শুক্রাণু কমে থাকলেও বাবা হবেন অনায়াসে
ডাঃ কৌশিকী রায়
2019-05-21 11:26:09
কৃত্রিমভাবে গর্ভধারণের কাজে আরও বেশি সাফল্য লাভ করতে বিজ্ঞান নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছে। সন্তানধারণে অক্ষম দম্পতি কিংবা সিঙ্গল মাদার, এই দুই শ্রেণীর মুখেই সন্তানলাভের হাসি ফোটাতে পারে অত্যাধুনিক চিকিৎসা-বিজ্ঞান। আজকাল অনেক সিঙ্গল মাদার নিজের গর্ভজাত সন্তানের মাতৃত্বের স্বাদ আস্বাদন করতে ইচ্ছুক। তারাও ভিড় জমাচ্ছে বিজ্ঞানের দরজায়। আর এ কাজে আই.ভি.এফ একমাত্র সমাধান। কৃত্রিমভাবে গর্ভধারণের পথে যে প্রক্রিয়া প্রধানত ব্যবহৃত হচ্ছে, চিকিৎসার পরিভাষায় তার নাম আই.সি.এস.আই বা ইন্ট্রা-সাইপোপ্লাজমিক স্পার্ম ইঞ্জেকশন। আই.ভি.এফ-এর কাজে এতদিন অবধি একমাত্র এই প্রক্রিয়াই ব্যবহৃত হত। তবে সব কিছুরই তো উন্নতিসাধন ঘটছে। ফলে এই প্রক্রিয়াতেও সর্বাঙ্গীন উন্নতি আনছেন বিজ্ঞানী আর চিকিৎসকেরা মিলিতভাবে। সেই উন্নত পর্যায়েরই নাম দেওয়া হয়েছে আই.এম.এস.আই।
আই.এম.এস.আই কী? আই.সি.এস.আই-এর থেকে তার তফাৎ কোথায়
আই.এম.এস.আই নিয়ে আলোচনার আগে আই.সি.এস.আই সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আই.ভি.এফ পর্যায় যতই উন্নত হোক না কেন, সর্বক্ষেত্রে এর সাফল্যের হার কিন্তু সমান নয়। ঠিক ভাবে বলতে গেলে প্রথমবারেই যে এর থেকে একশো ভাগ সাফল্য পাওয়া যাবে, তেমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। কোনও কোনও ক্লিনিকে এর সাফল্যের হার খুব বেশি, কোথাও আবার ততটা নয়। ফলে এর উন্নতিকল্পে চেষ্টা চলছে জোরদার। বিজ্ঞান চাইছে, অদূর ভবিষ্যতে আই.ভি.এফ-এর প্রথম পর্যায়েই যাতে একশো শতাংশ সাফল্য পাওয়া যায়। ফলে মানুষের স্বপ্ন, আবেগ আর অর্থ তিনটেরই সাশ্রয় হবে। কারণ এখন সাফল্য পেতে গেলে কখনো কখনো আই.ভি.এফ-এর অনেকগুলো পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হতে পারে। সেটা মোটেও কাম্য নয়। আই.সি.এস.আই অবশ্য আই.ভি.এফ-এর সাফল্য বেশ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।
আই.সি.এস.আই হল এগ সেলের ভেতরে সরাসরি ইঞ্জেকশনের মধ্যে দিয়ে স্পার্ম সেলকে প্রবেশ করানো। সেই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করে যে, স্পার্ম সেলের ভেতরে অপ্রয়োজনীয় কোনও উপাদান যেন না থাকে। ফলে সরাসরি এগ সেল আর স্পার্ম সেলের যোগাযোগ ঘটাতে পারছে এই প্রক্রিয়া। পুরুষ ইনফার্টিলিটির ক্ষেত্রেও এটা খুব সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। স্পার্ম কাউন্ট কম থাকলে বা অন্যান্য অসুবিধা থাকলে স্বাভাবিক উপায়ে গর্ভধারণ করা সম্ভব হয় না যখন, তখন খুব কাজে আসে এই পদ্ধতি। আই.সি.এস.আই এগ সেলের সঙ্গে স্পার্ম সেলের সঠিক মিলনকে অনেকখানি নিশ্চিত করে। এই প্রক্রিয়া যত সফল ও সঠিক হয়, ততই আ.ভি.এফ-এর সাফল্য। তবে সবসময়ই উন্নতির জায়গা তো খোলাই আছে। এই উন্নত প্রক্রিয়াই হল আই.সি.এস.আই। আই.সি.এস.আই-কে এ এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে সেরার সেরা সম্ভাব্য স্পার্ম বাছা যায়, যা এগ সেলের সঙ্গে মিলনে গর্ভসঞ্চার করবেই।
খুব শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে এই সেরার সেরা সম্ভাব্য স্পার্ম বেছে ফেলা সহজ হয়। এবার আই.সি.এস.আই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই স্পার্ম পাঠিয়ে দেওয়া হয় এগ সেলের মধ্যে। তাতে এই প্রক্রিয়ার সাফল্যের হার বেড়ে যায় বহুগুণ। সাধারণ আই.সি.এস.আই প্রক্রিয়ায় স্পার্মগুলোকে বিশেষ এক ডিশে পলিভিনাইলপাইরোলিডন (পিভিপি)-তে রেখে তার চলন, আকার, কার্যকারিতা অনুসারে সেরা বেছে নেওয়ার রীতে রয়েছে। তারপর অত্যন্ত পরিষ্কার, অত্যাধুনিক এক সূঁচের সাহায্যে ওই স্পার্ম তুলে নিয়ে এগ সেলে ইঞ্জেকশন করতে হয়। তার আগে এক বিশেষ ধরনের এনজাইম দিয়ে এগ সেলকে এই কাজের উপযোগী করে তুলতে হয়। এই এনজাইমের ফলে এগ সেলটি অন্যান্য কিউমুলাস সেল থেকে মুক্ত হয়ে সাফসুতরো হয়ে থাকতে পারে। ফলে সেটা অনেক বেশি কার্যকরী হয়ে ওঠে। অবশ্য স্বাভাবিক গর্ভদারণের কাজে এই কিউমুলাস সেলগুলো ভীষণ উপযোগী। একবার ডিম্বাণুর সঙ্গে শুক্রাণুর মিলন ঘটে যাওয়ার পর এই কিউমুলাস সেলগুলো সেই নিষিক্ত ডিম্বাণুকে অন্য শুক্রাণুর মধ্যে প্রবেশ করা ঠেকিয়ে দেয়। কারণ এই সেলগুলোর প্রভাবে ডিম্বাণুর বাইরের খোলস খুব কঠিন হয়ে যায়। ফলে তার ভেতরে শুক্রাণু ঢুকতে বাধা পায়। তবে আই.সি.এস.আই প্রক্রিয়ায় ডিম্বাণু বা এগ সেলের সাইটোপ্লাজমে অত্যন্ত নিখুঁত সূঁচের সাহায্যে সরাসরি একটি মাত্র স্পার্ম ইঞ্জেক্ট করা হয়ে থাকে। ডিম্বাণার বাইরের খোলস ভেঙে এই স্পার্ম বা শুক্রাণু ঢুকে যায় তার ভেতরে।
সাধারণভাবে আই.ভি.এফ চক্র ব্যর্থ হলে আই.সি.এস.আই-এর সাহায্য নেওয়াটা অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষ করে যে দম্পতিদের ক্ষেত্রে গোলযোগ পুরুষদের স্পার্মে, তাদের পক্ষে তো বটেই। তবে আই.সি.এস.আই-এর উপযোগিতা নিয়ে এখনও অনেক জানা এবং জানোনো বাকি। সেই সঙ্গে দরকার তার সঠিক মূল্যমান নির্ধারণ করা। কারণ এখনও এর খরচা অনেক বেশি। এ বিষয়ে আরও উন্নত প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে আরও বেশি মানুষ এই সুবিধা নিতে পারবেন।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন