বার্ধক্য ডিঙিয়ে দীর্ঘায়ু
ডাঃ বলরাম জানা
2019-05-21 12:39:55
মৃত্যু মানুষের অনিবার্য ফল। তবু মানুষ বাঁচতে চায়। বয়স বাড়লেও বাঁচার আকাঙক্ষা কমে যায় না। বরং তারণ্য লাভের আকাঙক্ষা প্রবলতর হয়। কিন্তু মৃত্যুর মতোই বার্ধক্যের জরা-জীর্ণতা অনিবার্য। বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায় নিঃসঙ্গতা, হ্রাস পায় জীবনের চাঞ্চল্য। দার্শনিক অ্যারিস্টটল বলেছেন, ‘বার্ধক্য হচ্ছে দুঃখময় জীবনের বীভৎস অবস্থা।’ এর বিপরীত মন্তব্য করেছেন দার্শনিক প্লেটো। তিনি বলেছেন, ‘বার্ধক্যের ভারে নুয়ে পড়েছেন এমন পিতা বা পিতামহ, মাতা বা মাতামহ ছাড়া পুজো করার মতো শ্রদ্ধেয় কিছু পাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কুঁড়ি থেকে ফুল, ফুল থেকে ফল, আর সেই ফল পেকে টলটলে হলে আপনভাবেই নীচে পড়ে যায়। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। বৃদ্ধ হলেই মানুষের স্মুতি, দৃষ্টিশক্তি, কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। কিন্তু বার্ধক্য থেকে কি মুক্তি সম্ভব?
এই প্রশ্ন অনুসন্থান করারজন্যেই বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে চলেছেন। তা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কোনো বয়সের সীমারেখায় বার্ধক্যকে বেঁধে রাখা সম্ভব হয়নি।
জীবনরেখার দুটি প্রান্ত---জন্ম ও মৃত্যু। সাধারণত নিয়মে জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জীবনকে বাল্য, কৈশোর, যৌবন, পৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য এই পাঁচটি স্তর অতিক্রম করতে হয়। এক একটি অবস্থা পার হয়ে যাওয়াকে আমরা বলি বয়স বাড়ছে। শরীর ও মনের সম্পর্ক এত ঘনিষ্ট যে একটির পরিবর্তন ঘটলে অন্যটিরও পরিবর্তন ঘটে। বিজ্ঞানীদের মতে, বার্ধকের কারণ ইন্দ্রিয়ের কার্যকারিতার ক্রমিক হ্রাস, গ্রন্থির শৈথিল্য, রস নিঃসরণ বন্ধ হওয়া, অপুষ্টি, রোগের আক্রমণ বৃদ্ধি ইত্যাদি। এক বিখ্যাত কবির মতে, বার্ধক্য হল জীবন নামক খেলার মাঠে দ্বাদশ খেলোয়াড়।
জীবনের বিভিন্ন স্তর বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলেছেন---
- তিরিশ বছর বয়সই হচ্ছে মানুষের শ্রেষ্ঠ সময়। তবু এই সময়েই বয়সের ছাপ পড়তে থাকে শরীর ও মুখে। শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে এবং সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের পরিধিও কমতে থাকে।
- চল্লিশ বছর বয়সে মানুষের উচ্চতা কিছুটা হ্রাস পায়। প্রতিটি মাথার চুল দুই মাইক্রোন হালকা হয়ে যায়। কোমর ও ছাতি ঝুলতে শুরু করে। মেদও শরীরকে আক্রমণ করে। কর্মশক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে। কোনো কোনো হৃৎপিন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে।
- পঞ্চাশ বছর বয়সে চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। গলার স্বর মোটা হয়ে আসে। বৃদ্ধাঙ্গুলের নখের বৃদ্ধির হার হ্রাস পায়। কোমর সর্বোচ্চ পরিধিতে উপনীত হয়।
- ষাট বছর বয়সে উচ্চতা কমে যায় পৌনে এক ইঞ্চি। ফুসফুসের কর্মক্ষমতা তিরিশ বছরের তুলনায় অর্ধেক হয়ে যায়। স্বাদ গ্রহণের পার্থক্য নির্ণয়ে অসুবিধা হয়।
- সত্তর বছর বয়সে হৃৎপিন্ডে রক্ত সঞ্চালন, শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। তিরিশ বছর বয়সে দেহের চল্লিশ শতাংশই থাকে মাংসপেশি। এরপর চার দশকে দশ পাউন্ড ওজন হ্রাস পায়। বয়সের সঙ্গে ওজন শৈথিল্য দু-ই বৃদ্ধি পায়। টিসু দুর্বল হয়ে পড়ে।
কিডনি
দেহের রক্ত পরিশোধনে কিডনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সত্তর বছর বয়সে কিডনি তিরিশ বছরের তুলনায় মাত্র অর্ধেক রক্ত পরিশোধন করতে পারে। এই সময় প্রস্রাবের বেগও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। কারণ, এই সময় মূত্রনালী মাত্র এক কাপ পরিমাণমতো মূত্র ধারণ করতে পারে। অথচ তিরিশ বছর বয়সে এই ধারণক্ষমতা দ্বিগুণ থাকে।
হৃৎপিন্ড
হৃৎপিন্ড জীবন এক সুতোয় গাঁথা। এর স্পন্দন বন্ধ হওয়ার অর্থ হচ্ছে মৃত্যু। সারাজীবন ধরে একই নিয়মে কাজ করে যায় হৃৎপিন্ড। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর হেরফের হয় খুবই সামান্য। তবে রক্তের উচ্চচাপ বা নিম্নচাপের হার বৃদ্ধি পায়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। এই সময় হৃৎপিন্ডের মাংসপেশি শিথিল হয়ে যায়। হৃৎপিন্ডে রক্ত প্রবাহের পরিমাণ কমে যায়। ফলে নাড়ি কিছুটা শিথিল হয়ে পড়ে। বয়ষ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে শিরায় রক্ত চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়, যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তিরিশ বছর বয়সে ব্যায়ামের সময় সাধালণ হৃৎপিন্ডের সর্বোচ্চ গতি দুই শত বিট থাকে, কিন্তু সত্তর বছর বয়সে তা থাকে দেড় শত বিট।
স্ট্যামিনা ও ফুসফুস
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের স্ট্যামিনা হ্রাস পায়। ফলে বুড়োরা কম ওজন বহন করতে পারে। পরিশ্রম করলে হৃৎপিন্ডের স্পন্দন স্বাভাবিক হতেও বেশি সময় লাগে। তিরিশ বছর বয়সে যদি কেউ এক মিনিটে এক হাজার একশো দশ পাউন্ড ওজন সরাতে পারে, তাহলে সত্তর বছর বয়সে মাত্র আটশো পাউন্ড ওজন সরাতে পারে। এতে পরিশ্রমের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। বয়স ফুসফুস ও মাংসপেশিকে দুর্বল করে। ফলে গভীর শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। এমনকী কোনো কোনো সময় শ্বাসকষ্টও বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এটা বুড়োদের সহ্য হয়ে যায়।
যৌনক্ষমতা
যৌনক্ষমতা একটি অনুভূতির ব্যাপার এবং সম্পূর্ণ মানসিক ব্যাপার। সাধারণত দেখা যায়, বিয়ের পর মানুষের যৌনতা সম্পের্কে আগ্রহ সামান্য হলেও কমে যায়। তবে বয়স বাড়ার সাথে এই সম্পর্কে আবেগ কমে যায়। সত্তর বছর বয়সের বৃদ্ধরা সাধারণত যৌনতার ব্যাপারে দিবাস্বপ্ন দেখেন না। কেন এমন হয়, এই নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, হরমোনের সামাঞ্জস্যের ঘাটতি এর জন্য দায়ী।
মগজ
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্ক সংকুচিত হতে থাকে। কারণ এই সময় থেকে নিউরোনের সংখ্যা কমতে থাকে। এই ক্ষেত্রে ঘুম নিয়ন্ত্রণের সেল আক্রান্ত হয় বেশি। তবে বুদ্ধির স্তরের সেল ততটা ধ্বংস হয় না। কিন্তু আই.কিউ কমতে থাকে। বুড়ো বয়সে গত বাঁধা কোনো পরীক্ষা দিয়ে বুদ্ধিবৃত্তি পরিমাপ করা সম্ভব নয়। পঞ্চাশ বছর বয়সের পর স্মরণশক্তি কমে যায়। বুড়ো বয়সে ঘুম হ্রাস পাওয়ার কারণ ঘুম নিয়ন্ত্রণের সেলগুলির ক্রমবর্ধমান মৃত্যু।
দাঁতের সমস্যা
বয়স দাঁতকে কম আক্রমণ করে। এই ক্ষেত্রে একমাত্র সমস্যা দাঁত পড়ে যাওয়া। সুষ্ঠ পদ্ধতিতে চললে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দাঁতের এনামেল হালকা হতে থাকে। তবে মাত্রা অত্যন্ত সীমিত। মাড়ি ও দাঁতের সমস্যার সৃষ্টি হয় মূলত অবহেলা ও রোগের কারণে। সত্তর বছর বয়সে সাধারণত দুই-তৃতীয়াংশ দাঁত পড়ে যায়।
চুল, হাড় ও খুলি
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের শরীরের লোম বাড়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মাথার চুল কমে । এই সময় মাথায় চুল কমলেও কান ও নাকের লোম বাড়ে। এতে হয়তো বুড়োদের অস্বস্তি বাড়ে, কিন্তু এর কোনো প্রতিকার নেই। এই সময় মাথায় চুল সাদা হতে থাকে। এটা রোধ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিশ বছর বয়সে চুল যদি থাকে একশো এক মাইক্রোন, সত্তর বছর বয়সে তা দাঁড়ায় আশি মাইক্রোনে। কারো কারো মাথার চুল পড়ে টাকের সৃষ্টি হয়। তবে টাক সৃষ্টি সঙ্গে বয়সের সম্পর্কে খুব সামান্য। এখানে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাথার খুলির আকার বৃদ্ধি পায়। তিরিশ বছর বয়সের তুলনায় সত্তর বছর বয়সে বুকের প্রশস্ততা বৃদ্ধি পায়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। ফলে হাড় নরম হয়ে যায় এবং হাড় ভেঙে গেলে জোড়া লাগতে বেশি সময় লাগে। কোনো কোনো সময় জোড়া লাগেও না।
চামড়া
সূর্যের তাপে শরীরে কালো হয়ে যায়। চামড়া কুঁচকে পড়ে। সূর্যালোকের আলট্রা ভায়োলেট চামড়ার ভাঁজকে দৃঢ় তরে। সূর্যালোক থেকে শরীর দূরে রাখলে চামড়ার শুকনো ভাব কমে এবং স্থিতিস্থাপকতা ঠিক থাকে। সূর্যের আলোক না পাওয়ার শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় বুড়ো বয়সেও নিতম্বের চামড়া মসৃণ থাকে। তাই চেহারায় তারর্ণ ও চামড়ার মসৃণতা বজায় রাখার জন্য সূর্য তাপ থেকে দূরে থাকা উচিত। অথবা রোদের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় শরীরে পোশাকে ঢেকে যাতায়াত করা উচিত। প্রয়োজনে মাথায় ছাতা, টুপি ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঘ্রাণ গ্রহণের ক্ষমতা
বুড়োদের মধ্যে ঘ্রাণ গ্রহণের ক্ষমতা কম। এই জন্য অনেক সময় খাদ্য গ্রহণেও অরুচি দেখা দেয়। সম্প্রতি পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ্রান ও স্বাদ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড ডটি বিভিন্ন বয়সের ১৯৫০ জন ব্যক্তির ওপর এই সম্পর্কে গবেষণা চালান। তাদের বয়স পাঁচ থেকে নিরানব্বই বছর পর্যন্ত। বিজ্ঞানী রিচার্ড ডটি বলেছেন, মানুষ মোটামুটি পাঁচ হাজার রকমের ঘ্রাণ অনুভব করতে পারে। তিনি সমীক্ষা চালানোর সময় বিভিন্ন ব্যক্তিকে রুটি, বীট, চীজ, পেঁয়াজ, সাবান সহ আরও নানা রকম জিনিসের ঘ্রাণ গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন এবং তাদের ঘ্রাণ গ্রহণের জরিপ শেষ হলে তিনি ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখেন, পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের ঘ্রাণ ক্ষমতা বেশি। ধূমপায়ীদের ঘ্রাণ গ্রহণের ক্ষমতা অধুমপায়ীদের চেয়ে কম। ষাট বছরের পর নারী-পুরুষ সকলের মধ্যেই ঘ্রাণ গ্রহণের ক্ষমতা কমতে থাকে এবং খাদ্যে অরুচি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমনকী তখন থেকে বিভিন্ন ঘ্রাণের পার্থক্য অনুধাবন করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
হজমশক্তি
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য হজম করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। তবে এই সময়ে সুষম খাদ্য খেলে তেমস অসুবিধা হয় না। কোনো কোনো বিজ্ঞানী মনে করেন, সুষম খাদ্যের সঙ্গে প্রয়োজন বাড়তি ভিটামিন-ই। তবে এই ব্যাপারে মতপার্থক্য আছে। কিন্তু এই কথা ঠিক, সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরের ওপর বার্ধক্যের ভার কম থাকে। বাইরের দিক থেকে দেখলে কম বয়স্ক মনে হয়। প্রয়োজনের তুলনায় দেহের ওজন বেশি হলে বার্ধক্য জাপটে ধরে দ্রুত।
অতি বার্ধক্য
অতি বার্ধক্যকে বলা যেতে পারে জরা। এই অবস্থায় বার্ধক্যের লক্ষণগুলি রোগের আকারে দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলির মধ্যে আছে স্মৃতিভ্রংশ, বুদ্ধিভ্রংশ, চলচ্ছক্তিহীন অবস্থা, শিশুসুলভ আচরণ ইত্যাদি। তখন অনেকেই তাকে পরিবারের বোঝা মনে করেন। কিন্তু বুড়ো হলেও বেঁচে থাকার আকাঙক্ষা কমে না। বরং অতীতের মধুর স্মৃতিগুলি আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চান বৃদ্ধরা। কিন্তু আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থার কারণে বৃদ্ধদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। অনেকে সমস্যাটি মনে করেন অর্থনৈতিক। কিন্তু এর বিপরীত যুক্তিও আছে। উন্নত বিশ্বে বৃদ্ধদের জন্য অনেক কল্যাণমূলক ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তারা সমাজে পূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত নন। বরং এই বয়সে অনুন্নত বিশ্বের থেকে উন্নত বিশ্বের বৃদ্ধরা বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। তাদের কাছ থেকে আত্মীয়-স্বজনরা দূরে সরে থাকেন। এই অবস্থায় তাদের জীবন দুর্বিষহ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
প্রতিভা ও বয়স
প্রতিভার কাছে বয়স পরাজিত হলেও শরীরে তার চাপ পড়বেই। কিন্তু এটা বড় কথা নয়। কারণ একজন মানুষ মহৎ হয়ে ওঠেন তার প্রতিভায়। প্রতিভাবান অনেক ব্যক্তির বার্ধক্য আসার পরও স্মরণীয় ইতিহাসের সৃষ্টি করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো কঠিন সময়ে প্রধানমন্ত্রী চার্লিন হাল ধরেছিলেন বিট্রিশ সাম্যাজ্যের। বার্ধক্যেই পিকাসো সৃষ্টি করেছিলেন চিত্রাষ্কণ ও ভাস্ককর্যের নতুন দিগন্ত। মাও সে তুং চীনকে দান করেছেন নতুন মাত্রা। আর বিশ্বকে দিয়েছেন নতুন চিন্তা।
বার্ধক্য রোধে কী করণীয়
বার্ধক্য প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলে মনে রাখতে হবে তামাক সেবন ও ধূমপান বয়সের ছাপকে দ্রততর স্পষ্ট করে তোলে। চির তারুণ্য লাভের কামনা মানুষের চিরকালেল। কিন্তু তা এখনও মানুষের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তবে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিচর্চার মাধ্যমে বার্ধক্যকে ধীর গতি সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু এই কথা কেউ কেউ মানতে রাজি নন। যারা এই মত মানতে রাজি নন, তাদের মত হচ্ছে, মানুষের দৈহিক গঠনের মূল কাঠামোর নিয়ন্ত্রণ শক্তি গড়ে তোলে লক্ষ কোটি সেল বা কোষ। প্রত্যেক কোষেই একটি বিশেষ বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকার ক্ষমতা আছে। এরপর তা মরতে শুরু করে। কোষের মৃত্যুর হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বার্ধক্যের জরাজীর্ণতাও বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থায় বার্ধক্যের যে সব ব্যাপারে আপনাকে অধিকতর সচেতন হতে হবে তা হল—
- ধূমপান ও তামাক সেবন ছেড়ে দিন।
- মদ্যপানে বিরত থাকুন।
- দুই আহারের মাঝখানে অন্য কিছু খাবেন না।
- চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। এর পরিবর্তে আশযুক্ত খাদ্য ও ভিটামিন-এ ও সি সমৃদ্ধ খাদ্যের প্রতি নজর দিন।
- সপ্তাহের মধ্যে কমপক্ষে চারদিন তিরিশি মিনিট করে নিয়মিত সকাল কিংবা বিকালে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হাঁটা অত্যন্ত উৎকৃষ্ট ব্যায়াম। হাঁটলে পেশি সবল থাকে এবং মানসিক চাপ হ্রাস পায়। মধ্য ষাটের কয়েকজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে হাঁটার ফলে দেহের চর্বি কমছে। দেহের প্রসারণ ক্ষমতা কমছে, হাড়ের ক্যালসিয়াম ক্ষয় বন্ধ হয়েছে। যৌবনের উৎস ধরে রাখার একটি উৎকৃষ্ট পথ হচ্ছে হাঁটা।
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আর রোগ হলে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বার্ধক্য দ্রুত আক্রমণ করে। পরিবেশের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য একযোগে কাজ করুন। কারখানার দূষিত পরিবেশ থেকে দূরে বসবাস করুন এবং তেজস্ক্রিয় আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলুন।
-
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন