতে নার্ভতন্ত্র, নানা ধরনের হরমোন ও প্রতিরোধ ক্ষমতা নান দিক জড়িত আছে। যেমন ব্যথার অনুভূতি(নোসিসেস্টিভ পেন) আমাদের বহিরঙ্গের নার্ভ দিয়ে মস্তিস্কে যায়। আকুপাংচারের সূচ ফোটানোর মৃদু উত্তেজনাও ওইভাবে যায়। থ্যালামাসে উভয় ধরনের অনুভূতির কেন্দ্র পাশাপাশি থাকে এবং আকুপাংচারের উত্তেজনা রোগজনিত ব্যথার অনুভূতিকে প্রভাবিত ও প্রশমিত করে। এই প্রশমিত ব্যথার অনুভূতিই কর্টেক্সে পৌছয় এবং ব্যথার অনুভূতি কম লাগে। এছাড়া আমাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই ব্যথা ‘কমানোর নার্ভ ’ আছে। মস্তিকের মিডব্রেন ও মেডালা থেকে এই নার্ভ নামে এবং স্পাইনাল কর্ডে বহিরঙ্গ থেকে ব্যথার অনুভূতি বয়ে আনা নার্ভেও সঙ্গে মিলিত হয়ে ওই ব্যথার অনুভূতি কমায়। মস্তিস্ক থেকে নামা এই ‘ব্যথা কমানোর নার্ভ’ এন্ডোর্ফিন শরীরে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া আফিম জাতীয় রাসায়নিক পদার্থের দ্বারা সক্রিয় হয়। গবেষণায় এটি এখন সুনিশ্চিতভাবে জানা গেছে যে, আকুপাংচারের উত্তেজনা এই এন্ডোর্ফিনের ক্ষরণ বাড়ায়। ফলে শরীরের এই নিজস্ব ‘ব্যথা কমানোর নার্ভ’ আরো সক্রিয় হয় অর্থাৎ ব্যথা কমায়। এছাড়া ব্যথার ওপর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষক মেলজাক ও ওয়াল বেশ কিছুদিন আগেই দেখিয়েছিলেন যে, আকুপাংচারের সাহায্যে আমাদের নার্ভতন্ত্রের ‘গেট কন্ট্রোল মেকানিজম’ সক্রিয় হয়। খুব সাধারণভাবে বললে, এই প্রক্রিয়ায় একটি অনুভূতি (যেমন আকুপাংচারের) অন্য অনুভূতির (যেমন পায়ের বা মাথার ব্যথা) জন্য দরজা বন্ধ করে দেয়। মেলজাক, ওয়াল ও পরবর্তীকালে জটারম্যান দেখিয়েছিলেন, আকুপাংচারের উত্তেজনা স্পাইনাল কর্ডের যে খন্ডে যায়, ওই খন্ডের আশপাশে মোট তিন-চারটা খন্ড ( সেগমেন্ট) শরীরের যেসব অংশে নার্ভ পাঠায় ওই সব অংশের বেশি বা কম কাজও আকুপাংচারের ওই উত্তেজনার সাহায্যে স্বাভাবিক হয়। এইভাবে ব্যাখ্যা করা যায় কীভাবে পায়ে ফোটানো আকুপাংচারের সূচ পাকস্থলী বা জরায়ুর ব্যথা কমাতে পারে। চীন, ইউরোপ, আমেরিকায় বহু গবেষক গবেষণালব্ধ এই ধরনের নানা তথ্য পরিবেশ করেছেন। ইন্টারনেটরে মাধ্যমে যে কেউ এগুলি জেনে নিতে পারেন। নানা গবেষণা এবং ‘ডাবল ব্লাইন্ড কন্ট্রোল স্টাডি’-র মাধ্যমে এটিও দেখা গেছে যে, শরীরের কোনও অংশের কাজ অস্বভাবিক হলেই আকুপাংচার তা ঠিক করার চেষ্টা করে। কিন্তু সুস্থ শরীওে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে না। যেমন পাকস্থলির জন্য আকুপাংচারের যে নির্দিষ্ট বিন্দুতে সূচ ফোটানোর কথা বলা হয় ( অন্যতম হল পায়ে ‘চুসানলি’ বিন্দু), তাতে সূচ ফোটালে সুস্থ পাকস্থলীর ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। কিন্তু পেন্টোগ্যাস্ট্রিন ইনেঞ্জেকশন করে কৃত্রিমভাবে পাকস্থলি ক্ষরণ ও সঞ্চালন বাড়িয়ে দিলে ক্রমশ স্বাভাবিক হয়। অর্থাৎ পাকস্থলীর রোগেই তা কাজ করে। আকুপাংচার কীভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে তারও নানরকম প্রক্রিয়া জানা গেছে। একটি হল শ্বেতকণিকার দ্বারা রোগঝীবাণু ও ভাইরাসকে ধ্বংস করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পওয়া। কীভাবে সিডি-৪ লিম্ফোসাইটের কাজকর্ম, ইমিউনোগ্লোবিউলিনের সৃষ্টি ইত্যাদি আকুপাংচারের সাহায্যে প্রভাবিত হয় তার সম্পর্কে অজস্র তথ্য জানা গেছে ও যাচ্ছে। এইভাবে রোগজীবাণু ও ভাইরাস সংক্রমণ, অ্যালার্জি ও অটোইমিউন প্রক্রিয়া আকুপাংচারের সাহায্যে একটি স্তর অবধি, কিছু ক্ষেত্রে পুরোপুরি, কীভাবে ঠিক করা যায় তার ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছে। বাইরের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (অ্যাডপটো-ডিফেনসিভ মেকানিজম) আকুপাংচারের সাহায্যে কীঅভাবে উন্নত হয় তারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে শরীরের নানা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিও নিঃসরণ (হরমোন)-ও ভূমিকা রাখে যা আকুপাংচারের সাহায্যে স্বাভাবিক ও উন্নত করা যায়। আকুপাংচারের এই ভূমিকার জন্য সম্প্রতি সন্তানহীনা মহিলাদের বন্ধ্যাত্বের পেছনে ডিম্বস্ফোটন না হওয়া (অ্যানওভিউলেশন) কারণ হিসাবে কাজ করলে, তার সংশোধন আকুপাংচারের সাহায্যে করা সম্ভব হচ্ছে। এবং এইভাবে প্রাচীন এই চিকিংসায় আগে যেসব রোগের চিকিৎসার কথা বলা হত, বর্তমানে অন্যান্য নানা রোগেও তার ইতিবাচক ভূমিকা প্রতিষ্ঠত হয়েছে। পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানা ওষুধের জন্য আকুপাংচারের প্রয়োজনও কমে গেছে, যেমন টাইফয়েড বা মেনিনজাইটিসের মতো রোগে, কিংবা পেপটিক আলসারে হেলিকোব্যাক্টও পাইলোরির বিরুদ্ধে ওষুধ জানার পর। আকুপাংচার একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। কিন্তু অন্যান্য সমস্ত চিকিৎসা পদ্ধতির মতো এটিও সর্বরোগের নিরাময় করতে পারে না। তবে বিনা বিরূপ প্রতিক্রিয়ায়, সহজ-সরল পদ্ধতিতে ও স্বল্প ব্যয়ে আকুপাংচারের সাহায্যে এমন অনেক রোগের চিকিৎসা করা ও সুফল পাওয়া সম্ভব, যেসব রোগের ওপর অন্যান্য কার্যকারী ও নিরাপদ চিকিৎসা এখনো জানা নেই। অন্যদিকে আধুনিক চিকিৎসা ও আকুপাংচার- উভয়ের সীমাবদ্ধতা সুষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। যেমন, প্যারালিসিসে আকুপাংচারের সঙ্গে ফিজিওথেরাপি, পেপটিক আলসার এইচ-টু রিসেপটর অ্যান্টাগনিস্ট বা “ এমন বহু রোগ আছে যেখানে বিশেষ কোনো ওষুধপত্র বা কার্যকারী চিকিৎসা জানা নেই, কিন্তু আকুপাংচার সেসব ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকারী। যেমন বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস থেকে শুরু করে বার্জারস ডিজিজ। ” প্রোটন পাম্প ইনহি বিটর ও অ্যান্টিবায়োটিক, হাঁপানিতে শ্বাসনালিকা প্রসারণকারী ওষুধ ইত্যাদি। তবে আকুপাংচারের সঙ্গে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের ব্যবহার সঙ্গত নয়, কারণ আকুপাংচার শরীরের যে প্রতিরোধক্ষমতাকে কাজে লাগায় স্টেরয়েড তাকেই বিপর্যস্ত করে (ইমিউনো সাপ্রেসিভ)। অজ্ঞতা এবং কখনো ব্যবসায়িক স্বার্থে কিছু কিছু চিকিৎসক আকুপাংচারকে অবৈজ্ঞানিক, অকার্যকরী ইত্যাদি হিসাবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু ঐতিহ্যমন্ডিত প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো মধ্যে সম্প্রতি আকুপাংচারই সবচেয়ে বেশি আধুনিক গবেষণায় পরীক্ষিত হয়েছে ও হচ্ছে। তার কার্যকারিতার পেছনে বিজ্ঞানসম্মত কারণ জানা গেছে এবং সারা বিশে^ সবচেয়ে বেশি প্রসার লাভ করেছে। একই সঙ্গে প্রাচীন সময় থেকে সাম্প্রতিককালে তার নানা বিকাশও ঘটেছে। যেমন আকুপাংচারের সঙ্গে বৈদ্যুতিক উত্তেজনা ব্যবহার করা (ইলেকট্রো আকুপাংচার), লেজার রশ্মিও প্রয়োগ (ফটো আকুপাংচার) ইত্যাদি ইত্যাদি। আগামী দিনে আধুনিক চিকিৎসার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আকুপাংচারেরও আরও বিকাশ ঘটবে তা প্রত্যাশিত। বিশেষত, নানা ধরনের ওষুধ ব্যবহার যে সীমাবদ্ধতা তা শরীরে কোনো রাসায়নিক দূষণ না ঘটিয়ে তথা কোনো ওষুধ না দিয়ে, শরীরের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে বিশেষ ধরনের উত্তেজনা দিয়ে কমিয়ে আনার চেষ্টা করা যায়। আধুনিক ওষধ কিছুদিনের মধ্যে বাতিল করতে হচ্ছে, ভবিষ্যতে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিপদও অনুভব করা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ওষুধ ছাড়া চিকিৎসার গুরুত্ব ক্রমশ অনুভূত হচ্ছে। ভবিষ্যতে সূচ ফুটিয়ে আকুপাংচার হয়তো থাকবে না, কিন্তু তার মূল প্রক্রিয়া ( অর্থাৎ শরীরে বিশেষ স্থানে বিশেষ ধরনের উত্তেজনা দিয়ে নার্ভ, হরমোন, ইমিউনিটিকে প্রভাবিত করা) আরও বিকশিত হয়ে আগামীদিনের চিকিৎসার ভিত্তি স্থাপন করবে। তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক স্বার্ত অন্যতম একটি বড় বাধা।  সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন