হাইপারটেনশন ও হার্ট অ্যাটাকের যুগলবন্দি
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-01 12:24:16
হাইপার টেনশনের কারনে হার্টের আর্টারিগুলো বন্ধ হয়ে অ্যাঞ্জাইনা বা মায়োকার্ডিয়াল আনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে। এই কারনে উচ্চ রক্তচাপকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের ক্ষতি হওয়ার জন্য বিশেষ কিছু কারন দায়ী থাকে যেগুলোকে বলা হয় রিস্ক ফ্যাক্টর। যেমন হাইপার টেনশন, ডায়াবেটিস, ধূমপান ও মদ্যপান, হাই কোলেস্টেরল, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, বংশগত কারণ, কায়িক শ্রমের অভাব, শারীরিক ওজন বৃদ্ধি, মহিলাদের মেনোপজ ওরাল কনট্রাসেপটিভ পিল এবং বয়সজনিত কারণ। এখানে আলোচ্য বিষয় হাইপার টেনশন থেকে হার্টের সমস্যা। হাইপার টেনশন রোগীদের দুটি ভাগে ভাগ করে নেওয়া হয়- প্রাইমারী হাইপার টেনশন ও সেকেন্ডরি হাইপার টেনশন। প্রাইমারি হাইপার টেনশন প্রেসার বাড়া বা কমার পিছনে কারো পারিবারিক ইতিহাস থাকে অর্থাৎ রোগীর বাড়ি কিংবা নিকট আত্নীয়দের মধ্যে কেউ হাইপার টেনশনে আক্রান্ত ছিল বা আছে। সেকেন্ডারি হাইপার টেনশন কিডনি, টিউমারজনিত কারণ, হরমোনজনিত কারণে যে হাইপার টেনশন হয় তাকে বলে সেকেন্ডারি হাইপার টেনশন। কিডনি থেকে রেনিন নামে এক ধরনের হরমোন ক্ষরিত হয়। কিডনি সমস্যা থাকলে এই হরমোন ক্ষরণের তারতম্য ঘটে। ফলে সৃষ্ট হয় উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। অ্যাড্রেনাল টিউমারের কারণেও রক্তচাপের তারতম্য দেখা দিতে পারে। মহিলাদের মেনোপজের পর রক্তচাপের পরিবর্তন দেখা যায় এবং মধ্য বয়সে পুরুষের মধ্যে রক্তচাপের সমস্যা বাড়ে। এগুলি সবই সেকেন্ডারি হাইপার টেনশন। হার্ট অ্যাটাক ও ব্লাড প্রেসার রক্তচাপের সাথে হার্ট অ্যাটাকের সম্পর্ক সরাসরি। যদি রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিমি পারদের চাপের বেশি হয় তাহলে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। যদি করো সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৬০ মিমির বেশি থাকে, কিন্তু ডায়োস্টোলিক রক্তচাপ স্বাভাবিক অর্থাৎ ৯০ মিমির কম থাকে তাহলে তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন বলা হয়ে থাকে। আবার কারো রক্তচাপ যদি ওপরের ১৩০ মিমি কিন্তু নীচেরটা ১০০ মিমি থাকে, তবে তিনিও উচ্চ রক্তচাপের রোগী অর্থাৎ আইসোলেটেড ডায়োস্টোলিক হাইপার টেনশন। উচ্চ রক্তচাপ রক্ত সংবহনতন্ত্রে সবচেয়ে সাধারণ অসুখ। যদি কারো মা অথবা বাবার কিংবা উভয়েরই উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাহলে তার সাবধান চলা উচিত। সাধারণত রক্তচাপ যখন বেড়ে যায় অর্থাৎ ১৪০/৯০-এর ওপরে, রক্ত হার্টের আর্টারিতে ধাক্কা দিতে থাকে। হার্টের আর্টারি তখন সঙ্কচিত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রসারিত না হতে পারার কারণে হার্টের পেশিতে অক্সিজেনের জোগান কমে যায়। তার ফলে পেশিগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এটাকেই হার্ট অ্যাটাক বলে। হার্ট অ্যাটাক দু’ ধরনের হয়। প্রথমত, ডায়নামিক। এই ধরনের হার্ট অ্যাটাকে হার্টের আর্টারি প্রথমে সঙ্কচিত হয়ে থাকলেও আবার প্রসারিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুত সম্ভবনা কম থাকে। আর এক ধরনের হার্ট অ্যাটাককে বলে স্ট্যাটিক হার্ট অ্যাটাক। এক্ষে ব্লাড ভেসেলের ভিতর ফ্যাট জাতীয় বস্ত জমে গিয়ে হার্টেও আর্টারিকে সঙ্কচিত করে দেয়। এই কারণে অক্সিজেনের জোগান কমে গিয়ে হার্টের আর্টারির পেশিগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। যারা পরিশ্রম কম করেন, ধূমপান ও মদ্যপান করেন, টেনশনে ভোগেন, যাদের ওজন বেশি, অত্যধিক নুন খাবার প্রবণতা, তাদের হাইপার টেনশনে ভুগতে বেশি দেখা যায়। এই ধরনের অ্যাটাকে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা না নিতে পারলে রোগীর মৃতু অবশ্যম্ভাবী। উচ্চ রক্তচাপ এ ধরনের হার্ট অ্যাটাককে ত্বরন্বিত করে। রক্তচাপ খুব বেশি নীচে নেমে যাবার কারণেও হার্ট অ্যার্টাক হতে পারে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হাইপারটেনশন থেকেই হার্ট অ্যাটাক হয়। উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ প্রাথমিক অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ কোনোরকম লক্ষণ নিয়ে আসে না। রক্তচাপ খুব বেশি বেড়ে গেলে ঘাড়ে, কোমরে ব্যথা, মাথা ঘোরা, কান গরম হয়ে ওঠা , গা বমি বমি ভাব, ঘাম হতে থাকে। মাথার পিছনে ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। হাইপার টেনশন নানা কারনে হতে পারে। যেসন নুন খাওয়া বা সল্টেড জিনিস খাওয়ার প্রবণতা, জাঙ্কফুড, ভাজাভুজি খাওয়ার প্রবণতা হাইপার টেনশন বাড়িয়ে দেয়। হাইপার টেনশনের কারণে হার্টের আর্টারিগুলো বন্ধ হয়ে অ্যাঞ্জাইনা বা মায়োকার্ডিয়াল আনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে। এই কারণে উচ্চ রক্তচাপকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ ভিতরে ভিতরে রক্তবাহিত নালী বøাড ভেসেলের ক্ষতি করে দেয় হাইপার টেনশন। এর ওপরে কেউ যদি হাইপার টেনশনের চিকিৎসা ঠিকমতো না করেন, তাহলে যা ক্ষতি হবার হয়ে যাবে। রোগীর জীবন নংশয় অসম্ভব নয়। চিকিৎসা চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষ ও মহিলাদের নিয়মিত চেক আপ করাতে হবে। হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসার প্রধান বিষয় হল নিম্ন ও উচ্চ উভয় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ওষধ খেতে হবে নিয়মিত। এছাড়া ইসিজি ও ইকো কার্ডিওগ্রাফ করার দরকার হলে সেটাও করা দরকার। উচ্চ রক্তচাপ কী কারণে হচ্ছে সেটা দেখে নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।চিকিৎসক না দেখিয়ে কখনোই ওষধ খাবেন না। যদি প্রাইমারি কারণে হার্টের অসুখ হয় তাহলে সারাজীবন ওষধ খেতে হবে। যারা পরিশ্রম কম করেন, ধূমপান ও মদ্যপান করেন, টেনশনে ভোগেন, যাদের ওজন বেশি, অত্যধিক নুন খাবার প্রবণতা, তাদের হাইপার টেনশনে ভুগতে বেশি দেখা যায়। জীবনশৈলীর পরিবর্তন, পরিমিত আহার, মদ্যপান ও ধূমপান বন্ধ, সঠিক বিশ্রামের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রেসার সবসময় ১৪০/৮০-র মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে। হার্ট পাম্প না করা, হার্ট ফেলিওর এবং অ্যাঞ্জাইনার মতো সমস্যাগুলো কিন্তু হাইপার টেনশন থেকেই হয়। তাই সবসময় প্রেসার চেক আপ ও ইসিজি করে হার্টের অবস্থা জেনে নিন। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন