হার্ট ব্লক : বাইপাস সার্জারি কি অবধারিত
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2018-11-07 14:11:55
হার্টের আর্টারিতে ব্লক হওয়া এখন এক বিশাল স্বাস্থ-সংকট হসাবে দেখা দিয়েছে। ব্যাপারটা এত ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়াটা একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কমবয়সীরা এই রোগের কবলে পড়ে ধরাশায়ী হচ্ছেন। একটা সময় ছিল যখন হার্টের অসুখ ৫০ বা ৬০-এর পোরোতে না পেরোতেই কারো কারো এই অসুখের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। এটা খুবই উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার কারণ। যে সব কারণে হার্টের অসুখ হচ্ছে সেগুলো সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে যে হার্টের ধমনীগুলোতে একবার অধিক মাত্রায় চর্বি জমতে শুরু করলে তা আর কখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া যায় না, শত চেষ্টা সত্ত্বেও। অতেএব ‘প্রিভেনশন ইজ্ বেটার দ্যান কিওর’। কী কী বিষয়ে সচেতনতা প্রয়োজন হার্টের অসুখের ক্ষেত্র প্রস্ত্তত হয় দীর্ঘ ১০-১৫ বছর ধরে। পুরুষদের ৩০-এর কোঠায়ে এর সূত্রপাত। ধূমপান, তেল, চর্বি ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যের প্রতি পক্ষপাতিত্ব; কায়িক পরিশ্রমের অভাব—এই তিনটি বদভ্যাসের ত্র্যহস্পর্শে এই অসুখের সূচনা। এর ওপর যদি উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস যোগ হয় তাহলে এই অসুখ দ্রত মারাত্মক আকার ধারণ করে বসে। কারো কারো ক্ষেত্রে একটা বংশগত প্রভাভ দেখা যায়। এদের অনেকের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অতিরিক্ত হতে পারে। অর্থাৎ নানা কারণের সংমিশ্রণে এই রোগের জন্ম। দুঃখের বিষয় হাজার সতর্কবাণী শোনালেও অনেকে এই সব কথায় কান দেন না। একবার ঘা খেলে তবেই অনেকের সম্বিৎ ফেরে। কারও আবার তাও ফেরে না। শুধু হার্টের চিকিৎসায় এদের রোগ নিরাময় হবার আশা কম। ব্লক হলে কী চিকিৎসা হার্টের ব্লক দেখা দিলেই কি বাইপাস অপারেশন অবশ্যম্ভাবী ? ‘ব্লক’ আর ‘ বাইপাস’ এই দুটো শব্দ জনমানসে এমনভাবে প্রোথিত হয়ে গেছে যে দুটো একে অপরের পরিপূরক বলে অনেকে ভেবে বসেন। হার্ট ব্লক ব্যাপারটা কিন্তু অতটা সরলীকরণ করা উচিত নয়। যাদের হার্টের ধমনীতে ব্লক দেখা দিয়েছে তাদের অধিকাংশেরেই কিন্তু ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা করা সম্ভব। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে পারে, যে ওষুধের দ্বারা ব্লকগুলো কি দূর তরা যায় ? বা কেউ কেউ জিঞ্জাসা করেন এগুলো কি গলিয়ে দেওয়া যায় ? এর এক কথায় উত্তর হল- না। তাহলে ওষুধ কাজ করে কী করে ? বিষয়টি এত জটিল যে সংক্ষেপে এর উত্তর দেওয়া যায় না। তবে দু-একটি কথা বলা যেতে পারে এ বিষয়। ওষুধ ব্লক গলাতে পারে না পুরোপুরি কিন্তু ব্লকগুলোর চারত্রগত পার্থক্য ঘটাতে সক্ষম। অর্থাৎ ব্লকটা দেখাতে অনেকটা আগের মতোই থাকলে কিন্তু তার ঝামেলা পাকানোর ক্ষমতা কমে গেল। ঝামেলা কীরকম ? না হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভবনা। হার্টের ধমনীগুলোর ভিতর খুব মসৃণ একটা আস্তরণ থাকে। একে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে এন্ডোথেলিয়াম। যাদের হার্টের শিরায় ব্লক দেখা দেয় তাদের এন্ডোথেলিয়াম খরখর হয়ে যায়। ওষুধের দ্বারা এই খরখর ভাব কাটানো সম্ভব। এই খরখরে ভাব কেটে গেলেই হার্ট অ্যাটাকের আশংকা অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়া ওষুধের দ্বারা নতুন ব্লক জন্মানোর সম্ভবনাও কমানো যায়। সঙ্গে সঙ্গে হার্টের এনার্জি ডিমান্ড আর সাপ্লাইয়ের যে সমীকরণে ওষুধের দ্বারা এর হেরফের ঘটিয়ে হার্টের এনার্জি ডিমান্ড কমিয়ে আনা সম্ভব। এতে অ্যাঞ্জাইনা বা বুকে ব্যথার প্রকোপ থেকে রোগীরা অনেকাংশে মুক্তি পান। তাছাড়া হার্টের ধমনীগুলোর মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা যাতে কমে যায় সেজন্য আছে একাধিক রকমের ওষুধ। এইসব ওষুধের দ্বারা অনেক জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাহলে বাইপাস করাবেন কারা ? সংক্ষেপে, যাদের ওষুধ খাওয়া সত্ত্বেও সমস্যা হচ্ছে বা সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। এদের প্রথমে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি হার্টের বা দিকের মূল আর্টারিতে ব্লক থাকে তাহলেই বাইপাস অপারেশনের প্রয়োজন হয়। একটি বা দুটি আর্টারিতে ব্লকের জন্য আছে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, বাইপাসের চেয়ে কষ্ট কম, ফল অনরূপ, ঝুঁকিও কম। একটা কথা অবশ্য মনে রাখতে হবে। বাইপাস অপারেশনের পরও কিন্তু ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপার সচেতন হতে হবে এবং নিয়মিত শরীরচর্চার দ্বারা ওজন নিংন্ত্রণে রাখতে হবে। বাইপাসের অপারেশন শুধুমাত্র ব্লকগুলোকে বাইপাস করে, ব্লকের কারণ দূর করে না। একবার বাইপাস অপারেশন করিয়ে নিলে সারা জীবনে আর হার্টের ব্লক থেকে কষ্ট পেতে হবে না এই ধারণাও ভুল। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ-র দ্বিতীয়বার বাইপাস অপারেশনের কথা নিশ্চয়ই সকলেরই জানা আছে। পরিশেষে বলি হার্টের অসুখ অতি খারাপ জিনিস। জীবনসঙ্গী করবেন না । সময় থাকতে সতর্ক হলে এই বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাওয়া অবশ্য সম্ভব। সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন