×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

সরু হয়ে পড়ছে প্রস্রাব?

ডাঃ বিজন ভট্টাচার্য
2019-05-18 13:31:59

মূত্রথলির ব্লকেজ সম্বন্ধে জানতে গেলে কিডনি সম্বন্ধে একটু ধারণা করে নেওয়া দরকার। আমাদের শরীরে দুটো কিডনি থাকে। ডানদিকের কিডনি একটু নীচুতে আর বাঁদিকেরটা ওপরে থাকে।

কিডনি থেকে প্রস্রাব বেরিয়ে আসে ইউরেটর নামক পাইপ দিয়ে। ইউরেটরের ওপরে যে চওড়া অংশটা তাকে পেলভিস বলে। দু’দিকের দুটো কিডনি, দুটো ইউরেটর হয়ে ইউরিনাল ব্লাডারের মধ্যে প্রস্রাব এস জমা হয়। যাকে আমরা বাংলায় বলি মূত্রথলি। তারপর ইউরেথ্রা দিয়ে সেই প্রস্রাব বাইরে বেরিয়ে আসে।

কী কী কারণে ব্লকেজ হয়

মূত্রথলিতে অনেক কারণেই ব্লকেজ থাকতে পারে যার কারণে প্রস্রাবের পথে বাধা সৃষ্টি হয়।

যেমন—

  • কিডনি স্টোন বা পাথর
  • মূত্রথলিতে পোস্টেরিয়ার ইউরেথ্রাল ভালব থাকতে পারে।
  • প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের বৃ্দ্ধি হলেও হতে পারে ব্লুকেজ।
  • টিউমারের জন্য প্রস্রাব আটকে যেতে পারে।
  • পেলভিক ইউরেটারি জংশন বা পি.ইউ.জে-এর সমস্যাও কারণ হতে পারে।

কিডনি স্টোন

কিডনিতে স্টোন নানা কারণে হয়। একটা সাধারণ বিশ্বাস, অবশ্য এর কিছু বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও আছে যে, জল কম খেলে পাথর হয়। বেশি জল খাওয়ার কারণে আমাদের শরীরে যে বর্জ্য পদার্থগুলো আছে সেগুলো কিডনির সাহায্যে ইউরিনের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। জল কম খাওয়ার কারণে প্রস্রাব ঘন জয়ে যায় ফলে বর্জ্য পদার্থ জমে জমে স্টোন তৈরি করে। কারো যদি খুব বেশি পরিমাণে ইউরিক অ্যাসিড থাকে তাহলে সেটাও পাথর তৈরি করতে পারে।

কিডনিতে পাথরের সমস্যা থাকলে রোগ ধরা পড়তে দেরি হয় না। কারণ উপসর্গগুলো হল প্রচন্ড ব্যথা হওয়া, প্রস্রাব আটকে যাওয়া, প্রস্রাবের সাথে রক্ত পড়া। এসব নিয়ে রোগী যখন আসেন প্রথমেই ইউ.এস.জি করে সঠিক অবস্থান জেনে নিয়ে সার্জিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে কিডনি থেকে পাথর বার করা হয়।

স্টোন থাকলে মূত্রনালীতে প্রস্রাবের ফ্লো নষ্ট হয়ে কিডনি ফুলে ওঠে। টিউমার থাকলেও এই ধরনের ব্লকেজ তৈরি হয়। একদিকের কিডনি যদি কোনো কারণে ব্লকেজ হয় তবে কোনো অসুবিধা হয় না স্বাভাবিক জীবনে। কিন্তু যদি দুটো কিডনিই ব্লক হয়ে যায় তাহলে রেনাল ফেলিওর হতে পারে।

পোস্টরিয়ার ইউরেথ্রাল ভালব

(পি.ইউ.ভি)

জন্মগত ক্রটির কারণে মূত্রনলীতে পোস্টেরিয়ার ইউরেথ্রাল ভালব থাকলে মূত্রনালীতে বাধা তৈরি হয়। একে সংক্ষেপে পি.ইউ.ভি বলে। এর ফলে দু’দিকের কিডনিই ফুলে ওঠে। রোগী বাচ্চা হলে ঠিকমতো বলতে পারে না, বোঝাতে পারে না কষ্ট। ফলে অনেকটাই দেরি হয়ে যায় এবং কিডনি দুটো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

এই কারণে বাচ্চাদের প্রস্রাবের সময় বাবা-মায়ের লক্ষ রাখা উচিত বাচ্চাটির প্রস্রাবে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না, কোঁত দিয়ে জোর দিচ্ছে কি না, সরু হয়ে প্রস্রাব আসছে নাকি অনেকটা সময় লাগছে। যদি সবকিছু সমর্থক হয় তাহলে বুঝতে হবে প্রস্রাবের সমস্যা আছে। খুব তাড়াতাড়ি ডায়াগনোসিস হল ফালগেশন নামক একটা ছোট্ট অপারেশন করে এটাকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ইউরিন প্যাসেজ আবার নর্মাল হয়ে যায়।

প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধি

পুরুষদের বড় সমস্যা প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধি। প্রস্টেট গ্ল্যান্ড ইউরেথ্রার চারপাশে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রস্টেটটা বাড়তে থাকে। বেশি, বড় হয়ে গেলে ইউরেথ্রার ওপর প্রেসার দেবে। এবং কিডনি ব্লক করে হাইড্রোনেফ্রোসিস হবে। এরকম অবস্থায় বারবার প্রসাব পায়। রাতে ঘুম ভেঙে বারবার প্রস্রাবে যেতে হয়। প্রস্রাব সরু হয়ে পড়ে। সময় লাগে অনেক। একটু চাপ দিলে তবেই প্রস্রাব বেরিয়ে আসে না হলে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়।

টিউমার

ইউরেথ্রার মধ্যে যদি কোনো টিউমার হয় তাহলে প্রস্রাবে নানা বাধার সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই যা হল ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যানসারস টিউমার।

ইউরেটারে যদি টিউমার হয় তার কোনো লক্ষণ থাকে না। অনেক সময় ইউরিনের সাথে ব্লাড আসে। একে বলে পেইনলেস হিমাচুরিয়া। বেদনাহীন হিমাচুরিয়ায় ক্যানসারের কথা মাথায় রাখতে হবে। অন্য কোনোরকম জ্বালা-যন্ত্রণার সমস্যা থাকে না।

বয়স্কদের এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা যায়।

এই ধরনের সমস্যায় কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

পেলভিক ইউরেটারি জংশন

জন্মগত আর একটি কারণে ব্লকজ হয় যেটাকে বলে পেলভিক ইউরেটারি জাংশন (পি.ইউ.জে)। এটা একদিকে হতে পারে আবার দু’দিকেও হতে পারে। কী কারণে এটা হয় তা এখনও অবধি জানা যায়নি। এটার কারণে ইউরেটরে অবস্ট্রাকশন হয় না কিন্তু কিডনিটা পুরো ফুলে থাকে। স্টোন থাকলে যেমন শুধু ইউরেটার নয়, কিডনিও ফুলে থাকে কিন্তু এখানে ইউরেটার নর্মাল থাকে। ইউরেটারের ওপরের অংশটা ফুলে থাকে। ইউ.এস.জি বা আই.ভি.ইউ করলেই কারণটা বোঝা যায়। এখানে একমাত্র চিকিৎসা অপারেশন। অপারেশন করার সময় দেখতে হয় কিডনিটা কতটা ফাংশন করছে। তেমন হলে পুরো কিডনিটা কেটে বাদ দিতে হয়। কারণ যে কিডনি কোনোরকম কাজ করছে না সেটা শরীরে থাকা মানে সংক্রমণের সম্ভাবনা।

যদি আর্লি স্টেজে ডায়াগনোসিস হয় তাহলে পাইলোপ্লাস্টি করে অপারেশন করা হয়। যেখানে ব্লকেজ আছে সেই জায়গাটা কেটে বাদ দিয়ে আবার যুক্ত করে দেওয়া হয়। রবারের পাইপে যেমন করা হয়। কোনো ব্লকেজ থাকলে কেটে দুটোকে একসাথে জুড়ে দেওয়া, এর নাম পাইলোপ্লাস্টি। এটাতে সেভাবে কোনো অপারেশন হয় না, শুধু লোকাল ব্লকেজটাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। একদিনের মধ্যেই এটা করা যায়। ল্যাপারোস্কোপির সাহায্যে এই চিকিৎসা করা হয়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

পরীক্ষা বলতে আলট্রাসোনোগ্রাফি বা ইউ.এসি.জি। যদি নরমাল ইউ.এস.জি হয় তাহলে আই.ভি.ইউ করা যায়। আই.ভি.ইউ করতে গেলে একটা ইঞ্জেকশন নিতে হয়। এই ইঞ্জেকশন নিতে গেলে কিডনি ফাংশন ঠিক থাকতে হবে। এ কারণে ক্রিয়েটিনিন আগে দেখে ইঞ্জেকশন দিতে হয় কারণ ইঞ্জেকশনটা কিডনির পক্ষে ক্ষতিকর। এগুলোকে রেডিও কনট্রাস্ট ডাই বলা হয়।

এছাড়া সি.টি.স্ক্যান করা যায় কে.ইউ.বি অর্থাৎ কিডনি ইউরেটর ব্লাডার। এবং এম.আর.আই স্ক্যান করেও দেখা হয়। সিটি স্ক্যানেও অনেক সময় ডাই দেওয়া হয়। এম.আর.আই-এ কোনো ইঞ্জেকশন লাগে না।

বাইরে থেকে চাপ পড়েও মূত্রনালীর সমস্যা তৈরি হয়। আর এক ধরনের সমস্যা দেখা যায়, সেটা হল পেটের মধ্যে আরো কিছু অর্গান আছে সেগুলো যদি বাইরে থেকে মূত্রনালীর ওপর প্রেসার দেয় তাহলেও অবস্ট্রাকশন হবে। যেমন ক্যানসার। ইউটেরাসে ক্যানসার বা কোলনে ক্যানসার অথবা লিম্ফগ্ল্যান্ড, যা বাইরে থেকে চাপ দিয়ে মূত্রনালীর ব্লকেজ করতে পারে।

ইউরিনে সংক্রমণ হলে কোনো মেকানিক্যাল ব্লকেজ তৈরি হয় না কিন্তু রোগীর সংক্রমণের কারণে বার বার প্রস্রাব হয়, পরিমাণ কমে যায়, জ্বর হয়। তবে এটা সাময়িক, ব্লকেজ তৈরি করে না।

চিকিৎসা

চিকিৎসা হয় কারণের ওপর নির্ভর করে। ছোট স্টোন হলে জল বেশি খেলে সেগুলো আপনা-আপনি বেরিয়ে যায়। সিস্টোস্কোপি করে ইউরেথ্রার ভিতর দিয়ে সরু পাইপ দিয়ে পাথরটাকে বার করে নেওয়া যায়। যদি পাথর ওপরদিকে থাকে বা কিডনিতে থাকে তাহলে পিঠের দিকে একটা ছোট ফুটো করে পারকিউটেনিয়াস নেফ্রোলিথোটমির সাহায্যে বার করে ফেলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ইউরেটরে স্টেন্ট দেওয়া হয় পাথর বার করার পর যাতে ইউরেটরে আর স্টোন না হয়। অনেক সময় একবার স্টোন হলে বারবার হবার সম্ভাবনা থাকে। ডি.জে. স্টেন্ট দু’-তিন মাস পরে বার করে নেওয়া হয় যখন মনে হয় আর অবস্ট্রাকশন হবে না। টিউমার হলে অপারেশন করে নেওয়া হয়। টিউমার থাকলে ক্যানসার কি না দেখে নিতে পি.এস.এ পরীক্ষা করা হয়। পি.এস.এ বেশি থাকা মানে ক্যানসার আছে সন্দেহ করতে হবে। এনলার্জ প্রস্টেট হলেও পি.এস.এ বাড়তে পারে তবে তার জন্য বায়োপসি করা হয়।

সংক্রমণ হলে ইউরিনের রুটিন কালচার করে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।


সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন