খাবার থেকেও হতে পারে মাইগ্রেন
ডাঃ সুনন্দন বসু
2019-05-18 14:15:26
প্রাচীন যুগের বিখ্যাত চিকিৎসক চরক তার মাইগ্রেন সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন চরকসংহিতায়। আয়ুর্বেদে মাইগ্রেনকে বলা হয় অর্ধাবভেদ।
ফরাসি শব্দ ‘মিগ্রেন’ থেকে মাইগ্রেন শব্দটা এসেছে। মাইগ্রেন একটি পরিচিত অসুখ। চলতি কথায় এর নাম ‘আধকপালি’। কারণ মাথার যে কোনো একটি পাশ জুড়েই শুরু হয় মাথাব্যথা। মাথাব্যথার নেপথ্যে অজস্র কারণের মধ্যে মাইগ্রেন একটি।
মাইগ্রেন হচ্ছে এমন এক ধরনের মাথাব্যথা যা যে কোনো বয়সে, যে কোনো মানুষের মধ্যেই দেখা যেতে পারে। মাইগ্রেনের ব্যথার কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে যার ফলে মাথাব্যথ্যার অন্য কারণগুলো থেকে মাইগ্রেনকে আলাদা করে চেনা যায়। প্রথমে ব্যথাটা মাথার একদিকে আস্তে আস্তে শুরু হয়, পরে পুরো মাথাটাই ব্যথা করতে থাকে।
কাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়
নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে মাইগ্রেন চল্লিশ বছর বয়সের আগেই থাকে। পুরুষদের থেকে মহিলারা বিশেষত মধ্যবয়স্ক মহিলারা বেশি আক্রান্ত হন। কিন্তু বর্তমানে অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের মধ্যেও মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়ছে।
মাইগ্রেন হওয়ার পিছনে কী কী
কারণ দায়ী
স্ট্রেস, পেটের রোগের কারণে হতে পারে, মাথার সমস্যা থেকে তো হতে পারে, অনেক সময় চোখের সমস্যার কারণেও হয়। রোদ লেগে মাথা ব্যথা শুরু হতে পারে, মহিলাদের পিরিয়ডের সময় অনেকের মধ্যে মাইগ্রেন হতে দেখা যায়। হাত-পা অসাড় হয়ে গিয়েও শুরু হতে পারে মাইগ্রেন। ভাসকুলার মাইগ্রেনের প্রকোপটা বেশি দেখা যায়। হরমোনের তারতম্য কিংবা উপবাস, মানসিক চাপও মাইগ্রেনের জন্য দায়ী। এছাড়া অনিদ্রা, সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ না করা, তীব্র আলোও দায়ী থাকে মাইগ্রেনের পেছনে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাইগ্রেনের প্রবণতা কমে, কষ্টও কমে। এছাড়া অ্যালার্জি, খাদ্য ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এবং বিশেষ করে অতিরিক্ত ঘামের ফলে মাইগ্রেন সমস্যা তৈরি হয়।
মাইগ্রেনের জন্য কি কোনো
খাবারকে দায়ী করা যায়
অবশ্যই। কিছু উত্তেজক খাবার আছে যেগুলো মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। যেমন কোক, অ্যালকোহল, চিজ, কনটেনার ফুড, কফি, দুধ চা, কোল্ড ড্রিষ্কস, সিগারেট।
রোগের আভাস
যারা বারবার মাইগ্রেনে ভোগেন তারা আগে-ভাগেই বুঝতে পারেন তার মাইগ্রেন হতে যাচ্ছে। এই সময় ঘুম কমে যায়, অকারণে ক্লান্তি ও অবসাদ ঘিরে ধরে। চোখের সামনে আলোর ঝলকানি, শারীরিক দুর্বলতা, মাথাব্যথা দিয়ে শুরু হয় সমস্যা।
লক্ষণ কী কী
মাইগ্রেনে মাথা ব্যথা ছাড়া বমি ভাব, চোখের যন্ত্রণা, দেখার অসুবিধে, খিদে কমে যাওয়া, শব্দ ও আলো সহ্য করতে না পারার মতো লক্ষণ থাকে। রোগীর এইসময় মাথাধরাও হাতে-পায়ে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
ব্যথাটা কী ধরনের হয়
প্রধানত সকালের দিকে শুরু হয় অল্প অল্প ব্যথা দিয়ে, বেলা বাড়ার সাথে সাথে ব্যথা বেড়ে যায়। তখন সারা কপাল জুড়ে ব্যথা করতে থাকে। অনেকের এই সময় বমি হয়। কথা বলতে ভালো লাগে না। দু’-তিনদিন বাদে ব্যথা কমে গিয়ে রোগী স্বাভাবিক হয়ে যায়।
উপসর্গ অনুসারে মাইগ্রেনের
প্রকারভেদ
মাইগ্রেনকে তিনভাগে ভাগ করা হয়।
যেমন—
কমন মাইগ্রেন: এই ধরনের মাথা ব্যথা সাধারণত বেশি দেখা যায়। এই ধরনের মাইগ্রেনে কোনো পূর্বলক্ষণ থাকে না। মাথার কোনো একদিকে অসহ্য ব্যথা করতে থাকে। বমি হতে পারে সঙ্গে। দু’-একদিন পর রোগী ঠিক হয়ে যায়।
ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেন: এই ধরনের মাইগ্রেনে ব্যথা তো থাকবেই তাছাড়া চোখের সামনে সাদা অথবা রঙিন পর্দা থাকে, আকাবাকা বা সরল-সোজা রেখা ভাসতে থাকে, হাত-পা অসাড় হয়ে যায়, কপালের যে কোনো এক দিকে ব্যথা হয়, সঙ্গে মাথার তীব্র যন্ত্রণা, দুর্বলতা দেখা যায়।
কমপ্লিকেটেড মাইগ্রেন: এই ধরনের মাইগ্রেন বেশ কয়েকদিন ধরে চলে। বারবার বমি হয়, দেখার অসুবিধা তৈরি হয়।
চিকিৎসা
নানারকম ওষুধের সাহায্যে মাইগ্রেনের চিকিৎসা করা হয়। ব্যথা কমাবার ওষুধ দেওয়া হয়। নিয়মিত ব্লাডপ্রেসার ও সুগার চেক করতে হবে। তার সাথে রক্তের লিপিড প্রোফাইলও দেখতে হয়। কতদিন ওষুধ খাবেন রোগী, তা রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে ঠিক করেন চিকিৎসক।
যাতে না হয় তার জন্য করণীয়
মাইগ্রেন থেকে বাঁচতে বেশি রোদ যাতে না লাগে সেটা দেখতে হবে। নিয়মিত সাঁতার, ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করতে হবে। কোনোরকম নেশায় অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করতে হবে। অতিরিক্ত পরিশ্রম, উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা কমাতে হবে। কম অথবা বেশি না ঘুমোনোর দিকে নজর দিতে হবে।
আসল কথা হচ্ছে মাথাব্যথার কারণগুলোকে দূরে সরাতে হবে। গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট ব্যবহারে, পিরিয়ডের সময় এবং বয়ঃসন্ধির হরমোন ক্ষরণে মাইগ্রেনের আক্রমণ হয়, সেদিকেও অবশ্যই নজর রাখতে হবে।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন