×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

চিৎকার চেঁচামেচিতে কিন্তু খিটখিটে হয়ে যেতে পারেন

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-10-24 14:23:21

তন্ময় গোষ্ঠীপতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোলাহলের মাত্রা এক অবিশ্বাস্য হারে বেড়ে চলেছে। শুধু যদি গত কুড়ি বা পঁচিশ বছরের হিসাবে নেওয়া যায়, তাহলে আমরা দেখতে পাব যে নগরজীবনে কোলাহলের মাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি বর্ধিত হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির দিকে তেমনভাবে সৃষ্টি দেননি। তাদের একটা ধারণা ছিল যে, প্রাত্যহিক জীবনের যত শব্দ আমাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে, তা ততটা ক্ষতিকর নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল ভিন্ন। সেখানে দেখা গিয়েছে শব্দের যে মাত্রায় শ্রবণযন্ত্রের অনিষ্ট হয় বলে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, তার চেয়ে অনেক কম শব্দ সৃষ্টি হলেই আমাদের শ্রবণযন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। প্রাত্যহিক জীবনে শব্দ এই মাত্রায় বহুবারই উন্নীত হয়। যেকোনো কিছুরই হিসাবে নিকেশের একটা একক থাকে। দৈর্ঘের মিটার, ওজনের গ্রাম, সময়ের সেকেন্ড, সেরকম শব্দকেও পরিমাপ করার একক আছে। শব্দ যখন উৎপন্ন হয়, তখন যে চাপের সৃষ্টি হয়, বিজ্ঞানীরা শব্দকে পরিমাপ করেন সেই চাপের সাহায্যে। এই সৃষ্ট চাপের এককের নাম ডেসিমল। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছে যে, নগরজীবনে কোলাহলের মাত্রা প্রতি আধ ডেসিবেলের মতো বেড়ে চলেছে। লোকসংখ্যা এবং সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এ ঘটবেই। শব্দের তরঙ্গ রোধে সাধ্য কার? শ্রবণ চিকিৎসাবিদের শব্দের মাত্রা ডেসিবেলের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন খুব সহজে, আমাদের নিত্য পরিচিত আলাপের বিভিন্ন চিত্রের মাধ্যমে। পারিপাশি^ক কত ডেসিমেল পর্যন্ত গোলমালে একের কথা অন্যকে শোনাতে অসুবিধে হয় না বা গোলমালের মাত্রা কত ডেসিভেল পর্যন্ত চড়ালে চিৎকার  না করলে চলে না কিংবা কত ডেসিবেলে চিৎকার করলেও কথাবার্তা চালানো দুঃসাধ্য মনে হয় ? গভীর রাতে পারিপাশির্^ক যখন নিঃশব্দ, তখন ফিসফাস আলাপে কুড়ি ডেসিবেল যথেষ্ট। কিন্তু ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিকের মতো চারপাশের কোলাহল যখন পঁয়তাল্লিশ থেকে ষ্ট ডেসিবেলের মধ্যে ওঠা-নামা করে তখন খানিকটা অসুবিধে হয় বৈকি। আর চারধারের গোলমাল যখন পঁয়ষাট্রি ডেসিবেলের ওপর তখন আমার বক্তব্য শোনাতে গেলে চিৎকার না করে কোনো উপায় নেই। কিন্তু কোলাহলের মাত্র যখন আরও ওপরে উঠতে থাকে, তখন শুনতে বা শোনাতে সত্যিই অসুবিধে হয়। সত্তর ডেসিবেল থেকে শুরু, কিছুটা বাড়ে আশি থেকে নব্বই –এ এবং তারপরে অবস্থা কল্পনার বাইরে। ডেসিবেলকে আর একটু সুস্পষ্ট করে তোলার জন্যে ঘুমের সময়ের কথাও বলা যায়্ ঘুমের সময় অবশ্য অবস্থাটা অন্য রকমের। ঘুমের চেষ্টা করছেন, তখন যদি পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ ডেসিবেল মাত্রায় কোলাহল চলে তাহলে তা একটু অসুবিধেজনক হবে নিশ্চয়। এবং পঞ্চাশ থেকে সত্তর ডেসিবেল মানে বেশ হই-হট্টগোল, তখন ঘুম হওয়া কঠিন। বিভিন্ন দেশে শব্দ বা কোলাহল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যে চিন্তাভাকনা তা মূলত বিমানের ওঠানামাকে কেন্দ্র করে। কনকার্ডে নামে নতুন যে ফরাসি সুপারসনিক জেট বিমান চালু হয়েছে তার শব্দ অসহনীয় রকমের বেশি। একশো ডেসিবেলের চেয়েও জোরালো মাত্রায় শব্দ সৃষ্টি করে এবং তা প্রায় চুয়ান্ন বর্গমাইল জায়গা জুড়ে শোনা যায়। সেভেন-ফোর-সেভেন জাম্বো জেটের সাম্প্রাতিক এক মডেলের একশো বা তার চেয়েও বেশি ডেসিবেলের শব্দ সৃষ্টি হয়, তবে সে শব্দ চুয়ান্ন বর্গমাইলেই জায়গা জুড়ে পরিব্যাপ্ত নয়। মাত্র তিন বর্গমাইলেই তা সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু বিমানবন্দরে বিমানের ওঠানামার সঙ্গে যে শব্দের সৃষ্টি তার সঙ্গে তো নগরজীবনের প্রাত্যহিক বিধি শব্দের সম্পর্ক নেই। বিমানবন্দর থাকে শহরের অনেক বাইরে, লোকালয় পার হয়ে বির্স্তীণ এক অঞ্চল জুঢ়ে। দুশ্চিন্তা যেমন আমাদের স্নায়ুবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, শব্দব্রক্ষও সেরকম। কোনো কোনো ই.এন.টি চিকিৎসক অবশ্য এমন কথাও মনে করেন যে, উচ্চমাত্রার শব্দের মধ্যে থাকলে হৃদযন্ত্রেরও গোলযোগ হতে পারে। ফলে বিমানবন্দরে বিমানের শব্দের সঙ্গে সন্নিহিত অঞ্চলবাসীদের সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু নগরজীবনের সঙ্গে তার তেমন সম্পর্ক কোথায়? সম্পর্ক নাই থাকুক, নগরজীবনে যে সব শব্দ আমাদের নিত্য বিব্রত করে তা কোনো অংশেই বিমানের ওঠানামার অসহনীয় শব্দের চেয়ে কম নয়। আমাদের বারো মাসে তেরো পার্বণ, আজ সে সংখ্যা আরও বেড়েছে। যে কোনো পুজোয়, যে কোনো অনুষ্ঠানে, যেকোনো আচারে মঙ্গলঘট এবং বিবিধ উপাচারের সঙ্গে মাইক অঙ্গাঙ্গাভাবে জড়িত এবং তা চূড়ান্ত ঊচ্চৈঃস্বরে। শহরের যে কোনো ছোট পাড়াতেই বছর এমন ক’টা দিন যায়, যেদিন গৃহপ্রবেশ, অন্নপ্রাশন, দ্বারোদ ঘাটন, উপনয়ন, শুভবিবাহ বা পুজোকর্ম পালিত হয় না ? এবং এদের প্রতিটিতেই মাইক আবশ্যিক অঙ্গ। এই মাইকের শব্দ যে চাপ সৃষ্টি করে, কনকর্ডের সে যত কাছাকাছি, সেভেন ফোর সেভেন জাম্বো জেটের সঙ্গে তার শব্দের মাত্রার পার্থক্য কত, এ নিয়ে কোনো পরিসংখ্যান বা কোনো হিসাব আছে কি ? হিসাব না থাক, তবু তারতম্য তেমন হওয়ার কথা নয়। শুধু তো মাইক নয়, বাড়ির পাশের সদর রাস্তা দিয়ে মাল বোঝাই ভারি লরি ছুটে চলেছে কর্কশ, অমসৃণ শব্দ তুলে। সহস্র মানুষের মিছিল চলেছে প্রতিবার আকাশ-বাতাস উচ্চকিত করে, সকাল ন’টায় নিয়মিত সাইরেন, এইসব বিচিত্র ধ্বনি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকে যে অবিরত শশব্যস্ত করে তোলে, একথা অস্বীকার করবে কে? অথচ এই কোলাহল এবং শব্দের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমরা এখনও সচেতন হইনি। এ যে শুধু নগরজীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে মলিন করে তা নয়, নানাবিধ শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কোলাহল থেকে আসে অনিদ্রা একথা সকলেই জানেন। তাছাড়া খিটখিটে ভাব এবং বদমেজাজও এই কোলাহলের জন্যে এসে থাকে। আজ চিকিৎসক সমাজ বলছেন অনিদ্রা এবং বদমেজাজ ছাড়াও শারীরিক ও মানসিক আরও অনেকগুলো উপসর্গ দেখা যায় কোলাহলের জন্য। তাদেও অভিমত, দুশ্চিন্তা যেমন আমাদের ¯স্নায়ুবিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, শব্দব্রক্ষও সেরকম। কোনো কোনো ই.এন.টি চিকিৎসক অবশ্য এমন কথাও মনে করেন যে, উচ্চমাত্রার শব্দের মধ্যে থাকলে হৃদযন্ত্রেরও গোলাযোগ হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘকাল উচ্চমাত্রার শব্দের মধ্যে অতিবাহিত করলে কি আয়ু কমে আসারও আশঙ্ক থাকে ? এ বিষয়ে হ্যাঁ বা না কোনো সিদ্ধান্তেই সুস্পষ্টভাবে বিজ্ঞানীরা আসতে পারেননি। তবে যদি দুশ্চিন্তা আমাদের আয়ুকে হ্রাস করে এবং কোলাহল যদি দুশ্চিন্তা নিয়ে আসে, তবে কেন তা থেকে আমাদেও আয়ু হ্রাস পাবে না ? আজ শব্দের এই প্রভাব থেকে মুক্তির জন্যে আমরা মাঝেমাঝে নগরসভ্যতার নাগপাশ এড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়তে পারি। তাতে আামাদের শ্রবণযন্ত্র খানিকটা বিশ্রাম পাবে সন্দেহ নেই।  সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন