কখন বাইপাস সার্জারি
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-06 14:13:07
আমরা সাধারণ ভাবে যাকে বাইপাস সার্জারি বলি তাকেই ডাক্তারি পরিভাষায় করোনারি বাইপাস সার্জারি বলে। বাইপাস সার্জারি হল। যার সাহায্যে হৃদপিন্ড ও ফুসফুসকে অচল রেখে হৃৎপিন্ডের ভেতরের বা বাইরের অস্ত্রোপচার করা। যেমন হৃৎপিন্ডের কপাটিকা পাল্টে দেওয়া অথবা হৃৎপিন্ডের রক্তবাহী নালির বাইপাস অপারেশন করা। এখন সবচেয়ে প্রচলিত অপারেশনগুলোর মধ্যে পড়ে করোনারি বাইপাস সার্জারি। এ সমন্ধে কিছু বলতে গেলে হৃৎপিন্ডের রক্তবাহী নালির কথা বলা প্রয়োজন। হৃৎপিন্ডে রক্ত সরবরাহ করে দুটো করোনারি ধমনী-ডান ও বাম। বাম করোনারি ধমনী দু’ভাগে ভাগ হয়ে হৃৎপিন্ডের বামদিককে রক্ত সরবরাহ করে। এই রক্তবাহী নালিগুলো আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে বুকে ব্যথা বা অ্যাঞ্জাইন হয়, রক্তসঞ্চালন একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে ইনেফার্কশন হয়। খুব তাড়াতাড়ি রক্ত সঞ্চালন শুরু করতে না পারলে হৃৎপিন্ডের মাংসপেশি মৃত হয়ে যায়। একে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হলে হৃৎপিন্ডের পেশি কমজোরি হয়ে পড়ে তাই হৃৎপিন্ডের পাম্প করার ক্ষমতা কম হয়ে যায়। করোনারি আর্টারিতে ফ্যাট-এর লেয়ার পড়ে রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায় অথবা ছোট হয়ে যায়। করোনারি বাইপাস সার্জারি করোনারি আর্টারি ডিজিজ (সি.এ.ডি)-এর একটি শল্য চিকিৎসা করোনারি বাইপাস। এখানে রক্তবাহী নালির যেখানে বাধা তৈরি হচ্ছে সেটাকে অতিক্রম করা হয়। এটা অতিক্রম করার জন্য নিজের ধমনী বা শিরা ব্যবহার করা হত। সি.এ.ডি-এর বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা প্রথামত, ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা। দ্বিতীয়ত, অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা (সি.এ.বি.জি)। তৃতীয়ত, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি (অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি/স্টেটিং) দেখা গেছে ওষুধ ও অপারেশনের মধ্যে চিকিৎসায় খুব একটা তফাৎনেই। জীবনযাত্রার মানেই নিশ্চয় উন্নতি হয় সার্জারিতে। অপারেশনের ফলে মানুষ আস্থা পায়। রোগী কেমন থাকবে তা নির্ভর করে রোগীর রিস্ক-ফ্যাক্টরের ওপর। যেমন ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, ধূমপান, হাইপারটেনশন, হাইপর লিপিডিমিয়া, করোনারি ব্লক-এর সমস্যা। লেফট মেইন ইকিুইভ্যালেন্ট ডিজিজ কি নাম দীর্ঘমেয়াদি ওসুখ কি না ইত্যাদি বহুকিছুর ওপর নির্ভর করে সুসাথতা। বয়স ও সেক্স-এর ওপর আউট-কাম কী হবে নির্ভর করে। বয়স হলে এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে রিস্ক বেশি। ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্টরা করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি ও স্টেনটিং করেন। এই পদ্ধতির একটা লিমিটেশন আছে এবং আমাদের মতো দেশে এটা বেশ ব্যয়বহুল। মর্টালিটি এবং মরবিডিটি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি/স্টেনটিং-এ অপারেশনের থেকে কিছুটা কম। মাল্টিভেসেল ডিজিজ-এর ক্ষেত্রে অপারেশনের ফলাফল বেশ ভালো অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির তুলনায়। অপারেশন, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি/স্টেনটিং যাই করা হোক না কেন ওষুধের চিকিৎসা করতেই হবে। এই চিকিৎসাপদ্ধতিগুলো কোনওটাই রোগ সারিয়ে তোলে না, রোগের প্রকোপ থেকে সাময়িকভাবে বাঁচায়। ওষুধের দ্বারা চিকিৎসার ফলে করোনারি ধমনীর রিমডেলিং হয়। একটি প্রশ্ন, সব সি.এ.ডি-র চিকিৎসা কি অপারেশন বা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি? আমরা বলব—না। প্রত্যেক পদ্ধতির একটা গাইড লাইন আছে। সেটা মেনে কার্ডিওলজিস্ট ও কার্ডিয়াক সার্জেনরা ঠিক করবেন কোন রোগীর অপারেশন হবে, কোন রোগীর ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা হবে অথবা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হবে। করোনারি বাইপাস সার্জারির ধরন
- কার্ডিওপালমোনারি বাইপাস : এখানে হৃৎপিন্ড বন্ধ করে করোনারি গ্রাফটিং করা হয়। অর্থাৎ হৃৎপিন্ডের অচল অবস্থায় অপারেশন করা। এই পদ্ধতিতেই সারা পৃথিবীতে অপারেশন করা হয়।
- কার্ডিওপালমোনারি বাইপাস : এর সাহায্য নিয়ে কিন্তু হৃৎপিন্ডের চালু অবস্থায় অপারেশন করা হয়। একে ‘অন পাম্প বিটিং হার্ট সি.এ.বি.জি’ বলে।
- কার্ডিওপালমোনারি বাইপাস-এর সাহায্য না নিয়ে হৃৎপিন্ডের চলন্ত অবস্থায় অপারেশন করা। এই পদ্ধতিতে হৃপিন্ডের যে অংশে অস্ত্রোপচার হবে সেই জায়গাটিকে স্টেবিলাইজ করা হয় স্টেবিলাইজারের সাহায্য।